ভূতের কামড়
‘একদিন একটা ভূত আমায় কামড়ে দিয়েছিল।’ রনি আর সাদ অবাক হয়ে তাকাল সুজনের দিকে। রনি বলল, ‘যাহ্! ভূত বুঝি কামড়াতে পারে?’
সাদ বলল, ‘কোথায় কামড়েছে দেখা। নিশ্চয়ই বলবি কামড়ের দাগটা আর নেই।’
সুজন মুচকি একটা হাসি দিল। কিন্তু হাসিটা কেমন ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে। সুজনটা অমন ভুতুড়ে হাসি শিখল কোত্থেকে? চোখজোড়া কপালে তুলে দিয়ে সুজন বলল, ‘কামড়ের দাগটা আছে।’
‘আছে!’
‘আছে!’
‘হুম। আছে।’
‘কই? দেখি?’
‘এখন নেই। যখন কামড়ের দাগটা দেখা দেবে, তখন দেখাব।’
সাদ বলল, ‘কামড়ের দাগ আবার দেখা দেয় নাকি? এটা কি বাতের ব্যথা পেয়েছিস?’
রনি বলল, ‘আমার দাদিরও বাতের ব্যথা আছে জানিস? তবে সব সময় থাকে না। কেবল...’
পুরোটা শেষ করতে পারল না রনি। তার আগেই সুজন বলল, ‘আমার ভূতের কামড়ের দাগও তখন দেখা দেয়। পূর্ণিমা আর অমাবস্যায়। পূর্ণিমায় কামড়ের দাগটা স্পষ্ট দেখা দেয়। ঠিক পূর্ণিমার সময়টায়। একঝলকের জন্য। চাইলে তোরা দেখতে পারিস। সামনের পূর্ণিমাতেই তোদের দেখাব।’
রনি জানতে চাইল, ‘আর অমাবস্যায়?’
এবার ভুতুড়ে কণ্ঠে সুজন বলল, ‘সেটা জানতে চাস না দোস্ত। জানতে না চাওয়াটাই মঙ্গল। আমাদের সবার জন্য।’
সাদ এবার ঘাবড়ে গেল। কিন্তু সেটা বুঝতে দিতে চাইল না। জোর গলায় বলল, ‘মানে?’
রনিরও মনে হলো, ওর ঘাড়ের লোমগুলো শির শির করে উঠল যেন! তবে কি! নাহ্। এ নিয়ে বেশি ভাবতে চায় না ও। বেশি ভাবতে গেলেই বরং রাতের ঘুমটা হারাম হয়ে যাবে।
কিন্তু পূর্ণিমা কবে?
পূর্ণিমার খোঁজে নেমে পড়ল দুজন। সুজনের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। ও শুধু দুই বন্ধুর কাণ্ডকীর্তি উপভোগ করছে। কিন্তু ক্যালেন্ডারগুলোয় পূর্ণিমার দিন-তারিখ দেওয়া নেই।
ওরা ছিল সাদদের বাসায়। বাসার এ ঘর ও ঘর ছুটে বেড়াচ্ছে সাদ। ওর এই ছুটে বেড়ানো দেখে কপাল কোঁচকাল আপু। আপুটা আবার সাদের চেয়ে খুব একটা বড় নয়। এই বছর তিনেকের বড়। তবে মাতব্বরিতে মাকেও হার মানায়। ও কিছু করতে গেলেই আপু প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে যায়। বার্লিন দেয়ালের মতো সামনে এসে দাঁড়ায়।
সাদকে দেখেই বড্ড বিরক্ত আপু। তার ওপর সাদের দুটো বন্ধু এসেছে। সেই তখন থেকে ওরা সাদের ঘরে। কী করে কে জানে! কপাল কুঁচকে আপু বলল, ‘কিছু খুঁজছ সাদ?’
‘হুম।’
‘কী খুঁজছ?’
‘ক্যালেন্ডার।’
‘ক্যালেন্ডার! তোমার ঘরেই তো দুটো ক্যালেন্ডার। একটা ডেস্ক ক্যালেন্ডার, একটা দেয়াল ক্যালেন্ডার। ডেস্ক ক্যালেন্ডারটা নিয়ে আমার সঙ্গে তুমি কী করেছিলে, তোমার মনে নেই? আমি কিন্তু সারাজীবনেও ভুলব না।’
বিরক্ত হলো সাদ। ‘ধ্যাৎ তানজিনা...’
এটুকু বলেই থেমে গেল সাদ। রাগ হলে আপুকে ও নাম ধরে ডাকে। কিন্তু এখন আপুকে রাগানো যাবে না কোনোভাবেই। দরকারটা যে ওরই।
জিবে কামড় দিয়ে সাদ বলল, ‘পূর্ণিমার দিন-তারিখ আছে এমন একটা ক্যালেন্ডার চাই। আছে তোমার কাছে?’
‘আমার ঘরে টেবিলের ওপর আছে। নিয়ে যাও।’
‘থ্যাংকস আপু। সত্যি তোমার মতো আপু হয় না।’
বলেই এক ছুটে ঢুকে গেল আপুর ঘরে। টেবিলের ওপর ক্যালেন্ডার। হুঁ। ওখানে পূর্ণিমা-অমাবস্যার দিন-তারিখও দেওয়া আছে। ক্যালেন্ডার নিয়ে এবার ছুটল নিজের ঘরে।
সাদ বলল, ‘এই যে দ্যাখ, ১২ তারিখ পূর্ণিমা।’
রনি বলল, ‘১২ তারিখ শুক্রবার। দিনটাও ভালো।’
সাদ বলল, ‘তাহলে ১২ তারিখ রাতে দেখা হচ্ছে।’
সুজন বলল, ‘ঠিক নিশ্চিত নই।’
সাদ আর রনি দুজনই অবাক হলো।
‘কেন!’
‘কেন!’
‘পূর্ণিমাটা কখন হবে? দিনে নাকি রাতে?’
সাদ আর রনির চোখ আবার কপালে। সাদ জানতে চাইল, ‘দিনের বেলাও পূর্ণিমা হয় নাকি?’
সুজন বলল, ‘পূর্ণিমা নিয়ম মেনে সময়মতো হয়। দিন বা রাত বলে কথা নয়।’
রনি বলল, ‘সেটা বুঝব কেমন করে?’
সুজন এবার খিক খিক করে হাসল। আবার সেই ভুতুড়ে হাসি। সাদ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তোর ভূতমার্কা হাসি থামা। একটুও ভালো লাগছে না।’
সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামাল সুজন। ভুতুড়ে কণ্ঠে বলল, ‘কখন পূর্ণিমা হবে আমি জানি।’
চমকে উঠল রনি আর সাদ। এ কি ওদের বন্ধু সুজন! নাকি ভূত। ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠতে যাবে, তখনই হঠাৎ থেমে গেল। সুজনটা হাসছে। মুচকি হাসি। বলল, ‘এটুকুতেই তোরা ভয় পেয়ে গেছিস? পূর্ণিমা রাতে কী করবি? তখন ভয়ে ফিট হয়ে যাবি।’
রনি বলল, ‘হব না। দেখিস।’
সাদ বলল, ‘খুব ভয়ের কিছু হবে?’
সুজন বলল, ‘জানি না। তবে পূর্ণিমা আর তিন দিন পর। সময় হচ্ছে রাত ১২টা ৯ মিনিট।’
রনি বলল, ‘বাব্বাহ! হিসাবটা একেবারে কড়ায়-গণ্ডায় রাখিস দেখছি।’
সুজন বলল, ‘রাখতেই হয়। আর হিসাবটা কড়ায়-গণ্ডায় নয়। সেকেন্ড-মাইক্রোসেকেন্ডের। তা ওই দিন থাকতে পারবি তো!’
মাথা নাড়ল দুজনই। থাকব।
২.
রাতটা ছিল জ্যোৎস্নামাখা।
রাত সোয়া ১১টার সময় সুজনের বাসায় হাজির রনি আর সাদ।
সুজনের নিজের কোনো ঘর নেই। দুই ভাই একটা ঘরে থাকে। ঘরটা ছোট। দক্ষিণ আর পশ্চিমে দুটো জানালা। মাঝে একটা খাট। দুপাশে দুটো টেবিল। ডান পাশের টেবিলটা সুজনের।
খাটের ওপর বসল সবাই। জানালা দুটো খোলা। খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে জ্যোৎস্না দেখা যায়। ঘরের ভেতর তখনো জ্যোৎস্নার আলো তেমন ঢোকেনি।
রাত ১২টা।
সুজনের ডান বাহুর দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। কামড়ের কোনো দাগ নেই।
১২টা ৫ মিনিট।
সুজনের ডান বাহু থেকে চোখ ফেরাচ্ছে না কেউ।
১২টা ৬ মিনিট।
হালকা কামড়ের দাগ দেখা যাচ্ছে। তাতেই চমকে উঠছে রনি আর সাদ।
১২টা ৭ মিনিট।
কামড়ের দাগটা ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।
১২টা ৮ মিনিট।
হুম। কামড়ের দাগ বোঝা যাচ্ছে।
১২টা সোয়া ৮! ভয়াবহ কামড়ের দাগ।
১২টা সাড়ে ৮।
কামড়ের দাগটা টাটকা হয়ে উঠছে।
১২টা পৌনে ৯। ওই তো কামড়ের দাগ।
১২টা ৯।
প্রচণ্ড ভয় পেল রনি আর সাদ। চোখের সামনে কামড়ের দাগ। অথচ একটু আগেও ওই দাগ ছিল না।
১২টা সাড়ে ৯।
মনে হচ্ছে এইমাত্র কামড় দিয়ে সরে গেছে কেউ। অথচ ওরা কাউকে দেখতে পায়নি। তবে কি সত্যি ওটা ভূতের কামড়? এবার আর অবিশ্বাস করতে পারছে না কেউ। ভয় আর আতঙ্কে স্থির হয়ে আছে রনি আর সাদ। কথা ফুটছে না মুখে। কী বলবে?
১২টা ১০ মিনিট।
কামড়ের দাগটা মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
১২টা ২০ মিনিট।
কামড়ের দাগটা নেই বললেই চলে।
সাড়ে ১২টা।
আবার আগের মতো হয়ে গেল সুজনের ডান বাহুর জায়গাটা।
রনি আর সাদের মধ্যে এতক্ষণ যে আতঙ্ক ছিল সেটাও কেটে গেল।
আর আতঙ্ক কাটতেই সুজনের হাতের জায়গাটা ধরতে চাইল রনি। সাদ বলল, ‘ধরিস না। ওখানে ভূতের কামড়।’
সুজন বলল, ‘এখন নেই। তবে...’
রনি বলল, ‘তবে! এরপর আরও তবে আছে?’
সুজন বলল, ‘আছে। আজ তোরা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলি, তাই না?’
এবার স্বীকার করল দুই বন্ধু। হুম।
সাদ জানতে চাইল, ‘তবেটা কী?’
সুজন বলল, ‘অমাবস্যার রাতের জন্য তৈরি হয়ে থাক। অমাবস্যার সময় তোরা আরও চমক দেখবি।’
রনি বলল, ‘এর চেয়েও?’
‘হুঁ। এর চেয়েও। সেটা সময় হলেই দেখতে পাবি।’
‘সময়টা হবে কবে?’
‘১৫ দিন পর। ২৬ তারিখ। সন্ধা ৬টা ১৮ মিনিটে।’
সাদ বলল, ‘এখন কি আর সেকেন্ডের হিসাব নেই?’
‘না।’
‘কী হবে তখন?’
‘নিজের চোখেই দেখতে পাবি।’
৩.
এমনিতে ১৫ দিন বেশি সময় নয়। দেখতে দেখতে চলে যায়। কিন্তু ওই ১৫ দিন যেন কাটতেই চাইছে না ওদের। অথচ এমনিতে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার কোনো খবরই ওরা কেউ রাখে না।
শহরের অমাবস্যা পূর্ণিমার মতোই। বোঝা যায় না। তবে পূর্ণিমার সময় আকাশে তাকালে টের পাওয়া যায়। অমাবস্যায় তা-ও টের পাওয়া যায় না।
পূর্ণিমার মতো অমাবস্যারও আলাদা সৌন্দর্য আছে। কৃত্রিম আলোবিহীন এলাকাতেই কেবল সে সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
অমাবস্যার রাতে কোথায় বসা যায়? শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো রনির বাসায় বসবে সবাই। রনিদের বাড়িটা বেশ খোলামেলা। বাড়ির চারপাশে অনেক দূর পর্যন্ত উঁচু কোনো ভবন নেই। তার ওপর রনি থাকে বাড়ির চিলেকোঠায়। দারুণ জায়গা।
রনির ঘরে আগে কখনো আসেনি সুজন। ঘরটায় ঢুকেই একটু থমকে গেল ও। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে সাদ বলল, ‘আজ দেখছি তুই নিজেই ঘাবড়ে আছিস। ঠিক বলেছি না?’
সুজন বলল, ‘ঠিকই বলেছিস। সত্যি আমি আজ ঘাবড়ে গেছি।’
রনি বলল, ‘বুঝেছি। জায়গাটা ভূতোপযোগী হয়েছে বলেই ঘাবড়েছিস। তাই না?’
সুজন রনির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘অনেক দিন পর তুই একটা সত্যি কথা বললি।’
সুজনের কথা শুনে চমকে উঠল দুজনই। কথায় নয়, কণ্ঠে। সুজনের কণ্ঠটা কেমন বদলে গেছে মনে হচ্ছে! নাকি ওরা ভুল শুনেছে।
সাদ ওর হাতঘড়ির দিকে তাকাল। ৬টা ৮ মিনিট। এখনো যথেষ্ট দিনের আলো আছে। সূর্য ডুববে ৬টা ২৫ মিনিটে। সন্ধ্যা হতে আরও অনেক দেরি। অমাবস্যাটা তাহলে দিনের আলো থাকতে থাকতে হচ্ছে। ভয়ানক কিছু না-ও হতে পারে। আবার হলেও সমস্যা নেই। ভূতেরা নাকি দিনকে বড্ড ভয় পায়। কিন্তু সুজনের ভূতটা তো অন্য রকম। আসে পূর্ণিমা আর অমাবস্যায়। দিন-রাত নিয়ে ভূতটার মাথাব্যথা নেই। তাহলে সব ভূত নিশ্চয়ই একরকম নয়।
৬টা ১০।
ভয়ার্ত চোখে রনি আর সাদের দিকে তাকাল সুজন। সুজনকে বলল রনি, তুই কি কোনো কারণে ভয় পাচ্ছিস?’
সুজন কিছু বলল না। আনমনা হয়ে আছে ও। কিছু কি ভাবছে ও?
রনির ঘরটা ছোট। তবে সুন্দর করে গোছানো। ছোট্ট একটা খাট। পাশে একটা টেবিল। একটা ওয়ারড্রোব। একটা বইয়ের তাক। দুটো চেয়ার। রনি আর সাদ চেয়ার দুটো দখল করে আছে। সুজন বসেছে খাটের ওপর রনি আর সাদের দিকে মুখ করে, পা ঝুলিয়ে।
৬টা ১৫ মিনিট।
হঠাৎ কেমন যেন হয়ে গেল সুজন। কাঁপতে শুরু করল। কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘দোস্ত, তোরা চলে যা। অবস্থা ভালো না।’
রনি বলল, ‘ধ্যাৎ। অভিনয় করার আর জায়গা পাস না। চুপ করে বসে থাক।’
সাদ বলল, ‘কিন্তু আমার মনে হয় সুজন ঠিক কথাই বলেছে। ওর কণ্ঠ কেমন বদলে গিয়েছে শুনছিস না!’
রনি বলল, ‘এত তাড়াতাড়ি ভয় পেয়ে গেলি?’
লজ্জা পেল সাদ। সত্যিই তো! ও তো ভয় পাওয়ার মতো মানুষ নয়।
৬টা ১৬।
হঠাৎ উল্টে পড়ল সুজন। ভাগ্যিস বিছানার ওপর বসা ছিল। চেয়ারের ওপর থাকলে চেয়ারসহ উল্টে পড়ত। ব্যথাও পেতে পারত। কিন্তু সুজন উল্টে পড়ল কেন? ওদের চোখের সামনেই ঘটল ঘটনাটা। মনে হলো কেউ বুঝি সুজনকে উল্টে ফেলে দিয়েছে। নাকি সুজন নিজেই অমন করে পড়েছে? বিষয়টা সন্দেহজনক।
৬টা ১৭।
চিতপটাং থেকে এবার কাত হলো সুজন। নিশ্চয়ই উঠে বসবে। কিন্তু এ কী! সুজন গড়াতে লাগল। একবার বিছানার এপাশে। আবার ওপাশে। অবাক হয়ে সুজনের গড়াগড়ি দেখতে লাগল রনি আর সাদ।
৬টা ১৮।
হঠাৎ উঁ উঁ শব্দ করতে লাগল সুজন। মনে হলো কেউ ওকে ঠেসে ধরেছে। কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছে না রনি আর সাদ। অদ্ভুত কণ্ঠে আর্তনাদ করতে লাগল সুজন, ‘আমাকে বাঁচা দোস্ত!’
৪.
তখনো দিনের আলো আছে। যতখানি আলো আছে, ঘরের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়। ঘরের চারপাশটা মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লাগল রনি আর সাদ। অস্বাভাবিক কিছুই চোখে পড়ছে না। কিন্তু সুজন অমন করছে কেন?
সাদ এগিয়ে এল। সুজনকে ছুঁয়ে দেখবে। কিন্তু সুজনের গায়ে হাত দেওয়ার আগেই, কেউ ওকে ধাক্কা মারল। প্রচণ্ড জোরে। ধাক্কার চোটে হুমড়ি খেয়ে পড়ল সাদ। আর হুমড়ি খেয়ে পড়েই ভয়ার্ত চোখে তাকাল রনির দিকে। রনির মুখ তখন শুকিয়ে গেছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। সাদকে মেঝে থেকে টেনে তুলবে নাকি সুজনকে ধরবে। সুজন তখনো আর্তনাদ করে যাচ্ছে, ‘আমাকে বাঁচা দোস্ত!’
সুজনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল রনি। হঠাৎ ডান পাশ থেকে একটা হ্যাঁচকা টান অনুভব করল ও। আর সঙ্গে সঙ্গে মেঝেতে পড়ে গেল কাত হয়ে। ভাগ্যিস নিজেকে সামলে নিয়েছিল।
সাদই ওকে টানটা দিয়েছিল। ফিস ফিস করে সাদ বলল, ‘ঘর থেকে বাইরে চল।’
রনি সাদের চেহারার দিকে তাকাল। প্রচণ্ড ভয়ার্ত মুখ।
রনিকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিল না সাদ। এক টানে নিয়ে এল বাইরে।
রনির ঘর থেকে বেরোলেই ছাদ। ছাদে কেউ নেই। আকাশের দিকে তাকাল রনি। সূর্যটা ডুবু ডুবু করছে। যেকোনো সময় ডুবে যাবে। আকাশে স্থির হয়ে আছে কিছু মেঘ। মেঘগুলোর পশ্চিম পাশটা গোলাপি।
মনে হলো কী একটা ঘোরের মধ্যে ছিল ওরা। তাই এতক্ষণ কোনো কথা বলতে পারেনি। সাদই মুখ খুলল, ‘এটা কী হলো!’
রনি বলল, ‘সুজনকে রেখে...’
সাদ বলল, ‘আ রে তাই তো! সুজনকে রেখে চলে এসেছি আমরা! চল চল।’
দৌড়ে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকল দুজন। আর ঢুকেই দেখে...
রনির পড়ার টেবিলের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে সুজন। ওর গায়ে কিছু নেই।
রনি বলল, ‘তুই ঠিক আছিস তো দোস্ত!’
সুজন বলল, ‘হুম। কিন্তু আমার শার্টটার কী অবস্থা করেছে দ্যাখ!’
বিছানার ওপর থাকা শার্ট দেখাল সুজন। নীল একটা শার্ট পরে এসেছিল ও। ছিন্নভিন্ন। ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করেছে কেউ।
সাদ বলল, ‘ওটা কে করেছে?’
সুজন বলল, ‘জানিস না? যে তোকে ধাক্কা মেরেছিল, সে-ই করেছে। আর দ্যাখ...’
ডান বাহুর সেই জায়গাটা দেখাল সুজন। ঠিক ১৫ দিন আগে যেখানে কামড়ের দাগ দেখা গিয়েছিল। সেখানে তাকাল রনি আর সাদ। আর তাকিয়েই অবাক হলো।
আগের কামড়ের ঠিক নিচে আরেকটা কামড়ের দাগ। একেবারেই নতুন। রক্ত বেরোয়নি, তবে চাপের চোটে রক্ত জমাট হয়ে আছে চামড়ার নিচে।
ভয় আর আতঙ্কে শিউরে উঠল রনি আর সাদ।
আরেকটা ভূতের কামড়!