কিশোর গোয়েন্দা উপন্যাস
রানির মুকুট রহস্য
মার্কিন লেখক ম্যাক বার্নেটের জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ ‘কিড স্পাই’। এই সিরিজের প্রধান চরিত্রের নামও ম্যাক বার্নেট। ছোট্ট ম্যাককে ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ বিভিন্ন মিশন দেন, সেগুলো সম্পন্ন করে ম্যাক। এই সিরিজের প্রথম বই ‘ম্যাক আন্ডারকভার’-এ ইংল্যান্ডের রানির হারিয়ে যাওয়া রত্ন খুঁজবে ম্যাক। এই অ্যাডভেঞ্চারে তোমাদের স্বাগত!
প্রথম অধ্যায়: দ্য কল
এ বাড়িতেই আমি বড় হয়েছি। পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্ট এই শহরের নাম কাস্ত্রো ভ্যালি। জায়গাটা সত্যিই পৃথিবীতে আছে। চাইলে খুঁজে দেখতে পারো।
বাড়িটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল। মা আর আমি দুজনে সেখানে থাকতাম। বাড়িতে শুধু দুজনই থাকার কারণে আমাকে কিছু কাজ করতে হতো। যেমন বাসন পরিষ্কার করা, নিজের টিফিন গুছিয়ে নেওয়া, রাতের খাবার রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা, ঝাড়ু দেওয়া এবং খরগোশের পানির বাক্স পরিষ্কার করা। (আমি একটি কুকুর চেয়েছিলাম, কিন্তু মা দিয়েছে খরগোশ।)
আমার আরেকটা দায়িত্ব ছিল, ফোন ধরা। ফোন ধরতে আমার ভালোই লাগত। যদিও কখনো আমার জন্য ফোন আসত না।
একদিন বিকেলে ফোন বাজল। আমার জন্যই ছিল ফোনটা। ফোন করেছিলেন ইংল্যান্ডের রানি।
‘হ্যালো?’ আমি বললাম।
‘হ্যালো,’ তিনি বললেন। ‘আমি কি ম্যাকের সঙ্গে কথা বলতে পারি?’
‘আমিই ম্যাক বলছি,’ বললাম আমি।
‘ম্যাক, আমি ইংল্যান্ডের রানি,’ তিনি বললেন। ‘আমি তোমাকে একটা অনুরোধ করতে চাই।’
‘ঠিক আছে,’ বললাম আমি।
কেউ অনুরোধ করলে সম্মতি দেওয়ার আগে জেনে নেওয়া ভালো অনুরোধটা কী। কিন্তু আমি এর আগে কখনো রানির সঙ্গে কথা বলিনি। তাই সম্মতি দিলাম।
‘দারুণ,’ বললেন রানি। ‘আমি তোমাকে একটি গোপন কথা বলব। গত রাতে কেউ “ক্রাউন জুয়েলস”* চুরি করে নিয়েছে।’
‘না!’ হঠাৎ মুখ থেকে শব্দটা বেরিয়ে গেল।
রানি ফোন রেখে দিলেন। সামনের দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। দরজা খুলে দেখলাম, সেখানে কেউ নেই। কিন্তু আমাদের পাপোশের ওপর একটি খাম পড়ে ছিল। খামটা খুললাম। কারণ, আমিই ম্যাক বার্নেট। খামের ওপর আমারই নাম লেখা ছিল।
‘হ্যাঁ!’ বললেন রানি। ‘তোমার কাছে অনুরোধ, তুমি এই হারানো সম্পদ খুঁজে আমায় ফিরিয়ে দেবে।’
‘বাহ!’ বললাম আমি।
‘হ্যাঁ!’ বললেন রানি।
বিষয়টা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। কিন্তু রানির কাছে আমার একটি প্রশ্ন ছিল।
‘আমার একটা প্রশ্ন আছে,’ রানিকে বললাম।
‘আশা করি তোমার প্রশ্নটা সংক্ষিপ্ত হবে,’ বললেন রানি।
‘আমাকে কেন বাছাই করলেন?’
ইংল্যান্ডের রানি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ‘বোকা প্রশ্ন।’
‘আমার শিক্ষক বলেন, বোকা প্রশ্ন বলে পৃথিবীতে কিছু নেই।’
ইংল্যান্ডের রানি সম্ভবত একটু ভ্রু কোঁচকালেন। (ফোনে কথা বললেও রানির ভ্রু কোঁচকানো অনুভব করতে পারলাম।)
‘এটি শুধু আমেরিকার শিক্ষকেরা বলেন। আমি আমেরিকার শিক্ষক নই। ইংল্যান্ডের রানি আমি।’
‘ওহ, হ্যাঁ,’ বললাম আমি। ‘ঠিক আছে; কিন্তু তবুও, আমাকে কেন বাছাই করলেন? আমি তো একটা বাচ্চা মাত্র। তারপর আবার ইংল্যান্ডেও থাকি না।’
(ক্যাস্ট্রো ভ্যালি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। চাইলে কেউ সার্চ করে দেখতে পারেন।) ‘ম্যাক,’ বললেন রানি। ‘তুমি ক্লাসের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছাত্র। সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছ। অবশ্য তোমার হাতের লেখায় ছাড়া।’
‘হাতের লেখা ভালো করার চেষ্টা করছি,’ বললাম আমি।
‘তাহলে এই কথাই রইল। তুমি পরের ফ্লাইটে লন্ডন আসছ।’
‘কিন্তু আগামীকাল তো স্কুল আছে।’
‘আমি একটা নোট লিখে দেব,’ বললেন রানি।
‘কিন্তু মা আমার জন্য চিন্তা করবে,’ বললাম আমি।
‘আমি আরেকটি নোট লিখে দেব,’ বললেন রানি।
‘বিদায়।’
রানি ফোন রেখে দিলেন। সামনের দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। দরজা খুলে দেখলাম, সেখানে কেউ নেই। কিন্তু আমাদের পাপোশের ওপর একটি খাম পড়ে ছিল। খামটা খুললাম। কারণ, আমিই ম্যাক বার্নেট। খামের ওপর আমারই নাম লেখা ছিল।
খামের ভেতরে প্লেনের একটি টিকিট এবং কিছু রঙিন ব্রিটিশ পাউন্ড। দেখে অনেক টাকা মনে হচ্ছিল। কিন্তু ঠিক কত টাকা ছিল, তা বুঝতে পারিনি। কারণ, আমি ব্রিটিশ ছিলাম না। এখনো নই।
নিজের রুমে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। গোয়েন্দাদের মতো অল্প জিনিস ব্যাগে নিলাম। বিছানায় কিছু জিনিস রাখলাম। গেম খেলার যন্ত্র, তিনটি বই, একটা টুথব্রাশ, একটা টুপি, একটা শার্ট, একটা জ্যাকেট এবং আমার প্রিয় নীল জিনস।
সত্যি বলতে, এটাই আমার একমাত্র নীল জিনস। প্রতিবছর স্কুলে যাওয়ার জন্য মা আমাকে দুটি নীল জিনস কিনে দিতেন। আমার স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অনেকগুলো জিনস ছিল, কিন্তু আমি এ কথা মাকে বললে উনি রাগ করতেন।
‘তোমার জিনস আছে, এটা ভেবেই খুশি হও,’ তিনি বলতেন। ‘রাশিয়ায় জিনস নিষিদ্ধ।’
‘নিষিদ্ধ?’
‘আইনবিরুদ্ধ।’
‘এটা কি সত্যি?’ জিজ্ঞেস করতাম আমি। ‘সত্যি বলে তো মনে হয় না।’
কিন্তু মা জোর দিয়ে বলতেন, এটা সত্যি। আর এ কথা বলে প্রতিবছর আমাকে শুধু এক জোড়া জিনস কিনে দিতেন।
জিনস পরে, স্যুটকেস নিয়ে নিচে গেলাম আমি।
দরজা দিয়ে বের হব, তখনই ফোনটা বেজে উঠল।
ইংল্যান্ডের রানি আবার ফোন দিয়েছিলেন।
‘হ্যালো?’ বললাম আমি।
‘হ্যালো,’ বললেন তিনি।
‘আমি কি ম্যাকের সঙ্গে কথা বলতে পারি?’ জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।
‘আমিই ম্যাক,’ আবার বললাম আমি।
‘তোমাকে একটি কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম,’ বললেন রানি। ‘সাবধান। এই মিশন কিন্তু অত্যন্ত বিপজ্জনক। গুড বাই।’