আহসান হাবীবের কিশোর উপন্যাস 'সোনার সিন্দুক' (চতুর্থ পর্ব)
‘আমাদের জলদি কিছু একটা করতে হবে।’ নব বলল।
‘এই দেখ।’ বুবলী আর অপু দেখে, নবর হাতে পিস্তল। ‘সেই শয়তানটার পিস্তল। যখন ও বুবি ট্র্যাপের দড়িতে আটকে সাঁই করে আসমানে উঠে গেল, তখন ওর হাত থেকে পিস্তলটা ছিটকে পড়েছিল। আমি তুলে নিয়ে প্যান্টের পেছনে লুকিয়ে রেখেছিলাম।’
‘গুড, ভেরি গুড!’ বুবলী খুশি হয়ে উঠল। ‘আমি পিস্তল চালাতে পারি। তোদের মনে আছে, আমি শুটিং ক্লাবে ভর্তি হয়েছিলাম একবার? কিছুদিন প্র্যাকটিসও করেছি বাবার পিস্তল দিয়ে। তারপর শুটিং ক্লাব ছেড়ে চলে গেলাম তায়কোয়ান্দতে... মানে কারাতে শিখতে।’
‘তাহলে তো হয়েই গেল।’ অপুও খুশি।
‘কিন্তু আমি পিস্তল চালাব না। কারণ, বিপদ হলে আমি ওদের খালি হাতে মারব। তোদের শিখিয়ে দিই কীভাবে ট্রিগার টানতে হয়। ... এই দেখ, প্রথমে পেছনের ছোট্ট লিভারটা টান দিবি... ব্যস পিস্তল লোড হয়ে গেল, একদম রেডি ... মানে এবার ট্রিগার টানলেই গুলি বের হবে। নলের ওপর এটাকে বলে মাছি, মাছি টার্গেট করে এই ট্রিগার টানবি... তারপর ধুম!’
ঠিক তখনই দরজায় ধুম ধুম করে বাড়ি পড়ল। ওদের এই ঘরে ঢোকানোর পর কী মনে করে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছিল বুবলী। ওরা নিশ্চয়ই তালা খুলে এখন দরজা ধাক্কাচ্ছে।
‘এই দরজা খোল।’ বাইরে থেকে চিত্কার।
‘খুলছি খুলছি।’ ওরা তিনজন ফিসফাস করে দ্রুত একটা প্ল্যান করল। ঠিক দরজার সামনে পিস্তল বাগিয়ে ধরল নব। বুবলী দরজার একপাশে তার তায়কোয়ান্দোর বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়াল। তাকে দেখে এখন আর মনে হচ্ছে না ক্লাস এইটের শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে যে কারাতে আর তায়কোয়ান্দো দুটোই পারে। কারাতেতে প্রথম আঘাত হানতে হয় হাতে, তারপর পায়ে। আর তায়কোয়ান্দোতে পুরোই উল্টো। প্রথমে পায়ে কিক, তারপর দরকার হলে হাতে... বুবলীর মাথায় দ্রুত চিন্তা চলছে, কী করবে... বুবলীর কোরিয়ান ট্রেইনার বলেছিল... ‘তোমার প্রতিপক্ষ যদি তোমার চেয়ে বড় হয়, তাহলে প্রথমে ব্যবহার করবে পা... মানে তায়কোয়ান্দো... তবে মনে রাখবে...’ ততক্ষণে দরজার ছিটকিনি খুলেই লাফ দিয়ে দরজার আরেক পাশে সরে গেল অপু।
দরজায় দেখা গেল, শটগান হাতে ড্রাইভারের পাশে বসা লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। সে পিস্তল হাতে নবকে দেখে একটু যেন হকচকিয়ে গেল। নবও হকচকিয়ে গেল। দেখে তার পিস্তলের মাছির ওপর বসে আছে একটা সত্যিকারের বড় মাছি... বিজবিজ করছে! কী যে হলো! নবর মাছিটাকে সরাতেই যেন হঠাৎ ট্রিগার টেনে বসল। গুলিটা লাগল লোকটার পায়ে। লোকটা ছিটকে পড়ার সময় হাত থেকে ছুটে গেল শটগানটা। আর অপু অসাধারণ নিপুণতায় ক্যাচ ধরে ফেলল। থ্রিলার ঘরানার সিনেমায় এ রকম দৃশ্য দেখা যায়। অবশ্য অপু ভালো ক্রিকেট খেলে, ক্যাচ ধরায় সে ওস্তাদ। আজ সেটা কাজে লেগে গেল। যা ঘটছে, তাতে করে ওদের তিনজনের হৃৎপিণ্ডই যেন গলার কাছে এসে আটকে ধক ধক করছে। তিনজনই রুম থেকে বের হয়ে এল। লোকটা দু হাতে পা চেপে ধরে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। তখনো বসে আছে, উঠে দাঁড়াতে পারছে না। গুলির শব্দে বিনয় স্যার যে রুমে ছিলেন, সেখান থেকে দলনেতা টাইপের লোকটা বেরিয়ে এল। এই লোকই দাবি করেছিল যে সে থানা থেকে এসেছে, নসু স্যারের বদলি হিসেবে। তার হাতে একটা হকিস্টিক। সে ওদের ওই অবস্থায় দেখে হতভম্ভ; একজনের হাতে পিস্তল, একজনের হাতে শটগান আর মেয়েটা...
মেয়েটা মানে বুবলী তখন আচমকা ছুটে এসে কিক বসাল লোকটার সোলার পেক্সাসে। ‘মাগো’ বলে উঠল লোকটা। তার মাথাটা ভয়ানক একটা বাড়ি খেল পাশের জানালায়। লোকটা তাল সামলাতে না পেরে উল্টে পড়ল। ততক্ষণে বিনয় স্যার ঘটনা বুঝতে বের হয়ে এসেছেন। তাঁর মুখের একপাশ থেকে রক্ত ঝড়ছে। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন—
‘উফ! তোরা যা শুরু করেছিস! সত্যি তোদের নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে হবে। জলদি মাইক্রোটায় ওঠ। এখান থেকে পালাতে হবে।’
‘কিন্তু মাইক্রো চালাবে কে?’
‘আমি চালাব, জলদি।’
নব দেখল, পায়ে গুলি খাওয়া লোকটা কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়েছে। উঠে যেহেতু দাঁড়াতে পেরেছে, তার মানে খুব বড় জখম হয়নি নিশ্চয়ই। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, পিস্তলের মাছির ওপর বসা সেই বড়সড় ডুমো মাছি এখন লোকটার কানের ওপর বিজবিজ করছে। লোকটা তাড়ানোর চেষ্টা করছে, পারছে না। মাছিটা লোকটার এক কান থেকে আরেক কানে বসছে বারবার। নিশ্চয়ই আচমকা গুলির শব্দে মাছিটার কানে তালা লেগে গেছে। তাই এখন মানুষের কানে...! আর নিজেকে ‘সেকেন্ড অফিসার’ বলা লোকটা তখনো ঠিকঠাক উঠে বসতে পারছে না। তার এক হাতে হকিস্টিকটা ধরা।
ওরা দ্রুত মাইক্রোবাসে করে ছুটতে শুরু করল। পেছনে হতভম্ব হয়ে পায়ে গুলি খাওয়া লোকটা মাছের চোখে তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে, ততক্ষণে ভুয়া সেকেন্ড অফিসার উঠে বসেছে, চিত্কার করে ওদের ড্রাইভারকে খুঁজছে।
অভ্যস্ত হাতে গাড়ি চালাতে চালাতে বিনয় স্যার বললেন,
‘তোরা কি ভেবেছিস আমি সারা জীবন শিক্ষকতা করেছি? প্রথম জীবনে বাস চালাতাম, কিছুদিন ট্রাকও চালিয়েছি। তারপর ব্যবসা করার চেষ্টা করলাম, হলো না। টাকাপয়সা ছিল না। তারপর হঠাৎ একটা প্রাইমারি স্কুলে ঢুকলাম। সেই শুরু...’
সেকেন্ড অফিসার নসু পুলিশ ফোর্সের দিকে কী একটা ইশারা করল। একটা গাড়ি ছুটে গেল পেছনে, হয়তো ফেলে আসা অপরাধীদের ধরতে। কিন্তু আগের দুই অপরাধীকে তখনো দেখা যাচ্ছে না। নবর কেমন যেন একটু অস্বস্তি হচ্ছে।
কিছুদূর আসতেই হঠাৎ পোঁ পোঁ সাইরেন বাজিয়ে দুটো পুলিশের গাড়ি ওদের গাড়িটাকে ঘিরে ধরল। অস্ত্র হাতে ঝপঝপ করে নেমে দাঁড়াল বেশ কয়েকজন পুলিশ। স্যার চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘ওই তো নসু।’ স্যার জানালা দিয়ে হাত নাড়লেন। সেকেন্ড অফিসার নসু এগিয়ে এল! সে যেন হতভম্ব!
‘বিনয় স্যার আপনি? আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন!’
‘সে পরে হবে। আসল কাহিনি বলো তো। তুমি না এসে যাদের পাঠালে, তারা তো আমাদের প্রায় মেরেই ফেলছিল।’
‘উফ আর বলবেন না। অনেক কাহিনি ঘটে গেছে এর মধ্যে। তিন–তিনটা দল আপনার ওই সোনার সিন্দুক নিয়ে খেলতে শুরু করেছে। ওই সিন্দুক তাদের চাই, যেকোনো মূল্যে। আমাকে পর্যন্ত ট্র্যাপ করেছিল, তাই তো আসতে দেরি হলো। আচ্ছা, দলটা কই? যারা আমার কথা বলে আপনাকে ভরকে দিয়েছে?’
‘ওদের ধরাশায়ী করেছে এরা। আমার বাহাদুর ছাত্ররা। ওদের পেছনে ফেলে এসেছি। একটা পাকা দোতলা বাড়িতে। এখনো আছে কি না, বলতে পারব না। ওদের গাড়ি নিয়েই আমরা পালচ্ছি।’ নসু ঘুরে তাকাল ওদের তিনজনের দিকে। হাসিমুখে হাত নাড়ল।
‘ওরাই তো আমাকে উদ্ধার করেছে। আচ্ছা, এখন বলো কী হবে?’
সেকেন্ড অফিসার নসু পুলিশ ফোর্সের দিকে কী একটা ইশারা করল। একটা গাড়ি ছুটে গেল পেছনে, হয়তো ফেলে আসা অপরাধীদের ধরতে। কিন্তু আগের দুই অপরাধীকে তখনো দেখা যাচ্ছে না। নবর কেমন যেন একটু অস্বস্তি হচ্ছে। সেকেন্ড অফিসার নসু উঠে এল ওদের মাইক্রোবাসে। বিনয় স্যারকে সরিয়ে নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসল।
‘এখন আমরা থানায় যাব। একটা মোটামুটি ডায়েরি করিয়ে রাখি। কেস হিস্ট্রি আরকি... কী বলেন স্যার?’
‘তুমি যা ভালো বোঝো।’
‘বোঝেন তো স্যার, পুলিশের চাকরিতে অনেক হ্যাপা...’
‘হুঁ। যা করার জলদি করো। বড্ড ধকল গেছে। ওদেরও তো বাসায় পৌঁছাতে হবে। ওরাও কম কষ্ট করেনি, রাতও অনেক হয়েছে। উফ, সত্যি কী একটা অ্যাডভেঞ্চার হলো। তা–ই না রে?’
‘জি স্যার।’ তিনজন একসঙ্গে চেঁচাল।
‘সত্যি... কী এক মিথ্যে সোনার সিন্দুক নিয়ে এত হইচই...’
‘মিথ্যে হবে কেন?’
‘মিথ্যে নয়?’
‘কী বলছেন স্যার? আপনি কিছুই জানেন না?’
‘কী জানব?’
‘আপনার ঠকুরদার নাম শ্রী নগেন্দ্র নারায়ণ দাস না?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাঁর সেই বিখ্যাত সোনার সিন্দুক এখন রাজশাহী জাদুঘরে দিব্যি শোভা পাচ্ছে। এই তো গত মাসে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হয়েছে।’
‘ক্..ক্.. কী? কী বলছো?’
‘ঠিকই বলছি। আপনি কিছু জানেন না মনে হচ্ছে!’
‘না। আমি তো জানি এসব মিথ্যে...গুজব রটনা...সোনার সিন্দুক বলে কিছু নেই!’
‘না স্যার। সব সত্যি।’
‘কিন্তু... কিন্তু কে জমা দিল?’
‘কয়েকটা ইয়াং ছেলেমেয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। ওরা গিয়েছিল একটা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পরিদর্শনে। মানে ঘুরতেই গিয়েছিল। একটা ভাঙা মন্দিরের ভেতর মাটিচাপা অবস্থায় ওরা ওটা পায়। মূল সিন্দুকটা লোহার, কিন্তু বাইরে কোয়ার্টার ইঞ্চি সোনার প্রলেপ দেওয়া। কম করে হলেও এক শ কি দেড় শ ভরি সোনা হবে। সিন্দুকটার নিচে খোদাই করে আপনার ঠাকুরদার নাম–ঠিকানা লেখা... ।’
‘সিন্দুকটার ভেতরে কিছু ছিল?’
‘তা জানি না... এই যে এসে গেছি। যদ্দুর শুনেছি, সিন্দুকটা এখনো খোলাই হয়নি।’
‘কেন?’
‘খুব সম্ভবত আপনার উপস্থিতিতেই খোলা হবে। কারণ, আপনিই সম্ভবত এর একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকারী! কি, ঠিক বলেছি না স্যার?’
‘কী জানি বাপু, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কাছে সবকিছু ধাঁধার মতো লাগছে।’
মজার কাণ্ডটা ঘটল সপ্তাহখানেক পর। বিনয় স্যার একদিন এক–এক করে তিনজনের বাসায় গিয়ে হাজির। তিনি রাজশাহী জাদুঘরে যাচ্ছেন। যেহেতু ওই সিন্দুকের তিনিই একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকারী।
ওরা থানায় নামল। নেমে তিনজনই হতভম্ব! বুবলীর মা–বাবা দাঁড়িয়ে আছেন ওদের অপেক্ষায়। তাঁরা কীভাবে যেন খবর পেয়েছেন যে ওরা স্যারের সঙ্গে আসছে। আর অপুর বাবাও দাঁড়িয়ে চিন্তিত মুখে ভুসভুস করে সিগারেট টানছেন। তবে নবর কেউ আসেনি। মাঝেমধ্যে নব কোচিংয়ের নাম করে রাতে বাড়িতে ফেরে। মা হয়তো ভেবেছে যে সে কোচিংয়েই আছে। খুব বেশি রাত অবশ্য হয়নি... মাত্র নয়টা।
তারপর তো শুভ সমাপ্তি। ওরা তিনজন মা–বাবার সঙ্গে ফিরে গেল যার যার বাসায়। স্যার বসে রইলেন। তিনি কেমন যেন হতভম্ব হয়ে আছেন, মিথ্যে সোনার সিন্দুকের হঠাৎ সত্যি হয়ে ওঠার ব্যাপারটা তিনি ঠিক নিতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না। এর মধ্যে অবশ্য থানার মূল ইনচার্জ বিশালদেহী মকবুল এলাহি এসে হাজির। তিনি এসেই ঘোষণা দিলেন যে ওদের তিনজনের সাহসিকতার জন্য ভালো পুরস্কার দেবে পুলিশ বিভাগ। তারা যেন প্রস্তুত থাকে। তবে ছাত্রছাত্রীদের আসল কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। অ্যাডভেঞ্চার নয়, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। কারণ, তারাই দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারি... ইত্যাদি ইত্যাদি। সে-ও ঘণ্টাখানেক আগের ঘটনা।
তবে মজার কাণ্ডটা ঘটল সপ্তাহখানেক পর। বিনয় স্যার একদিন এক–এক করে তিনজনের বাসায় গিয়ে হাজির। তিনি রাজশাহী জাদুঘরে যাচ্ছেন। যেহেতু ওই সিন্দুকের তিনিই একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকারী। এখন তাঁর সামনে ওই সিন্দুকের তালা খোলা হবে, কিছু আনুষ্ঠানিক কাজও আছে। স্যার চাইছেন, এই অনুষ্ঠানে ওদের নিয়ে রাজশাহীতে যেতে। তিনজনের অভিভাবকেরাই সানন্দ রাজি হলেন। মাত্র এক দিনের ব্যাপার। আর স্যার তো সঙ্গে আছেনই।
১৭ নভেম্বর। রাজশাহী জাদুঘরের একটা কক্ষের মাঝখানে একটা ধবধবে সাদা টেবিলের ওপর ঝকঝকে সোনার সিন্দুকটা শোভা পাচ্ছে। খুব বড় নয় সিন্দুকটা। এক ফুট বাই দুই ফুট, উচ্চতায় দেড় ফুট হবে। পুরোটা একটা কাচের বাক্সের ভেতর। সবাই সেটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সবার সামনে স্যার। তাঁর সঙ্গেই ওরা তিনজন—বুবলী, নব আর অপু। সত্যি, আজকের ব্যাপারটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। চারদিকে টিভি ক্যামেরা আর পুলিশ গিজগিজ করছে। প্রথমে বক্তব্য দিলেন জাদুঘরের প্রধান ... তারপর বিনয় স্যারও দু–একটা কথা বললেন। স্যার ওদের তিনজনের কথা বললেন, ওদের ভয়ানক সব অ্যাডভেঞ্চারের কথা। সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ক্যামেরাও সব ওদের দিকে তাক করা। ওদের তিনজনের একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিল।
এর মধ্যে কে যেন মাইকে চেঁচিয়ে বলল—
‘সবাই একটু পিছিয়ে যান, প্লিজ। এখনই সিন্দুকটা খোলা হবে। এই সিন্দুকের মূল মালিক শ্রী নগেন্দ্র নারায়ণ দাসের পৌত্র শ্রী বিনয় কুমার দাস আজ আমাদের মধ্যে আজ উপস্থিত। সিন্দুকটা যেহেতু বিশেষভাবে অদ্ভুত এক কৌশলে আটকানো, তাই এটা খুলতে সাহায্য করবেন অভিজ্ঞ তালাবিশেষজ্ঞ আবদুল মাজেদ। তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। সিন্দুকটি খোলার পর আমরা দেখব, এর ভেতর কী আছে। এটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো সোনার সিন্দুক। বংশপরম্পরায় এটি শ্রী নগেন্দ্র নারায়ণ দাসের কাছে এসেছিল, তারপর এটি চুরি হয়। তবে যেভাবেই হোক, এটি উদ্ধার করা গেছে, উদ্ধারের গল্পও আপনারা পরে জানতে পারবেন। আমরা ধন্যবাদ দিচ্ছি শ্রী নগেন্দ্র নারায়ণ দাসের পৌত্র শ্রী বিনয় কুমার দাসকে। তিনি আইনত এই সিন্দুকের উত্তরাধিকারী হলেও তিনি সিন্দুকটিকে রাষ্ট্র বরাবর দান করেছেন। এটি এখন থেকে আমাদের এই জাদুঘরেই থাকবে। এটা এখন রাষ্ট্রের সম্পত্তি। অনুগ্রহ করে আপনারা এবার সবাই একটু পেছনে সরুন... প্লিজ... ।’
সবাই কথা শুনল। পিছিয়ে গেল হাত দেড়েক। আর ঠিক তখনই ঝপ করে বিদ্যুৎ চলে গেল। চারদিকে নিকষ অন্ধকার। সঙ্গে সঙ্গে ঝনঝন করে কাচ ভাঙার একটা শব্দ হলো। ঠিক দুই সেকেন্ড পর বোমা ফাটার একটা বিকট শব্দ হলো! মুহূর্তে ধোঁয়ায় ভরে গেল চারদিক। একটা হইচই শুরু হলো। চিত্কার–চেঁচামেচি, দৌড়–ঝাঁপ... হুড়োহুড়ি... তখনই ঝপ করে আবার বিদ্যুৎ চলে এল। সবাই অবাক হয়ে দেখল, তাদের সামনে সাদা টেবিলের ওপর ভাঙাচোরা কাচ পড়ে আছে... সোনার সিন্দুকটা নেই। হতভম্ব বিনয় স্যার তাকালেন ওদের দিকে। ফিসফিস করে বললেন, ‘বলেছিলাম না, সোনার সিন্দুক বলে কিছু নেই... এই দেখ নেই!!’ স্যারের মুখটা কেমন রহস্যময় লাগে। নব তাকায় বুবলী আর অপুর দিকে, তিনজনের চোখই বেশ জ্বালা করছে।