পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে রেজওয়ানের কান গরম হয়ে গেল। হাত ঘামতে শুরু করল। হালকা ব্যথা অনুভূত হলো ঘাড়ে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার, রেজওয়ান বুঝতে পারল, তার বাথরুমে যাওয়া দরকার। ছোট কাজ নয়, বড় কাজের চাপ!
প্রশ্নপত্রে লেখা আছে—
পি থ্রি বি গ্রহের বাসিন্দা মিরিহিরিহিরির সাক্ষাৎকার নাও। তার সঙ্গে কথা বলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো।
১. পি থ্রি বির ভর কত?
২. অবসর সময়ে বিনোদনের জন্য মিরিহিরিহিরি কী করে?
৩. মানুষের সঙ্গে প্রথম কবে তাদের যোগাযোগ হলো?
৪. মিরিহিরিহিরির প্রিয় খাবার কী?
এ রকম মোট ১২টা প্রশ্ন আছে। সময় আধা ঘণ্টা। প্রশ্নপত্রের নিচে একটা বার কোড দেওয়া। টেবিলের ওপর রাখা হলোগ্রাফিক স্ক্রিনের সামনে কাগজটা ধরলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিরিহিরিহিরির কাছে ভিডিও কল চলে যাবে। তার সঙ্গে আলাপ করে প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেওয়াই যায়। মুশকিল হলো পি থ্রি বি গ্রহের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগের অধ্যায়টা রেজওয়ানের পড়া হয়নি। ভাষাটা সে জানে না। ইন্টার গ্যালাকটিক কমিউনিকেশন-পার্ট থ্রি বইতে ২৪টা অধ্যায়। ২৩টা অধ্যায় রেজওয়ান খুব ভালোভাবে পড়েছে। শুধু একটা অধ্যায় সে বাদ দিয়েছিল, সেই এক অধ্যায় থেকেই প্রশ্ন এসেছে। পোড়া কপাল আর কাকে বলে!
দেরি না করে স্ক্রিনের সামনে কাগজটা ধরল রেজওয়ান। সেখানে নানা রকম সংখ্যার ছোটাছুটি দেখা গেল। একটু পরই স্ক্রিনে ভেসে উঠল মিরিহিরিহিরির মুখ। ‘মুখ’ বলা অবশ্য ভুল হলো। মিরিহিরিহিরি দেখতে অনেকটা হাওয়া বের হয়ে যাওয়া ফুটবলের মতো। তার শরীরে কোনটা মুখ, কোনটা হাত, কোনটা চোখ—এসব বোঝা মুশকিল। রেজওয়ান কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকল। তারপর মিরিহিরিহিরির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসার চেষ্টা করল। পি থ্রি বি গ্রহের ভাষা অনুযায়ী মিষ্টি হাসির অন্য কোনো অর্থ আছে কি না, কে জানে! ইন্টার গ্যালাকটিক কমিউনিকেশন-পার্ট থ্রি বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে রেজওয়ান পড়েছে, পি থ্রি বি গ্রহের প্রাণীগুলোর বুদ্ধিমত্তা ৯ মাত্রার। কোনো কোনো বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, ওরা নাকি মানুষের ভাষা বুঝতে শিখে গেছে। তবে ব্যাপারটা এখনো প্রমাণিত হয়নি।
রেজওয়ান অসহায়ের মতো আশপাশে তাকাল। সবাই মন দিয়ে লিখছে। কেউ কেউ মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। পুরো হলে দুটো পরীক্ষকুড্রোন উড়ে বেড়াচ্ছে। ড্রোনগুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে আশপাশের কারও সাহায্য নেওয়া সহজ নয়।
অন্যদের যেন সমস্যা না হয়, সে জন্য মিরিহিরিহিরির সঙ্গে কথোপকথন চালাতে হবে মেসেজের মাধ্যমে। কিন্তু রেজওয়ান লিখবে কী?
এমন সময় টুং করে শব্দ হলো। স্ক্রিনে একটা মেসেজ ভেসে উঠেছে। সর্বনাশ! মিরিহিরিহিরি নিজেই কথোপকথন শুরু করেছে। এখন এপাশ থেকে একটা কিছু না বলতে পারলে ব্যাপারটা মোটেই ভালো দেখাবে না।
স্ক্রিনে কতগুলো সংখ্যা দেখা যাচ্ছে। একেকটা একেক রঙের।
এর মানে কী!
রেজওয়ানের পাশে বসেছে চম্পা। ক্লাসে সবাই ওকে চাম্পু বলে ডাকে। রেজওয়ান চট করে দেখে নিল, আশপাশে কোনো ড্রোন নেই। তারপর চাপা গলায় চম্পার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল।
‘শশশ্...হুশ হুশ! চাম্পু! অ্যাই চাম্পু! চাম্পু! একটু শোন না! চাম্পু...’
বেশ কয়েকবার ডাকাডাকির পর চম্পা ফিরে তাকাল। চাপা গলায় বলল, ‘কী?’
স্ক্রিনটা হালকা একটু বাঁকা করে চম্পাকে মেসেজটা দেখাল রেজওয়ান। ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল, এর মানে কী?
আড়চোখে চম্পা ভালো করে মেসেজটা দেখল। আঙুলের কর গুনে কী যেন হিসাব করল। তারপর কাগজে কিছু একটা লিখে কাগজটা আলতো একটু উঁচু করে ধরল।
রেজওয়ান দেখল, চম্পা লিখেছে, ‘HELLO REZWAN’।
আরে! মিরিহিরিহিরি ওর নাম জানে! অদ্ভুত তো!
যাক, একটা বাক্যের মানে অন্তত বোঝা গেছে। কিন্তু তারপর? রেজওয়ান পাল্টা মেসেজটা লিখবে কী করে? মহাবিপদ! এদিকে ড্রোন দুটো মৃদু ঘড়ঘড় শব্দ করে উড়ে বেড়াচ্ছে।
রেজওয়ান আবার চাপা গলায় ডাকল, ‘চাম্পু! চাম্পু শোন! চাম্পু! হিশ হিশ! ভাষাটা বুঝব কী করে? সূত্রটা কী? অ্যাই চাম্পু!’
চম্পা মনে হলো খুবই বিরক্ত। ইশারায় সে বলার চেষ্টা করল, ‘ধ্যাত, ঝামেলা করিস না তো।’
রেজওয়ান নাছোড়বান্দা। ‘চাম্পু! প্লিজ দোস্ত। বল না! চাম্পু! এই চাম্পু!’
এদিকে মিরিহিরিহিরির আকৃতি একবার বড় হচ্ছে, ছোট হচ্ছে। মুহূর্তে মুহূর্তে রং বদলে যাচ্ছে। ব্যাটা কী করছে, কী বলছে আর কী ভাবছে, বোঝার উপায় নেই।
রেজওয়ান ইশারায় চম্পাকে বলার চেষ্টা করল, ‘তোকে আইসক্রিম খাওয়াব। প্লিজ বল। প্লিজ দোস্ত।’
এবার মনে হয় চম্পার খানিকটা দয়া হলো। ‘উফ’ টাইপের একটা শব্দ করে সে কাগজে ঘচঘচ করে একটা কিছু লিখল। তারপর কাগজটা উঁচু করে দেখাল।
চম্পা লিখেছে
A B C D
E F G H
I J K L
M N O P
Q R S T
U V W X
Y Z
ধুর ছাতা! এই বিপদের সময় চম্পা তাকে এ বি সি ডি শেখানো শুরু করল কেন? ভাবল রেজওয়ান। প্রশ্নটা যখনই সে চম্পাকে করতে যাবে, তখনই একটা ড্রোন উড়ে এসে ওদের দুজনের মাঝখানে স্থির হয়ে ভাসতে থাকল। এর অর্থ হলো ব্যাটা বিষয়টা টের পেয়েছে। উফ! এখন উপায়?
রেজওয়ান টের পেল, তার পেটে চাপ বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু আধা ঘণ্টার পরীক্ষায় বাথরুমে যাওয়ার নিয়ম নেই। এমন সময় আবারও টুং করে শব্দ, আবার একটা মেসেজ দেখা গেল স্ক্রিনে। এবার মিরিহিরিহিরি লিখেছে—
মহা জ্বালা! ব্যাটা বলে কী!
চুল খামছে ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকল রেজওয়ান। কী বলছে মিরিহিরিহিরি?
উত্তর
মিরিহিরিহিরি বলেছে: WHO IS CHAMPU
একেক লাইনের একেক রং। সংখ্যা দিয়ে বোঝানো হয়েছে একেকটা বর্ণ। অর্থাৎ গোলাপি রঙের ৩ মানে হলো ড, কালো রঙের ৪ অর্থ হলো ঐ। এভাবে বাকিগুলো মিলিয়ে নাও।
A(1) B(2) C(3) D(4)—লাল
E(1) F(2) G(3) H(4)—কালো
I(1) J(2) K(3) L(4)—নীল
M(1) N(2) O(3) P(4)—সবুজ
Q(1) R(2) S(3) T(4)—হলুদ
U(1) V(2) W(3) X(4)—গোলাপি
Y(1) Z(2)—বেগুনি
‘HELLO REZWAN’ বুঝলেই তুমি বাকিটা বুঝতে পারবে।