জাপানের লোকগল্প

প্রাচীন জাপানের লোকগল্পগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়েছে, বিশেষ করে কৃষিজীবী মানুষের মধ্যে। আজও সেসব গ্রাম্য গাথা তাদের হৃদয়ে জীবন্ত হয়ে আছে। জাপান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১৯৭৩-৭৫ সালে এমন ৭টি লোকগল্প নিয়ে ২১টি ডাকটিকিট প্রকাশ করে

ফুল ফোটানো বৃদ্ধ

অনেক দিন আগে এক বৃদ্ধ ছিল। লোকটি খুব সৎ ও দয়ালু। তার ছিল একটি পোষা কুকুর। কুকুরটিকে সে খুব আদর করত। একদিন কুকুরটি বৃদ্ধকে বলল, ‘আমার সঙ্গে এসো।’ তারপর লেজ নাচিয়ে নাচিয়ে কুকুরটি ছুটে চলল পাহাড়ের দিকে।

কুকুরটির পিছু পিছু লোকটি হেঁটে চলল। পাহাড়ের এক জায়গায় গিয়ে থামল কুকুরটি, তারপর ঘেউ ঘেউ করে বৃদ্ধকে বলল, ‘এখানে মাটি খোঁড়ো।’ বৃদ্ধ মাটি খুঁড়তে শুরু করল। একটু খুঁড়েই সে অবাক হয়ে গেল। এ যে গুপ্তধন! কিন্তু এই পুরো ঘটনা দেখে ফেলল বৃদ্ধ লোকটির প্রতিবেশী আরেক বৃদ্ধ।

প্রতিবেশী বৃদ্ধ লোকটি যেমন অসৎ ছিল, তেমনই ছিল লোভী। পরদিন সে-ও সৎ বৃদ্ধের কুকুরটিকে বেঁধে নিয়ে গেল সেই পাহাড়ে। কুকুরটির কাছে জানতে চাইল, কোথায় গুপ্তধন আছে। ঘেউ ঘেউ করে তাকেও একটি জায়গা দেখিয়ে দিল কুকুরটি। অমনি লোকটি মাটি খুঁড়তে শুরু করল। একটু খোঁড়ার পরই গুপ্তধনের পরিবর্তে বেরিয়ে এল সাপ, বিচ্ছু, ব্যাঙসহ এমন কিছু, যা সে একেবারেই পছন্দ করে না। লোকটি এত রেগে গেল যে মেরেই ফেলল কুকুরটিকে।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর সেই সৎ বৃদ্ধ পাহাড়ের কাছে তার কুকুরকে মৃত অবস্থায় পেল। সেখানেই কুকুরটিকে কবর দিল লোকটা। তারপর সেই কবরের ওপর রোপণ করল একটি চারা গাছ।

দেখতে দেখতে গাছটি বড় হয়ে গেল। সৎ লোকটি সেই গাছ কেটে একটি ঢেঁকি বানাল। ঢেঁকিতে যেই না সে ধান ভাঙতে শুরু করল, অমনি গমের পরিবর্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করল অসংখ্য ধনরত্ন। পাশের বাড়ির দুষ্ট বৃদ্ধ এবারও দেখে ফেলল সব।

পরদিন দুষ্ট বৃদ্ধও একবস্তা ধান নিয়ে হাজির। যেই না সে ঢেঁকি দিয়ে ধান ভাঙতে শুরু করল, আবারও ধনরত্নের বদলে এমন সব জিনিস বেরিয়ে এল, যা সে মোটেও পছন্দ করে না। রেগে গিয়ে সে ঢেঁকিটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।

পুড়ে যাওয়া ঢেঁকিটির ছাই মুঠোয় ভরে নিয়ে এল সৎ লোকটি। রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ গাছগুলো প্রায় মরেই গিয়েছিল, সেগুলোর ডালে ডালে ছাই ছিটিয়ে দিল সে। অল্প কদিনের মধ্যেই ডালগুলো ফুলে ফুলে ভরে গেল। এই দেখে জমিদার বাবু লোকটিকে পুরস্কৃত করল।

অসৎ বৃদ্ধ ভাবল, সে-ও গাছে ছাই ছিটাবে, ফুল ফুটিয়ে পুরস্কার নেবে জমিদারের কাছ থেকে। যা ভাবা তা-ই, বাটি ভরে ছাই নিয়ে সে গাছে উঠল। তারপর ইচ্ছেমতো এদিক–সেদিক ছিটাতে থাকল ছাই। ঠিক তখনই ওই পথ ধরে জমিদার বাবু তার দলবল নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল। হঠাৎ তার চোখে ছাই এসে পড়ল। জমিদার গেল ভীষণ চটে, ‘ধর ব্যাটাকে,’ বলতেই তার লোকেরা অসৎ লোকটিকে গাছ থেকে নামাল, তারপর দিল বেদম পিটুনি। পিটুনি খেয়ে দুষ্ট লোকটির উচিৎ শিক্ষা হল।

সারস বউ

অনেক দিন আগে এক বেকার যুবক ছিল। সারা দিন সে টইটই করে ঘুরে বেড়াত। একদিন আকাশ কালো করে নেমে এল ঝড়। সেই ঝোড়ো বাতাসে ভেঙে পড়ল গাছের ডালপালা। নিরাপদ কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য সে দিল দৌড়। পথিমধ্যে তার সামনে এসে মুখ থুবড়ে পড়ল একটি সারস পাখি। যুবকটি আহত সেই সারসকে নিয়ে তার ঘরে চলে এল। তারপর সারসটিকে সেবাযত্ন করে একসময় সুস্থ করে তুলল। সুস্থ হয়ে সারসটি উড়ে গেল।

কিছুদিন যেতে না যেতেই সারস পাখিটি এক নারীর রূপ ধারণ করে যুবকের বাড়িতে এসে উঠল। যুবকটি তার প্রাণ বাঁচিয়েছে, কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাই সে যুবকটিকে বিয়ে করে ফেলল। যুবকের ছিল না আয়রোজগার, সারস বউ তাই এক তাঁতকল বসাল। যুবকটিকে শর্ত দিল যে যখন সে তাঁতকলে কাপড় বুনবে, তখন যেন কেউ তার কাছে না আসে। এমনকি কেউ যেন তাকে ভুলেও আড়ি পেতে দেখার চেষ্টা না করে।

সারস বউ খুব উৎকৃষ্ট মানের কাপড় বুনে যুবকের হাতে তুলে দেয়। বেকার যুবক সেই কাপড় অনেক দূরের হাটে খুব ভালো দামে বিক্রি করে ঘরে ফেরে। অল্প সময়ের মধ্যেই বেকার যুবকটি অনেক অর্থের মালিক হয়ে গেল।

এত মসৃণ, নিখুঁত কাপড় কী করে বোনে? যুবকের মনে বেশ কৌতূহল জন্মাল একদিন। তাঁতঘরের বাঁশের বেড়া একটু ফাঁকা করে সে দেখল, একটা সারস পাখি তার ডানার পালক দিয়ে কাপড় বুনছে। যেই না যুবকটি বেড়ার ফুটোতে চোখ রাখল, অমনি সারসটি মাথা ঘুরিয়ে যুবকের চোখের দিকে তাকাল। আর সঙ্গে সঙ্গেই সে আকাশে উড়ে গেল।

মানুষ কাছে এলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়।

আঙুলের সমান যুবক

অনেক দিন আগে এক দম্পতি বাস করত। কত ওষুধ, কত মানত, কত তাবিজ-কবচ; কিন্তু কিছুতেই তাদের সন্তান হচ্ছিল না। ঈশ্বরের কাছে তারা সারাক্ষণ একটি সন্তানের জন্য প্রার্থনা করত। এমনকি আঙুলের সমান একটি সন্তান হলেও তাদের খুশির অন্ত ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাদের সন্তান হলো এবং সত্যি সত্যি একটি আঙুলের সমান।

শিশুটি বড় হলো। যুবক হলো। কিন্তু সেই একটি আঙুলের সমানই রয়ে গেল। একটুও লম্বা হলো না। অতি বামুন হলেও তার সাহস ছিল বীরের মতো। তার তলোয়ার ছিল ছোট্ট একটি সুই।

একদিন যুবকটি শহরের উদ্দেশে রওনা দিল। ছোট্ট একটি স্যুপের বাটিকে নৌকা বানিয়ে চামচের দাঁড় টেনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শহরে এসে পৌঁছাল সে।

শহরের এখানে–সেখানে কাজ খুঁজে বেড়াতে লাগল বামুন যুবক। অমন বামুনকে কেই–বা কাজ দেবে! অবশেষে এক ধনী পরিবারে সে কাজের সুযোগ পেল। একদিন সেই বাড়ির কন্যাদের নিয়ে বামুন যুবক বের হলো তীর্থযাত্রায়। পথে মস্ত বড় এক দৈত্য তাদের আক্রমণ করে বসল। বামুন যুবক সাতপাঁচ না ভেবে তার কোমর থেকে বের করল সুচের তলোয়ার, তারপর দৈত্যের শরীর বেয়ে উঠে এল তার নাকের ডগায়। সুচের তীক্ষ্ণ ফলা সজোরে গেঁথে দিল দৈত্যের চোখে।

দৈত্যের চোখ থেকে ঝরল রক্ত। ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে দৈত্য পালাল। বামুন যুবক দৈত্যের হাত থেকে তার মনিবের কন্যাকে রক্ষা করল। পালানোর সময় দৈত্য এক আশ্চর্য পাথর ফেলে গেল। এক আঙুল সমান অতি বামুন যুবকটি সেই পাথর স্পর্শ করল আর মুহূর্তের মধ্যেই সে এক বলিষ্ঠ যুবকে পরিণত হলো।

চাঁদের রাজকন্যা

অনেক দিন আগে এক বৃদ্ধ লোক ছিল। সে জীবিকা নির্বাহ করত বাঁশ কেটে। একদিন সে দেখল একটি বাঁশের মাথায় কী যেন ঝলমল করছে। বাঁশটি কাটার পর কোটর থেকে বেরিয়ে এল এক ছোট্ট মেয়ে। সে ছিল চাঁদের রাজকন্যা। বৃদ্ধ লোকটি সেই ছোট্ট মেয়েকে পেয়ে দারুণ খুশি হলো। বাঁশ কাটা শেষে মেয়েটিকে সে তার বাড়িতে নিয়ে এল।

দেখতে দেখতে মেয়েটি একসময় বড় হলো। রূপে–গুণে সে ছিল অতুলনীয়। তার সেই রূপ–গুণের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। দেশ–বিদেশ থেকে রাজপুত্ররা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছিল বৃদ্ধ লোকটির বাড়িতে। চাঁদের রাজকন্যার ছিল বেজায় বুদ্ধি। সে রাজপুত্রদের একেকটি কঠিন ধাঁধা জিজ্ঞেস করত। আর শর্ত ছিল, যে তার ধাঁধার উত্তর দিতে পারবে, তাকেই সে বিয়ে করবে। এমন করে পাঁচ–পাঁচজন রাজার কুমার রাজকন্যার ধাঁধার উত্তর দিতে না পেরে মন খারাপ করে চলে গেল।

রাজপুত্রদের নাহয় ফন্দি করে ফিরিয়ে দেওয়া গেল। কিন্তু এবার ওই রাজ্যের রাজা স্বয়ং নিয়ে এল বিয়ের প্রস্তাব। চাঁদের রাজকন্যা যথারীতি তাকেও কঠিন ধাঁধা জিজ্ঞেস করল। রাজা ছিল একেবারে মাথামোটা। ধাঁধার উত্তর দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। এমনকি তার উজির–নাজিরেরাও রাজকন্যার ধাঁধার উত্তর দিতে পারল না। রাজা গেল মহা চটে এবং সিদ্ধান্ত নিল যে রাজকন্যাকে জোর করেই বিয়ে করবে সে।

সেই রাতেই রাজার সৈন্যরা চাঁদের রাজকন্যার বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলল। রাজকন্যাকে তারা জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাবে রাজপ্রাসাদে। যেই না সৈন্যরা ঘরের ভেতরে ঢুকল, অমনি রাজকন্যা চাঁদের দেশে উড়ে গেল।

গালে ঝুলন্ত মাংসপিণ্ড

অনেক অনেক দিন আগে দুই বৃদ্ধ প্রতিবেশী ছিল। তাদের একজন ছিল খুবই ভালো আর অন্যজন ভীষণ দুষ্ট। দুজনের গালেই ছিল ঝুলন্ত মাংসপিণ্ড। এ–ই নিয়ে তাদের চলাফেরা করাটাও ছিল বেশ কষ্টের। তা ছাড়া গালে অমন বিকট মাংসপিণ্ডের কারণে তাদের দেখে মানুষজন ভয় পেয়ে যেত।

ভালো বৃদ্ধটি একদিন পাহাড়ে এসে বৃষ্টিতে আটকে পড়ল। তাড়াহুড়া করে সে একটি গুহায় আশ্রয় নিল। ঠিক সেই সময় কতগুলো দৈত্য এসে সেখানে নাচানাচি শুরু করল। বৃদ্ধ দৈত্যদের আসতে দেখে আগে থেকেই গুহার পাঁচিলের এক কোণে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু দৈত্যরা তাকে দেখে ফেলল এবং বৃদ্ধকে তাদের সঙ্গে নাচতে বলল।

বৃদ্ধ তাদের সঙ্গে নাচল। সে কী নাচ! দৈত্যরা সব থ হয়ে বৃদ্ধের নাচ দেখল। নাচতে নাচতে বৃদ্ধ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ল, দৈত্যরা তখন তাকে খুব বাহবা দিল। বৃদ্ধকে তারা পরদিন আবার আসতে বলল এবং প্রতিশ্রুতি দিল যে তারা তার গালে ঝুলে থাকা বেঢপ মাংসপিণ্ডটা ঠিক করে দেবে।

দুষ্ট বৃদ্ধ এ কথা শুনল। পরদিন সে-ও হাজির হলো দৈত্যদের নাচের আসরে। কিন্তু দুষ্ট বৃদ্ধের এবড়োখেবড়ো নাচ দেখে দৈত্যরা গেল চটে। তারপর ভালো বৃদ্ধের গালের ঝুলে থাকা মাংসপিণ্ডটা খুলে দুষ্ট বৃদ্ধের গালে এঁটে দিল। দুষ্ট লোকটির দুই গালে এখন দুটি বিিশ৶ মাংসপিণ্ড।

জেলে উরাশিমা

উরাশিমা নামে দয়ালু এক জেলে ছিল। সে একদিন মাছ ধরতে এসে দেখল, শিশুরা একটি কাছিম নিয়ে খেলতে খেলতে আধমরা করে ফেলেছে। উরাশিমা ওদের হাত থেকে কাছিমটি উদ্ধার করল। তারপর ছেড়ে দিল সাগরের জলে। কাছিমটি সাঁতরে চলে গেল। কয়েক দিন পর সাগরপাড়ে সে আবার যখন মাছ ধরতে এল, তখন সেদিনের সেই কাছিম জলে ভেসে উঠল। প্রাণ বাঁচানোর প্রতিদান হিসেবে উরাশিমাকে সে জলদেবতার প্রাসাদে নিয়ে গেল।

সাগরতলের সেই প্রাসাদের সৌন্দর্য বলে-কয়ে বোঝানো যাবে না। তারো দুচোখ ভরে চারদিক দেখল। বাহ কী সুন্দর! এমন সময় অপরূপ এক রাজকন্যা এসে তাকে ধন্যবাদ দিল বালুতটে আটকে পড়া কাছিমটিকে বাঁচানোর জন্য। তারপর সে কি রাজকীয় ভোজ! জেলে উরাশিমা তাদের আতিথেয়তায় দিশাহারা হয়ে গেল!

এক দিন–দুই দিন করে করে সাগরতলের প্রাসাদে উরাশিমার তিন বছর কেটে গেল। একদিন সে ভাবল, এবার তবে বাড়ি ফেরা যাক। রাজকুমারীকে উরাশিমা বিদায় জানাতে গেল। তখন রাজকুমারী তাকে ছোট একটি বাক্স উপহার দিল।

সাগরতলের প্রাসাদ ছেড়ে উরাশিমা উঠে এল তীরে। ধীরে ধীরে সে পা বাড়াল তার গ্রামের দিকে। গ্রামে ফিরে দেখল, তার গ্রাম একেবারে বদলে গেছে! তন্নতন্ন করে খুঁজেও পরিচিত কারও দেখাই সে পেল না, এমনকি তার নিজের ঘরেরও কোনো চিহ্ন নেই।

উরাশিমা আবার সাগরের পাড়ে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ তার মনে পড়ল, বিদায়বেলায় রাজকুমারী তাকে একটি বাক্স দিয়েছিল। বালুতটে বসে উরাশিমা বাক্সটি খুলল। বাক্স থেকে কুণ্ডলি পাকিয়ে বেরিয়ে এল ধোঁয়া এবং মুহূর্তের মধ্যেই চুল-দাড়ি পেকে উরাশিমা একেবারে বৃদ্ধ হয়ে গেল!

ইঁদুরের রাজ্য

অনেক দিন আগে এক বৃদ্ধ পাহাড়ে গেল কাঠ কুড়াতে। শুকনা ডালপালা একসঙ্গে জড়ো করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ল সে। তারপর সেই পাহাড়ি বনের ধারে বসে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা চালের পিঠা বের করল। এমন সময় দেখল তার সামনে একটি ইঁদুর ছোটাছুটি করছে। ইঁদুরটিকেও একটি পিঠা খেতে দিল বৃদ্ধ।

চালের পিঠা খেয়ে ইঁদুর ভীষণ খুশি হলো। বৃদ্ধকেও নিমন্ত্রণ করল তাদের বাড়িতে। বৃদ্ধ ইঁদুরের নিমন্ত্রণ রক্ষা করল। মাটির নিচে ইঁদুরের বিশাল রাজ্য। বৃদ্ধকে তারা দিল এক রাজকীয় ভোজ। খাওয়াদাওয়া শেষে বৃদ্ধ যখন ফিরবে, এমন সময় ইঁদুরেরা বৃদ্ধকে উপহার দিল অনেক ধনরত্ন।

কাঠ কুড়াতে গিয়ে এভাবে ধনরত্ন নিয়ে আসার ঘটনা শুনল এই বৃদ্ধের প্রতিবেশী আরেক বৃদ্ধ। এই বৃদ্ধ ছিল ভীষণ লোভী। যদিও তার ধনসম্পদ ছিল, তবু ইঁদুরের কাছ থেকে আরও কিছু ধনরত্ন বাগিয়ে নেওয়ার আশায় সে–ও ছুটল পাহাড়ে। ইঁদুরের বাড়িতে এলে তাকেও তারা সমাদর করল। আবারও সেই রাজকীয় ভোজ! বিদায়বেলায় উপহার হিসেবে এই বৃদ্ধও ধনরত্ন পেল।

তবে লোভী বৃদ্ধ চাইল ইঁদুরদের সব ধনরত্ন নিয়ে যেতে। কিন্তু ইঁদুরেরা কিছুতেই রাজি নয়। তাই লোভী বৃদ্ধ ইঁদুরদের সব সম্পদ জোর করে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ইঁদুরেরা তখন গেল ভীষণ খেপে। চিৎকার–চেঁচামেচি করে সবাই এদিক–সেদিক ছুটে পালাল। লোভী বৃদ্ধের হাতে যে ধনরত্ন ছিল, হঠাৎ করেই সেসব অদৃশ্য হয়ে গেল এবং বৃদ্ধ দেখল আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত এক জ্বালামুখে সে বসে আছে!

রূপান্তর ও ডাকটিকিট সংগ্রহ: নিজাম বিশ্বাস

আরও পড়ুন