গত পর্বে যা ছিল | জারা, সারা, লরা। তিন কিশোরী। তিন কন্যা। জারা শখের গোয়েন্দা। সারা আর লরা তার সহকারী। ওদের স্কুলের আরেক বান্ধবী ক্যারি অ্যানসনের মায়ের কাছ থেকে ফ্রি পাস পেয়ে উইকএন্ডে ফ্যান্টমল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিল। জারার জ্যাকেটের পকেট থেকে রহস্যময়ভাবে পাসগুলো হারিয়ে গেল। খুঁজে না পেলে আগামী দিন থেকে ওদের মেলায় আসা বন্ধ। মন খারাপ হয়ে গেল তিনজনেরই। জারার জন্য আরও দুঃসংবাদ আছে। ক্যারি জানিয়ে দিল, পাসগুলো খুঁজে বের করতে না পারলে তাকে তার সবচেয়ে অপছন্দের রাইড র্যাম্বলিং রোজিতে চড়তে হবে। অতএব ওগুলো খুঁজে বের করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে কাজটা অত্যন্ত কঠিন।
পাঁচ.
সে রাতে এক মুহূর্তের জন্য ঘুম এল না জারার চোখে। অবশেষে রোববার সকালটা যখন এল, তিন কন্যা জারা, সারা, লরা আর ওদের বন্ধু ক্যারিকে গাড়িতে করে ফ্যান্টমল্যান্ডে পৌঁছে দিলেন মিসেস কোরিন ডুয়েল।
‘অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, আন্টি,’ পার্কিং লটে গাড়ি থামতে বলল জারা।
‘তোমাদের সঙ্গে এসে আমারও আনন্দ লাগছে,’ হেসে বললেন কোরি আন্টি। ‘আহ্, কতকাল কটন ক্যান্ডি খাইনি! ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে।’
ঠিক এই সময় জারার হাত আঁকড়ে ধরল সারা। ফিসফিস করে বলল, ‘ওই যে টনি ওয়াং।’
গেটের দিকে এগোচ্ছে টনি। সঙ্গে তার বাবা ও দুই ভাই কর্নি আর বার্নি। ছেলে তিনটের হাতে গোলাপি রঙের পাস, চার ধারে কমলা বর্ডার দেওয়া।
‘ফ্রি পাস পেয়েছি আমরা! ফ্রি পাস! ফ্রি পাস!’ টিকেট উঁচু করে বাতাসে নাচিয়ে সুর করে চিৎকার করছে টনি, আর নেচে নেচে টিকেট টেকারের দিকে এগোচ্ছে।
আজ নীল নোটবুকটা নিয়ে এসেছে জারা। পকেট থেকে সেটা বের করে টনি নামের পাশে নোট লিখল: টনির কাছে তিনটে ফ্রি পাস! আমাদেরগুলো যেমন ছিল ঠিক সে রকম!
‘এসো, মেয়েরা,’ গেটের ভেতরে ঢোকার পর কোরি আন্টি বললেন। ‘প্রথমে কোন রাইডটাতে চড়ব?’
‘উম...আন্টি,’ আমতা আমতা করে জারা বলল, ‘এক্ষুনি রাইডে না চড়ে অন্য কিছু যদি করি, আপত্তি আছে তোমার?’
‘কী করবে? রহস্যের সমাধান?’ হাসলেন কোরি আন্টি। ‘তোমার হাতে নীল নোটবুকটা দেখেই বুঝেছি, নতুন কোনো কেস পেয়েছ তুমি।’
‘তাহলে তো বুঝেই ফেলেছ। প্লিজ?’ জারা বলল।
মাথা কাত করে সম্মতি জানালেন কোরি আন্টি। ‘তবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। বেলুন স্ট্যান্ডে দেখা হবে আমাদের।’
‘আহ্, আন্টি!’ কোরিকে জড়িয়ে ধরল জারা। ‘তুমি না, গ্রেট!’
‘থ্যাংকস,’ হেসে বললেন কোরি আন্টি। ‘এখন তাহলে যাই। কার্লি ক্যাটারপিলারে চড়ব আমি।’
আন্টি চলে যাওয়ার পর বন্ধুদের দিকে ফিরল জারা। ‘চলো, আগে টনির পিছু নিই। তারপর কোকোমাংকের খোঁজ করব।’
‘আমি বরং কোরি আন্টির সঙ্গে কার্লি ক্যাটারপিলারেই যাই,’ ক্যারি বলল।
‘ঠিক আছে, যাও,’ জারা বলল। ‘দৌড় দাও। পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে।’
‘যদি মেলা বন্ধ হওয়ার আগে তুমি কেসটার সমাধান করতে না পারো, তাহলে...মনে আছে তো?’ ভুরু নাচাল ক্যারি।
‘ওই যে,’ জারা বলল। ‘ব্যারেল অভ মাংকির দিকে যাচ্ছে।’
ব্যারেল অভ মাংকি একটা রাইড। পিপার মতো করে বানানো। ওটাতে চড়তে হলে ভেতরে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। বনবন করে ঘুরতে থাকে ওটা। ভেতরে যারা থাকে তারাও ওটার সঙ্গে ঘোরে। এটাই চড়ার মজা।
একটা সিঁড়ি দিয়ে পিপার ভেতর ঢুকতে হয়। সিঁড়ির কাছে এসে একটা সাইনবোর্ড। তাতে লেখা: চড়ার আগে পকেটের জিনিসপত্র সব খালি করে নাও।***
‘খালি করতে তো আপত্তি নেই,’ জারা বলল। ‘পাহারা দেবে কে?’
‘আমাদের কাউকেই দিতে হবে।’ আগ বাড়িয়ে বলল সারা, ‘আমিই দিই।’
পকেট থেকে সব জিনিস বের করে সারার হাতে দিল জারা আর লরা। এ দিন লরাও পকেটওয়ালা পোশাক পরে এসেছে। জারার চোখ পড়ল টনির দিকে। দৌড়ে আসছে পিপার দিকে। সিঁড়িতে উঠে পড়ল।
‘টনি কিন্তু পকেট খালি করেনি,’ গম্ভীর মুখে বলল জারা।
মস্ত পিপাটাতে ঢুকল ওরা। ঘোরার সময় যাতে কোনো অঘটন না ঘটে সে জন্য নিজেদের গায়ে স্ট্র্যাপ বাঁধতে লাগল জারা ও সারা। পিপার ভেতর ওদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে টনি।
লাউডস্পিকারে ভেসে এল একটা জোরালো কণ্ঠস্বর। ‘সবাই রেডি?’ কারও জবাবের অপেক্ষা না করেই এক সেকেন্ড পর বলল, ‘বেশ বেশ বেশ! এই যে ঘোরা শুরু করলাম!’
ঘুরতে শুরু করল পিপাটা। দেহ শক্ত করে রেখেছে জারা। মুহূর্ত পরেই বুঝতে পারল তার প্রয়োজন নেই। পিপাটা এত জোরে ঘুরছে আপনা-আপনি দেহটা পিপার দেয়ালে চেপে গেছে।
‘গতি বাড়ছে!’ খুশি খুশি কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল জারা।
তারপর সিমেন্ট আর সুরকি মেশানোর মেশিনের মতো কাত হয়ে গেল পিপার মুখটা। ওভাবেই ঘুরতে লাগল।
চেঁচিয়ে উঠল সারা, ‘এই ঘোরাটা হলো সবচেয়ে মজার!’
হঠাৎ করে নানা ধরনের জিনিসপত্র উড়তে আরম্ভ করল পিপার ভেতর। বেইসবল কার্ড আর চুয়িংগামের কয়েকটা স্টিক দেখতে পেল জারা। তারপর গোলাপি রঙের কাগজে কমলা বর্ডার দেওয়া কাগজের টুকরো বাতাসে উড়তে দেখল।
ফ্রি পাস! অবাক হয়ে ভাবল জারা।
হঠাৎ থেমে গেল পিপা। পিপার ভেতরে যা কিছু উড়ছিল, সেগুলোও নেমে গেল পিপার তলায়।
রাইড থামিয়ে দিয়েছে অপারেটর। রুক্ষকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কার জিনিস এগুলো?’
বেল্ট খুলে দৌড়ে কাছে এল টনি। ‘আমার! পকেট থেকে পড়ে গেছে!’
কঠিন স্বরে লোকটা বলল, ‘কিন্তু তোমার তো পকেট খালি করে আসার কথা।’
‘সরি,’ টনি জবাব দিল। ‘এখানে এমন কিছু জিনিস আছে, যা আমি হারাতে চাইনি।’ নিচু হয়ে টিকেট তুলে নিল সে।
‘টনি,’ তোমার পাসগুলো দেখতে পারি, প্লিজ?’ জারা বলল।
হাত সরিয়ে নিল টনি। ‘না!’ তাড়াহুড়া করে পিপা থেকে বেরিয়ে গেল সে।
জারা, সারা, লরা তাকে অনুসরণ করল।
টনি দৌড়াতে লাগল। মেয়েরাও তার পেছনে ছুটতে লাগল। ম্যাজিশিয়ানের মঞ্চের সামনে এসে থামল টনি। ওখানে দাঁড়িয়ে কটন ক্যান্ডি খাচ্ছে তার দুই ভাই কর্নি আর বার্নি। ওর বাবা কাছে দাঁড়িয়ে সবকিছুর ছবি তুলছেন।
এই সময় মেইজ এল। হাতে একটা রুপালি আলখেল্লা। জিজ্ঞেস করল, ‘এই, কী হচ্ছে এখানে?’
টনির দিকে আঙুল তুলল লরা। ‘আপনার অ্যাসিসট্যান্ট একটা চোর।’
হারানো পাসগুলোর কথা ম্যাজিশিয়ানকে খুলে বলল জারা। রবারের মাকড়াসাটার কথাও জানাল।
মাথা পেছনে হেলিয়ে জোরে হেসে উঠল মেইজ। ‘তোমাদের চোখ যখন ওর লাঠিটার দিকে, তখন মাকড়সাটা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিলে, তাই না, টনি?’
‘হ্যাঁ,’ স্বীকার করল টনি। ‘কিন্তু ওদেরকে বলে দিলেন? এই কৌশলটা আমি গোপন রাখতে চেয়েছিলাম।’
‘ঠিক আছে গোপনই থাক,’ হাসিমুখে বলল মেইজ। ‘আমরা এই কয়জন ছাড়া বাকি আর কেউ না জানলেই হয়।’
‘হুঁ, মাকড়সা রহস্যের সমাধান হলো,’ জারা বলল। ‘কিন্তু তিনটে ফ্রি পাস পেল কী করে টনি?’
‘আমার কাছ থেকে,’ মেইজ জানাল।
‘আপনার কাছ থেকে?’ বিশ্বাস করতে পারছে না জারা।
‘আমি ওগুলো টনিকে দিয়েছিলাম, ভালো সহকারী হওয়ার পুরস্কার হিসেবে,’ ম্যাজিশিয়ান বলল। তারপর রুপালি আলখেল্লাটা টনির গায়ে জড়িয়ে দিল।
দেখে গর্বের হাসি হাসল তার দুই ভাই কর্নি আর বার্নি।
শব্দ করে নাক ঝাড়ল টনি। তারপর জারাকে পাসগুলো দেখাল।
‘এগুলোর মেয়াদ এক রোববার থেকে আরেক রোববার,’ ফিসফিস করে লরাকে জানাল জারা।
‘আমাদেরগুলোর মেয়াদ ছিল এক শনিবার থেকে আরেক শনিবার,’ লরা জবাব দিল।
‘সরি,’ টনিকে বলল জারা। টিকেটগুলো ওকে ফিরিয়ে দিল।
‘আমি কিছু মনে করিনি,’ বলে হেসে জাদুর লাঠিটা নাড়ল টনি। ‘তবে আমি এখন তোমাদের টিকটিকি বানিয়ে ফেলব। অ্যাব্রা ডুপি, ক্যাব্রা ডুপি,’ বলে মন্ত্র পড়ল।
ওর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো, সত্যিই টিকটিকি বানিয়ে ফেলতে পারবে ওদের। প্রথমে চিৎকার করে উঠল লরা। তারপর সারা। দৌড়ে পালাল। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়ে জারাও ওদের পিছু নিল।
‘টনি হোয়াং এখন আর সন্দেহভাজন নেই,’ জারা বলল। স্ন্যাক স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তিন কন্যা। নোটবুক খুলে সন্দেহভাজনদের তালিকা থেকে টনির নামটা কেটে দিল জারা।
‘এখন বাকি থাকল মনিকা আর কোকোমাংক,’ লরা বলল। ব্লু-বেরি জুসের বোতলে লম্বা চুমুক দিল।
হঠাত্ নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল জারা। ঢোক গিলল। আর মাত্র দুই ঘণ্টা সময় আছে তার হাতে, এর মধ্যে পাসগুলো খুঁজে বের করতে না পারলে র্যাম্বলিং রোজিতে চড়তে হবে ওকে।
‘জারা, কটা বাজে?’ সারা জিজ্ঞেস করল।
‘কোরি আন্টির সঙ্গে দেখা করার সময় হয়ে গেছে,’ জারা জবাব দিল।
বেলুন স্ট্যান্ডে এসে আন্টি আর ক্যারির সঙ্গে দেখা করল তিন কন্যা। সবাই মিলে লুপি লুপ আর মিনি ট্রেনে চড়ল। তারপর আন্টি আর ক্যারি চলল ফান হাউসের দিকে।
‘কিছু ট্যাফি কেনা যাক,’ দুই বন্ধুকে বলল লরা।
রনির স্ট্যান্ডে এসে এক প্যাকেট ভ্যানিলা ট্যাফি কিনল লরা। সারার পছন্দ কিউই ফলের গন্ধ। ওদের কেনার পর জারার পালা এল।
‘আমাকে এক ব্যাগ কলার গন্ধওয়ালা ট্যাফি দিন, প্লিজ,’ জারা বলল।
‘এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম—কলা কিনতে চাইবে, আগের দিনও কিনেছ,’ রনি বলল।
‘কেন, তাতে ভয় কিসের?’ জারা জিজ্ঞেস করল।
‘কাল সন্ধ্যায় কে যেন চুরি করে আমার ট্যাফি ট্রাকে উঠেছিল,’ রনি জানাল। ‘ব্যানানা ট্যাফির বাক্সটা ছিঁড়ে ফেলেছে।’
রনির দিকে তাকিয়ে রইল জারা। ‘আপনি বলতে চাইছেন...’
মাথা ঝাঁকাল রনি। ‘হ্যাঁ। আমার সব ব্যানানা ট্যাফি চুরি হয়ে গেছে।!’
ছয়.
‘কে করেছে?’ জারা জিজ্ঞেস করল। ‘কাউকে সন্দেহ হয়?’
‘শিওর না,’ রনি বলল। জ্বলন্ত চোখে তাকাল জারার বুকে লাগানো পিকোমাংক পাল পিনটার দিকে তাকাল। ‘তবে অনুমান করতে পারি কাজটা কে করেছে।’
‘কোকোমাংক?’ দম আটকে ফেলল সারা ।
‘এর আগেও একবার একাজ করেছে ও,’ রনি বলল। ‘ওর বাসায় সেই ট্যাফি পাওয়া গেছে।’
‘রনি,’ জারা জিজ্ঞেস করল, ‘ওর বাসাটা কোথায়, আমাদের বলতে পারেন?’
‘পারব না কেন?’ রনি জবাব দিল। মেলার একপ্রান্তে পার্কিং লটের দিকে তাকাল সে। ‘ওখানে।’
জারা দেখল, সুন্দর করে সারি দিয়ে রাখা হয়েছে কতগুলো ট্রেইলার।
দুই সহকারীকে নিয়ে ট্রেইলারগুলোর দিকে হাঁটতে হাঁটতে জারা বলল, ‘রনির কথা শুনে মনে হচ্ছে, কোকোমাংকই ওর ট্যাফিগুলো নিয়েছে।’
‘যদি তা-ই হয়,’ সারা বলল, ‘শিম্পাঞ্জিটা তোমার ট্যাফিগুলোও চুরি করে থাকতে পারে।’
‘সাথে আমাদের পাসগুলো,’ লরা যোগ করল।
হাঁটা থামিয়ে দিল জারা। নোটবুকের পাতায় আগে লেখা সূত্রগুলোর নিচে লিখল ‘চোরাই ট্যাফি’।
ট্রেইলারের সারির কাছে পৌঁছল তিনজনে।
একটা ট্রেইলারের দরজায় শিম্পাঞ্জির ছবি এঁকে তার নিচে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে : কোকোমাংক দা চিম্প।
‘ওই যে ওই ট্রেইলারটা,’ হাত তুলে দেখাল জারা। কয়েক পা এগোল।
স্ক্রিন ডোরের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখে এল জারা।
‘কি দেখলে?’ লরা জিজ্ঞেস করল।
‘ছোট একটা কাউচ, এক বালতি কলা, আর একটা খাঁচা,’ ফিসফিস করে বলল জারা। ‘আর...আরেকটা সাংঘাতিক জিনিস!’
‘কি জিনিস?’ লরা জানতে চাইল।
‘কাল যে ওভারঅলটা কোকোমাংকের পরনে ছিল, সেটা পড়ে আছে খাঁচার ভেতর,’ জারা বলল। ‘আমি পকেটগুলো দেখতে চাই।’
ডোরনব ঘোরাল জারা। ‘খোলা।’ ফিসফিস করে সারা আর লরাকে জানাল সে।
‘ওখানে ঢুকো না,’ সাবধান করল সারা।
‘চট করে একবার দেখে আসতে চাই,’ জারা বলল। পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকল সে।
ওভারঅলটার কাছে চলে এল। তুলে নিল ওটা। পকেট টিপেটুপে জানাল, ‘ভেতরে কিছু আছে।’ পকেটে হাত দিয়ে প্ল্যাস্টিকের ছোট একটা ব্যাগ বের করে আনল। ‘এই যে ব্যানানা ট্যাফি।’
‘ওভারঅলের পকেটে আমাদের পাসগুলো নেই?’ লরার প্রশ্ন। সারাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। ভয়ে ভয়ে রয়েছে। কখন কে এসে দেখে ফেলে।
দুটো পকেটই খুঁজে দেখল জারা। ‘নাহ্, পাস নেই,’ বিষণ্ন ভঙ্গিতে বলল সে।
ধপ করে কাউচে বসে পড়ল সারা। ‘ওয়াক! চেয়ারটাতে কি গন্ধরে বাবা! কলা পচা গন্ধ! এহেহ, শক্ত কি যেন লাগছে!’
‘কিসের ওপর বসলে?’ জিজ্ঞেস করল জারা। কাউচে পড়ে থাকা একটা কুশন তুলল। অস্ফুট শব্দ করে উঠল। পরক্ষণে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে! ট্যাফি! ব্যানানা ট্যাফির টুকরো! কোকোমাংকটা ট্যাফি চোর!’
‘ইক! ইক! ইক!’ বাইরে থেকে শব্দ শোনা গেল।
‘কে যেন আসছে,’ ফিসফিস করে বলল জারা।
ঠিক এই সময় গটমট করে ট্রেইলারে ঢুকলেন জেনিফার কেনসিংটন। তার পেছনে কোকোমাংক। ‘এই মেয়েরা, এখানে কি করছ?’ রাগত কণ্ঠে বললেন তিনি।
হারানো পাসগুলোর কথা জানাল জারা।
‘এখানে পেয়েছ?’ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জানতে চাইলেন মিসেস কেনসিংটন।
‘পাস পাইনি, তবে ট্যাফিগুলো পেয়েছি,’ জারা বলল।
‘চোরাই ট্যাফি,’ জারার কথা সমর্থন করল লরা।
হাঁ হয়ে গেল জেনিফারের মুখ। নিচের চোয়াল ঝুলে পড়ল। আর এই সময় ট্রেইলারে ঢুকল রনি।
‘মিসেস কেনসিংটন,’ বলল সে। ‘আপনার শিম্পাঞ্জি কোকোমাংকের বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
‘কোকোমাংক!’ শিম্পাঞ্জিটার দিকে ঘুরে গেলেন জেনিফার। ‘তুমি রনির ট্যাফি নিয়েছ?’
দুই হাতে মুখ ঢাকল কোকোমাংক, ঠিক মানুষের মত করে।
‘কিন্তু ওকে তো শিম্পাঞ্জি স্কুল থেকে ট্রেনিং দিয়ে আনা হয়েছে,’ আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেন জেনিফার।
‘আমার মনে হয় হোমওঅর্ক ঠিকমত করেনি,’ রাগ দেখিয়ে বলল রনি।
‘আমি মাত্র একবার কোকোমাংককে একা ছেড়ে গিয়েছি, কাল সন্ধ্যায়,’ জেনিফার জানালেন।
রনির দিকে তাকাল জারা। ‘আপনি বলেছিলেন না, কাল সন্ধ্যার পরেই আপনার ট্যাফিগুলো চুরি হয়েছে?’
‘হ্যাঁ,’ মাথা ঝাঁকাল রনি। ‘আর এই ট্রেইলারটার কাছেই আমার ট্রাকটা রেখেছিলাম। সুযোগ পেয়ে ট্যাফিগুলো চুরি করেছে।’
‘আমি সত্যিই দুঃখিত, রনি,’ জেনিফার বললেন। ‘কোকোমাংক কথা বলতে পারলে ধরে আপনার কাছে মাপ চাওয়াতাম।’
‘হুঁ, তাই তো,’ বিড়বিড় করল রনি।
ট্যাফিগুলো কুড়িয়ে নিতে লাগল রনি। ওর দিকে তাকিয়ে আছে জারা। ট্যাফিগুলো নিয়ে চলে গেল রনি।
হারানো পাসগুলো আছে কি না দেখার জন্য, মেয়েদেরকে ট্রেইলারটায় খুঁজে দেখতে অনুরোধ করলেন জেনিফার। সারা ঘরে খুঁজেও ওগুলো পাওয়া গেল না।
‘এখন মনে হচ্ছে,’ চিন্তিত ভঙ্গিতে জারা বলল, ‘কোকোমাংক আমার পকেট থেকে শুধু ট্যাফির ব্যাগই নিয়েছে, পাসগুলো নেয়নি।’
সারার কাছে হেঁটে এল কোকোমাংক। আস্তে করে হাত বাড়িয়ে সারার হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিল। হেসে ফেলল সারা। ‘ওহ্, কি মিষ্টি ও! মনে হয় যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ওকে, ততটা খারাপ নয় কোকোমাংক।’
নোটবুক বের করল জারা। সন্দেহের তালিকা থেকে কোকামাংকের নাম কেটে দিল। তারপর বন্ধুদের নিয়ে ট্রেইলার থেকে বেরিয়ে এল। মেলায় ঘুরে বেড়াতে লাগল।
‘এখন মাত্র একজন সন্দেহভাজনই রইল আর,’ জারা বলল।
‘মনিকার কথা বলছ তো?’ লরা বলল। ‘দেখো, স্কুয়ার্টিং গ্যালারিতে কে দাঁড়িয়ে আছে।’
‘মনিকা জোয়ান,’ জারা বলল। ‘সাথে আবার পলি ওয়েবার আর কনা জেসন।’
মনিকা, পলি আর কনা রয়েছে শূটিং গ্যালারিতে। এক সারি প্ল্যাস্টিকের বোতল দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ওয়াটার পিস্তল দিয়ে পানি ছুঁড়ে বোতলে লাগাতে হবে।
পানি ছোঁড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে মনিকা, হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়াতে হৃদপিণ্ডটা লাফিয়ে উঠল জারার।
জিন্সের প্যান্ট পরেছে মনিকা। পকেট থেকে বেরিয়ে আছে গোলাপি-কমলা রঙের কাগজ।
‘সারা, লরা, দেখো!’ জারা বলল। ‘মনিকার পকেট থেকে বেরিয়ে থাকা কাগজগুলো দেখেছ? ওগুলো আমাদের হারানো টিকেটগুলোও হতে পারে!’