যন্ত্রের যন্ত্রণা

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

৯ জানুয়ারি

আমি, আব্রাম ইভানভ, শেষমেশ একটা হোম কম্পিউটার—মানে ঠিক করে বললে একটা ওয়ার্ড প্রসেসরের মালিক হলাম। আমার সাধ্যমতো ওটার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। নিজের সঙ্গে তর্কে মেতেছি। আমেরিকার সবচেয়ে দ্রুতপ্রজ লেখক আমি। টাইপরাইটারে খাসা চালিয়ে নিতে পারি। গেল বছর তিরিশটারও বেশি বই বের করেছি। সেগুলোর কোনোটা বাচ্চাদের জন্য লেখা সরু বই। সংকলনও ছিল কয়েকটা। তবে উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, প্রবন্ধ সংকলন, নন-ফিকশন বইও আছে। বিব্রত হওয়ার মতো কিছু নয়।

তো আমার ওয়ার্ড প্রসেসর দরকার হলো কেন? এর চেয়ে দ্রুত তো চলতে পারব না। কিন্তু জানোই তো, পরিপাটি বলে একটা কথা আছে। টাইপ করে লিখলে ভুল শোধরাতে কালি-কলমের মসলা যোগ করতে হবে, কিন্তু এখন আর ও কাজ করে না কেউ। আমি চাই না আমার পাণ্ডুলিপি ঘেয়ো বুড়ো আঙুলের মতো মুখ ব্যাদান করে থাকুক। স্রেফ শোধরানোর কারণেই সম্পাদকেরা আমার লেখাগুলো দ্বিতীয় সারির ভাবতে পারেন, তাও চাই না।

ব্যবহারের কায়দা আয়ত্ত করার পেছনে দুই বছর কাবার করে দেবে না— এমন একটা মেশিন খুঁজে পাওয়াই মুশকিল ছিল। এই ডায়েরিতে যেমন বারবার উল্লেখ করেছি—আমি চালু নই। এমন একটা যন্ত্রই চাই যেটা কদিন পরপর নষ্ট হয়ে যাবে না। যান্ত্রিক যন্ত্রণা স্রেফ মেজাজ খিঁচড়ে দেয়। তো ‘ত্রুটিসহিষ্ণু’ একটা জিনিসই জোগাড় করেছি আমি। তার মানে কোনো একটা অংশ বিকল হয়ে গেলেও মেশিনটা কাজ চালিয়ে যায়, বিকল অংশটা পরখ করে, পারলে মেরামত করে নেয়, না পারলে জানায়। তখন যে কাউকে দিয়েই পাল্টে নেওয়া যায় সেটা। সে জন্য এক্সপার্ট হ্যাকারের দরকার পড়ে না। আমার উপযুক্ত জিনিস বলেই মনে হচ্ছে।

৫ ফেব্রুয়ারি

ইদানীং আমার ওয়ার্ড-প্রসেসরের কথা খুব একটা মুখে আনিনি, কারণ ওটার কাজের ধারা বুঝতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলাম। তবে সামলে নিয়েছি। কিছুটা সময়ের জন্য বেশ ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম, কারণ আমার আইকিউ অনেক বেশি হলেও সেটা খুবই বিশেষায়িত উঁচু আইকিউ। আমি লিখতে পারি, কিন্তু যন্ত্রপাতি সামলাতে গেলে মাথা খারাপ হয়ে যায়।

তবে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আসামাত্র ঝটপট রপ্ত করে নিয়েছি। যন্ত্রটা যা করেছে, সেটা এ রকম। যন্ত্রটা খুব কমই ঝামেলা করবে বলে আশ্বস্ত করেছিল উৎপাদকের প্রতিনিধি। কদাচিৎ নিজের ভুলগুলো নিজেই শুধরে নিতে ব্যর্থ হবে ওটা। পাঁচ বছরেও নতুন কোনো যন্ত্রাংশের দরকার পড়বে না বললেই চলে— বলেছিল সে।

আর যদি পড়েও তবে কোন জিনিস লাগবে মেশিনের কাছ থেকেই ঠিকঠিক জেনে যাবে ওরা। তখন কম্পিউটার নিজেই খুচরো যন্ত্রাংশ পাল্টে নিয়ে নিজেই তার জোড়া লাগানো এবং তেল দেওয়ার কাজ সেরে নেবে। বাতিল করে দেবে পুরোনো যন্ত্রাংশ। তখন আমি ফেলে দেব সেটা।

বেশ উত্তেজনাকরই ছিল ব্যাপারটা। নির্ঘাত একটা কিছু গোলমাল হবে। মনে মনে ভাবছিলাম, নতুন যন্ত্রাংশ পেয়ে লাগিয়ে নেব আমি। ‘তা তো বটেই,’ বলতে পারব সবাইকে, ‘ওই প্যাঁচাল জিনিসটা একটা ফিউজ পুড়িয়ে ফেলেছিল। নিমেষে ঠিক করে ফেলেছি আমি। কোনো ব্যাপার নয়।’ কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস করত না ওরা।

ওটায় একটা গল্প লেখার চেষ্টা করতে যাচ্ছি আমি। খুব বড় কিছু না। স্রেফ হয়তো দুই হাজার শব্দের ভেতর। তালগোল পাকিয়ে ফেললে আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত টাইপরাইটারের সাহায্য তো নিতেই পারছি। পরে আবার চেষ্টা করা যাবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি

একটুও ঝামেলায় পড়িনি। হাতের কাছেই যখন প্রমাণ আছে, এ নিয়ে কথা বলতেই পারি। ছোটগল্পটা মাখনের মতোই মসৃণ গতিতে এগিয়ে গেছে। আমি বের করে এনেছি, ওরা নিয়ে নিয়েছে। নো প্রবলেম।

অবশেষে আমার নতুন উপন্যাসে হাত দিয়েছি আমি। মাসখানেক আগেই শুরু করা উচিত ছিল, কিন্তু তার আগে ওয়ার্ড-প্রসেসরে দ্রুত কাজ করতে পারার ব্যাপারটা নিশ্চিত করা দরকার ছিল আমার। এখন কাজ হলেই হয়। এক শ পৃষ্ঠা আগে কী লিখেছিলাম দেখতে গিয়ে একতাল হলদে কাগজের ঢিবি না থাকাটা হাস্যকর ঠেকবে, অবশ্য মনে হয় ডিস্ক পরখ করার কায়দাকানুন আয়ত্বে নিতে পারব আমি।

১৯ ফেব্রুয়ারি

কম্পিউটারটার বানান শোধরানোর উপাংশ আছে। বিক্রয় প্রতিনিধি আগে বলেনি। তাই এটা তাজ্জব বানিয়ে দিয়েছিল আমাকে। প্রথমে ভুল বানানই চলতে দিয়েছে। আমি পাতা ওল্টানোর আগে স্রেফ প্রুফ রিডিং করছিলাম। কিন্তু তারপর হঠাৎ অচেনা সব শব্দ চিহ্নিত করতে শুরু করল ওটা। একটু বিরক্তিকরই ছিল ব্যাপারটা। কারণ আমার শব্দভান্ডার মোটামুটি সমৃদ্ধই। নতুন নতুন শব্দ বানানোর বেলায়ও সংকোচহীন আমি। অবশ্য আমার ব্যবহৃত যেকোনো নামবাচক শব্দের সঙ্গেই অপরিচিত ছিল ওটা।

শোধরানোর দরকার নেই, এমন সব শব্দ চোখে আঙুল দেখিয়ে দেওয়াটা খুব বিরক্তিকর। বিক্রয় প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠালাম।

সে বলল, ‘ও নিয়ে মাথা ঘামাবেন না, মিস্টার ইভানভ। আপনি রাখতে চান এমন কোনো শব্দ নিয়ে যদি ওটা প্রশ্ন তোলে, স্রেফ যেমন ছিল সেভাবেই রি-টাইপ করবেন। ব্যস, তাহলেই কম্পিউটার বুঝে নেবে। পরে আর শোধরাবে না।’

কথাটা বিভ্রান্ত করল আমাকে। ‘মেশিনটার জন্য একটা ডিকশনারি বসানো দরকার হবে না? কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল কীভাবে বুঝবে ওটা?’

‘এটাও ভুল সহ্য করার একটা অংশ, মিস্টার ইভানভ,’ বলল সে। ‘আগে থেকেই একটা মৌলিক ডিকশনারি আছে মেশিনটার। আপনার ব্যবহৃত নতুন শব্দগুলো আয়ত্ত করে নিচ্ছে। খেয়াল করে দেখবেন, ক্রমেই কম বানান ভুল ধরছে ওটা। সত্যি কথা বলতে, একটা লেটেস্ট মডেল পেয়েছেন আপনি। এটার সব সম্ভাবনা আমরা নিজেরাই জানি কি না, সন্দেহ। আমাদের গবেষকদের কেউ কেউ নিজের ভুল থাকা সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে নিতে পারে বলেই একে ত্রুটিসহিষ্ণু মনে করেন। তবে এই অর্থে ত্রুটিসহিষ্ণুতা যে যারা একে ব্যবহার করে, তাদের ভুল মেনে নিতে পারে না। কোনো কিছু সম্পর্কে দ্বিধা থাকলে দয়া করে আমাদের জানাবেন। আমরা সত্যিই জানতে আগ্রহী।’

৭ মার্চ

বেশ, ওয়ার্ড-প্রসেসরটার সঙ্গে লড়াই করছিলাম আমি। কী ভাবা উচিত, বুঝতে পারছি না। দীর্ঘ সময় ধরে ভুল বানান চিহ্নিত করে যাচ্ছিল ওটা। আমিও ফের শুদ্ধ করে টাইপ করছিলাম। সত্যিকারের ভুল বানান কীভাবে ধরতে হয় শিখে নিচ্ছিল ওটা। এখানে কোনো ঝামেলা ছিল না। আসলে লম্বা কোনো শব্দ এলে ওটা ধরতে পারে কি না, দেখতে ভুল হরফও ঢুকিয়ে দিয়েছি। আমি ‘supercede’ বা ‘vaccum©’ কিংবা ‘Skenectadz’ লিখেছি। বলা চলে একবারও ভুল হয়নি ওটার।

কিন্তু গতকাল একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেল। ভুল বানান রি-টাইপ করার অপেক্ষায় থেমেছিল ওটা। তারপর আপনা-আপনি নিজেই আবার টাইপ করে ফেলল। অনেক সময় ভুল কি চাপ দেওয়া এড়ানো যায় না। অনেক সময় আমি ‘the’-এর জায়গায় ‘5he’ লিখি, কিন্তু আমার চোখের সামনেই ‘৫টা’ সস্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘t’ হয়ে যাচ্ছিল। চোখের নিমেষেই ঘটে যাচ্ছিল ব্যাপারটা।

ইচ্ছা করে ভুল অক্ষরে ভুল শব্দ টাইপ করে যাচাই করে দেখেছি। দেখা গেছে স্ক্রিনে ভুল শব্দই ফুটে উঠেছে। কিন্তু চোখের পাতা ফেলার আগেই শুদ্ধ হয়ে গেছে সেটা।

আজ সকালে বিক্রয় প্রতিনিধিকে ফোন করেছিলাম।

‘হুম,’ বলল সে, ‘মজার তো।’

‘মহা মুশকিল,’ বললাম আমি, ‘ভুল জুড়ে দিতে পারে এভাবে। আমি ‘blww’ টাইপ করলে তখন মেশিনটা একে কীভাবে শোধরাবে? ‘blew’, নাকি ‘blue? কিংবা ওটা যদি ভেবে বসে যে আমি হয়তো ‘blew’ বুঝিয়েছি? কিন্তু আসলে আমি বলতে চাই ‘blew’। আমার কথা বুঝতে পারছ?’

‘আপনার মেশিন নিয়ে আমাদের এক তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি।’ বলল সে। ‘তিনি বলেছেন, আপনার লেখা থেকেই ওটা অভ্যন্তরীণ সূত্র আত্মস্থ করে ফেলতে পারে। তখন আপনি কোন শব্দটা ব্যবহার করতে চাইছেন বুঝে নেবে। আপনি টাইপ চালিয়ে গেলে আপনার স্টাইল আন্দাজ করতে শুরু করবে ওটা, তখন নিজের প্রোগ্রামিংয়ে সেটা হজম করে নেবে।’

কিছুটা ভীতিকর, তবে সুবিধাজনক। এখন আর আমাকে পাতার পর পাতা প্রুফ রিডিং করতে হবে না।

২০ মার্চ

সত্যি পাতার পর পাতা আর প্রুফ রিডিং করতে হচ্ছে না আমার। মেশিনটাই আমার যতিচিহ্ন আর শব্দের ধারা শোধরানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।

ব্যাপারটা প্রথম যখন ঘটল, বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছি বুঝি পলকের জন্য চোখ বুজে এসেছিল আমার। যেটা টাইপ করার কথা ভেবেছি, যেটা আসলে স্ক্রিনে ফুটে ওঠেনি।

বারবার ঘটতে থাকল ব্যাপারটা। সন্দেহের তিলমাত্র অবকাশ নেই এতে। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে ব্যাকরণে ভুলই করতে পারছিলাম না। যেমন আমি ‘জ্যাক, অ্যান্ড জিল ওয়েন্ট আপ দ্য হিল’ টাইপের কিছু টাইপ করার চেষ্টা করলে ‘কমা’ আসছেই না। আমি যতই ‘আই হ্যাজ আ বুক’ টাইপ করার চেষ্টা করি না কেন, সব সময় ‘আই হ্যাভ আ বুক’ই দেখা দিচ্ছে। কিংবা আমি ‘জ্যাক, অ্যান্ড জিল অ্যাজ ওয়েল, ওয়েন্ট আপ দ্য হিল,’ লিখলে আর ‘কমা’গুলো মুছতে পারছিলাম না। নিজের ইচ্ছাতেই রয়ে যাচ্ছে ওগুলো।

সৌভাগ্যের কথা যে এই ডায়েরিটা বড় হাতের হরফে লিখছিলাম, নইলে কী বলতে চাইছি বোঝাতে পারতাম না। ভুল ইংরেজির নজির তুলে ধরতে পারতাম না।

ইংরেজির বেলায় আমার সঙ্গে তর্ক করে এমন একটা কম্পিউটার সত্যিই সুবিধার ঠেকছিল না। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো আগাগোড়াই ঠিক ছিল ওটা।

বেশ, দেখো, কোনো মানুষ কপি এডিটর প্রতিটা লাইনেই কাটাছেঁড়াসহ পাণ্ডুলিপি ফেরত পাঠালে আমি মূর্ছা যাই না। আমি স্রেফ একজন লেখক, খুঁটিনাটি ইংরেজির পণ্ডিত নই। কপি এডিটরদের সম্পাদনা করতে দাও। ওরা তো আর লিখতে পারছে না। সুতরাং, ওয়ার্ড-প্রসেসরও কপি এডিট করতে পারে। আমার কাঁধের ওপর থেকে বোঝা নেমে গেছে।

১৭ এপ্রিল

শেষবার আমার ওয়ার্ড-প্রসেসরের কথা বলতে গিয়ে বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি। তিন সপ্তাহ হলো আমার কপি এডিট করছে ওটা। আমার উপন্যাসটাও এগিয়ে গেছে মসৃণগতিতে। চমৎকার একটা কাজের আয়োজন ছিল। সৃষ্টির কাজটা করছিলাম আমি, আর বলা চলে তাল ঠিক করে দিচ্ছিল কম্পিউটার।

তারপর, গতকাল সন্ধ্যায় সোজাসাপ্টা কাজ করতে অস্বীকার করল ওটা। আমি যে কি-ই স্পর্শ করি না কেন, কিছুই ঘটছিল না। ঠিকমতোই প্লাগ লাগানো ছিল, সুইচও অন ছিল; সবকিছু ঠিকঠাকমতোই করছিলাম আমি। কিন্তু কোনো কাজই করছিল না ওটা। আমি ভাবলাম, ‘পাঁচ বছরেও একবার’ যন্ত্রাংশ দরকার না পড়া নিয়ে যথেষ্ট হয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন মাস হয় ব্যবহার করছি, অথচ এখনই এতগুলো যন্ত্র বিগড়ে গেছে যে কাজই করছে না।

তার মানে বিশেষ দূত মারফত ফ্যাক্টরি থেকে নতুন পার্টস আসতে হবে, তবে সেটা কিছুতেই আগামীকালের আগে নয়। মেজাজটা খিঁচড়ে গেছে আমার। আবার টাইপরাইটারের শরণাপন্ন হওয়ার ভয় হচ্ছিল। আবারও নিজের সব ভুলভ্রান্তি খুঁজে বের করে হয় কালি-কলম দিয়ে শোধরাতে হবে, নয়তো আবার টাইপ করতে হবে।

খিঁচড়ে যাওয়া মেজাজেই বিছানায় গেলাম আমি, ঘুমাতে পারলাম না ঠিকমতো। সকালে নাশতা সেরে নিজের অফিসে চলে এলাম। ওয়ার্ড-প্রসেসরটার কাছে যেতেই সানন্দে ওটাকে লাথি মেরে ডেস্কের ওপর থেকে ফেলে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারার মতো তিতিবিরক্ত হয়ে আছি আমি। কী আশ্চর্য, ব্যাপারটা টের পেয়েই যেন কাজ শুরু করে দিল ওটা।

শুনে রাখো, একেবারে নিজে নিজে। একটা কি-ও স্পর্শ করিনি আমি। আমি যতটা দ্রুত পারতাম তার চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে দেখা দিতে লাগল শব্দগুলো। শুরুটা হয়েছে এভাবে:

ভ্রান্তিরোধী
রচনা: আব্রাম ইভানভ

স্রেফ চেয়ে রইলাম আমি। ওপরে যেমন লিখেছি, ঠিক তেমনি আমার সম্পর্কিত ডায়েরির বিষয়গুলো লিখে চলল ওটা। আরও চমৎলার ঢঙে। রসিকতার চমৎকার ছোঁয়া নিয়ে আরও বর্ণিল হলো লেখার ধরন। ১৫ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। আর পরের পাঁচ মিনিটেই প্রিন্টারটা কাগজের বুকে নামিয়ে আনল লেখা।

এটা ছিল প্র্যাকটিস। কারণ কাজটা শেষ হতেই আমার উপন্যাসের লেখা শেষ পাতাটা হাজির হলো স্ক্রিনে। তারপর আমাকে বাদ দিয়েই একের পর এক শব্দ ফুটে উঠতে লাগল।

ওয়ার্ড-প্রসেসরটা পরিষ্কার আমার স্টাইলে লিখতে শিখে গেছে। ঠিক আমি যেভাবে লিখি। কিন্তু আমার চেয়েও ভালোভাবে।

দারুণ! আর কোনো কাজ নেই। ওয়ার্ড-প্রসেসর আমার নামে লিখছে। আমি এভাবেই চলতে দিতে পারি। চমকে দেব আমার সমালোচকদের। দেখব রয়ালটির জোয়ার।

এতদূর পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু খামোকা তো আমেরিকার সবচেয়ে দ্রুতপ্রজ লেখক হইনি আমি। কোনো এক কারণে লিখতে ভালোই বাসি আমি। কেবল এ কাজটাই করতে চাই।

এখন আমার ওয়ার্ড-প্রসেসরই যদি আমার লেখার কাজ সেরে দেয়, বাকি জীবন আমি কী করব?