সায়েন্স ফিকশন গল্প ‘সাত’
‘সবাই রেডি তো?’
‘রেডি।’
‘এখন?’
‘এই তো আর কিছুক্ষণ।’
‘বিজ্ঞানীরা কি আসলেই এই ব্যাপারে নিশ্চিত? আজকেই ঘটবে?’
‘দেখো, দেখো, নিজেই দেখে নাও!’
বাচ্চারা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, পৃথিবীর সব দেশ থেকে একজন করে নিয়ে আসা হয়েছে বুঝি। উদ্গ্রীব হয়ে লুকিয়ে থাকা সূর্যটাকে দেখার চেষ্টা করছে সবাই।
কিন্তু বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
যাকে বলে মুষলধারে বৃষ্টি।
আসলে সাত বছর ধরে টানা চলছে এই বর্ষণ। সঠিকভাবে বললে দুই হাজার পাঁচ শ পঞ্চান্ন দিন। সে কী শব্দ! সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব তো আছেই। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই বুঝি ডুবে যাবে সবকিছু, কিন্তু শেষ অবধি ডোবে না। শুক্র গ্রহে একদম স্বাভাবিক একটা দিন, এভাবেই চলে আসছে। এই স্কুলে যে ছেলেমেয়েরা পড়ে, তারা সবাই নভোচারীদের পরিবারের সদস্য। কারও বাবা বা কারও মা চাকরি করতেন মহাশূন্য গবেষণাকেন্দ্রে। পৃথিবী থেকে এই গ্রহে কলোনি স্থাপনের জন্য এসেছিলেন অনেক আগে।
‘বৃষ্টি কমে আসছে!’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ!’
ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও আনিকা দাঁড়িয়ে আছে সবার পেছনে। এই ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বড় একটা পার্থক্য আছে মেয়েটার। এখানকার কেউ আজ অবধি সূর্য দেখেনি বা দেখলেও ঠিক মনে নেই, সূর্যের উত্তাপ বলতে আসলে কী বোঝায়। শেষবার যখন এই গ্রহে এক ঘণ্টার জন্য সূর্য উঁকি দেয়, তখন তাদের প্রত্যেকের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। তাই মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক।
মাঝেমধ্যে আনিকা ঘুমের মধ্যে তার সহপাঠীদের উসখুস করতে দেখে, বিড়বিড় করে কিছু বলতে শোনে। আসলে তখন আকাশে বিশাল একটা কয়েন বা ক্রেয়নে আঁকা হলুদ বলের স্বপ্ন দেখে তারা, এটা জানে সে। সেই সঙ্গে এটাও জানে যে তার সহপাঠীদের ধারণা, রোদের তাপ কী জিনিস, সেটা তাদের মনে আছে। কিন্তু এরপরই ঘুম ভেঙে গেলে তারা শুনতে পায় ক্রমাগত সেই বর্ষণের শব্দ। যেন একনাগাড়ে নির্দিষ্ট তালে ড্রাম বাজিয়ে যাচ্ছে কেউ। বাড়ির ছাদ, বাগান, হাঁটার রাস্তা—সবখানেই সেই একই শব্দ। স্বপ্নের কথা ভুলে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না তাদের।
গতকাল সারা দিন ক্লাসে সূর্য নিয়ে পড়াশোনা করেছে সবাই। দেখতে হলুদ লেবুর মতো, সূর্যপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত—এসব। এমনকি সূর্য নিয়ে ছোট ছোট গল্প আর কবিতাও লিখেছে অনেকে। ‘আমার ধারণা, সূর্য হচ্ছে একটা ফুল, ফোটে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য।’ আনিকা লিখেছিল এই বাক্যটা। বাইরের প্রবল বর্ষণের মধ্যে সহপাঠীদের পড়েও শুনিয়েছে।
‘এটা তোমার লেখা না!’ একটা ছেলে অভিযোগের স্বরে বলে।
‘আমি লিখেছি,’ আনিকা জবাব দেয়। ‘আমি।’
‘সাতোরু!’ ছেলেটাকে ধমক দেয় টিচার।
কিন্তু সেটা গতকালের কথা। এখন বৃষ্টি কমে আসছে, বাচ্চারা সবাই দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে।
‘টিচার কোথায়?’
‘চলে আসবে এখনই।’
‘আমাদের যাওয়া উচিত এখন, না হলে দেখতে পাব না।’
একেকজন একেক কথা বলতে লাগল, ঝগড়া লেগে গেল দেখতে দেখতে। আনিকা একা দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে। একদম হালকা–পাতলা গড়নের একটা মেয়ে সে। দেখে মনে হবে বুঝি কয়েক বছর ধরে টানা বৃষ্টিতে ভেজার কারণে চোখের নীল রংটা ধুয়ে গেছে, কালো চুল হয়ে গেছে ফ্যাকাশে। যেন পুরোনো আমলের রং ওঠা, মলিন কোনো ছবি। কথা বললে মনে হয়, সেই আমলের কোনো স্মৃতি হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে কথা বলছে। বিশাল কাচের এই পাশে একা দাঁড়িয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছে। সবকিছু ভিজে চুপচুপে।
‘তুমি আবার কী দেখছ?’ সাতোরু জিজ্ঞেস করে এ সময়।
আনিকা কিছু বলে না, দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ।
‘কথা বললে জবাব দাও না কেন!’
আনিকাকে ধাক্কা দেয় ছেলেটা। কিন্তু সরে না আনিকা, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার ওখান থেকে সরে যায় বাকিরা, ফিরেও তাকায় না কেউ। আনিকা বুঝতে পারছে, দূরে চলে যাচ্ছে তার সহপাঠীরা। তাদের মধ্যকার এই দূরত্বটা বেশ আগের। এর মূল কারণ হচ্ছে, এখানকার সমবয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে তার না মেশা। পাতাল শহরটার অলিগলিতে তাদের সঙ্গে ছুটে বেড়ায় না আনিকা, খেলাধুলা করে না। ক্লাসে সবাই যখন নানা রকম ছড়া গান গায়, তখন তার ঠোঁট নড়ে কি নড়ে না। কেবল সূর্য নিয়ে কোনো গান হলেই গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠে আনিকা, কিন্তু তখনো ওর দৃষ্টি সেঁটে থাকে বৃষ্টিভেজা জানালার কাচে। তবে ওর সবচেয়ে বড় অপরাধ মাত্র পাঁচ বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে এখানে আসা। যেখানে তার ক্লাসের অন্যরা সূর্যের কথা মনে করতে পারে না, সেখানে আনিকা এখনো অনুভব করে উন্মুক্ত ত্বকে মিষ্টি রোদের কোমল স্পর্শ। সাতোরু ও তার বেশির ভাগ বন্ধুই জন্ম থেকে শুক্রের বাসিন্দা। শেষবার যখন সূর্য ওঠে, তাদের বয়স মাত্র দুই বছর। তাই কিছু মনে নেই তাদের।
কিন্তু আনিকার আছে।
‘পয়সার মতো দেখতে,’ একবার চোখ বন্ধ করে বলেছিল আনিকা।
‘মোটেও না!’ অন্যরা বলে।
‘গনগনে চুলার আগুনের মতো,’ আরেকবার বলেছিল সে।
‘মিথ্যে বলছ তুমি। তোমার কিছুই মনে নেই!’
কিন্তু আনিকার আসলেও মনে আছে। তাই তো অন্যদের থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে বাইরের বর্ষণের দিকে তাকিয়ে আছে এখনো।
এই তো মাসখানেক আগে একবার স্কুলের শাওয়ার রুমে গোসল করতে অস্বীকৃতি জানায় আনিকা। দুই হাতে চেপে ধরে রেখেছিল কান আর মাথা। বারবার বলছিল পানি যেন তার মাথায় না লাগে। এরপর ধীরে ধীরে সে নিজেই বুঝতে পারে যে অন্যদের তুলনায় সে একদমই আলাদা। আর এই আলাদা হওয়ার কারণেই সবাই দূরে দূরে থাকে তার কাছ থেকে। একপর্যায়ে গুজব শোনা যায়, আনিকার মা–বাবা মেয়েকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আগামী বছর। মেয়ের এই অবস্থায় না নিয়েও কোনো উপায় নেই। হাজার হাজার টাকার ক্ষতি হবে তাদের পরিবারের। এ জন্যই অন্যান্য বাচ্চা এ রকম ছোট–বড় নানা কারণে ঘৃণা করে আনিকাকে। তার ফ্যাকাশে হয়ে আসা চেহারা, নীরব অপেক্ষা, দুর্বল শরীর ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎটাকে ঘৃণা করে।
‘সরো এখান থেকে!’ ছেলেটা আবারও ধাক্কা দেয় আনিকাকে। ‘তুমি আবার কিসের জন্য অপেক্ষা করছ?’
প্রথমবারের মতো ছেলেটার দিকে ঘুরে তাকায় আনিকা। সে কিসের জন্য অপেক্ষা করছে, সেটা চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
‘এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না!’ উগ্র কণ্ঠে বলে ছেলেটা। ‘কিছুই দেখতে পাবে না তুমি।’
কেঁপে ওঠে আনিকার ঠোঁট।
‘দেখার মতো কিছু নেই! সব বানানো কথা। বোকা বানানো হয়েছে আমাদের, তা–ই না? কিছুই ঘটবে না আজ।’
চমকে উঠে সবাই তাকাল সাতোরুর দিকে। কিছুক্ষণ পর হাসি ফুটল বাকি ছেলেমেয়েদের মুখে। ‘কিছুই হবে না! কিচ্ছু না!’
‘কিন্তু...কিন্তু...’ ফিসফিসিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে আনিকা। ‘কিন্তু বিজ্ঞানীরা তো হিসাব কষে বের করেছে...সূর্য...তারা জানে...’
‘পুরোটাই আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা! তুমিও আছ তাদের দলে, না?’ আনিকার দুই কাঁধ ধরে শক্ত করে ঝাঁকাতে লাগল সাতোরু। ‘অ্যাই, সবাই মিলে ওকে লকারে ভরে রাখি, চল।’
‘না, না,’ পিছিয়ে যায় আনিকা।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। একসঙ্গে কয়েক জোড়া হাত ছুটে এল তার দিকে। তার হাজার কান্নাকাটি, কাকুতি–মিনতিতেও কোনো কাজ হলো না। আলমারির সমান একটা লকারে ওকে জোর করে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিল। কাজ শেষে সন্তুষ্টচিত্তে লকারের দরজার দিকে তাকিয়ে রইল সবাই। ভেতর থেকে অনবরত দরজার গায়ে কিল বসিয়ে যাচ্ছে আনিকা। কাঁদছে গলা ছেড়ে। কিন্তু লকারের ভেতর থেকে খুব বেশি আওয়াজ বাইরে আসছে না। তা ছাড়া লকার রুমটা একদম পেছনের দিকে হওয়াতে কেউ কান্নার আওয়াজ শুনতেও পাবে না। হাসতে হাসতে ক্লাসরুমে ফিরে এল সবাই। খানিক বাদেই উপস্থিত হলো তাদের ক্লাস টিচার।
‘বাচ্চারা, সবাই রেডি তোমরা?’ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ভদ্রমহিলা।
‘হ্যাঁ!’ সমস্বরে জবাব দেয় আনিকার সব সহপাঠী।
‘সবাই আছি তো?’
‘হ্যাঁ!’
বৃষ্টির তেজ আরও কমে এল।
বিশাল দরজাটার দিকে এগোচ্ছে সবাই।
কিছুক্ষণের মধ্যে পুরোপুরি থেমে গেল বৃষ্টি।
এতক্ষণ যেন কোনো সিনেমা দেখছিল সবাই মিলে, যেখানে পর্দায় দেখানো হচ্ছিল ভয়ানক এক ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত। আর এসবের মধ্যে হঠাৎ বুঝি স্পিকারগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। চারদিকে বড্ড অদ্ভুত, থকথকে আর অস্বস্তিদায়ক নীরবতা। অবিরত বর্ষণের শব্দ এর আগে কখনো বন্ধ হয়েছিল বলে মনে পড়ে না তাদের। কারও কারও তো মনে হলো তার কান অকেজোই হয়ে গেছে বুঝি। বাচ্চারা কানের কাছে হাত নিয়ে তালি দিয়ে দেখছে। দরজা খুলে গেল এ সময়। বাইরের নীরব জগৎ এখন তাদের জন্য উন্মুক্ত।
ঠিক এ সময় বীরদর্পে সূর্যটা বেরিয়ে এল মেঘের আড়াল থেকে।
দেখে মনে হচ্ছে বিশাল এক আগুনের গোলা। সূর্যের চারপাশের আকাশ গাঢ় নীল। মেঘগুলো হঠাৎ যেন উধাও হয়ে গেছে। সামনের জঙ্গলে সূর্যের আলো পড়ে জ্বলজ্বল করছে সবকিছু। বাচ্চাদের সবাই যেন এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। টিচারের ডাকে সম্বিত খুঁজে পেল সবাই। হুল্লোড় জুড়ে দিয়ে ছুটে বেরিয়ে এল বাইরে।
‘খুব বেশি দূরে কিন্তু যাবে না কেউ,’ টিচার সাবধান করে দিল। ‘দুই ঘণ্টা সময় পাবে মাত্র। এরপর বাইরে থাকলে কিন্তু বিপদে পড়বে।’
কিন্তু বাচ্চাদের এখন সেসব শোনার সময় কোথায়। আকাশপানে তাকিয়ে যে যেদিকে পারছে, ছুট লাগিয়েছে প্রত্যেকে, জীবনে প্রথমবারের মতো সচেতনভাবে চেহারায় সূর্যের উত্তাপ লাগছে তাদের। এ রকম প্রাকৃতিক উষ্ণতার সাহচর্য কেউ পায়নি কখনো। জ্যাকেট খুলে ফেলেছে অনেকে, হাতে রোদ লাগাচ্ছে।
‘সূর্য বাতি থেকে অনেক ভালো, তা–ই না?’
‘অনেক বেশি ভালো!’
খানিক বাদে ছোটাছুটি থামিয়ে শুক্রের বিশাল জঙ্গলের সামনে থিতু হলো সবাই। চারপাশের ধূসরাভ ঘাসগুলো এত দিন কেবল বেড়েই চলেছিল। ঝোড়ো বাতাসে তাদের নড়চড় দেখে মনে হতো যেন একঝাঁক অক্টোপাস বাসা বেঁধেছে। এখন এই হঠাৎ বসন্তে ঘাসগুলো বুঝে উঠতে পারছে না কী করবে। যত দূর চোখ যায় কেবল ধূসর আর ধূসর। সূর্যের অনুপস্থিতিতে এখানকার গাছগুলোও নিজেদের ওভাবে মানিয়ে নিয়েছে। রঙের ছিটেফোঁটা নেই কোথাও। পৃথিবীর চাঁদের মতো দেখাচ্ছে অনেকটা।
বাচ্চাদের কেউ কেউ শুয়ে পড়ল মাটির ওপর। কেউ কান পেতে শুনতে লাগল ধরিত্রীর শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ। গাছে উঠে পড়ল দুষ্টু কয়েকজন, আবার পড়েও গেল। লুকোচুরি খেলল কিছুক্ষণ। ছোঁয়াছুঁয়ি খেলল কিছুক্ষণ। আবার হাঁপিয়ে গেলে জিরিয়ে নিচ্ছে এক–দুই মিনিট। কিন্তু বেশির ভাগই একটানা সূর্যের দিকে তাকিয়ে রইল, যতক্ষণ না পানি গড়াতে লাগল দুই চোখ দিয়ে। স্বর্ণালি সেই আভার পানে দুই হাত তুলে দিয়েছে, সতেজ বাতাসে ফুসফুস ভরে শ্বাস নিচ্ছে। এ রকম দিন তো আগে কখনো আসেনি। আর কান পেতে শুনছে নীরবতা। এই নীরবতা যেন এক শিল্প। যে শিল্প অমূল্য। এ রকম অনুভূতিরও যে অস্তিত্ব থাকতে পারে, সেই বিষয়ে যে ওয়াকিবহাল ছিল না কেউই। চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে সবকিছু। যেন একপাল জন্তু সদ্য ছাড়া পেয়েছে খোয়াড় থেকে। এরপর আবার চিত্কার করে চারপাশে ছুটতে লাগল সবাই। সেই ছোটাছুটির কোনো সীমা নেই।
আর এরপর...
তাদের দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই একটা মেয়ে চিত্কার করে উঠল হঠাৎ।
থমকে গেল সবাই।
খোলা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেখাচ্ছে মেয়েটা।
‘দেখো, দেখো...’ কাঁপতে কাঁপতে বলে মেয়েটা। সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
তার খোলা হাতের তালুতে বিশাল এক জলের ফোঁটা। বৃষ্টির ফোঁটা।
কাঁদতে শুরু করল মেয়েটা।
নীরবে আকাশের দিকে তাকাল তারা।
‘ওহ!’
একপশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিল ওদের চোখমুখ। কুয়াশার মতো মেঘের আড়ালে উধাও হয়ে গেল সূর্য। ঠান্ডা বাতাস ছেড়েছে। মাথা নিচু করে নিজেদের পাতাল বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করল সবাই। মুখ থেকে মুছে গেছে হাসি।
বিশাল দরজাটা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সেখানে ঠায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল ওরা। বাইরে আবারও শুরু হয়ে গেছে তুমুল বৃষ্টি। দরজা যতক্ষণে বন্ধ করে দেওয়া হলো, ফিরে এসেছে সেই বজ্রনিনাদ, প্রবল বর্ষণের শব্দ। যেন একপাল হাতি দৌড়ে বেড়াচ্ছে ওপরে।
‘আবার সাত বছর পর?’
‘হ্যাঁ, সাত বছর।’
এ সময় তাদের একজন আঁতকে উঠল হঠাৎ।
‘আনিকা!’
‘কী?’
‘ওকে তো আমরা বন্দী করে গিয়েছিলাম লকারে।’
‘আনিকা।’
তাদের দেখে মনে হলো, কেউ বুঝি পেরেক দিয়ে ওদের পা গেঁথে দিয়েছে মেঝের সঙ্গে। কেউ কারও চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। বাইরের বর্ষণসিক্ত জঙ্গলের দিকে তাকাল আরেকবার। এবার অন্য কারণে চোখে জল জমল কারও কারও। মাথা গুঁজে রেখেছে।
‘আনিকা।’
‘এখন তাহলে...’ একটা মেয়ে বলে উঠল।
কিন্তু কেউ নড়ল না।
‘চলো সবাই,’ ফিসফিসিয়ে বলল মেয়েটা।
বৃষ্টির মধ্যে ধীরে ধীরে করিডর বেয়ে এগোতে লাগল সবাই। মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিমর্ষ চেহারাগুলো। লকারটার কাছে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল সবাই। বাইরে থেকে ভেসে আসছে তুমুল আওয়াজ।
কিন্তু লকারটার ভেতরে একদম নিশ্চুপ।
ধীরে ধীরে দরজাটা খুলে দিল কেউ একজন। বের করে আনল আনিকাকে।
‘সূর্য তো ওঠেনি...’