সুপারহিরো
এক
‘আপনি নিশ্চিত এটা কাজ করবে?’ সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করল আনা ফ্রান্সিস।
‘আলবত। এটার একটা সিমুলেশনও হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এখন শুধু মানুষের মস্তিষ্কে দেওয়া বাকি,’ বললেন ড. হারভেস্ট রড।
‘আমি এখনো বুঝতে পারছি না কী করা উচিত। একবার মনে হচ্ছে...’
‘এই যে, তোমার এত সন্দেহপ্রবণ মন, এটাও ঠিক করা যাবে ন্যানোরাল দিয়ে।’ হেসে বললেন রড।
‘বেশ, তবে এটার কোনো পার্শ্ব...’
‘নেই!’
‘বেশ...’
‘দেখো, তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমার হাতে বেশি সময় নেই। স্ক্রিনে তাকাও। দ্রুত আলাদা হচ্ছে ওগুলো। যেকোনো মুহূর্তে ঝামেলা শুরু হতে পারে।’ টাকে একবার হাত বুলিয়ে নিলেন ডক্টর।
‘বেশ, আমি রাজি!’
‘এই শব্দ ছাড়া কি তুমি আর কিছু জানো না?’ হাসলেন রড, ‘তৈরি হয়ে নাও, সুপারহিরো হতে চলেছ তুমি।’
‘বেশ, তবে হিরো নয়, হিরোইন।’
দুই
'কেমন লাগছে এখন?'
‘বুঝতে পারছি না। কেমন যেন শূন্য লাগছে নিজেকে।’
‘নো প্রবলেম। নো টেনশন। ন্যানোরালগুলো অনেক বুদ্ধিমান, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চেয়ে বেশি। লেফট সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের সঙ্গে সংযোগ নিতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। এরপরই...বেশ!’
‘ডক্টর, এটা কী হচ্ছে?’ হঠাৎ আনা বলে উঠল।
‘কী হলো আবার?’
‘চোখে এসব কী দেখছি? নীল আর লাল রং খেলা করছে শুধু।’ উত্তেজিত স্বরে বলল আনা।
‘নিজেকে কিছুটা সময় দাও, ’ উঠে দাঁড়ালেন রড। হেঁটে বেরিয়ে গেলেন ঘরটা থেকে। মুখে ফুটে উঠেছে কুটিল হাসি।
তিন
‘...ব্রিটিশ যুবক। ঘটনাস্থলে থাকা এক বৃদ্ধ জানিয়েছেন, হঠাৎই প্রবল বাতাস ভেসে আসে উত্তর দিক থেকে। তারপর মৃদু একটা শব্দ হয়। টম রাফম্যান মাটি থেকে কয়েক ফুট ওপরে উঠে যান, তারপর সোজা উধাও...।’
সুইচ টিপে টিভিটা বন্ধ করে দিলেন ডক্টর রড। একমুহূর্ত চুপ করে থাকলেন, তারপর হঠাৎ হাসতে শুরু করলেন উন্মাদের মতো।
‘স্বপ্নেও ভাবিনি এমনটা করতে পারব,’ আনা বলল।
‘যা–ই হোক,’ হাসি থামালেন হারভেস্ট, ‘নতুন শিকার পাওয়া গেছে।’
‘শিকার?’
‘ধুর ছাই! কী বলতে কী বলে ফেললাম। নতুন সুপারহিরো পাওয়া গেছে। এখন কিলবিলে প্রাণীগুলোকে এই টম ব্যাটার মগজেও ঢোকাতে হবে। তারপর ও ধরে আনবে আরেকটাকে। একদল সুপার হিউম্যান থাকবে আমার সঙ্গে। পৃথিবীটা ভরে যাবে সুপার হিউম্যানে। আর আমি হব...’
আনা চোখ সরু করে তাকায়, ‘আমরা আপনার গোলাম নই জনাব!’
‘কথা শেষ করিনি আমি।'
চার
‘কোন দুঃখে এমনটা করেছিলাম আমি? কোন দুঃখে?’ নিজের মাথায় বাড়ি মারতে মারতে মুখ থেকে এ কথাই বারবার উগরে আসছে ডক্টর রডের।
পৃথিবীতে দাঙ্গা লেগে গেছে। ডক্টর রডের সুপার হিউম্যান ফর্মুলা নিয়ে গড়ে ওঠা জীবগুলো নিজেদের মধ্যে মারামারি বাধিয়েছে। ডক্টর রডের পাগল হওয়ার দশা। তার ল্যাবরেটরিও ভাঙচুর করেছে ওগুলো। ওদের কন্ট্রোল করার প্রোগ্রাম, প্যানেল সব নিয়ে গেছে ওরা। এখন উপায় একটাই। সেটাই করতে যাচ্ছেন ডক্টর।
নিশিতে পাওয়া মানুষের মতো করে আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্যাসিলিটির তৃতীয় ঘরটায় গেলেন ডক্টর রড। সেখানে একটা কাচের বয়ামে কিলবিল করছে ন্যানোবটগুলো। বয়ামটা খুললেন ডক্টর। সার্ভিওল্যাক দিয়ে ৬০৭টা ন্যানোরালকে তুলে নিলেন। নিজের তৈরি এআই রোবট মার্কোকে ডেকে বললেন তার মাথায় এগুলো ঢুকিয়ে দিতে। বিনা বাক্য ব্যয়ে কাজে লেগে পড়ল মার্কো।
পাঁচ
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে জোহান গ্যারন দেখছে নিচে পৃথিবীর অবস্থা। দেখা যাচ্ছে শুধু আগুন আর আগুন। সারা পৃথিবীতে লেগে গিয়েছিল বিশ্বযুদ্ধ। এখন সবাই মিলে শেষ হয়ে তবে শান্তি মিলেছে।
তবু এই জগতে অন্তত ১৭ জন মানুষ তো বেঁচে আছে, এই স্পেস স্টেশনে।
ছোটবেলায় সুপারহিরোদের গল্প অনেক পড়েছে সে, ইশ্, যদি এমন কেউ সত্যিই থাকত! তাহলে তো বেঁচে যেত পৃথিবী।
আহ! সুপারহিরো!
লেখক: শিক্ষার্থী, নবম শ্রেণি, রামগড় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, খাগড়াছড়ি