নোংরা একটি কুঁড়েঘরে বাস করত এক বুড়ো ভদ্রলোক। সংসারে আছে স্ত্রী, আর এক ছেলে। বেশ বিখ্যাত কুঁড়েঘরটি। রাজবাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বিখ্যাত এ কারণে যে লোকটি বেশ ধনী। লোকজন বলাবলি করত, ঘরবাড়ির অবস্থা এতই খারাপ যে শূকরের খোঁয়াড়ও বোধ হয় এর চেয়ে ভালো। সারা দেশে তার মতো কিপটে লোক আর দ্বিতীয়টি নেই। এমনও সময় যায় যে লোকটি ইচ্ছা করেই দিনভর না খেয়ে থাকে। কারণ, খেতে গেলেই তো খরচাপাতি হয়। টাকাপয়সার জন্য মায়া তার এত বেশি, কোনোভাবেই একটি টাকাও অপচয় করতে রাজি নয় সে।
এভাবে না খেয়ে থাকতে থাকতে একসময় লোকটি পড়ল মহা অসুখে। সেটাই স্বাভাবিক। শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। রোগবালাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো কোনো শক্তি আর নেই তার। ফল যা হওয়ার, তা-ই হলো। ভুগে ভুগে শেষ পর্যন্ত মারা গেল লোকটি।
এতিম ছেলেটি অবশ্য বাবার স্বভাব পায়নি। সে মোটেও কিপটে নয়। মারা যাওয়ার পরদিন রাতে ঘটল অদ্ভুত একটা ঘটনা। গভীর রাতে সে ঘুমাচ্ছিল। অন্য রকম একটা স্বপ্ন দেখল ছেলেটি। কী সেই স্বপ্ন? দেখল, এক দরবেশ এসেছেন ওদের বাড়িতে। ওকে ডেকে বলছেন, ‘খুব মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোনো, বাছা। তোমার বাবা তো আর বেঁচে নেই। তোমার মায়ের শরীরও বিশেষ ভালো নয়। শিগগিরই তিনি মারা যাবেন। তাঁর মৃত্যুর পর সব সহায়-সম্পত্তির মালিক হবে তুমি। এক কাজ করবে তুমি। যা সহায়-সম্পত্তি আছে তোমার, তার অর্ধেকটা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। কারণ, তাদের শোষণ করেই পাওয়া গেছে এসব। বাকি অর্ধেক সম্পত্তি বেচে যা টাকা মিলবে, তার সবটুকু তুমি সাগরে ফেলে দেবে। সাগরে যখন ফেলবে, তখন একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবে। যদি দেখো, কোনো কিছু ডুবে না গিয়ে ভাসছে, সেটা তুমি সংগ্রহ করে নেবে। সেটা যদি কোনো কাগজের টুকরা হয়, সেটাই।’
এই কয়েকটা কথা বলে দরবেশ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন।
আচমকা ঘুম ভেঙে গেল। ছেলেটি হতবাক। এটা কেমন ধরনের স্বপ্ন? অদ্ভুত স্বপ্ন তো বটেই। হাজারো ভেবে সে কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না। সারাক্ষণ মনের মধ্যে বিষয়টি খচখচ করছে। মনের শান্তি-স্বস্তি সব উধাও হয়ে গেল তার। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। বাপ যা রেখে গেছে, সেই সহায়-সম্পত্তি, টাকাপয়সার মায়া ত্যাগ করা ভীষণ কঠিন কাজ। এটা কি আদৌ সম্ভব? এত কাল খুব কষ্টের অভাবের জীবন ছিল। এখন একটু আরাম-আয়েশ পাওয়ার কথা। তার মধ্যে কিনা এমন সব অদ্ভুতুড়ে নির্দেশ। সে ভাবছে, আমার কপালটাই খারাপ।
ছেলেটি তার বাবার মতো নয়। স্বভাব একেবারেই উল্টো। সে কৃপণ নয়। সহজ, সরল। নরম মনের মানুষ। স্বপ্নটা নিয়ে সে অনেক ভাবনাচিন্তা করল সে। মনে হলো, তার বাবা যদি অন্যায়ভাবেই এসব সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকে, সে কাজটি করা ঠিক হয়নি তার। সে এসবের জন্য লোভ করবে না। শেষ পর্যন্ত সে কোনো শান্তি পাবে না। চিরদিনের জন্য স্বস্তি দূর হয়ে যাবে জীবন থেকে। অনেক ভাবনাচিন্তার পর মন ঠিক করে ফেলল সে। স্বপ্নে যা যা দেখেছে, তা-ই করা হবে। কপালে যা লেখা আছে, সেটা মেনে নিতে হবে।
জায়গা-সম্পত্তি যা যা আছে, সবই বিক্রি করা হলো। এলাকায় যত গরিব লোকজন আছে, সবার খোঁজখবর করল সে। অর্ধেক টাকা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হলো। বাকি টাকাগুলো নিয়ে সাগরের দিকে রওনা হলো তারপর। কথামতো সব টাকা ছুড়ে ফেলল ছেলেটি। সবই ডুবে গেল। শুধু একটুকরা কাগজ ভেসে আছে, দেখতে পেল সে। এটা নিতে হবে। নেওয়ার পর দেখা গেল, এর ভেতরে আছে মাত্র ছয়টি টাকা। এই ছয় টাকাই তার সম্বল। আর কিছু নেই। ছেলেটি ভাবল, এই কয়েকটা টাকায় কী আর হবে? যাক, যা হওয়ার হবে। তারপরও তো কিছু পাওয়া গেল। এই টাকা নিয়েই জীবন চালাতে হবে। ভাগ্য কোথায় যে কীভাবে টেনে নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সম্পত্তি বলতে একটুকরা বাগান রয়ে গিয়েছিল তার। সেটা তার মায়ের। নানাবাড়ির সূত্রে পাওয়া। সেই বাগানে সে একদিন কাজ করছিল। কিছু সবজি আর ফলের গাছ আছে এই বাগানে। কয়েক সপ্তাহ সেখানে নিজে মালির কাজ করল।
কয়েক দিন পর তার মা মারা গেল। এখন সে একা। আপন বলতে দুনিয়াতে কেউ নেই আর। মন খারাপ থাকে প্রতিদিন। মাকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ ছেলেটা। একদিন রওনা হয়ে গেল অজানা ঠিকানায়। কোথায় যাবে, কিছু জানা নেই। বনের মধ্য দিয়ে পথ চলছিল। খুব খিদে পেয়েছে। হঠাৎ তার চোখে পড়ল ছোট একটা কুঁড়েঘরের ওপর। সেই বাড়ির দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ল ছেলেটি। দরজা খুলে দিল একজন বুড়ি। ছেলেটি কাতর কণ্ঠে তাকে বলল, ‘আমার খুব খিদে পেয়েছে। দয়া করে কিছু খাবার যদি আমাকে খেতে দেন, তাহলে কোনোমতে জানটা বাঁচাতে পারি।’ বুড়ি বললেন, ‘আহা রে বাছা, মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে তোমার। এসো, ভেতরে এসো, বাবা। বসো। এখনই তোমাকে খেতে দিচ্ছি। রাত হয়ে গেছে। কোথায় আর যাবে। আজকের রাতটা তুমি এখানেই থেকে যাও।’
তা-ই হলো। বাড়িতে আরও লোকজন ছিল। খাওয়ার সময়ে ছেলেটি খেয়াল করে, চুলার পাশে একটা প্রাণী বসে আছে। এ রকম প্রাণী সে আগে কখনো দেখেনি। ধূসর রঙের লোমশ একটা প্রাণী। মুখে গোঁফ আছে। চোখগুলো তার উজ্জ্বল, আকারে-আয়তনে বেশি বড় নয়।
বাহ, ভারি সুন্দর তো। দেখলেই কেমন আদর আদর লাগে। ছেলেটি বুড়িমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘এই প্রাণীর কী নাম? ছোট্ট সাইজের অদ্ভুত প্রাণীটি তো আজব দেখতে। এমন কোনো জীব আমাদের অঞ্চলে নেই।’
বুড়িমা উত্তর দেয়, ‘এটার নাম হচ্ছে বিড়াল। পোষা প্রাণী। এরা খুবই আরামপ্রিয়। দুধ, মাংস, মাছের কাঁটা—এসব খায়। মিউমিউ করে ডাকে।’
শুনে ছেলেটি বলে, ‘আমি এটাকে কিনতে চাই। যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে। আমি তো একলা মানুষ। আমার সঙ্গী হতে পারবে সে।’
বুড়িমা হাসতে হাসতে বলে, ‘ওমা, তা-ই নাকি? তোমার কি খুব পছন্দ হয়ে গেছে এটাকে? তা কিনে নিতে পারো। মাত্র ছয় টাকা এর দাম। আছে সেই টাকা তোমার কাছে?’
‘তা আছে। এই নিন সেই ছয় টাকা।’
‘আচ্ছা বেশ। এখন ঘুমোতে যাও। কাল সকালে এই বিড়াল তুমি সঙ্গে করে নিয়ে যেয়ো।’
‘তা-ই হলো।’
বিড়াল নিয়ে পথে নামল এতিম ছেলেটি। এখন সে আর একা নয়। একজন সঙ্গী সে জুটিয়ে নিতে পেরেছে। সেটাও কম কথা নয়। বুড়িমাকে বিদায় জানিয়ে সে আবার রওনা হয়। কোথায় যাবে, কোনো ঠিকঠিকানা নেই। অনেক দূর গিয়ে আবারও বনের ভেতর চোখে পড়ে অন্য একটা বাড়ি। এবার দরজা খুলল এক বুড়ো লোক। তার কাছে মিনতি জানাল ছেলেটি, ‘আমাকে শুধু আজকের রাতটা আপনার বাড়িতে থাকতে দেবেন? আমার কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই কিন্তু। যদি একটু দয়া করেন, তাহলে বেঁচে যাই।’
‘আচ্ছা, এসো। বেশ তো, থাকো আমাদের বাড়িতে। এর জন্য কোনো টাকাপয়সা দেওয়া লাগবে না। খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে নাও। অনেক দূর থেকে এসেছ নিশ্চয়। বাছা, খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।’
বাড়িতে আছে বুড়োর স্ত্রী আর তার মেয়ে। সবাই অবাক চোখে বিড়ালটাকে দেখছিল। তারাও আগে কখনো এমন আজব প্রাণী আর দেখেনি। সে জন্য কৌতূহল আর আগ্রহ নিয়ে দেখছিল। আদুরে বিড়ালটাকে একজন ছুঁয়ে দেখতে চাইল। বিড়ালটা করল কি, তাকে আঁচড়ে দিল। মা-মেয়ে বিড়ালটাকে খেতে দিল। এক বাটি দুধ, পায়েস, আরও আরও খাবার। বিড়ালটা পেট পুরে খেয়েও নিল সেসব।
খাওয়াদাওয়ার পর সবাই গল্প করতে বসল। ছেলেটি তার জীবনকাহিনি বলল তাদের। শুনে সবাই আফসোস করল। কী কষ্টের জীবন তার। মায়া হলো সবার। বুড়ো লোকটা জ্ঞানী মানুষ। তার মনটা ভীষণ কোমল। একটা পরামর্শ দিল সে ছেলেটিকে। বলল, ‘এক কাজ করো তুমি। এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে আমাদের রাজার বাড়ি। রাজা খুব দয়ালু মানুষ। সবার উপকার করেন। তুমি এই প্রাণী নিয়ে রাজার কাছে যাও। তোমার কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই রাজা করে দেবেন।’
ছেলেটি বুড়োকে ধন্যবাদ জানায়। বলে, ‘নিশ্চয় রাজার কাছে আমি যাব। আপনি যখন বলেছেন, তখন সেটা অবশ্যই করব আমি।’
তা-ই হলো। পরদিন সকালবেলা নাশতার পর সে তাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। রওনা হলো রাজবাড়ির দিকে। পৌঁছেও যায় কিছুক্ষণ পর। রাজপ্রাসাদ পাহারা দিচ্ছিল বেশ কয়েকজন। একজন সান্ত্রিকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানায় ছেলেটি, ‘মহামান্য রাজার সঙ্গে আমি একটু দেখা করতে চাই। একটু খবর দিন না। আমি এসেছি অনেক দূরের দেশ থেকে। রাজার সঙ্গে আমার দেখা হওয়াটা খুব জরুরি।’
রাজার কাছে তখনই খবর পৌঁছে দেওয়া হলো। রাজা তখন ছিলেন ভোজসভায়। মন্ত্রিবর্গ, সেনাপতিকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছেন তিনি।
খেতে খেতেই রাজা ডাকলেন ছেলেটিকে। ইশারায় তাকে কাছে ডেকে বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে চারটি খেয়ে নাও তুমি। কত দূর থেকে কত পথ পার হয়ে তুমি এসেছ। তোমার যে ভীষণ খিদে পেয়েছে, সেটা চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নাও, নাও। খেতে বসো।’
রাজার ব্যবহারে মুগ্ধ হলো ছেলেটি। রাজা এত দয়ালু মানুষ? মনটা ভালো হয়ে গেল তার। সে খেয়াল করে দেখে, খাবার টেবিলের আশপাশে কতগুলো ছোট ছোট প্রাণী দৌড়াদৌড়ি করছে। কালচে রং সব কটির। খুব জোরেশোরে ছুটতে পারে। এগুলোর নাম কী? সে চিনতে পারে না। জীবনে আগে কখনো এদের দেখেনি তো, সেই জন্য।
ছেলেটি বিড়ালটাকে ঘরের এক কোণে বসিয়ে রেখে খেতে বসে। সে অবাক হয়ে দেখে, ছোট প্রাণীগুলো রাজার প্লেট থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে তাড়াতে গেলে হাত কামড়ে দিচ্ছে। আর শব্দ করছে কিচ কিচ। এ কী কাণ্ড! রাজা শান্তিমতো খেতে পারছেন না এদের জ্বালাতনে।
ছেলেটি অবাক চোখে এই দৃশ্য দেখছে। সে জানতে চায়, ‘মহামান্য রাজা, এই প্রাণীগুলোর কী নাম? এরা এমন করছে কেন? আপনাকে তো শান্তিমতো খেতেই দিচ্ছে না।’
রাজা খুবই বিরক্ত। গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দেন, ‘আর বোলো না বাপু। এগুলো হচ্ছে ইঁদুর। বড্ড পাজি এরা। এদের উত্পাতে আমি শুধু নই, গোটা রাজ্যই অতিষ্ঠ। সবার জীবন ঝালাপালা হয়ে গেছে এদের অত্যাচারে। শান্তিতে দুমুঠো খাবার খাওয়ারও জো নেই। এদের হটানোর জন্য কত চেষ্টা যে করা হয়েছে। অনেক বছর ধরে। কিন্তু সবই বিফল।’
হঠাৎই একটা অভিনব দৃশ্য চোখে পড়ল সবার। বিড়ালটা চোখের পলকে একটার পর একটা ইঁদুর মেরে ফেলছে। চলছে লাফঝাঁপ। সে এক দুর্দান্ত খেলা বটে! সবাই অবাক হয়ে দেখছেন এই কাণ্ড। আশ্চর্য ব্যাপার। বিড়ালটা ইঁদুর মেরে সব কটিকে জড়ো করে রাখছে এক জায়গায়। স্তূপ বড় হচ্ছে আস্তে আস্তে। মাত্র ২০-২৫ মিনিটের ব্যাপার। সব ইঁদুর মেরে সাফ করে ফেলেছে বিড়ালটা। এতক্ষণ যেগুলো লাফঝাঁপ করছিল, একটাও বেঁচে নেই আর। শাবাশ।
রাজা ভীষণ অবাক। তাঁর মন্ত্রীরাও অবাক। এ কী কাণ্ড! চোখের সামনে এ কেমন ঘটনা ঘটে গেল। বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁরা। বছরের পর বছর ঝাঁক ঝাঁক ইঁদুরের জুলুম চলছে তাঁদের ওপর। সবার জীবন ছিল অতিষ্ঠ। নতুন কিসিমের একটা ছোট্ট প্রাণী তাঁদের সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। এই জীব কি জাদু জানে? নচ্ছার ইঁদুরগুলোকে সে কীভাবে চরম শাস্তি দিতে পারল? এত সহজে এত জটিল একটা সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। রাজা তাকান তাঁর মন্ত্রীদের দিকে। মন্ত্রীরাও তাকান রাজার দিকে। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা হতবাক। কারও মুখে কথা নেই। চোখের সামনে কয়েক মিনিটের মধ্যে যা ঘটে গেল, তা সত্যি তো? এ যে অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কয়েক মিনিট কেউ কোনো কথাই বলতে পারলেন না।
রাজা একটু ধাতস্থ হয়ে মন্ত্রীদের জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা বলো দেখি, এসব কী দেখলাম? এই জন্তু আশীর্বাদ হয়ে এসেছে আমাদের রাজ্যে। ইঁদুরের ধ্বংসলীলা থেকে সবার জানমাল সে রক্ষা করল। আচ্ছা এই প্রাণীর কী নাম? এ রকম জীব তো আগে কখনো দেখিনি।’
ছেলেটি মহাখুশি। আদুরে বিড়ালটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে উত্তর দেয় সে, ‘এটির নাম হলো বিড়াল। ইঁদুরের যম বলা হয় এদের। মানুষের খুব উপকারে লাগে এই প্রাণী। ইঁদুরের অত্যাচার থেকে এরা মানুষকে বাঁচায়, মাননীয় রাজা বাহাদুর, মাত্র ছয় টাকায় এই বিড়াল আমি কিনে এনেছি। সে আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। বিশ্বস্ত বন্ধু।’
রাজা এখন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত। মুখের তেতো ভাব দূর হয়ে গেছে নিমেষে। হাসিমুখে অতিথি ছেলেটিকে বলেন, ‘ও, তা-ই বলো। এর নাম তাহলে বিড়াল। হুম। অসামান্য একটি কাজ করেছ তুমি। এই বিড়াল সঙ্গে এনে তুমি আমাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছ। জান বাঁচিয়ে দিয়েছে সবার। রক্ষা করেছ আমাদের রাজ্যের সব সহায়-সম্পদ। আমরা কিছুতেই ইঁদুরের উপদ্রব থেকে রেহাই পাচ্ছিলাম না। তুমি সেই অসাধ্য সাধন করে দিয়েছ। এখন বলো, তোমাকে কী উপহার দেব? কী তুমি চাও?’
ছেলেটি সবিনয়ে বলে, ‘সেটা আপনার যা ইচ্ছা। আমার বলার কিছু নেই।’
রাজা তার বিনয়ে খুশি হলেন। বললেন, ‘হুম। তুমি আসলেই খাঁটি একজন মানুষ। আপদবালাই থেকে বাঁচতে এ রকম মানুষই আমাদের দরকার। তোমার জন্য আমার দুটি উপহার আছে। এর যেকোনো একটি তুমি বেছে নাও। তুমি আমার প্রধানমন্ত্রী হতে পারো। অথবা আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে করো। তুমি আমার মেয়ের বর হলে আমার পর তুমি রাজ্য শাসন করতে পারবে।’
ছেলেটি এ কথা শুনে একটু যেন লজ্জা পায়। মৃদুকণ্ঠে বলে, ‘মাননীয় রাজা। আপনি আমার শ্রদ্ধেয় মানুষ। আপনার দ্বিতীয় প্রস্তাবটাই আমার পছন্দের।’
রাজা বোধ হয় মনে মনে এটাই চাইছিলেন। মাথা নেড়ে তিনি সম্মতি দেন, ‘বেশ বেশ। তবে তা-ই হোক। আজ থেকে তুমি আমাদের পরিবারের একজন হয়ে গেলে। তোমার মঙ্গল হোক। এ–ই আমার আশীর্বাদ ও শুভকামনা।’