তিন্নিদের বাড়িতে মহাবিপদ।
তিন্নির আব্বার ব্লাডপ্রেশার বেড়ে গেছে। তাঁর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে।
তিন্নি ছোট খালাকে ভিডিও কল করে ঘটনার ধারাবিবরণী দিচ্ছে।
খালা, তোমার কাছে ফায়ার ব্রিগেডের নম্বর আছে?
কেন? বাড়িতে আগুন লেগেছে?
না। বাড়িতে না। আব্বার মাথা গরম হয়ে গেছে। মা তার মাথায় পানি ঢালছে। পানি ঢালতে ঢালতে মার মাথাও গরম হতে শুরু করেছে। মার মাথার ওপরে তাওয়া রাখলে ডিম পোচ করা যাবে।
সমস্যাটা কী?
আব্বা তার অফিসের ভল্টের চাবি হারিয়ে ফেলেছেন।
চাবি হারানোর সঙ্গে মাথা গরমের সম্পর্ক কী?
অফিসে আজকে ঢাকা থেকে বস আসবেন। তাঁকে ভল্ট খুলে মূল্যবান ডকুমেন্টস দেখাতে হবে। আব্বার অফিসের ব্যাপার। আমি ঠিক বুঝি না। আব্বা অফিসে যাওয়ার আগে চাবি খুঁজতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, জায়গার চাবি জায়গায় নাই।
তারপর?
তারপর আব্বার মাথা খারাপ। তিনি বললেন, আমি ড্রয়ারের এই কোনাটায় এই খামের ভেতরে চাবি রাখি। চাবিটা কে নিল? মা বললেন, কে আবার নেবে! তোমার ড্রয়ারে কে হাত দেবে? তুমি মনে করে দেখো, কোথায় রেখেছ।
আব্বা এখানে খোঁজেন, ওখানে খোঁজেন। চাবি আর পাওয়া যায় না।
এখন আব্বার মাথা গরম হয়ে গেছে। মা তার মাথায় পানি ঢালছে। আমরা তিন বোন ভয়ে জড়সড় হয়ে আছি।
এর মধ্যে মার চিৎকার শোনা গেল। তিন্নি কী করছিস?
খালার সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করছি।
বাড়িতে আগুন লেগে গেছে। আর তুই ভিডিও চ্যাট করছিস?
হ্যাঁ মা।
কেন? আমার পেট থেকে এই রকম নিষ্ঠুর মেয়ে কীভাবে পয়দা হলো?
নিষ্ঠুর না মা। স্মার্ট।
কী বললি?
স্মার্ট। মা, স্মার্ট মানে বুদ্ধিমান। তোমার মেয়ে হলো বুদ্ধিমান।
থাবড় চিনস? এক থাবড়ে স্মার্টনেস গুলায়া পানি করে খাওয়াব।
মা। বাড়িতে বিপদ এলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।
তোর আব্বার অফিস টাইম পার হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার ইন্সপেক্টর অফিসে এসে দেখবেন, আফজাল সাহেব নাই। কেন নাই। কারণ, তার ভল্টের চাবি হারিয়ে গেছে। যে ম্যানেজার এই রকম মহামূল্যবান ভল্টের চাবি হারায়, তার চাকরি তো থাকবেই না। উল্টো তাকে পুলিশে দেওয়া হবে।
মা, অত অস্থির হয়ো না। আব্বা তো গোসল করার আগেও চাবিটা বের করে টেবিলে রেখেছিলেন।
মা বললেন, কে বলল।
আব্বাই তো বললেন, চাবিটা টেবিলের ওপরে রাখলাম। কেউ যেন নেড়ো না।
তারপর কী হলো? তুই নিয়েছিস?
আমি নিই নাই। কিন্তু আমি বের করে দিতে পারব, চাবি কে নিয়েছে।
পারবি বলছিস?
হ্যাঁ।
কীভাবে পারবি?
কীভাবে পারব, সেটা পরে বলব। আগে বলো, চাবিটা বের দিলে আমাকে কী দেবে?
আব্বা বালতি থেকে মাথা তুলে বললেন, যা চাবি, তা–ই পাবি।
সত্যি তো?
হ্যাঁ।
আগেই বলি।
বল।
আমরা সবাই মিলে জল জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে যাব। সেখানে আমরা বৃষ্টির একটা দিনে যা খুশি তা–ই করব। তোমরা আমাদের বাধা দিতে পারবে না।
আব্বা বললেন, তোদের যা খুশি তোরা তা–ই করিস। আমি বাধা দেব না। দে, আমার চাবি বের করে দে।
ছোট খালা তখনো ভিডিও চ্যাটে। তিনি বললেন, তিন্নি কেমন করে চাবি বার করবি রে?
খুব সোজা। আমি তখন একটা রবীন্দ্রসংগীত গাইছিলাম। আর সেলফি মোড দিয়ে সেটা ভিডিও করছিলাম। সেই ভিডিও ক্যামেরার মধ্যে আব্বার টেবিল আর চাবি সবই ধরা আছে। ভিডিওটা দেখলেই জানতে পারব।
তাহলে দেখ। কী হয় আমাকে জানা।
তিন্নি তার রবীন্দ্রসংগীতের ভিডিও ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে’ প্লে করল। মা, আব্বা, তিতলি, তিথিও এসে তার ল্যাপটপে উপুড় হয়ে দেখতে লাগল।
দেখা গেল, আব্বা চাবিটা টেবিলে রাখলেন। তারপর একটা শার্ট পরলেন। তার ওপর কোট চাপালেন। কোটের পকেটে চাবি রাখলেন। কোটটা তার পছন্দ হলো না। তিনি কোট বদলালেন। ছাইরঙের কোটের জায়গায় গায়ে উঠল কালো রঙের কোট।
তিন্নি তিতিল তিথি দৌড়ে কালো কোট বের করে পকেট থেকে চাবি বের করে দিল।
আব্বার মুখে বিজয়ীর হাসি। আমার মেয়েটা আসলেই স্মার্ট।
পরের শুক্রবারে বৃষ্টি হবে। ওয়েদার ডট কমে বলেছে।
আব্বা, মা, তিতলি, তিথি, তিন্নি, ছোট খালা, তার দুই ছেলে বান্টি আর মান্টি একটা বড় মাইক্রোবাসে চড়ে চলল ঢাকার বাইরে একটা রিসোর্টে। জল জঙ্গলের কাব্য—সেই রিসোর্টের নাম। গ্রামের মধ্যে একটা গ্রাম্য বাড়ি। খড়ের চালা। পাশে পুকুর। খাল। ধানখেত।
তারা সকাল সাতটায় রওনা হলো। তখন আকাশে মেঘ। রিসোর্টে পৌঁছার পর শুরু হলো বৃষ্টি।
আগের রাতে প্রচুর কাগজের নৌকা বানানো হয়েছিল।
বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে জলভরা উঠানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে ছুটতে লাগল সবাই। প্রাণভরে ভিজল। কেয়াপাতার নৌকা ভাসাল পুকুরে।
তারপর বৃষ্টি গেল থেমে। আকাশে উঠল রংধনু।
কাগজের নৌকা তারা ভাসাতে লাগল মাঠে জমা পানিতে।
অমনি একটা কই মাছ লাফিয়ে উঠল। রোদে ঝিকমিক করে উঠল মাছটার পিঠ।
মাছ ধরতে হবে। ছোট খালা বললেন। মা আর ছোট খালা গামছা দিয়ে মাছ ধরতে লাগলেন। ছোট ছোট কতগুলো পুঁটি মাছ ধরা পড়ল।
ভেজা কাপড় ছেড়ে ভালো কাপড় পরে নিয়ে সবাই দুপুরের খাবার খেতে বসল।
স্পেশাল আইটেম: মা আর খালার ধরা পুঁটি মাছ ভাজা।
বিকেলে তিন্নিরা পুকুরের পানিতে ছিপ ফেলে তেলাপিয়া মাছও ধরল।
কিন্তু মাছগুলো আবার পুকুরের পানিতে ছেড়ে দেওয়া হলো। মাছগুলো নাকি যথেষ্ট বড় হয় নাই।
বৃষ্টিতে ভেজার স্বাধীনতার মজার দিনটা শেষ হয়ে গেলে ওরা আবার ঢাকা ফিরে এল।
তোমরা কি বৃষ্টিতে ভেজার স্বাধীনতা চাও।
তিন্নি তার বন্ধুদের জিগ্যেস করে।
বন্ধুরা বলে, হ্যাঁ, চাই।
তিন্নি বলে, তাহলে স্বাধীনতা আদায় করে নাও। স্বাধীনতা কেউ কাউকে দেয় না। স্বাধীনতা আদায় করে নিতে হয়।