এখানে চন্দ্র দর্শন করা বারণ
বদলির চিঠিটা হাতে পেয়ে রীতিমতো চোখ কপালে উঠে গেল। কুষ্টিয়া স্টেশনে কী সুন্দর আরামে ছিলাম। এখন যে স্টেশনে আমাকে পাঠানো হয়েছে, সেই জায়গার অবস্থান বের করতে গিয়ে নাকের পানি, চোখের পানি এক হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। গ্রামের নাম শশধর। জীবনে বহু আজব আজব জায়গার নাম শুনেছি। নওগাঁর একটা জায়গার নাম পত্নীতলা, টাঙ্গাইলে আছে মহিষমারা; সেই তুলনায় শশধর যেমন শ্রুতিমধুর, তেমনি ক্রিয়েটিভ। তবে সমস্যা হচ্ছে শশধর একদম গেঁয়ো গ্রাম, এই গ্রামে দুই প্ল্যাটফর্মের যে রেলস্টেশন আছে, এটাই অনেক।
আমি শহরের মানুষ। গ্রামের মাটির ধুলাবালু নয়, শহরের ইট–কাঠের ধুলা আর গাড়ির পোড়া ধোঁয়া খেয়ে বড় হয়েছি বলে গ্রাম ঠিক ধাতে সয় না। তবু সরকারি চাকরি বলে এই গ্রামে, সেই গ্রামে করে নানান স্টেশনে বদলি হওয়াকে বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়েছে। কুষ্টিয়া স্টেশনে ছিলাম বেশ কিছুদিন, তিন বছরের মতো। স্টেশনটা শহরের সঙ্গে বলে কিছুটা সুবিধাই হয়েছিল আমার। এখন ভাগ্যে কী আছে, কে জানে।
নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলাম আগস্টের ৪ তারিখে। স্টেশনে নেমে মন খারাপ হয়ে গেল। সাদাসিধে দেখতে পুরোনো আমলের স্টেশন। আধুনিকতার ছিটেফোঁটাও নেই। সারা জীবন যাত্রীদের ভিড়, হকার, ভিক্ষুকদের গ্যাঞ্জাম দেখে আসায় এই সুনসান স্টেশনকে দেখে মনে হচ্ছিল কয়েক যুগ পেছনে চলে গেছি। জায়গাটাও যেমন ভেবেছিলাম, ঠিক তেমনি। একদম প্রত্যন্ত গ্রাম। অনেক ট্রেন এই স্টেশনে থামেও না। স্টেশনটাও মূল গ্রাম থেকে কিছুটা বাইরে। সামনে বিশাল মাঠ, যত দূর চোখ যায় সেই মাঠে শুধু ধান আর ধান। মনে হয়, বাংলাদেশের চালের সিংহভাগ জোগান হয়তো এই গ্রাম থেকেই আসে। ধানগুলো এখন হলদে হয়ে এসেছে। পাকা ধানে সূর্যের আলো পড়ে সোনার মতো চকচক করছে। আর কিছুদিন পরেই এই ধান ঘরে তোলার মৌসুম শুরু হবে। এই মৌসুম গ্রামে অন্য রকম এক আনন্দ বয়ে আনে।
স্টেশনে নেমে অফিস রুম খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হলো না। জয়েনিং হয়ে গেল দ্রুত। নতুন স্টেশনমাস্টার এসেছে বলে কথা; গ্রামের তাজা ফল, বেলের শরবত, কচি ডাব মুহূর্তেই টেবিলে চলে এল। শশধর স্টেশন যেমন ছোট, তেমনই এখানকার স্টাফও বেশ কম। আসলে রাজশাহী আর ঢাকার মধ্যকার রেলব্যবস্থা নতুন করে সংযুক্ত করার জন্যই এই গ্রামের স্টেশনকে রুটের সঙ্গে সংযোজন করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে বানানো এই স্টেশন নাকি এত দিন খালিই পড়ে ছিল। ছোট হোক আর বড় হোক, একটা স্টেশন কিন্তু সেখানে ট্রেন ঢোকে না, ব্যাপারটা কী অদ্ভুতুড়ে! তবে নতুন করে কিছুটা মেরামত করে বছর ১৫ হলো এই স্টেশন আবার চালু হয়েছে।
অফিসের দায়িত্ব কিছুটা বুঝে নেওয়ার পর আমার থাকার ব্যবস্থা দেখতে গেলাম। স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া কোয়ার্টারেই আমি থাকব। একতলা বিল্ডিং, বারান্দাসহ দুটো শোবার ঘর আর রান্নাঘর এবং ছোট একটা স্টোররুম তো থাকেই। বোঝাই যাচ্ছে এই বিল্ডিং নতুন। তাই বেশ ভালো ব্যবস্থা। নিজের থাকার জায়গা বুঝে নিয়ে মাত্র বিছানায় গা এলিয়েছি, তখন খবর এল গ্রামের চেয়ারম্যান নাকি আমার অফিসে এসেছেন, দেখা করতে চান। স্টেশনে নতুন স্টেশনমাস্টার এলে গ্রামের চেয়ারম্যানের কি দেখা করতে আসার কথা? তা–ও একদম প্রথম দিনেই? এই পদে চাকরি করা লোককে এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তো দেখার কথা না। ঘটনা কী!
অফিসে ঢুকতেই কড়া আতরের গন্ধ পেলাম। গন্ধটা ছোট্ট কামরায় চারপাশে ছড়িয়ে গেছে একদম। টেবিলের এ পাশে পাঞ্জাবি পরা মোটাসোটা একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। তিনি অবশ্যই এই গ্রামের চেয়ারম্যান হবেন।
ঢুকেই সালাম দিলাম আমি। আমাকে দেখেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর মুখে দাড়ি আছে বটে, কিন্তু পেছন থেকে তাঁকে বেশ বৃদ্ধ ভাবলেও, লোকটার বয়স মোটামুটি পঞ্চাশের আশপাশেই হবে।
সালামের উত্তর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। ‘আরে, দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেন। বসেন, বসেন।’ আমি বললাম। লোকটা হাসিমুখে আবার চেয়ারে বসে পড়ল।
‘স্টেশনের নতুন স্টেশনমাস্টার এলে সেদিনই গ্রামের চেয়ারম্যান দেখা করতে আসে। ব্যাপারটা খুব আজব লাগল।’ হাসতে হাসতে বললাম আমি।
আমার দেখাদেখি তিনিও হাসলেন। ‘তেমন কোনো ব্যাপার না মাস্টার সাব। নতুন আইছেন, গ্রামে তো বিশেষ মানুষ নাই। ছোড গ্রাম। তাই আমিই আসলাম সাক্ষাতে।’
‘বুঝতে পারছি।’
‘গ্রামে নতুন আইলে অনেক সমস্যা হয়। কিছু হইলে কইলাম আমাগো জানাইবেন।’
‘কী সমস্যা হবে?’
‘তেমন কিছু না, তয় গ্রাম আর শহর তো এক না। কত দিক থেইকাই তো আলাদা। তাই না?’
‘আপনি কীভাবে বুঝলেন আমি শহর থেকে আসছি।’
‘আপনের কথা কওনের ধরন, জামাকাপড় দেখেই বুঝা যায়।’
হাতে থাকা ঘড়ির দিকে একবার তাকালাম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে। খিদেও লেগেছে বেশ। ‘হ্যাঁ, সমস্যা হলে জানাব। অসুবিধা নেই।’
লোকটা মাথা নেড়ে চুপচাপ বসে থাকলেন। আমিও আর কী বলব বুঝতে পারছিলাম না।
‘চেয়ারম্যান সাহেব, আজকেই এখানে আসছি তো। দুপুরে খাওয়াও হয়নি এখনো। বুঝতেই পারছেন। তার ওপর আপনি নিজে থেকে আসছেন এখানে…’
‘খাওন আপনের ঘরে রাখা আছে তো। আমার বাড়ি থেইকা আসছে আজ। আপনেরে ভাবতে হবে না।’ বললেন তিনি।
ভালোই অবাক হলাম আমি। ‘নাহ, আপনাদের আতিথেয়তা দেখে আসলেই মুগ্ধ হতে বাধ্য হচ্ছি। আগেও তো অনেক গ্রামের স্টেশনে পোস্টিং হয়েছে, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।’
‘আপনার নাম তো জানা হলো না।’
‘তোফাজ্জেল হক।’
‘তোফাজ্জেল সাব, আপনেরে একটা কথা বলি। হয়তো শুইনা আপনের কাছে অদ্ভুত লাগবে, কিন্তু গেরাম আপনেদের শহরের মতো না। গেরাম আলাদা জিনিস। গেরামে অনেক ঘটনা ঘটে, অনেক কিছু মানতে হয়, যেইডা হয়তো আপনেরা শুনলে হাসি আইব।’ একনাগাড়ে বলে গেলেন তিনি।
‘হ্যাঁ…মানে ঠিক বুঝলাম না।’ আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, এখন আমার কাছে আসার পেছনের আসল গল্পে এখন ঢুকছেন তিনি।
‘মাস্টার সাব, আমাদের এই গেরামের একটা নিয়ম আছে। গেরামের ছোড–বড় সবাই এইটা জানে। তাই সমেস্যা হয় না। কিন্তু নয়া কেউ আইলে তো জানাইতে হইব। এই জন্যই হুটোপাটা কইরা আজকেই আপনের কাছে আসা।’
‘কী নিয়ম?’
‘আর চার দিন পর থেকে পূর্ণিমা শুরু। আমাগো গেরামে পূর্ণিমার রাতে আকাশের দিকে তাকায়া চাঁদ দেহা নিষেধ। সব থেকে ভালো হয় রাতের বেলা বাইরে বাইর না হইলে। আর যদি হন, তাইলে ভুলেও চাঁদের দিকে তাকাবেন না। পূর্ণিমা তো বেশি দিন থাকব না, মাত্র কয়েক দিন। আপনে রাতের বেলা খালি আকাশের দিকে তাকায়েন না। চাঁদ দেইখা ফেললে গেরামের ক্ষতি হইব, আপনার নিজের অমঙ্গল হইব, এই গেরামের চাঁদ অপয়া…।’
সেদিন চেয়ারম্যানের কথা শুনে মনে মনে হেসেছিলাম খুব। গ্রামের মানুষ যে কী ভয়াবহভাবে কুসংস্কারে আক্রান্ত! না দেখে বিশ্বাস করা যাবে না। অমাবস্যা, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ তো ছিলই; এই গ্রামের মানুষ এখন পূর্ণিমা আর চাঁদের পেছনে লেগেছে। তবে মনে মনে হাসলেও লোকটাকে আশ্বস্ত করেই সেদিন বিদায় জানিয়েছিলাম। আমি যে এসব গেঁয়ো কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না, সেসব কথা তুললে তাঁর মনে ভয় ঢুকে যেত। হিতে বিপরীত হতে পারত তখন। এসব দিক থেকে গ্রামের পরিবেশ আসলেই আলাদা। খামোখা তাদের মনে ভয় ঢোকানোর কোনো দরকার নাই। তাই লোকটা বিশ্বাস করুক যে আমি রাতের বেলা চাঁদের দিকে তাকাব না।
কিন্তু কুসংস্কার যে এই গ্রামের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে, সেটা বুঝলাম পরের দিন থেকে। সন্ধ্যা নামতেই চারদিকে মানুষ কমতে শুরু করল। রাতের ট্রেন বেশির ভাগই এখানে থাকে না। তাই স্টেশনে ভিক্ষুকের দেখাও মিলত না। এশার নামাজ শেষ হতে না হতে পুরো গ্রাম একেবারে জনমানবশূন্য। হুট করে রাতে যদি অচেনা কোনো মানুষ এই গ্রামে আসে, সে হয়তো বিশ্বাসই করবে না গ্রামে মানুষের বাস আছে। চারদিকে কবরের নীরবতার সঙ্গে ঝিঁঝি পোকার ডাক, দূরে মাঠ থেকে শিয়ালের আওয়াজ, মাঝেমধ্যে আশপাশে হঠাৎ কুকুরের ডেকে ওঠা; সন্ধ্যা নামতে তাই ভীষণ অস্বস্তি হওয়া শুরু করত। রাত নামলেই এই গ্রামের চেহারা পাল্টে যায়, অন্ধকারের সঙ্গে যেন অশুভ কিছু নেমে আসে। বাইরে বের হলেই সে গিলে খাবে।
চার দিন পর শুরু হলো সেই পূর্ণিমা। স্টেশনে আমার অফিস বা বাসা থেকে সরাসরি আকাশ দেখা যায় না। কিন্তু বুঝতাম, পূর্ণিমার আলোয় ঝলসে যাচ্ছে চারদিকে। কাঠের জানালা গলে ঠেলে ঢুকত আলো। চারদিকে মনে হতো পুরো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, শুধু সেই ফ্যাকাশে আলোর কোনো শক্তি নেই।
সুনসান নীরবতার সঙ্গে পূর্ণিমা—সে এক ভয়ংকর সুন্দর পরিবেশ। সন্ধ্যার পর থেকে একটা মানুষ আর দেখা যায় না বলে রাতের বেলা আর বাড়ি থেকে বের হতাম না। কখনো কখনো সন্ধ্যাবেলাও অফিসে বসে থাকতাম। তখন রাত করে বাড়িতে ফিরলেও খেয়াল করলাম, আমি আকাশের দিকে তাকাচ্ছি না। হয়তো মনে হতে পারে, গ্রামের চেয়ারম্যানের কথায় প্রভাবিত হয়েছি আমি। কিন্তু চাঁদ বা পূর্ণিমা কোনো কিছুতেই আমার কোনোকালে সে রকম আগ্রহ ছিল না। চাঁদের আলোর রোমান্টিকতা কখনো আমাকে টানেনি।
সেদিনও সন্ধ্যার পরে অফিসে বসে ছিলাম আমি। বিকেলের আগেই স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া হোটেল থেকে রাতের খাবার আনিয়ে রেখেছি। যদিও হাতে বিশেষ কাজ নেই। শুধু এখনি বাড়ি গিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করছে না। এখানে আসার সময় সঙ্গে কিছু বইপত্র এনেছিলাম। মাঝেমধ্যে অফিসে বসে সেগুলো পড়েই সময় কাটে। ঘড়িতে তখন আটটার একটু বেশি বাজে। হাতের বইটা প্রায় শেষের দিকে। রগরগে গোয়েন্দা উপন্যাস বলে ছেড়ে উঠতেও পারছি না। মিনিট বিশেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। চারদিকে যথারীতি সুনসান নীরবতা। শুধু ময়লায় ভরা প্রাচীন ফ্যানটা মাথার ওপর ঘটাঘট শব্দে ঘুরছে। আওয়াজটা ঠিক তখনই শুনলাম। প্রথমে গলা পরিষ্কার করার কাশির শব্দ। এই নিশ্চুপ পরিবেশে যেকোনো আওয়াজ আরও বেশি করে শোনা যায়। মনের ভুল নাকি সত্যি কাশির শব্দ?
ঠিক নিশ্চিত হতে না পেরে যখন কান খাড়া করে বসে আছি, তখন শুনলাম স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কেউ ঘষে ঘষে হাঁটছে। খুব সম্ভবত তার হাতে একটা লাঠি। স্টিল বা লোহার হবে। কারণ, প্ল্যাটফর্মের মেঝের সঙ্গে ঠং ঠং আওয়াজ হচ্ছে। কেউ যেন প্ল্যাটফর্মের এপাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটছে। হাঁটার সময় ব্যবহার করছে সেই লাঠি। খুব সম্ভবত বৃদ্ধ কোনো লোক হবে। মাঝেমধ্যে রাতের নির্জনতাকে ভেঙে খান খান করে যক্ষ্মারোগীর মতো বিকট শব্দে কেশে উঠছে সে। আমি বই হাতে চুপ করে নিজের চেয়ারে বসে আছি। এই গ্রামে এসেছি আজ ছয় দিন হলো, রাতের বেলা এমন অভিজ্ঞতা প্রথম। কোনো যাত্রী এল নাকি? কিন্তু আজ রাতে তো আর কোনো ট্রেন যাবে না। তাহলে কোনো ভিক্ষুক? আজ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে রাতটা কাটিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
ঘড়িতে দেখলাম রাত ৮টা ২৭ বাজে। মোটামুটি ১৫ মিনিটের মতো চলে গেছে। এই সময়ে প্ল্যাটফর্মে কেউ একজন ক্রমাগত এপাশ থেকে অন্য পাশ হেঁটে চলেছে। আর আমি আমার অফিসে বসে তাঁর হাঁটার শব্দ শুনছি। এরপর হুট করে হাঁটার শব্দ থেমে গেল। তবে আমি কান খাড়া করে অপেক্ষা করলাম আবার শোনা যায় কি না। কিন্তু আর কোনো শব্দ আসছে না। আমি আরও মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করলাম। নাহ্, আর কোনো শব্দ আসছে না। পরিচিত সেই নীরবতা ফিরে এসেছে আবার। আমিও আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করলাম না। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে, মোবাইলটা পকেটে ভরে অফিসে তালা দিয়ে প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালাম।
পুরো প্ল্যাটফর্মে আলোর বন্যা। পূর্ণিমার আলো যে এত তীব্র হতে পারে, সেদিন নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। প্ল্যাটফর্মের সামনের বিশাল ধানখেত। চাঁদের আলো এসে পড়েছে সেদিকে। সোনালি পাকা ধান আর চাঁদের আলো মিলেমিশে বানানো এই অপার্থিব এক দৃশ্যের দিকে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি। এরপর ভ্রম কাটল কাশির শব্দে। কিছুক্ষণ আগে শোনা পরিচিত সেই কাশির শব্দ এসেছে আমার ডান দিক থেকে। ডান দিকে প্ল্যাটফর্মের শেষ, ওদিকে ওপরে ছাউনি নেই। তবে বসার জায়গা আছে সেখানে। সেখানেই চাঁদের আলোর নিচে বসে আছে কেউ। সাদা চোখে শুধু দেখে মনে হচ্ছে কালো একটা ছায়া। কিন্তু তাঁর শারীরিক গঠন, বাঁ পাশে রাখা লাঠি আর পায়ের নিচে একটা ব্যাগ চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
‘কে?’ বলে উঠলাম আমি।
‘তখনো দেশভাগ হয়নি। ব্রিটিশ শাসন চলছে। এখানে একটা রাজবাড়ি আছে। লোকে বলে লালকুঠি। ওই সময়ের এই অঞ্চলের রাজত্ব ছিল, শশধর গুপ্তের। শশধরের নিমন্ত্রণে এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী পরিবার নিয়ে এই গ্রামে ঘুরতে এসেছিল। সাহেবের নাম লর্ড জন কানিংটন। এক পূর্ণিমা রাতে তারা সবাই পূর্ণিমা দেখতে এসেছিল এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। এই গ্রামে এখান থেকে যে পূর্ণিমা দেখা যায়, হয়তো পুরো দেশে আর এমন জায়গা নেই।’ এতটুকু বলে থামল সে।
লোকটা আমার দিকে তাকাল। তাঁর মাথায় একটা টুপি। ওয়েস্টার্ন সিনেমায় কাউবয়দের এমন টুপি পরতে দেখেছি। কিন্তু কোনো জবাব দিল না সে। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হাত নেড়ে আমাকে ডাকল। আমি আর সাতপাঁচ না ভেবে এগিয়ে গেলাম। স্টেশনের যাত্রীছাউনি শেষ হতেই আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ঝিরিঝিরি বাতাস দিচ্ছে, চাঁদের আলোয় সেই বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানগাছ। বাধ্য হলাম আকাশের দিকে তাকাতে। কী বিশাল চকচকে থালার মতো একটা চাঁদ। মনে হচ্ছে চাইলেই হাত দিয়ে ধরা যাবে। চাঁদ কখনো এত বড় হয়?
‘তোফাজ্জেল হক, কেমন আছেন?’ আমি কাছাকাছি যেতেই গম্ভীর মোটা গলায় বলে উঠল লোকটি।
ভাবিনি এই গণ্ডগ্রামে অচেনা কারও মুখে এভাবে নিজের নাম শুনব, তা–ও আবার পুরোটা!
আমি লোকটার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালাম। মাথায় থাকা টুপির কারণে এখনো তাঁর চেহারা পুরোটা দেখতে পারছি না। ‘আপনি দেখি আমার পুরো নাম জানেন। চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয় নাকি?’
লোকটা আবার বিকট শব্দে কেশে উঠল। তার বুকের ঘরঘর শব্দ এত দূর থেকেও শুনতে পারছি আমি। ‘চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয়…হ্যাঁ, বলতে পারেন। বসুন না।’ ইট দিয়ে পাকা করে বাঁধানো বেঞ্চের এক পাশের জায়গা দেখিয়ে বললেন তিনি।
আমি গিয়ে বসলাম পাশে। লোকটার পোশাক ভীষণ অদ্ভুত। লম্বা কালো জোব্বা তার গায়ে, মুখে লম্বা দাড়ি, মাথায় কালো রঙের ক্যাপ। বেশ কিম্ভূতকিমাকার চরিত্র বলে মনে হলো। ‘এই গ্রামে তো লোকেরা রাতের বেলায় ঘর ছেড়ে বের হয় না, চাঁদের দিকে তাকায় না। আপনি দেখি একদম এখানে বসে চাঁদের আলো পোহাচ্ছেন।’
জোরে হেসে উঠল সে। ‘গণ্ডমূর্খ গ্রামবাসী। তবে এই জায়গাটা চাঁদ দেখার জন্য সব থেকে আদর্শ। দেখুন একবার তাকিয়ে।’
আমি আরেকবার ওপরে তাকালাম। চারপাশে শুধু ধানের মাঠ আর মেঘহীন আকাশে থালার মতো বিশাল একটা চাঁদ ঝুলে রয়েছে। যদিও মেঘ একদম নেই তা নয়, বাতাসের দাপটে মাঝেমধ্যে পেঁজা তুলার মতো মেঘ উড়ে আসছে তাদের কাছে। এরপর হারিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে। যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা কোনো ছবি।
‘চাঁদ কিন্তু সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ, জানেন নাকি?’
‘নাহ্।’
‘চাঁদ আবার সব সময় এক স্থানে থাকে না। কখনো পৃথিবীর কাছে আসে, আবার কখনো দূরে সরে যায়। এই শতাব্দীতে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল গত ১৯১২ সালে জানুয়ারির ৪ তারিখে।’
আমি কোনো উত্তর দিলাম না। চুপ করে থাকলাম।
‘এই গ্রামে চাঁদ নিয়ে এমন কুসংস্কার বা ভয় পাওয়া নিয়ে আপনার জানতে ইচ্ছা করেনি?’
‘না। এসবে আবার তেমন আগ্রহ নেই। তা ছাড়া গ্রামের মানুষের কাছে এগুলো জানতে চেয়েও কোনো লাভ নেই।’
‘তা ঠিক, তবে এই গ্রামের গল্পটা আমি জানি।’
‘কী গল্প?’ তার দিকে চোখ সরু করে তাকালাম আমি। মাথার টুপিটা এমনভাবে ঢাকা, চেহারার কিছুই বোঝা যাচ্ছে না তার।
‘তখনো দেশভাগ হয়নি। ব্রিটিশ শাসন চলছে। এখানে একটা রাজবাড়ি আছে। লোকে বলে লালকুঠি। ওই সময়ের এই অঞ্চলের রাজত্ব ছিল, শশধর গুপ্তের। শশধরের নিমন্ত্রণে এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী পরিবার নিয়ে এই গ্রামে ঘুরতে এসেছিল। সাহেবের নাম লর্ড জন কানিংটন। এক পূর্ণিমা রাতে তারা সবাই পূর্ণিমা দেখতে এসেছিল এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। এই গ্রামে এখান থেকে যে পূর্ণিমা দেখা যায়, হয়তো পুরো দেশে আর এমন জায়গা নেই।’ এতটুকু বলে থামল সে।
‘এরপর?’ বললাম আমি।
‘পরদিন তাদের সবাইকে প্ল্যাটফর্মে সারিবদ্ধভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। তারা সবাই নিজেদের চোখ খামচে তুলে ফেলেছে। চাঁদের ভয়ংকর সুন্দর সৌন্দর্য নাকি তারা সহ্য করতে পারেনি।’
‘ভালো গাঁজাখুরি গল্প দেখি।’
‘আপনার কাছে তাই মনে হলো?’
‘তাই নয়তো কী!’
‘তবে জানেন যুগে যুগে চাঁদকে নিয়ে কম গল্প কিন্তু ফাঁদা হয়নি। চাঁদকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ, ভয়ের শেষ নেই। পৌরাণিক গল্প, দাদির কোলে শুয়ে শোনা গল্প, মহাকাব্য—চাঁদ নেই কোথায়! এই পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে, চাঁদ রয়েছে সবার গল্পে।’
‘আপনি কি চাঁদবিশারদ?’
শব্দ করে হাসল লোকটা। ‘চাঁদের সাথে আমরা কিন্তু নানাভাবে জড়িত। চাঁদের সঙ্গে আছে মানব-মানবীর প্রেমের সম্পর্ক। আছে পানির সম্পর্ক। সেমিটিক চন্দ্রদেবতা সিন পানিকে শাসন করে। দক্ষিণ আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে চন্দ্রদেবতাকে পানির দেবতা হিসেবেও ধরা হয়। ব্রাজিলে চন্দ্রদেবতার কন্যা পরিচিত ‘মাদার অব ওয়াটার’ নামে। প্রাচীন পারসিক লেখায় গাছের জন্ম ও বৃদ্ধির সঙ্গে চাঁদের সম্পর্ক আছে। পলিনেশিয়া ও মেলানেশিয়ায় মনে করা হয়, ঘাস চাঁদে জন্মে। ফরাসি কৃষকেরা এখন অবধি নতুন চাঁদের সময় গাছ লাগায় এবং চাঁদের ক্ষয়কালে ছাঁটাই করে। গ্রিসের ডায়োনিসাস একই সঙ্গে চাঁদ ও গাছের দেবতা। মিসরের ওসিরিসের হাতে আছে চাঁদ, পানি আর কৃষির ক্ষমতা। তাহলে দেখুন চাঁদের সঙ্গে গাছপালা আর কৃষির সম্পর্কও রয়েছে।’
এমন গ্রামীণ পরিবেশে কারও মুখ থেকে এমন পৌরাণিক কথাবার্তা শুনে নিজের কাছেই বিশ্বাস হচ্ছে না। ‘আপনি তো দেখছি পুরো মিথের এনসাইক্লোপিডিয়া। আপনি কে বলুন তো?’
লোকটা আবার ভয়ংকর শব্দে কাশতে শুরু করল। কাশির দমক থেকে মনে হচ্ছে এখনই হয়তো মুখ দিয়ে তার ভেতরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেরিয়ে আসবে। ‘পরিচয় আর কী দেব। পরিচয় শুনলে ভালো লাগবে না আপনার। তখন আর আমার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ পাবেন না। পরিচয় পরে দিই।’
‘আগ্রহ কেন পাব না?’
‘আরে শুনুন না। চাঁদের সঙ্গে কিন্তু মৃত্যুর সম্পর্কও আছে। চাঁদের জন্ম ও মৃত্যুর চক্র মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে যে মানুষ মৃত্যুর পরে চাঁদে যায়, এরপর সেখানে চলতে থাকে পুনর্জন্মের প্রস্তুতি। এ জন্য অনেক চন্দ্র উপাস্য কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলো যদিও নানান সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আবার অনেক গল্পগাথার মধ্যে নেকড়েমানব বা ওয়ারউলফের নাম তো শুনেছেন। পূর্ণিমার রাতে সাধারণ মানুষ থেকে হিংস্র মানুষে রূপান্তরিত হয়।’
‘হ্যাঁ, ওয়ারউলফের কথা শুনেছি। লোককথা তো আমাদের দেশেও আছে। চাঁদের মা বুড়ি।’
‘হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। কিন্তু এসব তো নিছক লোককথা। কিন্তু যেটা সত্যি, যেটা বাস্তব। সেই সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। আসলে সেটা কোনো লোককথা, গল্প বা কোনো গবেষণাপত্রে কিছুই বলা নেই।’
‘কী কথা?’
‘আবর্তন সম্পর্কে জানেন?’
‘বিজ্ঞান বইতে পড়েছিলাম হয়তো। এখন ঠিক মনে…’
‘পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড। এটাই চাঁদের আবর্তন। তার মানে মোটামুটি ২৭ দিনে পৃথিবী চারপাশে চাঁদ পুরো একবার ঘোরে। কেন ঘোরে?’
লোকটার কণ্ঠে হুট করে রহস্যময়তা বেড়ে গেল। ‘কেন ঘোরে?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি।
কিছুক্ষণ চুপ করে চাঁদের দিকে চেয়ে রইল সে। ‘চাঁদের জন্ম আজ থেকে সাড়ে চার শ কোটি বছর আগে। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় তার সৃষ্টি। চাঁদের জন্ম হয়েছিল এই পৃথিবীর স্মৃতিধারক হিসেবে। তার জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত যা ঘটেছে, তা সবকিছুই জমা রয়েছে তার কাছে। এখন যা ঘটছে, সেগুলোও সে জমা করবে। আর ভবিষ্যতে ঘটতে যাওয়া ঘটনাগুলোও। আমাকে, আপনাকে, এই পৃথিবীতে আসা প্রত্যেক রক্ত–মাংসের মানুষের সব তথ্য সে জানে।’
এখন মনে হলো, শিক্ষিত পাগলের দেখা পেয়েছি। শহরে এমন অনেক পাগল দেখেছি, যারা বড় বড় বুলি ঝাড়ে, অনর্গল ইংরেজি ছাড়াও সাহিত্য নিয়ে কথা বলে। এই লোকও সেই গোত্রের শিক্ষিত পাগল।
‘পাগল ভাবছেন?’ সরু গলায় বলল সে।
‘না… মানে…’
‘ভাবতেই পারেন। যদিও আসল কথাটা এখনো তো বলাই বাকি…’
‘ওহ, এখনো বাকি। বলেন শুনি।’
‘মজা নিচ্ছেন আমার কথায়?’ লোকটার গলার স্বর পাল্টে গেছে।
‘মজা নেব কেন…’ আমাকে কথার মাঝেই থামিয়ে দিল সে। ‘যদি প্রমাণ দিতে পারি কী করবেন?’
‘কী প্রমাণ দেবেন? চাঁদ থেকে তথ্য এনে দেখাবেন নাকি আবার?’
‘চাঁদ কেন এই পূর্ণিমা দেয়? এমনি এমনি? এই পূর্ণিমার আলো হচ্ছে আমাদের জন্য জ্ঞান আহরণের সুযোগ। আপনি একবার চাঁদকে ডেকে দেখুন।’
হেসে উঠলাম আমি। ‘থাক। নয়টা বেজে গেছে। আমি বাসার দিকে যাই।’
‘না। এভাবে যেতে পারবেন না। একবার চাঁদকে ডেকে দেখুন, মাত্র একবার।’ লোকটা মাথার টুপি খুলে আমার দিকে তাকাল। তার মুখের দিকে তাকে আমার আঁতকে ওঠার কথা। কিন্তু আমার শরীর যেন জমে গেল। পাথরের মতো জমে যাওয়া শরীরে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকটার মুখে লম্বা সাদা দাড়ি, লম্বাটে মুখ, মাথায় কোনো চুল নেই। কিন্তু তার চোখের কোটরে বিশাল একটা গর্ত। কিন্তু কোনো চোখ নেই সেখানে। ‘ডাকুন…বলুক চাঁদ তুমি মর্ত্যে নেমে এসো…’ প্রায় ধমকে উঠল সে আমাকে।
কোনোমতে বিড়বিড় করে বললাম, ‘চাঁদ…চাঁদ তুমি মর্ত্যে নেমে এসো।’
‘তোফাজ্জেল হক আকাশের দিকে তাকান।’
আমি আকাশের দিকে তাকালাম। একটু আগে আকাশে থালার মতো চাঁদ ঝুলে ছিল, কিন্তু এখন কোনো চাঁদ নেই। সে নেমে এসেছে সামনের ধানখেতে। কোনো এক অদৃশ্য জাদুতে সে ডাকছে আমাকে।
‘যান, তোফাজ্জেল হক এগিয়ে যান। একবার চাঁদকে ছুঁয়ে দেখুন।’
আমি সম্মোহিত মানুষের মতো উঠে দাঁড়ালাম। প্ল্যাটফর্ম থেকে ধানখেতে লাফ দিয়ে নামলাম। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম চাঁদের দিকে। বাতাসের তোড়ে গাছের ধানগুলো নড়ছে এদিক–ওদিকে। বাতাস যখন এসে ধানকে আঘাত করে, তখন অন্য রকম একটা শব্দ হয়। যেন মরুভূমিতে কোনো র৵াটল স্নেক আক্রমণের শিকার হয়ে ক্রমাগত শিস দিচ্ছে। চাঁদটা এখন আমার থেকে কয়েক মিটার দূরে। আর কয়েক পা ফেলতেই চাঁদ আমার দেহের সামনে। কিছুটা দূর থেকেই হাত বাড়ালাম আমি। এরপর চাঁদ আমাকে তার শরীরের মধ্যে গ্রাস করে নিল।
মনে হলো আমার শরীরের মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ বয়ে গেল। চোখের মধ্য দিয়ে শত শত রং ঢুকে গিয়ে সজোরে আঘাত করতে লাগল মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে। হঠাৎ মনে হতে লাগল আমার জীবনের ফ্ল্যাশব্যাক যেন আমি দেখছি, চাঁদ আমার জীবনকে দেখাচ্ছে। আমার স্টেশনমাস্টারের চাকরি, বিয়ে, সংসার, বিশ্ববিদ্যালয়, বাল্যজীবন, ৪২ বছর আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া, মায়ের পেটের মধ্যে থাকা ৯ মাস…সবকিছু…সবকিছু সিনেমার দৃশ্যের মতো একের পর এক যেতে লাগল আমার সামনে দিয়ে। চারদিকে চেনা–অচেনা বহু রং উড়ে বেড়াচ্ছে আর আমি ভাসছি তাদের মাঝে। ভেসে ভেসে দেখছি জীবনের প্রতিটা চিত্র…
***
পরদিন তোফাজ্জেল হককে পাওয়া যায় শশধর স্টেশনের সামনের ধানখেতে। চিত হয়ে পড়ে ছিলেন তিনি। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু তাঁর চোখের কোটরে চোখ দুটো নেই। খুব নিখুঁতভাবে কেউ তুলে নিয়ে গেছে সেগুলো।