খগম রিলোডেড

অলংকরণ: আরাফাত করিম

[সত্যজিৎ রায় ‘খগম’ নামের একটি গল্প লিখেছিলেন সন্দেশ পত্রিকায়, ১৯৭২ সালে। জনপ্রিয় সেই গল্পটির ঘটনা যেখানে শেষ হয়, এ গল্পটি সেখান থেকে শুরু।]

‘আপনি বলছেন, এক সাধুবাবার অভিশাপে জলজ্যান্ত একটা লোক সাপে পরিণত হয়েছে?’ ছুটন্ত গাছপালা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন জয়ন্ত বটব্যাল।

আমি চুপ করে থাকলাম। এর আগে সারা দিনে আঠারোবার তিনি করেছেন এ প্রশ্ন। বুঝেছি, এটা এখন আর কোনো প্রশ্ন নেই। বিস্ময়ধ্বনিতে পরিণত হয়েছে।

‘আর আপনি এটা আমাদের বিশ্বাস করতে বলছেন?’ আবার বললেন বটব্যাল।

বুঝলাম, এটাও প্রশ্ন নয়। বিস্ময়।

ধূর্জটিবাবুর অদ্ভুত পরিণতি যে আমি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারব না, সেটা আমি জানতাম। এ ঘটনার কারণে আমি যে কিছু প্যাঁচের মধ্যে পড়ব, ভরতপুর ছাড়ার আগেই তা অনুমান করেছিলাম। কিন্তু সেই প্যাঁচ যে আমাকে জয়ন্ত বটব্যাল নামক এই বিদঘুটে লোকটার মুখোমুখি করবে—জানার কোনো উপায় ছিল না। শুকনা রোগা শরীরের লোকটা আমাকে জয়পুরে আমার মেজদার বাসা থেকে একপ্রকার উঠিয়ে এনেছেন। ভোরবেলা ডোরবেল শুনে মেজদা দরজা খুলতেই সারা শরীরে সস্তা পারফিউম মাখা লোকটা চৌকাঠে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সাপের ঘটনাটা তাঁকে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে সরকারের এক বিশেষ দপ্তর থেকে। এই বলে পকেট থেকে একটা আইডি কার্ড বের করে তিনি মেজদার চোখের সামনে সেটা এমন করে দুলিয়েছেন, যেন কোনো জাদুকর রুমাল দোলাচ্ছে আর সেটা দেখে মেজদা সম্মোহিতের মতো হয়ে গেলেন, টুঁ শব্দটি করলেন না। চৌকাঠে দাঁড়িয়েই বটব্যাল বলেছিলেন, মানুষের সাপ হয়ে যাওয়া যত অবিশ্বাস্যই লাগুক, কেন্দ্রীয় সরকার সেটা সিরিয়াসলি নিয়েছে। ফলে তিনি সেটা তদন্ত করতে নেমেছেন।

এর এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা জয়পুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চেপেছি। আমি আর বটব্যাল। আমি ফিরে চলেছি ভরতপুরে, যেখানে তিন দিন আগে ঘটেছে অত্যাশ্চর্য সেই ঘটনা।

ট্রেনে একটা আলাদা কিউবিকলে আমরা দুজন ছাড়া অন্য কোনো যাত্রী নেই।

‘আপনি নিজে দেখেছেন?’ বটব্যাল আবার জিজ্ঞেস করলেন। ট্রেনের ঝাঁকুনিতে তাঁর কথাটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে গেল। এটা আর বিস্ময়ধ্বনি নয়। প্রশ্ন। তবে এই প্রশ্নও কয়েকবার করা।

‘কী দেখব?’

‘সাপে পরিণত হওয়া?’

‘কিছুটা দেখেছি। পুরাটা না।’

‘তাহলে?’

‘ধূর্জটিবাবু সাপে পরিণত হয়েছেন—এটা আমার কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। একটা আট-ন’ ফিট লম্বা কেউটেতে পরিণত হয়েছেন তিনি। কুচকুচে কালো কেউটে। কেতাবি বাংলায় যেটাকে বলে পদ্মগোখরা। ইংরেজিতে মনোকলড কোবরা।’

বটব্যাল ছোটখাটো শরীরের। একটা সাফারি ধরনের ধূসর পাশাকের ওপর হাতে বোনা হাফহাতা সোয়েটার পরা। পোশাকের এমন কম্বিনেশন আমি আগে দেখিনি। তোবড়ানো চোয়াল। ঠোঁটের ওপর অনেক যত্ন করে ছাটা একটা চিকন গোঁফের রেখা। যেভাবে সেটা চিকচিক করছে, বোঝা যায়, কলপ করা। মাথার ব্যাকব্রাশ করা চুলেও যে কলপ পড়েছে, তা হলফ করে বলে দেওয়া যায়। চোখে একটা ঘুম-ঢুলুঢুলু চাহনি।

বটব্যাল পুলিশের লোক নন। সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গেও তাঁর কোনো যোগ নেই। তিনি বায়োলজির গবেষক নন। সরকারের যে দপ্তর তাঁকে পাঠিয়েছে, সাপ-খোপ বা অতিলৌকিক ব্যাপার নিয়ে তাদের মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। ফলে তিনি আমার কাছে এক প্রশ্নচিহ্ন হয়ে থাকলেন।

ভরতপুরে স্টেশনে নামার আগমুহূর্তে আমি বটব্যালকে সেই মোক্ষম প্রশ্নটি করলাম, যেটা আজ সকাল থেকে আমার মাথায় কিটকিট করছে। ‘বুঝতে পারছি, আপনারা আসলে ধূর্জটিবাবুকে খুঁজছেন। কিন্তু কেন?’

প্রশ্ন শুনে আমার দিকে তাকালেন জয়ন্ত বটব্যাল। তখনই কোনো জবাব দিলেন না। আমরা যখন স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে একটা ট্যাক্সিতে উঠছি, তখন অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি দিলেন জবাব, ‘ধূর্জটিপ্রসাদ লোকটাকে যত সহজ মনে করছেন, লোকটা তত সহজ নয়। বড্ড ঘোরেল।’

ট্যাক্সি চেপে আমরা শুরুতে ভরতপুর পুলিশ স্টেশনের সামনে এসে থামলাম। আমাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে তিনি অল্প সময়ের জন্য থানায় ঢুকলেন। সেখানে ওসি সাহেবের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলে বেরিয়ে এসে তিনি বললেন, ‘এখন চলুন আমরা সেই রেস্টহাউসে যাই, যেখানে ধূর্জটিবাবু আর আপনি উঠেছিলেন।’

ফলে আমরা ভরতপুর শহরের বাইরে পাহাড়, টিলা আর জঙ্গলে ঘেরা সেই রেস্টহাউসটার দিকে ছুটলাম।

পথে যেতে যেতে বটব্যাল আমাকে বললেন, ‘ঘটনাটা আবার গোড়া থেকে বলুন। পুরোপুরি মাথায় ঢুকছে না।’

আমারও কি ছাই মাথায় ঢুকছে! যা দেখেছি, শুনেছি, আমি কি নিজে তার মাথামুণ্ডু বুঝছি?

আরও পড়ুন

আমি তিন-চার দিন আগের গল্প আবার বলতে শুরু করলাম। কীভাবে আগ্রা হয়ে জয়পুরে মেজদার বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে এখানে ভরতপুর নামক রাজস্থানের এই কম পরিচিত জায়গাটায় দুদিনের জন্য থেমেছিলাম, কীভাবে শহরের ভেতরে কম দামে ভালো হোটেল না পেয়ে শহরের কয়েক কিলোমিটার বাইরে একটা ফরেস্ট বাংলোয় উঠেছিলাম আর সেখানে কীভাবে ধূর্জটিপ্রসাদ নামে আরেক বাঙালি ট্যুরিস্টের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং সখ্য গড়ে উঠেছিল—এগুলো বলতে বলতে আমি আসলে মনের মধ্যে তালগোল পাকানো জট ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। চিন্তা আরও জট পাকিয়ে যাচ্ছিল।

‘ধূর্জটিবাবু কি আপনাকে একবারও বলেছিলেন, তিনি কোথা থেকে এখানে এসেছেন?’ জানতে চাইলেন বটব্যাল।

‘না বলেননি।’

‘আপনার কত দিন আগে এখানে এসেছিলেন তিনি?’

‘দুদিন আগে।’

‘তারপর কী হলো?’

‘আমরা শহরের নানান দর্শনীয় জায়গা একসঙ্গে ঘুরছিলাম। জিপের খরচ বাঁচানো যাচ্ছিল তাতে।’

‘এ রকম ঘুরতে ঘুরতে আপনারা সন্ন্যাসীর দেখা পেয়ে যান? কী নাম যেন তাঁর?’

‘ইমলিবাবা। তাঁর সন্ধান আমাদের দিয়েছিল রেস্টহাউসের চৌকিদার লছমন। কথায়–কথায় বলেছিল, ইমলিবাবার ডেরায় যেন আমরা একবার যাই। তাঁর একটা পোষা কালকেউটে আছে, যেটা রোজ সন্ধ্যায় একবার করে গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে জামবাটিতে রাখা দুধ খেয়ে যায়।’

‘আপনারা সেটা দেখতে গেলেন?’

‘আমার অত আগ্রহ ছিল না। তবে ধূর্জটিবাবুর ছিল। তিনি এগুলোকে বুজরুকি বলে উড়িয়ে দিলেও প্রবল কৌতূহল দেখিয়েছিলেন। জিপের চালক দীনদয়াল আমাদের নিয়ে গিয়েছিল।’

‘আপনারা সাপের দুধ খাওয়া দেখেছিলেন?’

‘না। ওই দিন সাপটা আসেনি। ফেরার পথে সাপের গর্তের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় ধূর্জটিবাবু কোনো কারণ ছাড়া পাথর ছুড়ে সাপটাকে হত্যা করেন।’

‘তারপর?’

‘খগম এক প্রাচীন মুনিঋষি। মহাভারতে এ ঘটনার উল্লেখ আছে। খগম তাঁর বন্ধু ডুণ্ডুভ নামে আরেক মুনিঋষিকে অভিশাপ দিয়ে ঢোঁড়া সাপে পরিণত করেছিলেন। রুরু নামে এক ঋষি তাঁকে শাপমুক্ত করেন।’

‘একটু দূরে দাঁড়িয়ে ইমলিবাবা সেটা দেখে ফেলেন। তিনি তার লাঠি তুলে ধূর্জটিবাবুকে অভিশাপ দেন।’

‘কী বলে অভিশাপ দিয়েছিলেন?’

‘বলেছিলেন, এক বালকিষণ গেছে। আরেক বালকিষণ আসবে। বালকিষণের মৃত্যু নাই।’

বলতে গিয়ে আমি আবারও শিউরে উঠলাম। সন্ধ্যার সেই দৃশ্য আমার চোখে ভেসে উঠল । পাথরে থেঁতলে যাওয়া একটা সাপ। তার পাশে ধূর্জটিবাবু। কয়েক পা পিছনে জিপের চালক দীনদয়াল আর আমি। আর আমাদের পেছনে একটু দূরে একটা বেঁটে খেজুরগাছের নিচে দাঁড়ানো ইমলিবাবা আর তাঁর কিশোর চেলা। মৃদু আলোয় অত দূর থেকেও ইমলিবাবার চোখে আমি ক্রোধ দেখতে পেয়েছিলাম। যেন অনল বিচ্ছুরিত হচ্ছিল চোখ থেকে। সেই চোখ আমি কোনো দিন ভুলব না।

‘বালকিষণ কি সাপটার নাম?’ বটব্যাল জানতে চাইলেন।

‘হ্যাঁ। কালো একটা কেউটে। অনেক লম্বা। কেউটে এত লম্বা হয়, আমার ধারণা ছিল না।’

আমরা গাড়ির জানালাপথে দুপাশে ছুটন্ত বাবলাঝোপের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অবশেষে বটব্যাল মুখ খুললেন, ‘তারপর রাতের বেলা ধূর্জটিবাবু ধীরে ধীরে বালকিষণে পরিণত হলেন? মেটামরফোসিস?’

আমি কিছু বললাম না। এ গল্প আমি সারা দিনে কয়েকবার করেছি বটব্যালকে। তবে আমি মাথা থেকে একটা দৃশ্য কিছুতেই তাড়াতে পারছিলাম না, ধূর্জটিবাবুর জিব। মাঝরাতে তিনি মুখ হাঁ করে জিব বের করে আমাকে দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জিব জ্বালাপোড়া করছে। পেট্রোম্যাক্সের আলোয় দেখেছিলাম, সেই জিবে একটা অদ্ভুত সরু লাল দাগ, ডগা থেকে শুরু করে মাঝখান পর্যন্ত চলে গেছে। ধূর্জটিবাবুর জিব যে সাপের মতো দুই ভাগ হয়ে যেতে শুরু করেছে, আমি তখনো বুঝিনি। এখন বুঝতে পেরে কয়েক দফা শিউরে উঠলাম।

পিচের রাস্তা ছেড়ে আমাদের জিপ মেটে রাস্তা ধরল। ধুলো উড়িয়ে সেটা ছুটে চলল একটা ছোট্ট টিলার খাড়াই বেয়ে। দুটো মোড় ঘুরতেই সামনে ভেসে উঠল একতলা রেস্টহাউস। সেটার সামনের ঘাসের চত্বরে আমাদের জিপ দাঁড়াতে ভেতর থেকে লছমন বেরিয়ে এল। আমাকে দেখে সে অবাক হলো না, যেন জানত আমাকে আবার ফিরে আসতে হবে।

আমি আগের কক্ষে উঠলাম। বটব্যাল উঠলেন আমার পাশের কামরায়, যেখানে ধূর্জটিবাবু উঠেছিলেন। দুই কক্ষের মাঝখানে একটা দরজা আছে, যা দিয়ে এ-ঘর থেকে ও-ঘর যাওয়া যায়।

রাতে খাবার টেবিলে লছমন আর দীনদয়ালকে একপ্রকার জেরা করলেন বটব্যাল। ম্যানেজারকে বলে রেস্টহাউসের রেজিস্ট্রি খাতা খোলালেন। খুঁটিয়ে চেক করলেন। লক্ষ করলাম, ধূর্জটিবাবুর নামের এন্ট্রির চেয়েও বটব্যালের নজর দুই আমেরিকান অতিথির দিকে। যে রাতে ধূর্জটিবাবু সাপে রূপান্তরিত হতে শুরু করেন, সেই রাতে একটি কুকুর নিয়ে রেস্টহাউসে থাকতে এসেছিলেন ব্রুস আর মাইকেল নামের দুই মার্কিন পর্যটক। তাঁদের গাড়ির শব্দ আমি পেয়েছিলাম। আর পেয়েছিলাম তাঁদের কুকুরের ডাকের আওয়াজ। সাপের কামড়ে রাতেই কুকুরটি মারা যায়। তাঁরা কুকুরকে সমাহিত করে পরদিন দুপুরে রেস্টহাউস ছেড়ে চলে যান। বটব্যাল এ দুই পর্যটকের জমা দেওয়া কাগজপত্র গভীর অভিনিবেশে পরীক্ষা করে দেখলেন। তাঁর ভ্রু কুঁচকে থাকল।

আমি প্রশ্নবোধক চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি, এটা বটব্যাল লক্ষ করলেন। রুমে ফিরে তিনি পোশাক বদলে আমার কক্ষে এলেন। শর্টস আর স্যান্ডো গেঞ্জিতে তাঁকে আরও ক্ষীণকায় দেখাচ্ছিল।

এসেই তিনি বলেন, ‘ওই রাতে আপনি কী কী দেখেছিলেন, বিস্তারিত বলুন। যতটা ডিটেইল মনে করতে পারেন।’

আমি তাঁকে বলতে শুরু করলাম, কীভাবে ধূর্জটিবাবুর উচ্চারণে তালব্য-শ আর দন্ত-স-গুলো দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছিল, তিনি সাপের মতো হিসহিস করছিলেন; কীভাবে তাঁর চামড়ায় অ্যালার্জির মতো একধরনের কালশিটে দাগ দেখা দিচ্ছিল, আমি প্রথমে যেটাকে মশার কামড় ভেবেছিলাম; কীভাবে তিনি বিছানায় না শুয়ে আমার চোখের সামনে মেঝে ঘষটে বিছানার তলায় গিয়ে শুয়েছিলেন। এ বর্ণনা দেওয়ার সময় আমার গলা কেঁপে কেঁপে যাচ্ছিল। কিন্তু বটব্যাল দেখলাম নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে শুনে গেলেন।

‘উনি কি বুঝতে পারছিলেন, উনি সাপে রূপান্তরিত হচ্ছেন?’ শেষে জিজ্ঞেস করলেন বটব্যাল।

‘না মনে হয়। কেমন ঘোরলাগা লোকের মতো আচরণ করছিলেন তিনি। সম্মোহিতের মতো।’

‘এই সম্মোহিত দশা কখন থেকে শুরু হয়েছিল?’

‘সন্ধ্যায়, ইমলিবাবার অভিশাপ বর্ষণের পর থেকে।’

বটব্যাল কী যেন ভাবেন। তারপর বলেন, ‘ধূর্জটিবাবু কী একটা শব্দ ঘুরেফিরে উচ্চারণ করছিলেন, আপনি বলেছেন। কী যেন সেটা?’

‘খগম।’

‘ও। হ্যাঁ। খগম। মানে কী কথাটার?’

‘খগম এক প্রাচীন মুনিঋষি। মহাভারতে এ ঘটনার উল্লেখ আছে। খগম তাঁর বন্ধু ডুণ্ডুভ নামে আরেক মুনিঋষিকে অভিশাপ দিয়ে ঢোঁড়া সাপে পরিণত করেছিলেন। রুরু নামে এক ঋষি তাঁকে শাপমুক্ত করেন।’

‘আগেকার যুগের গল্প তো দেখছি অভিশাপে ভরা। উঠতে অভিশাপ, বসতে অভিশাপ, খেতে অভিশাপ, শুতে অভিশাপ।’

‘তা বলতে পারেন।’

আরও পড়ুন

বটব্যাল উঠে গভীর চিন্তামগ্ন ভঙ্গিতে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে শুরু করেন। আমার অস্তিত্ব তিনি যেন ভুলে গেছেন। বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি থেমে আমার উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে রুরু ঋষির ভূমিকা পালন করতে হবে। আমার কাজ হলো ধূর্জটিবাবুকে অভিশাপমুক্ত করা। তাঁকে সাপ থেকে আবার মানুষে পরিণত করা।’

‘কিন্তু কেন?’

‘কারণ, লোকটাকে আমাদের দরকার। ধূর্জটিবাবুকে।’

‘সেটা বুঝতেই পারছি। কিন্তু কী দরকার, বুঝতে পারছি না।’

বটব্যাল বললেন, ‘আপনি কয়েক দিন ঘুরেছেন ধূর্জটিবাবুর সঙ্গে। এখন বলুন তো, লোকটা সম্পর্কে আপনি কত দূর কী জেনেছেন?’

আমাকে স্বীকার করতে হলো, কিছুই জানিনি। লোকটা নিজের সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলেনি আমাকে।

‘কোথায় কোথায় গেছেন আপনারা?’

‘ট্যুরিস্টরা যেখানে যায়—দিগ প্যালেস, লোহাগড় কেল্লা, কেওলাদেবের মন্দির, লক্ষ্মণ টেম্পল—এই সব।’

‘সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েছে?’

‘কী রকম?’

‘লোকটাকে দেখে কোনো সন্দেহ জাগেনি আপনার মনে? অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেননি?’

আমি মনে করার চেষ্টা করলাম। বললাম, ‘এটুকু বুঝেছি, লোকটার অঢেল জ্ঞান, অগাধ পাণ্ডিত্য। যেভাবে লোহাগড় কেল্লা ঘোরার সময় সেটার ইতিহাস বলা শুরু করেছিলেন, যেভাবে কেল্লার চারপাশে পরিখা এবং সেই সূত্রে মধ্যযুগের যুদ্ধবিগ্রহের ধরন নিয়ে কথা বলেছেন, বলতে কি লেকচার দিয়েছেন, তাতে মনে হলো ইতিহাস এবং বিশেষ করে সামরিক ইতিহাস তার ভেজে খাওয়া।’

‘আর কিছু?’

‘আর কিছু না।

‘সন্দেহজনক কেউ কি তার কাছে এসেছিল বা তিনি কারও সঙ্গে দেখা করেছিলেন?’

‘না। তবে একবার শহরে চৌবুজা মার্কেটের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি কোনো কারণ ছাড়া আমাকে হুট করে টেনে একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলেন, এদিক দিয়ে শর্টকাট। তবে আমি তাকে দ্রুত হাঁটতে দেখেছিলাম এবং আমার মনে হয়েছিল, তিনি কাউকে এড়ানোর জন্য এ রকম করলেন। সম্ভবত কেউ তাকে অনুসরণ করছে বলে তাঁর মনে হয়েছিল।’

বটব্যাল বললেন, ‘হুম।’

ধূর্জটিবাবুকে যদি সাপ থেকে আবার মানুষে পরিণত করতে হয়, তবে সে কাজটা একমাত্র যে লোক পারবে, আমরা পরদিন সেই লোকের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। দুপুরের পর পর পৌঁছালাম ইমলিবাবার ডেরায়। জঙ্গলের মধ্যে গাছপালা পরিষ্কার করে একটি উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা হয়েছে। সেখানে একটি মাটির কুঁড়েঘরের ভেতরে বাঘের ছালের ওপর বসে আছেন ইমলিবাবা। পাশে তাঁর সেই কিশোর চেলা। এক পাশে মাটিতে একটা পাথরের জামবাটিতে দুধ রাখা। সন্দেহ নেই, ধূর্জটিবাবু রোজ সন্ধ্যায় বুকে হেঁটে এই বাটিতে দুধ খেতে আসেন।

ঘরে একটিমাত্র সংকীর্ণ জানালাপথে আলো আসছে। তাতে ভেতরে আলোর চেয়ে অন্ধকারই বেশি। সবকিছু আবছা। বাবার সামনে ধুনো থেকে ধূপের ধোঁয়া উঠছে। ধোঁয়া উঠছে বাবার হাতে ধরা কলকে থেকেও। একটা সংকীর্ণ গেরুয়া কাপড় পেঁচিয়ে পরা শরীরে। প্রথম দিন বাবাকে অনেক লম্বা লেগেছিল। আজ কিছুটা খাটো এবং শুকনো দেখাচ্ছে তাকে।

আমরা ঢুকলে বাবা চোখ তুলে একবার চাইলেন। কোনো ভাবান্তর হলো না। তিনি কল্কিতে দম দিতে থাকলেন। আমাকে চিনেছেন বলে মনে হলো না।

বাবার চেলা আমাদের দুজনের জন্য দুটি আসন পেতে দিতে আমরা তাতে পদ্মাসনে বসলাম।

বটব্যাল কোনো ভূমিকা ছাড়া সরাসরি বলে বসলেন, ‘আপ ধূর্জটিবাবু কো ওয়াপাস লে আইয়ে।’

বাবা তাকালেন একবার। সেই রক্তচক্ষু। তবে কিছু বললেন না। আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।

বটব্যাল আবার বললেন, ‘আপ উসকো সাপ বানা দিয়া। আব ফিরসে আদমি বানানা পারেগা। হামে উসসে কুছ লেনাদেনা হ্যায়।’

আমি কল্পনা করার চেষ্টা করলাম, এই গর্তের ভেতরে, শীতল মাটির মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছেন ধূর্জটিচবাবু। তাঁর ঠান্ডা শরীরের ওপর দিয়ে একটা কোনো পিঁপড়া হয়তো হেঁটে যাচ্ছে এ মুহূর্তে। তিনি কি বুঝতে পারছেন, গর্তের বাইরে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি? তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি?

বটব্যালের হিন্দির অবস্থা আমার চেয়ে ভালো নয়। তবে আরেকটা যে জিনিস বেশি করে চোখে পড়ল, তা হলো, বটব্যালের গলায় অনুরোধ-উপরোধের লেশমাত্র নেই। তিনি যেন আদেশ করছেন।

আমি প্রমাদ গুনলাম। যে লোক অভিশাপ দিয়ে কাউকে সাপে পরিণত করতে পারে, তার সামনে বসে তাকে আদেশ করার মধ্যে বোকামি ছাড়া যে অন্য কিছু নেই, তা আর বলে দিতে হয় না। আমি বটব্যালকে নিরস্ত করতে কিছু একটা বলার উপক্রম করেছি, এমন সময় ইমলিবাবা হাত তুলে আমাকে থামালেন। এরপর হিন্দুস্তানি ভাষায় তিনি যা বললেন, তার অর্থ দাঁড়ায়, ধূর্জটিবাবু বালকিষণের রূপ ধরে তাঁর কাছেই ভালো আছেন। আমরা যেন তাকে শান্তিতে থাকতে দিই।

বটব্যাল আবারও প্রায় আদেশের সুরে বললেন, ধূর্জটিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

বাবার রক্তচক্ষু এবার বটব্যালের ওপর ন্যস্ত হলো। তার গলা ঘরের মধ্যে বজ্রপাতের মতো ধ্বনিত হলো। চেলাকে তিনি বললেন, আমাদের দুজনকে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিতে।

চেলা এগিয়ে এলে উঠতে উঠতে বটব্যাল এমন অদ্ভুত এক কাজ করলেন যার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি ইমলিবাবার উদ্দেশে বললেন, ‘আমি ফিরে আসব। এসে আপনার এই ডেরা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেব।’

তান্ত্রিকদের অতিলৌকিক ক্ষমতায় আমার কোনোকালে বিশ্বাস ছিল না। কিন্তু যে লোক মাত্র তিন দিন আগে এ রকম বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখিয়েছে, তাকে বটব্যাল মুখের ওপর কেন এভাবে শাসাবেন, আমার মাথায় ঢুকছিল না।

আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম। ফেরার পথে বটব্যাল আমাকে বললেন, সাপের সেই গর্তটার কাছে নিয়ে যেতে। আমি তাকে সেখানে নিয়ে গেলাম।

জঙ্গলের মধ্যে একটা পুরোনো ইটের ঢিবি। কোনোকালে ভবন ছিল এখানে। তারই ধ্বংসাবশেষ হারিয়ে গেছে আগাছা আর ঝোপজঙ্গলের আড়ালে। বালকিষণের গর্তটা চিনতে আমার বেগ পেতে হলো না। বিকেল হয়ে আসছে।

গর্তের চারপাশটা নীরব। একটা তিতির ডাকছে দূরের কোনো গাছে।

আমি কল্পনা করার চেষ্টা করলাম, এই গর্তের ভেতরে, শীতল মাটির মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছেন ধূর্জটিচবাবু। তাঁর ঠান্ডা শরীরের ওপর দিয়ে একটা কোনো পিঁপড়া হয়তো হেঁটে যাচ্ছে এ মুহূর্তে। তিনি কি বুঝতে পারছেন, গর্তের বাইরে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি? তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি?

এ সময় জঙ্গলের মধ্যে কয়েক জোড়া পায়ের আওয়াজ উঠল। আমরা যেদিক থেকে এসেছি, সেদিক থেকে খাকি পোশাক পরা কয়েকজন লোক এগিয়ে এল। পুলিশ।

সবচেয়ে সামনের লোকটা থানার ওসি। তিনি বটব্যালকে সেল্যুট দিলেন। তাদের মধ্যে যে কথা হলো, তার মর্মবস্তু হলো, কেওলাদেওরের ঝিলে একটা লাশ ভেসে উঠেছে। এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তবে লাশটা অনেক লম্বা কোনো মানুষের।

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

আরও পড়ুন

লাশের কথায় বটব্যালের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিল। তিনি বললেন, ‘আর দেরি করার মানে নেই। ইমলিবাবাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। চলুন।’

আমরা সবাই আবার ইমলিবাবার ডেরায় ফিরে এলাম। কুঁড়েঘরে ঢুকে দেখি ঘর ফাঁকা। ভয়ার্ত চোখে এক পাশে গুটি পাকিয়ে বসে থাকা চেলাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে জঙ্গলের একটা দিক দেখিয়ে দিয়ে জানাল, ওই দিকে পালিয়েছেন সাধুবাবা।

বটব্যাল পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়ে চেলার দেখিয়ে দেওয়া পথে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম।

বটব্যালের মধ্যে কোনো তাড়া নেই। তিনি স্বাভাবিক গতিতে হাঁটছেন।

কিছুদূর যেতে তিনি মাটিতে পড়ে থাকা একটা জিনিস তুলে নিয়ে পরীক্ষা করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। হাতে নিয়ে দেখি সেটা একটা পরচুলা ও নকল দাড়ি।

বটব্যাল বললেন, ‘দুশ্চিন্তার কিছু নেই, আপনার ইমলিবাবা বেশি দূর পালাতে পারবে না। বন ঘিরে ফেলা হয়েছে।’

একটা ঝরনার ধারে আমরা তাকে পেলাম। ছোট বাদাম গাছের নিচে আধশোয়া হয়ে পড়ে আছেন। গায়ে এখনো গেরুয়া জড়ানো।

বেকায়দা ভঙ্গিতে শুয়ে আছেন লোকটা। মুখ নীল হয়ে আছে যন্ত্রণায়। কাছেই একটা কেউটে কুণ্ডলী পাকিয়ে ফনা তুলে আছে।

লোকটা সাপের কামড় খেয়েছে। যে সাপটা ছোবল বসিয়েছে, সেটা বালকিষণ নয় হয়তো। তবে তার কোনো জ্ঞাতিভাই হবে, নিশ্চিত।

নকল দাড়ি–গোঁফ খুলে ফেলায় লোকটাকে এখন দিব্যি চেনা যাচ্ছে।

বটব্যাল বললেন, ‘আপনার কাছে থাকা ফাইলগুলো এখনো বেহাত হয়নি তো ধূর্জটিবাবু, তাই না?’

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

তবে স্বীকার করলাম, লোকটার প্রতিভা আছে। আত্মগোপন করার জন্য কারও মাথায় এমন অভিনব ফন্দি আসতে পারে, এ আমার পক্ষে কল্পনা করাও দুঃসাধ্য।

ধূর্জটিবাবু পালাচ্ছিলেন। পালাতে পালাতে বুঝতে পারছিলেন, তাঁর পক্ষে পালিয়ে থাকা আর সম্ভব হবে না। সীমান্ত সিল করে অনুসরণকারীরা ধীরে ধীরে তাঁকে ঘিরে ফেলছে। তখন তাঁর হাতে একটাই পথ খোলা—ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ভ্যানিশ ইন থিন এয়ার’। অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। আর তিনি ভ্যানিশ হয়েছিলেন সাপের শরীরে।

আমাকে নিয়ে ইমলিবাবার ডেরায় যাওয়ামাত্র তার মাথায় কুবুদ্ধিটা উঁকি দেয়। বাবা যে নিজে উঠে এসে ওভাবে অভিশাপ দিয়ে বসবেন, এতটা তিনি ছক কষেননি। এটা বোনাস।

তবে এ জন্য তাঁকে অনেক অভিনয় করতে হয়েছে। আমাকে বোকা বানাতে জিবে লাল মার্কার কলম দিয়ে দাগ কাটতে হয়েছে। ‘শ্‌শ্‌শ্…’ করে কথা বলা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু মেঝেতে বুকে হেঁটে বিছানার তলায় ঢুকতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সামরিক প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন তিনি প্রথম যৌবনে। সেটা কাজে লেগেছে।

মানুষের শরীরের আদলে একটা প্লাস্টিকের খোলস বানানো এবং সেটা রং করে সাপের চামড়ার চেহারা দেওয়া কঠিন ছিল। চৌবুজা মার্কেটের এক দরজি সহায়তা না করলে এ পর্বটা তাঁকে বাদ দিতে হতো।

পুরো ব্যাপারটা সুচারুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। শুধু একটা অপরাধ না করে উপায় ছিল না। কেওলাদেওরের ঝিলে ইমলিবাবার লাশ তিনি ভারী পাথর বেঁধেই ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তান্ত্রিক সন্ন্যাসীর লাশ পাথরে চাপা থাকার বস্তু নয়। উঠে এসেছে।

চেলাকে ভয় দেখিয়ে হাত করা কঠিন হয়নি।

ইমলিবাবার অস্বাভাবিক লম্বা শরীর। ফলে ছোটখাটো শরীরের ধূর্জটিবাবু যখন বাঘের ছালের ওপর পরচুলা পরে বসে ছিলেন, আমার সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল। হয়নি; কারণ, ঘর প্রায় অন্ধকার ছিল। আর আমার মাথায় তখন বালকিষণ ছাড়া কিছুই খেলা করছিল না।

ধূর্জটিবাবু রূপান্তরিত হয়েছিলেন বটে। তবে বালকিষণের শরীরে নয়। ইমলিবাবার শরীরে। সাপে রূপান্তরের গল্প বিশ্বাসযোগ্য করে তিনি ইমলিবাবাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে সাধু সেজে সবার চোখ ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, বিশেষ করে তাঁদের চোখ, যাঁদের এড়াতে তিনি গত তিন মাস ধরে ভারতের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। অনুসরণকারীরা ভরতপুরে তার অবস্থান শনাক্ত করে ফেলেছিল। তারা এগিয়ে আসছিল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বটব্যাল। এই চতুর গোয়েন্দা ভরতপুরে পা রাখার আগমূহূর্তে নিজেকে সাপে রূপান্তরিত করে সবার চোখে ধুলা দেন অতিধূর্ত ধূর্জটিবাবু।

আমি শেষে একটা প্রশ্ন না করে থাকতে পারলাম না, ‘ধূর্জটিবাবু ওভাবে পালাচ্ছিলেন কেন?’

আরও পড়ুন

বটব্যাল আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘সব কথা সবার জানার প্রয়োজন কী, রায়বাবু? ধরে নিন তিনি এমন কিছু অতি স্পর্শকাতর তথ্য হাত করে ফেলেছিলেন, যার সঙ্গে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। আর সেসব তথ্য তিনি এমন একটি দেশের লোকদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, যে দেশটার সঙ্গে এক দফায় আমাদের তুমুল যুদ্ধ হয়ে গেছে এবং আরেকটা যুদ্ধ অত্যাসন্ন।’

আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না।

আমাকে জয়পুরের ট্রেনে তুলে দেওয়ার সময় বটব্যাল বললেন, ‘আপনি নিশ্চিত ধূর্জটিবাবু খগম শব্দটা কয়েকবার বলেছিলেন?’

‘আমি তো খগমই শুনেছি।’

‘ভালো করে মনে করে দেখার চেষ্টা করুন। কোনোভাবে শব্দটা খড়ম না তো?’

‘কেন?’

‘আমরা ধূর্জটিবাবুর কথোপকথন ইন্টারসেপ্ট করে সেখানে একাধিকবার খড়ম শব্দটার উল্লেখ পেয়েছি। খড়ম একটা কোডনেম। অরুণাচল প্রদেশের একটা সীমান্তকে তারা এ কোডনামে ডেকে থাকে। আমাদের স্পর্শকাতর তথ্যগুলো সবই অরুণাচল সীমান্ত–সংক্রান্ত। ওখানে আমাদের কিছু সামরিক প্রস্তুতি চলছে।’