মোটা হওয়া কোনো অপরাধ নয়। আমিও কোনো অপরাধ করিনি। আমি জন্মেছিলামই মোটা (মা বলেন)। এক বছর বয়সে আমি বিশ্ব শিশু দিবসে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে ময়মনসিংহ জেলার সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান শিশুর পুরস্কার পেয়েছিলাম। আমাদের বাসার ড্রয়িংরুমে সেই পুরস্কার বিজয়ের ছবি শোভা পাচ্ছে। মায়ের কোলে আমি। একজন মোটা শিশু। আমার গলায় একটা মেডেল। আমি মেডেলটা খাচ্ছি।
আমি খেতে পছন্দ করি, এই ছবিতে তা স্পষ্ট। কিন্তু বুদ্ধি হওয়ার আগে থেকেই আমি খাদ্যরসিক, এ জন্য তো আমি দায়ী না। আর আমি যে নয় পাউন্ড ওজন নিয়ে জন্মেছিলাম, সে জন্যই বা কী করে আপনি আমাকে দায়ী করতে পারেন। এ জন্য যদি দায়ী কাউকে করতে হয়, তা হলো আমার বাবা-মা। আমার মা কেন বেশি বেশি খেয়েছিলেন? তাই তো আমি মোটা শিশু হিসেবেই জন্ম নিয়েছিলাম। অবশ্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আমার মোটাত্বকে সুস্বাস্থ্য হিসেবেই গণ্য করেছিল।
এখন আমার এই বিশাল বপু লইয়া আমি কী করিব?
মহিষের শিং মহিষের কাছে ভারী লাগে না। আমার শরীরটাও আমার জন্য কোনো বোঝা নয়। কিন্তু আমার চারপাশের পৃথিবী আমার শরীরটাকে ভুলতে পারে না। তারা এটাকে নিয়ে নানা রকমের পরিহাস করে। আমি গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দিতে গেলাম। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করছেন। তিনি আমাদের বোঝাচ্ছেন থিয়োরি অব রিলেটিভিটি। আমি সেন্ট যোসেফ স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ি। আমিও গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছি। রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের মাঠে এই উৎসব হচ্ছে।
আমার একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে। প্রশ্নটা হলো, চলন্ত ট্রেনে একটা মশা আছে। মশাটা কোথাও বসে নেই। সে উড়ছে। বাতাসে উড়ছে। ট্রেনটা চলছে। মশাটা ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে উড়ছে কেন?
মশার তো গতিজড়তা থাকার কথা নয়। কারণ, সে তো ট্রেনের সঙ্গে আটকে নেই।
আমি এই প্রশ্নটা করার জন্য দাঁড়াব কি দাঁড়াব না বুঝতে পারছি না। আমি যে মোটা, এই কথাটা আমি ভুলে থাকতে পারি না। এত ছেলেমেয়ের মধ্যে দাঁড়ানোটা কঠিন। আমাকে দেখলেই ছেলেমেয়েরা খিলখিল করে হাসতে শুরু করে দেবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলছেন, আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডে প্রশ্ন করার একটা নিয়ম আছে। আমরা একজন ছেলেকে সুযোগ দিলে পরে একজন মেয়েকে সুযোগ দেব। একজন লম্বাকে সুযোগ দিলে পরের জন হবে বেঁটে। একজন শুকনো সুযোগ পেলে পরের জন হবে মোটা।
আমার মনে আশা জাগল। আমার চেয়ে মোটা কেউ নেই...
সত্যি সত্যি একটা রোগা-পটকা মেয়ে প্রশ্ন করছে। তার প্রশ্নটাও দারুণ। স্যার, আমরা আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখি। বামটা ডান, ডানটা বাম হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রতিবিম্ব আমরা উল্টো দেখি। কিন্তু এটা কেন শুধু ডানে-বাঁয়ে ওল্টে। ওটা কেন ওপরে-নিচে উল্টে যায় না। তাহলে স্যার, আমি যদি কাত হয়ে শুয়ে আয়না দেখি, তাহলে কি ডান-বাঁয়ের সমস্যাটা আর থাকবে না?
কঠিন প্রশ্ন। আমার মাথা এই প্রশ্ন শুনে ঘুরতে লাগল। তাই তো। প্রতিবিম্ব কেন ডান-বাঁয়ের ঝামেলা করে, ওপর-নিচের ঝামেলা করে না!
এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন অধ্যাপক কায়কোবাদ। তিনি বলছেন, তোমার সামনে একটা আয়না রাখো। আয়নাটা একটা কাগজ দিয়ে ঢাকা। তুমি এর সামনে দাঁড়ানো। তোমার পেছন থেকে লাইট দাও...
আমি মন দিয়ে শুনছি। এমন সময় আমার পাশে বসা বিল্টু বলল, মাসুম, শুঁটকি বেগমের প্রশ্নের পরেই কিন্তু তোর পালা। জাফর ইকবাল স্যার বলে রেখেছেন, ছেলের পরে মেয়ে, শুকনার পরে মোটা। এবার তুই হাত তুলবি।
কায়কোবাদ স্যার প্রশ্নের উত্তর কী দিলেন, শোনা হলো না। আমি হাত তুলব। তুলব নাকি তুলব না? হাত তুললেই তো ছেলেমেয়েরা হাসতে শুরু করবে।
জাফর ইকবাল স্যার নিজেই বললেন, আমরা একটা মেয়ের প্রশ্ন শুনলাম। এবার একটা ছেলে।
শত শত ছেলে হাত তুলল।
স্যার বললেন, একটা শুকনো মেয়ে প্রশ্ন করেছে, তারপর আমরা একটা মোটা ছেলের কাছে প্রশ্ন নেব।
আমার সেন্ট যোসেফের ক্লাস সেভেনের বন্ধুরা আমাকে চেপে ধরল। মাসুম, মাসুম...
তারাই জোর করে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল। আমি হাত তুললাম।
সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ থেকে খিলখিল হাসির শব্দ আলপিনের মতো এসে আমার সমস্ত শরীরে বিঁধতে লাগল। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম, ধরণি দ্বিধা হও। আমি মুখ লুকিয়ে বাঁচি।
ধরণি আমার কথা শোনার জন্য বসে নেই। কাজেই সে দ্বিধাবিভক্ত হলো না। আমি আমার মোটা শরীরটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
স্যার বললেন, তোমার নাম বলে প্রশ্ন বলো।
আমার হাতে চলে এল একটা কর্ডলেস মাইক্রোফোন। আমি মাইকে ফুঁ দিয়ে আমার প্রশ্ন বলতে শুরু করলাম। চারদিক থেকে নানা ধরনের মন্তব্য আসছে।
কোন দোকানের চাউল খাও বাবা?
মরলে গরুর গাড়ি লাগবে।
দরজা না কাটলে বেটা ঘরের ভেতরে ঢুকব ক্যামনে?
‘স্যার আমার নাম মাসুম আকন্দ। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি।’
‘তোমার প্রশ্ন বলো।’
‘স্যার। একটা চলন্ত ট্রেনে আমি যদি একটা পয়সা ওপরের দিকে ছুড়ে মারি, সেটা কি আমার হাতে এসে পড়বে, নাকি পেছনের দিকে চলে যাবে?’
আমার প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ করে গেল।
বিল্টু বলল, তুই তো বেটা একটা আইনস্টাইন। মোটা আইনস্টাইন।
জাফর স্যার বললেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমিই দিচ্ছি। এই যে পৃথিবীটা, এটা কিন্তু ঘুরছে। নিজের চারদিকে একবার ঘুরছে। আবার বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। তাহলে আমাদের পাখি, প্লেন, মশা, মাছি—এরা কি সব পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ে যায়?
‘না স্যার।’ সবাই একযোগে চেঁচিয়ে উঠল।
তেমনি চলন্ত ট্রেনে যারা থাকে, তাদের সবারই গতিজড়তা হয়। তখন যদি আমি একটা পয়সা ওপরে ছুড়ে মারি, সেটা আমার সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকবে এবং আমার হাতে এসেই পড়বে।
সবাই কলরোল করে উঠল। গুঞ্জন, ফিসফিসানি। কেউ বিশ্বাস করছে, কেউ বিশ্বাস করছে না। স্যার বললেন, এটা হবে গতিজড়তার জন্য।
আমার আরেকটা প্রশ্ন ছিল। সেটা করব কি না, ভাবছি। মাইক আমার হাতে। এই সুযোগ। আমি বললাম, স্যার, কিন্তু আমি যদি ফ্যান্টাসি কিংডমে রোলার কোস্টারে উঠি এবং চলতে শুরু করি এবং একটা পয়সা নিক্ষেপ করি, তাহলে কী হবে?
স্যার বললেন, এটা এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ প্রশ্ন। তুমি আসো মঞ্চে। একটা বই নিয়ে যাও। এই বইটা তোমার হাতে তুলে দেবেন খোদাদাদ স্যার।
আমি প্রমাদ গুনলাম। আবার মঞ্চে যাওয়ার দরকার পড়ল কেন? যদিও আজকের শ্রেষ্ঠ প্রশ্নটা আমার, শুনে ভীষণ আনন্দও হচ্ছে। আমি মঞ্চের দিকে ছুটতে লাগলাম সাধ্যমতো। ধপধপ আওয়াজ হতে লাগল।
মঞ্চে ওঠার জন্য একটা কাঠের সিঁড়ি পাতা হয়েছে। আমি সেই সিঁড়িতে পা রেখে উঠছি। মটাস করে সিঁড়ি গেল ভেঙে। আমি প্রপাতধরণিতল। মঞ্চের মধ্যে হুটোপুটি লেগে গেল।
কে এক রসিক উপস্থাপক মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিল, কে আছিস, ওকে তোল, মাটি ব্যথা পাচ্ছে।
আমার শরীরের কোথাও তেমন ব্যথা লাগেনি। কিন্তু আমি মরমে মরে যেতে লাগলাম। আমি উঠে দাঁড়ালাম। চোখে অন্ধকার দেখছি। তারপর কানে আসতে লাগল হাসির শব্দ। চারদিক থেকে আসছে শুধু হাসি আর হাসি।
একদল ছেলে আমাকে কাঁধে করে মঞ্চে তুলে দিল। আমার কোনো কথাই তারা শুনছে না। আমার কান থেকে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি কোনোরকমে স্যারদের সামনে গিয়ে পুরস্কারের বইটি হাতে নিলাম। এবার নামব কেমন করে? হালকা-পাতলা ছেলেগুলো চটপট মঞ্চ থেকে নেমে পড়ছে লাফিয়ে। আমি তো লাফাতে পারি না। আমি লাফালে সত্যি সত্যি ধরণি ব্যথা পাবে।
এরই মধ্যে কোথা থেকে কাঠের তৈরি বিজয়স্তম্ভ আনা হয়েছে। এটা অনেকটাই সিঁড়ির মতো। বেশ শক্তপোক্তও আছে। তাতে পা দিয়ে আমি মঞ্চ থেকে নেমে এলাম।
একটু পরে পুরস্কার বিতরণী পর্ব শুরু হবে। মঞ্চ সাজানো হচ্ছে। শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু গান গাইছেন খালি গলায়, আমি বাংলার গান গাই। সবাই তাঁর সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে।
আমি বসে আছি প্লাস্টিকের চেয়ারে। গানের সঙ্গে পা ঠুকে ঠুকে তাল দিচ্ছি। সেটাই হয়তো একটা বড় ভুল হয়ে গেল। আমার চেয়ারের পেছনের একটা পা নরম মাটিতে গেঁথে যেতে লাগল। একটা সময় আমি ধপাস করে গেলাম পড়ে।
এবার আমার ভীষণ কান্না পেল।
এই সময় গেটের দিকে ভীষণ গোল দেখা দিল। সবাই সেদিকে দৌড়াচ্ছে। ব্যাপার কী? ব্যাপার হলো, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আসছেন। আমি সাকিবকে খুবই পছন্দ করি। কিন্তু আমার সেদিকে তাকানোর সময় নেই। আমার নিজের ইজ্জত সামলানো নিয়ে কথা। আসলে আমার প্যান্টের নিচের দিকটা ফেঁসেও গেছে। আমি শার্ট বের করে ঝুলিয়ে দিলাম। তাতে যদি ইজ্জত খানিকটা রক্ষা পায়।
সবাই যখন সাকিবকে ঘিরে ফেলেছে মৌচাকের চারপাশের মৌমাছির মতো, তখন আমি আলতো করে বেরিয়ে পড়লাম। (আলতো কথাটাও ঠিক হলো না। আমি হাঁটলে মাটি কেঁপেই ওঠে।)
রিকশা সহজে পাচ্ছি না। এ অভিজ্ঞতা আমার নতুন নয়। রিকশাওয়ালারা এই রকম মোটা মানুষকে নিতে চায় না। একজনের দয়া হলো। তিনি আমাকে নিতে রাজি হলেন। আমি মোহাম্মদপুরে আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হলাম। মা জিগ্যেস করলেন, অনুষ্ঠান শেষ? আমি বললাম, জি।
আমি নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। মা বললেন, আয়, খেয়ে নে।
আমি বললাম, খেয়েছি। আর কিছু খাব না।
শুয়ে শুয়ে কাঁদছি। আমার জীবনটা এত অপমানের কেন?
কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাঙল।
বিল্টু ফোন করেছে। তাকিয়ে দেখি সাতটা মিসড কল। ফোন রিসিভ করলাম। ‘মাসুম, কই তুই? তাড়াতাড়ি আয়। তুই জুনিয়র শাখায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিস। ম্যাথ স্যার তোকে খুঁজছে।’
আমি বললাম, আমি যাব না।
স্যারের সঙ্গে কথা বল।
না, বলব না।
হ্যালো, স্যারের গলা। স্যার বললেন, মাসুম চলে আসো। আমরা এখান থেকে স্কুলে যাব। প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে ফটো তুলব। আসো...
অগত্যা আমাকে উঠতে হলো। পুরস্কার পেয়েছি। খানিকটা সান্ত্বনাও পেলাম অন্তরে।
গেলাম স্কুলে।
তখনো পুরস্কার বিতরণী শেষ হয়নি। কলেজ পর্যায়ের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পুরস্কার আগেই দেওয়া হয়েছে। আমার পক্ষ থেকে সাইফুল পুরস্কার নিয়েছে। সে মেডেলটা আমার গলায় ঝুলিয়ে দিল।
মাইকে ঘোষণা আসছে। সব পুরস্কার শেষ। এবার স্পেশাল পুরস্কার। সেরাদের সেরা।
সেরাদের সেরা হয়েছে মাসুম আকন্দ।
এ কী। এ যে আমার নাম।
আমাকে কি আবার মঞ্চে উঠতে হবে?
এবারও কি সিঁড়ি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে?
সাবধানে পা ফেলে মঞ্চে উঠলাম। আমার বন্ধুরা চিৎকার করছে মাসুম মাসুম।
কয়েক দিন পরের কথা। আমরা কয়েকজন বসেছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ক্যানটিনে। আমরা একটা সায়েন্স ফেস্টিভাল করব। ভিকারুননিসা স্কুল থেকে দুটো মেয়ে এসেছে। একজনের নাম নীতু, আরেকজনের নাম সায়মা।
এ কথা ও কথায় নীতু বলল, মাসুম, আমি কিন্তু তোমার ফ্যান।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, মানে?
মানে আমি তোমার ফ্যান। এফ এ এন।
ফ্যান মানে তো পাখা।
সে হেসে বলল, আমি তোমার পাঙ্খাই।
ওর হাসিটা এত সুন্দর। চোখ দুটোও ওর হাসছে।
বিজ্ঞান উৎসবের নানা পরিকল্পনা করে আমরা বিদায় নিচ্ছি। বাংলামোটর মোড়ে আমরা রিকশা নেব। নীতু আর সায়মাও রিকশা খুঁজছে। আমরাও।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমাদের তিন বন্ধুকে এক রিকশায় নিতে একজন রিকশাওয়ালা রাজি হলো। আমি, সাইফুল আর বিল্টু একই রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশাওয়ালা বলল, আমি চারটা দুই মণি গমের বস্তা রিকশায় নিয়া টানতে পারি। আপনাগো আর কী এমন ওজন?
নীতু আর সায়মাকে বিদায় বলে রিকশায় উঠেছি। রিকশা কেবল চলতে শুরু করেছে। আমার বারবার মনে হচ্ছে, পেছনে তাকিয়ে নীতুর মুখটা দেখি। দেখছি না।
ও আমার ফ্যান। আমি হ্যাংলার মতো ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না।
ঠিক এই সময় প্রচণ্ড বোমা বিস্ফোরণের শব্দ হলো। আমাদের রিকশার চাকা ফেটে গেছে।
সাইফুল, বিল্টু হাসছে।
আমি লজ্জায় নীতুর মুখের দিকে তাকাতে পারলাম না। ও নিশ্চয়ই হাসছে।
নীতুর সঙ্গে আবার দেখা হলো। ফেস্টিভাল উপলক্ষেই। নীতু বলল, মাসুম, তুমি সাঁতার জানো?
না।
জানো, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছেলে সমুদ্রে ভেসে গেছে।
শুনেছি। ভেরি স্যাড।
তাহলে সাঁতার জানো না কেন?
শেখা হয়নি তাই।
শিখে নাও। তাহলে তো তোমার ওজনটাও কমে।
তাই তো। এইভাবে তো ভাবা হয়নি।
আমি এখন বিজিবির পুকুরে সাঁতার শিখি। বেশ কয়েক দিন যাওয়ার পরে বুঝতে পারছি, ওজন বেশ কমে গেছে আর সাঁতারও বেশ ভালোই কাটছি।
ওজন কমানোটা নেশার মতো হয়ে গেল। খাওয়া কমিয়ে দিলাম। রোজ দৌড়াই।
আমার ওজন কমছে। বাহু দুটোয় পেশি দেখা যাচ্ছে।
নীতু বলেছে, আমাকে সে ট্রিট দেবে। কেএফসি খাওয়াবে। আমি বললাম, আমি ভাজাপোড়া খাই না। বরং চলো, আমরা বিডিসাইক্লিস্টস গ্রুপে জয়েন করি।
অলংকরণ: মাহফুজ রহমান