গলাকাটার কবলে গুড্ডুবুড়া

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

গুড্ডুবুড়া তার মায়ের সঙ্গে বেরিয়েছে। তারা প্রথমে গেল গাউছিয়া মার্কেটে। মা বললেন, যা ভিড় আর গরম। গুড্ডু, তুই আমার পেছনে পেছনে হাঁটতে গেলে হয়রান হয়ে যাবি। তুই এই দোকানে একটু বসে থাক। আমি কিছু কেনাকাটা করে ১৫ মিনিটের মধ্যে ফিরে আসছি।

গুড্ডুবুড়া বলল, ১৫ মিনিট একা একা থাকতে হবে? আমি পারব?

মা বললেন, পারবি না কেন। নে, এই মোবাইলটা রাখ। গেমস খেল। বেশি ভয় পেয়ে গেলে আমাকে ফোন দিস। এই যে আমি একটা কল দিয়ে রাখছি। লাস্ট কলটা আমার। এটা আবার টিপলেই হবে।

মা চলে গেলেন। গুড্ডুবুড়া একটা দরজির দোকানের বাইরের ঘরে বসে আছে। সেখানে একজন বুড়ো মানুষ কাঁধে একটা ফিতা ঝুলিয়ে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছেন।

ভেতরে কারখানা। সেলাইয়ের মেশিন আছে। দুই–তিনজন কারিগর কাজ করছেন।

এই সময় ভেতরের ঘরে একজন নতুন কারিগর এসেছেন। পুরোনো কারিগর তাঁকে কাজ শেখাচ্ছেন। নানা হুকুম করছেন। সে অনুযায়ী কাজ করছেন নতুন কারিগর। এখন চলছে কাপড় কাটা।

গুড্ডুবুড়া পাশের ঘরে বসে তাঁদের কথা শুনতে পাচ্ছে।

কী করছিস? কাটা শুরু কর।

ভয় লাগে।

ভয় লাগবে কেন?

যদি ভুল করে ফেলি।

গাধা। ভয়ের কিছু নাই।

আমার হাত কাঁপছে।

কাঁপাকাঁপির কী হলো। নে, প্রথমে গলাটা কাট।

গলা প্রথমে কাটব?

হ্যাঁ।

প্রথমে হাত কাটি?

না। প্রথমে গলা কাটবি। তারপর বুকটা চিড়ে ফেল।

এই তো। চালা। হাতিয়ার চালা। বাহ্‌। গলাটা বাঁ দিকে কম কাটা হলো। বাঁ দিকে আবার কাট। এক ইঞ্চি নিচে।

শুনে তো গুড্ডুবুড়া ভয়ে মারা যায় আরকি। ঠিক সেই সময় পাশের দোকানে টেলিভিশনে বাংলা সিনেমায় মারামারি আর আর্তনাদের দৃশ্য চলতে লাগল সশব্দে। আমাকে মারবেন না, দয়া করুন, আপনার দোহাই লাগে, আমাকে মারবেন না। দয়া করুন।

দয়া। দয়া বলতে কোনো কিছু আমার ডিকশনারিতে নাই। ঢিসুম।

আহ্‌। বাঁচাও বাঁচাও...

গুড্ডুবুড়া কেঁদে ফেলল। মনে হলো এখনই সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। সে তার সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে বলল, আঙ্কেল, কী হচ্ছে?

কোথায় কী হচ্ছে?

বলছে, হাত কাটো। গলা কাটো। আর আসছে কান্নার শব্দ...

মুরব্বি দরজি হেসে ফেললেন। বললেন, বাবু, হাত কাটা, গলা কাটা আর তারপর সেলাই করা—এই সবই তো আমাদের কাজ...

ভেতর থেকে ডায়ালগ আসছে, ওস্তাদ পা দুইটা কি বড় হইয়া গেছে?

হ। পা দুইটা বড় দেখা যাইতাছে।

কী করুম।?

কী করবি মানে? কাইটা ফালা। দুই ইঞ্চি কইরা কাইটা ফালা।

গুড্ডু বলল, আমি মায়ের কাছে যাব। সে তাড়াতাড়ি মাকে ফোন করল।

মা ফোন ধরলেন।

গুড্ডু কী হয়েছে?

মা, এখানে খুন হচ্ছে। আমাকে নিয়ে যাও।

কী বলিস?

এই সময় পাশের ঘরে রাখা একটা কোকের বোতল কার হাত থেকে পড়ে গেল। ভীষণ জোরে আওয়াজ হলো কাচ ভাঙার। আর দরজার নিচ দিয়ে কোকের ধারা চলে আসতে লাগল এই ঘরে।

গুড্ডুবুড়া চিৎকার করে উঠল, রক্ত রক্ত।

তারপর গুড্ডুবুড়া অজ্ঞান হয়ে গেল।

মা ছুটে এসে তার চোখেমুখে পানি ছিটাতে লাগলেন। চোখ মেলে গুড্ডু দেখল, সে মায়ের কোলে শুয়ে আছে।

সে মাকে জড়িয়ে ধরল।

এর মধ্যে মুরব্বি দরজি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন গুড্ডুর মাকে।

পাশের ঘরে জামার গলা কাটা, হাতা কাটার কথা শুনে আপনার ছেলে ভয় পেয়ে গেছে।

মা বললেন, বাবা, ওই ঘরে কাপড় কাটছে। জামার হাতা কাটছে, গলা কাটছে। চলো তোমাকে দেখাই।

গুড্ডু ভয়ে সিটকে গিয়ে বলল, না। রক্ত।

রক্ত না বাবা। কোক। চলো তোমাকে দেখাই।

মায়ের হাত ধরে গা ঘেঁষে গুড্ডু উঁকি দিল পাশের ঘরে। দেখল, কোকের বোতল পড়ে আছে। আর তিনজন লোক কাপড় কাটছেন।

তাহলে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করল কে? গুড্ডু বলল।

পাশের দোকানে টেলিভিশনে সিনেমা চলছে। মুরব্বি বললেন।

গুড্ডুবুড়া যখন বোকা ছিল, তখন এই রকম কত সমস্যায় যে সে পড়ত, কত সমস্যা সে সৃষ্টি করত। গুড্ডু বোকা ছিল, কারণ সে ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করত না। ডাক্তার তাকে বললেন, গুড্ডু, তোমাকে ঠিকভাবে খেতে হবে। আর ঠিকভাবে খেলাধুলা করতে হবে। তাহলে দেখবে তোমার স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। আর তোমার মাথায় বুদ্ধিও হবে।

গুড্ডুবুড়া ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া শুরু করল। সে ভাত খায়, রুটি খায়, মাছ খায়, মাংস খায়, শাক খায়, সবজি খায়, দুধ খায়, ডিম খায়। আর প্রচুর খেলাধুলা করে। তার ব্রেন শার্প হলো। স্বাস্থ্য ভালো হলো। আর সে হয়ে গেল বুদ্ধিমান গুড্ডুবুড়া।

একদিন সে তার মায়ের সঙ্গে গেছে ব্যাংকে। মা বললেন, তুমি আমার মোবাইলটা নিয়ে গেমস খেল। আমি লাইনে দাঁড়াই। গুড্ডু সোফায় বসে গেমস খেলছে। এই সময় সে দেখল, দুজন লোক ব্যাংকে এসে ঢুকেছে, তাদের মাথায় হেলমেট পরা। মুখ ঢাকা। সঙ্গে সঙ্গে গুড্ডুর মনে অশুভ ইঙ্গিত যেন বেজে উঠল। ব্যাংকে কেন দুটি লোক হেলমেট পরে ঢুকবে।

সে তাড়াতাড়ি মায়ের ফোনটা হাতে নিল। লোক দুটি তাদের হাতে দুটি রিভলবার বের করে চিৎকার করে উঠল: সবাই যার যার জায়গায় চুপ করে থাকুন। আমরা ডাকাত। আমাদের হাতে বোমা আছে। কেউ কিছু করলেই বোমা ছুড়ে মারব।

ততক্ষণে গুড্ডু ৯৯৯-এ কল করে ফেলেছে।

তারপর সে মায়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকে লাইভ প্রচার করা শুরু করল।

ক্যামেরা প্রথমে সে ধরল ব্যাংকের নাম ও ব্রাঞ্চ লেখা একটা সাইনবোর্ডের ওপর।

এরপর ডাকাতদের ওপরে ক্যামেরা ধরে চুপ করে একটা জায়গায় ফোনটা রেখে দিল ঠিকভাবে পজিশন করে।

ডাকাতেরা ঝটপট ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে টাকা ভরতে লাগল ব্যাগের ভেতরে।

গুড্ডুবুড়ার মায়ের ফেসবুকের লাইভ শেয়ার হতে লাগল হাজারে হাজারে। ব্রাঞ্চের সামনে মানুষের ভিড় হয়ে গেল। ডাকাত দুজন টাকা নিয়ে বাইরে বেরোতে গিয়ে দেখে, বাইরে থেকে দরজা আটকানো। আশপাশের লোকেরা দরজা আটকে দিয়েছে।

ডাকাতেরা গুলি করল দরজায়।

ততক্ষণে বাইরে পুলিশও এসে গেছে।

ডাকাত দুজন ধরা পড়ে গেল।

গুড্ডুবুড়াকে সরকার পুরস্কার দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। কী পুরস্কার, তা এখনো জানা যায়নি।