ডিউক জনের রহস্য গল্প 'কালপ্রিট'

‘হ্যালো, স্লামালেকুম...।’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। মি. আরশাদ আমান বলছিলেন?’

‘জি, বলছি। আপনি কে বলছেন, প্লিজ?’

‘আমার নাম কবির আহমেদ। একটা বিশেষ প্রয়োজনে যোগাযোগ করেছি আপনার সঙ্গে...।’

‘জি, বলুন!’

‘না, মানে, সামনাসামনি বলতে চাইছিলাম আরকি দরকারটা...একটা কেসের ব্যাপারে...। আপনার যদি সমস্যা না থাকে তো...।’

অলংকরণ: তনি সুভংকর

‘বেশ তো, কোনোই অসুবিধা নেই। বাসাতেই আছি আমি এ মুহূর্তে। সম্ভব হলে চলে আসতে পারেন। ঠিকানা জানা আছে নিশ্চয়ই?’

‘জি, জি, অবশ্যই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি আমি। বড়জোর আধা ঘণ্টা লাগবে আসতে।’

আরও পড়ুন

এর ঠিক ৪০ মিনিট পর শখের গোয়েন্দা আরশাদ আমানের ড্রয়িংরুমে দেখা গেল শৌখিন মূর্তি সংগ্রাহক ও ব্যবসায়ী মি. কবির আহমেদকে। জানালেন, সম্প্রতি সংগ্রহের সবচেয়ে দামি মূর্তিটি চুরি গেছে তাঁর। মিসরীয় পুরাণের কিংবদন্তি শেয়াল–দেবতা আনুবিসের মূর্তি ওটা। কয়েক লাখ টাকা দাম। পুলিশি তদন্তে চুরির মামলার সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় প্রাইভেট ডিটেকটিভের শরণাপন্ন হয়েছেন কবির সাহেব। এক বন্ধুর মুখে মি. আমানের খুব প্রশংসা শুনেছেন তিনি। তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছেন গোয়েন্দা প্রবরের বাসার ঠিকানা আর ফোন নম্বর।

সব শুনে তক্ষুনি অকুস্থলে ঢুঁ মারতে চাইলেন আরশাদ। গাড়ি নিয়ে এসেছেন মি. আহমেদ, সোজা নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন গোয়েন্দাকে। ডুপ্লেক্স দোতলা বাড়ির সামনে মনোরম ফুলের বাগান।

সময় নষ্ট না করে কবির সাহেবের সঙ্গে তাঁর সংগ্রহশালায় চলে গেলেন ডিটেকটিভ। নিচতলারই বেশ বড়সড় এক কামরা ওটা।

ঈর্ষণীয় সংগ্রহ ভদ্রলোকের। দেশ-বিদেশ ঘুরে যত ধরনের মূর্তি নজর কেড়েছে তাঁর, যুক্ত করেছেন সেগুলো নিজ সংগ্রহে।

‘তেমন জটিল নয় কেসটা,’ এই বলে শুরু করলেন আরশাদ, ‘জামশেদ মিয়ার অন্তর্ধান আরও সহজ করে দিয়েছে ব্যাপারটা।’ তাকালেন তিনি ইকবাল সাহেবের দিকে, ‘আপনি বলেছেন, জানালা যে ভাঙা, সেটা আবিষ্কার করামাত্রই ভাইকে গিয়ে জানিয়েছেন মূর্তি চুরির কথা।’

বিরাট এক কাচের আলমারির সামনে নিয়ে এলেন তিনি গোয়েন্দাকে। বেশ কিছু বিচিত্র মূর্তি শোভা পাচ্ছে সেখানে। আরশাদ সাহেব লক্ষ করলেন, আলমারির তৃতীয় তাকের বাঁ দিকের কাচ ভাঙা। যদিও খেয়াল না করলে চোখে পড়ে না।

ওখানেই মূর্তিটা ছিল বলে জানালেন সংগ্রাহক।

আরও পড়ুন

ঘরের চারপাশে চোখ বোলালেন আরশাদ। আরও দুটি বড় আলমারি রয়েছে কামরার দুই দিকে। অপর দিকটায় জানালা রয়েছে বলে আসবাব রাখা হয়নি ওখানটায়।

থাই গ্লাসের গ্রিলবিহীন জানালার দিকে এগোলেন এবার আরশাদ। কাচ ভাঙা এটিরও। ওপাশে বারান্দা। ছোট ছোট কাচের টুকরা পড়ে আছে এখনো জানালার ভেতরে-বাইরে।

চলে এলেন তিনি খোলা বারান্দায়। বেশ প্রশস্ত জায়গাটি। বাইরে নানা রকম ফুলগাছের সুশৃঙ্খল সারি।

ফিরে আসছিলেন, এ সময় যুবক বয়সী একজন এসে হাজির হলেন বারান্দায়। মধ্যম স্বাস্থ্যের লোকটির পরনে ঘরের পোশাক-আশাক। চেহারায় মিল রয়েছে কবির সাহেবের সঙ্গে।

ছোট ভাই ইকবালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন কবির আহমেদ। ইনিও ব্যবসায়ী। সকালে ঘুম থেকে উঠে রোজকার অভ্যাসমতো বারান্দায় এসে ইনিই নাকি প্রথম আবিষ্কার করেন কাচভাঙা জানালা। সঙ্গে সঙ্গে মূর্তি হাপিস হওয়ার দুঃসংবাদটি জানান বড় ভাইকে।

‘বাড়িতে কে কে আছে এখন?’ কবির সাহেবের কাছে জানতে চাইলেন আরশাদ।

‘আমি ও আমার পরিবার, ইকবাল আর কাজের লোকেরা।’

‘সবাইকে এক এক করে জেরা করতে চাই আমি।’

‘নিশ্চয়ই।’

জিজ্ঞাসাবাদে অবশ্য তেমন কিছু জানা গেল না। শুধু দুটি জিনিস বাদে। এক. কবির সাহেবের আপন ভাই নন ইকবাল আহমেদ, সৎভাই। দুই. বেশ কিছুদিন ধরে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে ইকবাল সাহেবের।

পুরো বাড়িতে একবার চক্কর দিয়ে সেদিনের মতো বিদায় নিলেন আরশাদ আমান।

আরও পড়ুন

দুই

পরদিন সকালে নতুন খবর। উধাও হয়ে গেছে আহমেদ ভিলার দারোয়ান জামশেদ মিয়া!

দ্রুত ছুটলেন সেখানে আরশাদ আমান।

গিয়ে দেখেন, পুলিশও উপস্থিত ঘটনাস্থলে। মিসরীয় মূর্তিটিও অবশেষে উদ্ধার করতে পেরেছেন তাঁরা সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে জামশেদ মিয়ার থাকার জায়গা থেকে।

ইন্সপেক্টর গোলাম মামুনের সঙ্গে পূর্বপরিচয় রয়েছে মি. আমানের। কুশল আলাপের পর জানালেন তাঁকে গোয়েন্দা, রহস্যটির সমাধান করে ফেলেছেন তিনি। কালপ্রিট আসলে জামশেদ মিয়া নয়!

তাঁর অনুরোধে বৈঠকখানায় জড়ো হলেন সবাই।

‘তেমন জটিল নয় কেসটা,’ এই বলে শুরু করলেন আরশাদ, ‘জামশেদ মিয়ার অন্তর্ধান আরও সহজ করে দিয়েছে ব্যাপারটা।’ তাকালেন তিনি ইকবাল সাহেবের দিকে, ‘আপনি বলেছেন, জানালা যে ভাঙা, সেটা আবিষ্কার করামাত্রই ভাইকে গিয়ে জানিয়েছেন মূর্তি চুরির কথা।’

‘জি, সঙ্গে সঙ্গে।’

‘কীভাবে বুঝলেন যে চুরি গেছে ইজিপশিয়ান মূর্তি? আপনি তো ভাঙা জানালা দেখেই ছুট দিয়েছেন তাঁর কাছে!’ ইন্সপেক্টরের দিকে চাইলেন আবার আরশাদ, ‘এটা হলো প্রথম খটকা। এরপর জানলাম, ভালো যাচ্ছে না ইকবাল সাহেবের ব্যবসা। অতএব, দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোটা সহজ হয়ে গেল আমার জন্য। আপনারা যেহেতু আহমেদ ভিলা এবং অ্যান্টিকের মার্কেটে নজর রাখছিলেন, সে জন্য বোধ হয় মূর্তিটা বিক্রি করতে পারেননি ইকবাল সাহেব। অপেক্ষা করছিলেন পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়ার জন্য। কিন্তু যখন দেখলেন যে গোয়েন্দার আগমন ঘটেছে বাড়িতে, খুব সম্ভব ভয় পেয়ে গেলেন তিনি। চুরি করা মূর্তি জামশেদ মিয়ার ঘরে রেখে এমনভাবে সাজালেন ঘটনাটা, যেন দারোয়ানই আতঙ্কিত হয়ে মূর্তি ফেলে পালিয়েছেন। এখন জামশেদ মিয়াকে কী করেছেন উনি, সেটাই হচ্ছে কথা!’

সবাই তাকিয়ে আছেন ইকবাল আহমেদের দিকে। ঘাম ফুটে উঠেছে ভদ্রলোকের কপালে। রক্ত সরে গিয়ে সাদা হয়ে গেছে চেহারা। কিছু বলতে গিয়েও পারলেন না। খাবি খাওয়ার মতো নড়ল কেবল মুখটা।

আরও পড়ুন

আরও পড়ুন