গুড্ডুবুড়া...
গুড্ডুবুড়া আইসক্রিম খাবে। ফ্রিজে একটা আইসক্রিম ছিল। চকবার। মা ঘুমিয়ে আছেন। বাবা অফিসে। বাসা ফাঁকা। কেউ নেই কোথাও। শুধু বাইরে কাক ডাকছে। দূরে রাস্তায় রিকশার শব্দ। আর বারান্দায় শীতবিকেলের রোদ। খানিকটা যেন হলুদ রঙের রোদ।
গুড্ডুবুড়া ফ্রিজ খুলে আইসক্রিমটা বের করল। মোড়কটা খুলল। একটা কামড় দিতেই দাঁত শিরশির করে উঠল। জিব যেন জ্বলে যাবে ঠান্ডায়।
উফ্। এত ঠান্ডা খাওয়া যায়? সে আইসক্রিমটা নিয়ে গেল মাইক্রোওয়েভ ওভেনে।
ভেতরে আইসক্রিম রেখে সে চালু করে দিল ওভেনটা। এক মিনিট পরে ওভেন খুলে দেখে পুরো আইসক্রিম গলে ওভেনটাই নোংরা হয়ে গেছে। এখন সে আইসক্রিম খাবে কী করে?
এখন কী করা যায়?
সে টেবিলে এল। ছোট খালা এসেছিলেন কাল। তিনি টেবিলে এটা কী রেখে গেছেন? ছোট ছোট টিউব। একটার রং লাল। একটার হলুদ। নিশ্চয়ই সস। এটা টমেটোর সস। হলুদটা? হলুদটা বোধ হয় সরিষার সস। ফ্রিজে কি একটা বার্গারের মতো জিনিস দেখলাম? সেটা কি সস দিয়ে খাব? গুড্ডুবুড়া ভাবছে। না। টমেটোর সস এমনি এমনিই খাওয়া যায়। লাল রঙের টিউবটার খাপ খুলে মুখের মধ্যে ধরে টিপতে লাগল গুড্ডুবুড়া। আসলে তো ওটা ছিল রঙের টিউব।
তার সমস্ত মুখ লাল হয়ে গেল।
একটু পরে সে গেল বাথরুমে। আয়নায় দেখে তার মুখ-ঠোঁট-হাত সব লাল। সে ভয় পেয়ে গেল।
আরও খানিক পরে সে পেশাব করতে গেল। পেশাবও লাল।
সে কাঁদতে লাগল। মা উঠলেন ঘুম থেকে।
দৌড়ে এলেন। কী হয়েছে।
‘রক্ত রক্ত।’ গুড্ডুবুড়া কাঁদছে।
মা বললেন, কী মুখে দিয়েছিলি? গবেষণা ও অনুসন্ধান করে বের করা গেল, গুড্ডুবুড়া ছোট খালার রঙের টিউব থেকে লাল রং খেয়েছে।
শুনে ছোট খালা তাকে সস কিনে দিলেন। টমেটোর সস। সান্টার্ড সস। মেয়োনিজ।
নে। কত খাবি খা।
মা সব ফ্রিজে রেখে দিলেন।
ছোট খালা চলে গেলেন।
গুড্ডুবুড়া মনে মনে বলল, আমি কি এক ভুল দুইবার করব। রং খাব? কক্ষনো না। সে ফ্রিজ খুলে সসের বোতল আর টিউবগুলো এনে সেসব দিয়ে ছবি আঁকতে লাগল।
লাল রঙের জন্য দিল টমেটোর সস। হলুদের জন্য সরষের সস। এবার দরকার খয়েরি।
ফ্রিজে চকলেটের একটা টুকরা ছিল। সেটা এনে সে ঘষে ঘষে খয়েরি রং করল।
তারপর এদিক-ওদিক ঘুরে ক্লান্ত হয়ে সে ছবিটা বুকে নিয়ে সোফার মধ্যেই গেল ঘুমিয়ে। ঘুম ভাঙল পিঁপড়ার কামড়ে। তার ছবিতে পিঁপড়া উঠে তার শার্টের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
নাহ্। এমন বোকা ছেলেকে নিয়ে আর পারা যায় না। মা তাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার তাকে দেখলেন। পরীক্ষা করলেন। তারপর বললেন, আপনার ছেলের সব ভালো। তবে সে একটু বোকা। এটা হয়েছে সে কিছু খায় না বলে। তাকে সব খেতে হবে। ভাত খেতে হবে। মাছ খেতে হবে। রুটি খেতে হবে। দুধ খেতে হবে। ডিম খেতে হবে। শাকসবজি খেতে হবে। ফল খেতে হবে।
আর প্রচুর খেলাধুলা করতে হবে।
ডাক্তারের কথা শুনে গুড্ডুবুড়া খেতে শুরু করল। নিয়মিত সব ধরনের খাবার খায়। আর প্রচুর খেলাধুলা করে।
তার বুদ্ধি খুলল। তার স্বাস্থ্য সুন্দর হলো।
একদিন দুপুর বেলা। বাসায় সে ছাড়া আর কেউ নেই। মা গেছেন জরুরি কাজে বাইরে। বাসায় শুধু সে একা। তারা একটা দোতলা বাসার দোতলায় ভাড়া থাকে। নিচতলায় আরেকটা পরিবার থাকে।
সে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
ঘুম থেকে সে উঠে দেখে, তাদের ঘরের মধ্যে একটা অপরিচিত লোক। আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বস্তা হাতে। আলমারি থেকে মার সোনার গয়নার বাক্সটা বস্তায় ভরছে লোকটা। তার হাতে একটা বড় ছোরা।
সর্বনাশ। এখন গুড্ডুবুড়া কী করবে?
সে যদি চিৎকার করে ওঠে, লোকটা নির্ঘাত তার বুকে ছুরি মেরে দেবে।
সে চুপ করে মড়ার মতো পড়ে রইল।
সে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ নিজেই শুনতে পাচ্ছে।
লোকটা পাশের ঘরে গেল মোবাইলে কথা বলতে বলতে।
এবার গুড্ডুবুড়া চুপচাপ উঠে পড়ল।
সময় কম। যা করার এখনই করতে হবে।
তার হাতেও একটা মোবাইল ফোন আছে। কথা বললে লোকটা শুনে ফেলবে। তখন বিপদ নেমে আসতে পারে।
সে মোবাইল ফোনটার ক্যামেরা অন করল। ভিডিও চালু করল। তারপর বালিশের গায়ে এমন করে রাখল যেন লোকটা ঘরে ঢোকামাত্রই তার মুখ ভিডিওতে চলে আসে।
তারপর আবার সে ঘুমের ভান করে পড়ে রইল।
লোকটা এল।
বস্তাটা নিয়ে সে জানালার গ্রিলকাটা ফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেল।
গুড্ডুবুড়া সঙ্গে সঙ্গে উঠে ফোন করল মাকে। বাবাকে।
তাদের বড় মামা পুলিশের বড় অফিসার। তিনি পুলিশ পাঠিয়ে দিলেন তাদের বাড়িতে। গুড্ডুবুড়া পুলিশের হাতে তুলে দিল তার ভিডিওটা।
সে রাতেই সেই চোরটাকে ধরে ফেলল পুলিশ।
সব সোনাদানা, টাকাপয়সা ফেরত পাওয়া গেল।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, পুলিশ একটা বড় অপরাধী দলকে পাকড়াও করতে সক্ষম হলো। এই দলটা বড় জ্বালাচ্ছিল। তারা বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য টাকাপয়সা জোগাড় করছিল।
পুলিশ গুড্ডুবুড়াকে পুরস্কার দিতে চাইল। গুড্ডুবুড়া বলল, ‘না না, আমি কেন পুরস্কার নেব। আমি তো কিছুই করিনি।’