গুড্ডুবুড়াকে তোমরা চেনোই। গুড্ডুবুড়ার একটা সমস্যা আছে। সে একদম খেতে চায় না। তার বয়স ছয় বছর। খায় না বলে তাকে দেখতে লাগে আরও বাচ্চা। মনে হয়, তার বয়স চার বছর। আর তার মাথায় বুদ্ধিও ঠিকমতো কাজ করে না।
তখন সে অনেক বোকার মতো কাণ্ড করে বসে।
গুড্ডুবুড়ার খালা তাদের বাসায় দুটো কোয়েল পাখি রেখে গেলেন। খালা যাচ্ছেন থাইল্যান্ডে, সাত দিন থাকবেন না, এই সাত দিনে পাখি দুটো না খেয়ে মারা যেতে পারে। তাই খালা পাখি দুটোকে রেখে দিলেন বড় আপার বাসায়।
গুড্ডুবুড়া স্কুল থেকে ফিরে দেখল, বাসায় দুটো কোয়েল পাখি।
ভীষণ গরম পড়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাস। গুড্ডুবুড়া ফ্যানের নিচেও ঘামছে।
তার মনে হলো, পাখি দুটো তো গরমে কষ্ট পাচ্ছে। এদের ঠান্ডায় রাখতে হবে। সে পাখি দুটোকে ধরে রেখে দিল ফ্রিজের ভেতরে।
মা বললেন, গুড্ডুবুড়া, তোমার ছোট খালার কোয়েল পাখি দুটো কোথায়?
গুড্ডুবুড়া বুক ফুলিয়ে বলল, ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিয়েছি মা। ওরা এখন বড় আরামে আছে। গরমে যা কষ্ট পাচ্ছিল না পাখি দুটো!
মা ফ্রিজ খুলে দেখেন দুটো কোয়েল পাখির শরীর ঠান্ডায় শক্ত হয়ে আছে।
মা বললেন, ‘গুড্ডুবুড়া, তুমি কত বড় বোকামি করেছ জানো?’
‘আমি মোটেও বোকামি করিনি’—গুড্ডুবুড়া বলল গর্বের সঙ্গে।
‘তুমি বোকা। এবং তুমি জানো না যে তুমি বোকা। কারণ, তুমি খাও না।’
‘খাই তো। আমি ছোট মানুষ। আমি তো অল্পই খাব, তাই না?’
মা বললেন, ‘গুড্ডুবুড়া, বাসায় আম আছে। কেটে দিই। খাও।’
‘না, মা, আমার খেতে ইচ্ছা করে না।’
‘গুড্ডুবুড়া, ভাত খাও।’
‘না মা, আমার খিদে নেই।’
গুড্ডুবুড়া কিছুই খায় না। না খেলে বুদ্ধি হবে কোত্থেকে?
বাবা কতগুলো জিয়ল মাছ কিনে এনেছেন। শিং মাছ-মাগুর মাছ। মাছগুলোকে একটা বড় হাঁড়িতে পানির মধ্যে রাখা হয়েছে। তারা দিব্যি পানিতে সাঁতার কাটছে।
গুড্ডুবুড়া দেখে কী, মাছ পানির মধ্যে। সে চিত্কার করতে লাগল, মাছ পানিতে পড়ে গেছে, মাছ তো মারা যাবে।
তারপর সে দায়িত্ব মনে করল মাছের প্রাণ রক্ষায় এগিয়ে আসার।
পানির হাঁড়িতে হাত ডুবিয়ে সে মাছ ধরে ধরে মেঝেতে ফেলে দিতে লাগল।
আর তখনই একটা শিং মাছ তার কাঁটা ফুটিয়ে দিল গুড্ডুবুড়ার হাতে।
শিং মাছের কাঁটায় কিন্তু অনেক বিষ থাকে। ব্যথায় সে অস্থির হয়ে উঠল। তার হাতের আঙুল গেল ফুলে।
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে।
ডাক্তার বললেন, তুমি শিং মাছ ধরতে গেছ কেন?
‘ওরা তো পানিতে পড়ে গিয়েছিল। পানিতে ডুবে ওরা মারা যাবে না?’
‘আরে মাছ তো পানিতেই থাকে!’ ডাক্তার বললেন।
‘না, মাছ কেন পানিতে থাকবে?’
‘তাহলে মাছ কোথায় থাকবে?’
‘মাছ থাকে ফ্রিজে।’
ডাক্তার বললেন, ‘গুড্ডুবুড়া তুমি মানুষটা ভালো। মাছের প্রাণ রক্ষা করতে চাও। পাখির প্রাণ রক্ষা করতে চাও। কিন্তু তোমার মাথায় তো কিছুই নাই। তুমি বেশি করে খাও। তাহলে তোমার মাথায় অনেক বুদ্ধি হবে। তখন দেখবে তুমি কত চালাক হয়ে গেছ।’
ডাক্তারের কথা শুনে গুড্ডুবুড়া খেতে শুরু করল।
সে ভাত খায়।
সে মাছ খায়।
সে ডিম খায়।
সে দুধ খায়।
সে শাক খায়।
সে ফল খায়।
এখন সে অনেকটাই লম্বা। এখন তার বুদ্ধিও গেল খুলে। ক্লাসে সে চটপটে, শিক্ষকদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, শিক্ষকদেরও নানা রকমের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে।
একদিন হলো কি। অঙ্কের স্যার আর গুড্ডুবুড়া ক্লাসে রয়ে গেছে। লাস্ট পিরিয়ড। সবাই চলে গেছে। গুড্ডুবুড়া স্যারকে একটা কঠিন অঙ্ক কষতে দিয়েছে।
সেটার সমাধান করতে স্যারের দেরি হচ্ছে। স্যার বললেন, ‘এই, সবার ছুটি। সবাই যাও। আমি আর গুড্ডুবুড়া থেকে যাব ক্লাসে।’
তারা জগতের সবকিছু ভুলে দুজনে মিলে অঙ্ক কষছে।
এই সময় স্কুলের দপ্তরি আঙ্কেল তাদের ক্লাসরুমের দরজায় তালা দিয়ে চলে গেলেন।
অঙ্ক শেষ করে তারা ক্লাসরুমের বাইরে যাবে, দেখে দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। অঙ্কের ভেতরে বুঁদ হয়ে থাকায় দুজনের কেউ খেয়াল করেনি কখন বাইরে থেকে তালা দেওয়া হয়েছে।
এখন উপায়? স্যার বললেন।
গুড্ডুবুড়া বলল, ‘মোবাইল ফোন বের করেন। দপ্তরি আঙ্কেলকে ফোন করেন।’
স্যার বললেন, ‘আমি তো মোবাইল ফোন নিয়ে ক্লাসে ঢুকি না। মোবাইল ফোন টিচার্স রুমে। আমার ড্রয়ারে রাখা।’
‘স্যার চিন্তা করবেন না। আমি এখনই এই সমস্যার সমাধান করছি’—গুড্ডুবুড়া বলল।
‘কীভাবে করবে?’
‘স্যার, আজকে টিফিন পিরিয়ডে আমরা কেক কেটেছি। নওরিনের বার্থডে ছিল। মোমবাতি জ্বালিয়েছি।’
‘হ্যাঁ। তাতে কী হয়েছে?’ ভ্রু কুঁচকে বললেন স্যার।
‘সেই মোমবাতি আর দেশলাই ক্লাসরুমে আছে।’
‘তো?’
‘তাহলে আর কী। আমার খাতার পাতা ছিঁড়ে দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালাব। ধোঁয়া বানাব।’
‘তাহলে কী হবে?’
‘রুমে স্মোক ডিটেকটর আছে। ধোঁয়া হলেই ফায়ার অ্যালার্ম বাজবে।’
স্যার বললেন, ‘গুড্ডু রে, তোমার এত কেন বুদ্ধি রে।’
স্যার আগুন জ্বালালেন কাগজে। ধোঁয়া হলো। ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠল স্কুলজুড়ে।
একটু পরে দপ্তরি দৌড়ে এলেন। দরজা খুললেন ক্লাসরুমের।
গুড্ডুবুড়া আর স্যার বেরিয়ে এল রুম থেকে। স্যার দপ্তরিকে বললেন, ‘আমাদের ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়েছিলেন কেন?’
দপ্তরি বললেন, ‘ভুল হয়ে গেছে, স্যার। তো স্যার এই রুমে নাকি আগুন লেগেছে।’
স্যার বললেন, ‘না, আগুন লাগেনি। আমরা ধোঁয়া বানিয়েছি তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।’
দপ্তরি অপরাধীর মতো কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলেন।
স্যার বললেন, ‘এই যে গুড্ডুবুড়া, এর বুদ্ধির জোরে আজ আমরা বেঁচে গেলাম। এই গুড্ডু, তোমার মাথায় এত বুদ্ধি এল কোত্থেকে?’‘
গুড্ডুবুড়া বলল, স্যার, বেশি করে খাই তো, তাই আমার মাথায় একটু বুদ্ধি হয়েছে। খুব বেশি হয় নাই। এই সামান্য আরকি! তবে আমি কিন্তু স্যার চকলেট, আইসক্রিম, বার্গার কম খাই; ফলমূল, শাকসবজি আর দুধ খাই বেশি করে।’
গুড্ডুর কথা শুনে স্যার ফিক করে হেসে ফেললেন।