টেবিল টেনিসে ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন জোবেরা রহমান লীনু। টেবিল টেনিসের ‘আইডল’ কিংবা ‘টেবিল টেনিস কুইন’ হিসেবে খ্যাত এই কিংবদন্তি নারীর ছোটবেলা কেটেছে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে। কাপ্তাই স্কুলে তাঁর পড়াশোনার শুরু। নরসিংদীর রসুলপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিক আর ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে পড়াশোনা শেষ করেন। ভূষিত হয়েছেন অনেক সম্মাননা আর জাতীয় পুরস্কারে। বাংলাদেশ স্পোর্টস রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড, শেখ কামাল মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল, নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি। টেবিল টেনিসের পাশাপাশি সাইক্লিংয়েও হয়েছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। আছে লেখালেখির অভ্যাসও। বর্তমানে তিনি জাতীয় টেনিস ফেডারেশনের সেক্রেটারি এবং ঢাকা সাইক্লিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। কিশোর আলোর সাক্ষাৎকার দলের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সেই দলে ছিল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নাঈম ইসলাম, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের জুমাইনা নাসির, ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের আনতাসুম মুনতাজেরিন, হলিক্রস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেহ্নাজ মুমতাহিনা ও সরকারি বাঙলা কলেজের তানজিন এ আলামিন।
প্রশ্ন :
আপনার ছোটবেলা তো কেটেছে পাহাড় আর অরণ্যের সঙ্গে। ছোটবেলা সম্পর্কে যদি একটু বলতেন...
আমি আমার ছোটবেলা কাটিয়েছি কাপ্তাইয়ের শাহিজবাজারে। খুবই মজার ছিল সেই দিনগুলো। আট বছর বয়সে আমার টেনিস খেলার শুরু। আমার প্রথম স্কুল হলো কাপ্তাই স্কুল। ওখানে মাত্র ছয় মাস পড়েছি। শিক্ষকের দৃষ্টিতে আমি খুব দুষ্টু ছিলাম।
প্রশ্ন :
এত ছোট একটা বল, এতটুকু একটা টেবিলের ওপর খেলতে হয়। এ জটিল খেলার প্রতি আগ্রহী হলেন কী করে?
কারও কাছে যেটা কঠিন, তা আবার অনেকের কাছে সহজ। যে যেখানে পারদর্শী, সেটা তার জন্য সহজ। সে সময় আমার বড় বোন হেলেনের টেবিল টেনিস খেলা দেখেই আমার এই খেলায় আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আসলে ছোটবেলা থেকেই টেবিল টেনিস খেলার কারণে এ খেলাটা আমার জটিল মনে হয়নি। বরং এ খেলাটা আমি উপভোগ করি।
প্রশ্ন :
ছোটবেলার কোনো ঘটনা, যা এখনো মনে পড়ে?
কাপ্তাই থাকাকালে পাহাড়ের ওপরে সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়ানোর সময় আমার এক বন্ধু পাহাড়ের নিচে লাফ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ করে আমাকে। আমার কাছে তখন মনে হতো এমন কিছু নেই যা আমি পারি না। আমি ২০-২৫ ফুট ওপর থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েছিলাম। অলৌকিক ব্যাপার হচ্ছে, আমি নরম কাদার ওপর পড়েছিলাম। তাই কোনো ব্যথাও পাইনি। এ কথা মনে পড়লে আমার হাসির সঙ্গে সঙ্গে ভয়ও পায়।
প্রশ্ন :
পড়ালেখায় কেমন ছিলেন?
আমি ছোটবেলায় পড়ালেখায় ভালো ছিলাম। প্রথম, দ্বিতীয় স্থানে থাকতাম। আমি মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছি। সেকেন্ড ক্লাস ফার্স্ট হয়েছি। সুতরাং খুব একটা খারাপ ছিলাম না। ক্লাসে ফার্স্ট তো একজনই হবে। সবাই তো আর ফার্স্ট হয় না।
প্রশ্ন :
আপনার বড় বোনও তো টেবিল টেনিস খেলতেন। তাঁর সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন...
আমি আমার বড় বোনের থেকেও ভালো খেলতাম কিন্তু আমি ন্যাশনাল খেলার আগেই তিনি খেলা ছেড়ে দেন। তাই তাঁকে কখনো হারানোর সুযোগ হয়নি।
প্রশ্ন :
মেয়ে হয়েও ছোটবেলায় ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল দলে খেলেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা...
অনেক দিন পরে স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল। শাহিজবাজারে থাকাকালে ছেলেদের সঙ্গে খুব ভালো ফুটবল খেলতাম। পরে কজন মেয়েকেও যুক্ত করেছিলাম ফুটবল খেলায়। একদিন খেলতে গিয়ে পেটে খুব ব্যথাও পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন :
কখনো ভেবেছিলেন গিনেস বুকে আপনার নাম উঠবে?
না, চিন্তাই করিনি। আমাদের সময়ে গিনেস বুক কী, এটাই জানতাম না। ১৯৯৮ সালে ১৪ বারের মতোন চ্যাম্পিয়ন হই। ২০০০ সালে আমি হেরে যাই। আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তখন ফেডারেশনের হেলাল ভাই আমাকে বললেন, আমি রেকর্ডের খুব দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। তাঁর উৎসাহে আমি নতুন করে শুরু করি। তিনিই আমার রেকর্ডটি প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গিনেসে পাঠান। গিনেস সার্টিফিকেট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি যখন গিনেস রেকর্ডের সার্টিফিকেট পাই, তখন আমার বয়স ছিল ৩৭ বছর।
প্রশ্ন :
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আপনার নাম যখন প্রথম উঠল, তখন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
সার্টিফিকেট না পাওয়া পর্যন্ত দ্বিধায় ছিলাম। যখন পেয়েছি তখন এর অনুভূতি আসলে বোঝানো যাবে না। গিনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার পরে এক থেকে দেড় মাস কী করে যে কেটে গেছে আমি টেরই পাইনি। এই যে একটা পাওয়া, এটা অনেক বড় কিছু আমার জন্য।
প্রশ্ন :
এত সফলতার মাঝেও হতাশ হয়েছিলেন কখনো?
আমার মতো সাধারণ মানুষের ব্যর্থতা অনেক। আমার রেকর্ডটা হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমার বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ হয়নি, ভালো কোচিং পাইনি। আমার যে পর্যায়ে যাওয়ার কথা ছিল, সে পর্যায়ে যেতে পারিনি।
প্রশ্ন :
আপনার এত দূর আসার পথে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
আল্লাহর ইচ্ছা না থাকলে আজকের এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না। অনেকেই মনে করে কর্মই মানুষকে টেনে নিয়ে আসে। সেটা সত্যি, কিন্তু আমি মনে করি, ভাগ্য অনেক বড় একটা ব্যাপার।
প্রশ্ন :
অনেকেই মেয়েদের খেলার সময় যে পোশাক পরতে হয় তা মেনে নিতে পারে না। অনেক সময় খারাপ মন্তব্যও করে থাকে তাঁদের খেলাধুলা নিয়ে। এ ধরনের মানুষের উদ্দেশে আপনি কী বলতে চান?
আসলে পোশাক যে ধরনেরই হোক না কেন, তা শালীন হতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিকোণেরও পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। আমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে আমি যা পরলাম তা আপত্তিকর কি না।
প্রশ্ন :
আপনার কাছে খেলা পেশা নাকি নেশা? পেশা হিসেবে খেলা কেমন?
খেলা আমার কাছে নেশা। কখনোই আমি খেলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করিনি। আর খেলে যা পেতাম তা পকেটমানি। তাই ১৪ বছর বয়সের পর থেকে আমাকে আর আব্বু-আম্মুর টাকা নিতে হয়নি। কলেজে বন্ধুরা টিফিনের জন্য ১০ টাকা আনত আর আমি তাদের ১০০-২০০ টাকা দিয়ে চায়নিজ খাওয়াতাম।
বাংলাদেশে অবশ্য খেলাকে পেশা হিসেবে নেওয়া যায়নি। বিদেশে অনেকেই খেলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। পাশের দেশ ভারতে এক খেলোয়াড়ের বেতন ৭০ হাজার রুপি এবং অন্যদের বেতন ৫০ হাজার রুপি।
প্রশ্ন :
অনেকের ধারণা, খেলাধুলায় ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে। আসলেই কি সত্যি?
মেট্রিক পর্যন্ত দুটো একসঙ্গে করতে আমার একটু সমস্যা হয়েছে। খেলার জন্য কোরিয়ায় থাকায় মেট্রিক পরীক্ষা দিতে পারিনি, তাই এক বছর গ্যাপ হয়েছে। তবে যার প্রবল ইচ্ছা আছে সে অবশ্যই পারবে। একটু সমস্যা হতেই পারে। তবে আমি খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখাও শেষ করেছি। চেষ্টা করলে সবকিছু সম্ভব।
প্রশ্ন :
ধরুন, আপনি বেইজিংয়ের রাস্তায় হাঁটছেন। হঠাত্ শুনলেন কেউ আপনার নাম ধরে ডাকছে। আপনি তাকিয়ে দেখলেন বিশ্বকাপজয়ী লিউ শিউয়েন। তার পরের কথোপকথনটা কী রকম হতে পারে?
আমি ভাবব তার নামের সঙ্গে আমার নাম মিলে গেছে। নাহয় তার তো আমাকে ডাকার কথা নয়। অনেক সময় মনে হয় চায়নিজ খেলোয়াড়েরা অহংকারী। কিন্তু ভাষা বুঝতে না পারার কারণে ওরা হয়তো নিজেদের গুটিয়ে রাখে। তবে শিউয়েনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাকে আমি বাংলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেমন আছ?’ সে হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিল। কারণ, সে তো চায়নিজ ছাড়া অন্য ভাষা জানে না, তার কাছে বাংলা যা, ইংরেজিও তা।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশে বর্তমানে টেবিল টেনিস খেলার অবকাঠামো খুবই দুর্বল। টেবিল টেনিসকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বেশি বেশি টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। স্কুলপর্যায় থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে হবে। টেবিল টেনিসের ব্যাপারে দেশের মানুষকে উত্সাহী করে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে স্পনসরদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রশ্ন :
আপনি তো সাইক্লিংয়েও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আমাদের দেশে মেয়েদের সাইকেল চালানোটা এখনো সেই অর্থে স্বীকৃত নয়। মেয়েরা রাস্তায় সাইকেল নিয়ে বের হলে সবাই তাকিয়ে থাকে, এমনকি অন্য মেয়েরাও। এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব?
আমি নিজেও তাকিয়ে থাকি। তবে তা আমার ভালো লাগার জায়গা থেকে। যদি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়, তবেই এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। তা ছাড়া একজন মেয়ে যদি বাইকের পেছনে করে রাস্তা দিয়ে যেতে পারে, তবে সে সাইকেল চালাতে পারবে না কেন?
প্রশ্ন :
সাইক্লিং নিয়ে আমি অলিম্পিকে খেলতে চাই এবং বাংলাদেশের হয়ে স্বর্ণ জিততে চাই। আমার প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
তোমার উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ। তুমি ঢাকা সাইক্লিং ফেডারেশনে যোগাযোগ করতে পারো, তারা তোমাকে সাহায্য করবে। আর আমি তোমাকে বলব, বেশি বেশি অনুশীলন করবে। পরিশ্রম করবে। সাফল্য নিশ্চয়ই আসবে।
প্রশ্ন :
বিদেশে সাইকেল চালানোর জন্য রাস্তায় আলাদা লেন আছে। আমাদের দেশে সাইকেল এখন অনেক জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের দেশের রাস্তায় এ রকম লেন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি উদ্যোগ নিতে পারে না?
অবশ্যই নিতে পারে। তবে আমাদের হাঁটার মতো জায়গাই তো নেই। সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা তো পরের কথা।
তবে আমি মনে করি যেকোনোভাবে সাইক্লিং লেন করা উচিত।
প্রশ্ন :
আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত কোনটি?
আমার জীবনে আলাদা করে কোনো শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত নেই। প্রতিটা মুহূর্তই সুন্দর। যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার পেলাম সেটা যেমন শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত, তেমনি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠার ব্যাপারটিও শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।
প্রশ্ন :
অপর্যাপ্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছেন। আপনার একচেটিয়া আধিপত্য ও সফলতার রহস্য কী?
আমার সার্থকতা হলো আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। খেলাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি সৎ ছিলাম। নিজের সঙ্গে কখনো প্রতারণা করিনি। সেই সঙ্গে আমি সব সময় স্বাস্থ্যসচেতন ছিলাম।
প্রশ্ন :
আপনি তো খুব ছোটবেলা থেকেই খেলা শুরু করেছেন। অন্যদিকে এখন অনেক শিশু-কিশোরই তাদের শৈশব-কৈশোর পার করছে কম্পিউটারের মতো যন্ত্রের সঙ্গে। এদের খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলতে কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?
শিশু-কিশোরদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার জায়গা হলে হয়তো তাদের খেলার প্রতি আগ্রহ আসবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি স্কুলে খেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা, খেলাধুলা সম্পর্কে ক্যাম্পিং, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ অবশ্যই বাড়বে।
প্রশ্ন :
ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আপনার দায়িত্ব কী ছিল?
মূলত আমার কাজ ছিল গর্ভবতী মায়েদের নিয়ে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটা সচেতন হতে হবে এবং শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য কী করতে হবে, এ ব্যাপারে তাঁদের তথ্য দেওয়া।
প্রশ্ন :
এই শুভেচ্ছা দূত হওয়ার পর মানবকল্যাণমূলক কাজে নিশ্চয়ই আগ্রহ বেড়েছে। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা আছে কি?
অনেকবারই সুযোগ এসেছে। বিভিন্ন দিক থেকে অনুরোধও এসেছে। কিন্তু রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কোনো প্রকার ইচ্ছা আমার নেই।
প্রশ্ন :
গ্রামাঞ্চলে অনেক মেয়ে খেলাধুলায় পারদর্শী হলেও সুযোগের অভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। এদের এগিয়ে আনার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
শহরে কিন্তু খেলাধুলা কম হয়। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই মফস্বল থেকে উঠে এসেছে। সব সাঁতারু কিন্তু গ্রামের। সুইমিং ফেডারেশনের উচিত গ্রামে যাওয়া। টেবিল টেনিসে ঢাকার লালবাগ আর নড়াইল ভালো খেলছে। তাই সেখান থেকে বাছাই করে নিয়ে এসে ক্যাম্প করতে হবে। এরপর দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের টেবিল টেনিসকে শক্তিশালী করার জন্য কোন দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
বেশি বেশি টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। স্পনসরকারীদের অবশ্যই টেবিল টেনিসের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের স্কুলভিত্তিক ক্যাম্পেইন করে সংগ্রহ করতে হবে।
প্রশ্ন :
খেলোয়াড় হয়েও সাহিত্য রচনা করেন কোন লক্ষ্যে?
লক্ষ্য নিয়ে আমি সাহিত্য রচনা করি না। এটা আমার ভালো লাগে। ছোট থেকেই আমি সাহিত্য রচনা করি। কলেজে ওঠার পর এটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি গ্র্যাজুয়েশন করার সময় ২৬ দিনে দুটি বই লিখেছিলাম। আমার লেখা বেশ কয়েকটি নাটক টিভিতেও প্রচারিত হয়েছে।
প্রশ্ন :
আপনার মতো অলরাউন্ডার হওয়ার জন্য কী কী গুণ থাকা জরুরি?
আমি অলরাউন্ডার না। এটা বললে আমাকে লজ্জা দেওয়া হবে। একটা মানুষের পক্ষে সব জানা সম্ভব নয়। তবে আমাকে গিটার, তবলা, সেতার দেওয়া হলে সেটা বাজাতে পারব। আশে পাশে যা দেখেছি সব চেষ্টা করেছি, শিখেছি। লেখাপড়ার পাশাপাশি এসবও দরকার।
প্রশ্ন :
মানুষ অবসরে খেলাধুলা করে। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনি অবসরে কী করেন?
দেশ-বিদেশে ঘুরতে পছন্দ করি। বাসায় থাকলে বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করি। সময় পেলে ফেসবুকে যাই। সাহিত্য রচনা করি। এই তো...এভাবে সময় কেটে যায়।
প্রশ্ন :
আপনি কিশোর হলে এবং কিশোর আলোর হয়ে লীনুর সাক্ষাৎকার নিতে এলে আজকের জোবেরা রহমান লীনুকে কী প্রশ্ন করতেন?
বলতাম, ‘আপনি এত ভালো কেন?’
প্রশ্ন :
আচ্ছা, আপনি এত ভালো কেন?
কারণ, আমি অনেক আন্তরিক, মানুষকে মূল্যায়ন করতে পারি। আমি অনেক মায়াবতী, আমি হিংস্র নই।
প্রশ্ন :
কিশোর আলোর পাঠকদের উদ্দেশে কী বলবেন?
জীবনে বড় হওয়ার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। সবার আগে অহংকারহীন একজন ভালো মানুষ হতে হবে। সুষ্ঠু জ্ঞানার্জনের জন্য পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তাই পড়তে হবে প্রচুর। তবে প্রতি ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে, এমনটা নয়।
সাক্ষাৎকার দলের পাঁচজন ছাড়া আরও যাদের প্রশ্ন নির্বাচিত হয়েছে— আনিতা আহমেদ, ইশতিয়াক ইসমাইল, অহর্নিশ অহনা, জয়তসিংহ, তাসফিয়া তাবাসসুম, নওশিন ইবনাত, প্রভাতি নাজমিন, বিভা মোশাররফ, শতাব্দী দাস ও সামিয়া শারমিন।