কোথায় গেল?

‘কোথায় গেল?’—প্রশ্নটা যে বিষ্ণুবাবু পৃথিবীতে যত লোক আছে, তাদের সবার চেয়ে বেশিবার উচ্চারণ করেন তাতে সন্দেহ নেই। বিষ্ণুবাবুর সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের পরিচয় থাকলেই যেকোনো লোক বিনা দ্বিধায় এ বিষয়ে তাঁকে জোরালো সার্টিফিকেট লিখে দিতে রাজি হবে। কখন যে কোথায় রাখেন তাঁর মিনিটে মিনিটে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ভদ্রলোকের তা একেবারেই খেয়াল থাকে না। নাকে চশমা এঁটে, চশমা খুঁজে ঘরবাড়ি তোলপাড় করে বেড়ানোর মতো মানুষ আরকি!

মফস্বল শহর, বোধ হয় সে জন্যই আজও গাড়িচাপা পড়েননি। চাকরিটা যে তিনি কী করে বজায় রেখেছেন, বাড়ির লোকে অবাক হয়ে তা-ই ভাবে। একটা কারণে বারবার সবাই তাঁর কাছে রীতিমতো কৃতজ্ঞতা বোধ করে—সেটা হচ্ছে, ‘আমার আপিস কোথায় গেল’—বলে আজ পর্যন্ত তিনি একদিনও হইচই কাণ্ড বাধিয়ে বসেননি।

সেবার বর্ষার গোড়ায় বিষ্ণুবাবু এক মাসের ছুটি নিলেন। সপরিবার দেশে যাবেন। অফিসে কাজ করতে করতে হঠাৎ একদিন তাঁর মনে হলো, অনেক কাল ছুটিও নেওয়া হয়নি, দেশেও যাওয়া হয়নি। তাড়াতাড়ি একটা দরখাস্ত লিখে দাখিল করে দিলেন। তারপর কথাটা গেলেন ভুলে। কথাটা মনে পড়ল, দরখাস্তটা মঞ্জুর হওয়ার খবর যেদিন এল সেই দিন।

বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে বললেন, ওগো জিনিসপত্র গোছাও।

এই যে গোছাই। যাওয়া হবে কোথায়?

দেশে যাব। এক মাসের ছুটি নিয়েছি।

শুনে ভদ্রমহিলার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।

এই বর্ষার সময় ছুটি নিয়ে দেশে যাওয়া! তা-ও আবার সেই দেশে, যেখানে বাড়ির উঠোনে নৌকায় বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরা চলে।

কেবল তা-ই নয়, বিষ্ণুবাবুর ছোট ছেলেটির বয়স মোটে ছ মাস। এতটুকু ছেলে নিয়ে এত দূরের রাস্তা যাওয়া, ওই বারোমেসে বন্যার দেশে বাস করা। আরও যে একপাল ছেলেমেয়ে আছে দুরন্তের একশেষ, তাদের মধ্যে কোনটা কবে জলে ডুবে মরবে ভগবান জানেন!

স্ত্রীর মুখ দেখে বিষ্ণুবাবু টের পেলেন, কোনো একটা অন্যায় কাজ করে ফেলেছেন। অন্যায় কী করেছেন ঠিক বুঝতে না পারলেও স্থান ত্যাগ করাই ভালো মনে করলেন।

গামছাটা কোথায় গেল? বলে তিনি পালিয়ে গেলেন একেবারে উঠোনে কুয়োতলায়। অন্যমনস্কতার অপবাদ থাকলে মাঝে মাঝে দরকারের সময় সেটা মানুষের কাজেও লাগে বলতে হবে বটে।

ছোট খোকা খিদেয় কাঁদছিল। তাকে দুধ খাইয়ে দেশে যাওয়ার ব্যাপারটা ভালো করে বোঝার জন্য স্বামীর খোঁজে গিয়ে বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী আবিষ্কার করলেন, কুয়োর কাছে দাঁড়িয়ে তিনি গায়ে তেল মাখছেন। স্নানের জন্য জল তুলে রেখে চাকর মাখনলাল সবিস্ময়ে তাই নিরীক্ষণ করছে।

রাগের মধ্যেও বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী না হেসে থাকতে পারলেন না। জিজ্ঞাসা করলেন, তেল মাখছ যে!

দেখছ না, চান করব।

বিকেলে চান করার সময় লোকে গায়ে তেল মাখে নাকি?

বিষ্ণুবাবু থতমত খেয়ে একবার স্ত্রীর মুখের দিকে একবার আকাশের দিকে তাকাতে লাগলেন। প্রতিবেশী উকিলবাবুর রান্নাঘরের পেছনে এইমাত্র সূর্য অস্ত গিয়েছে, ওদিকের আকাশটা এখনো টকটকে লাল। আকাশের রং প্রতিফলিত হয়ে পড়ার জন্যই বোধ হয় বিষ্ণুবাবুর মুখখানা বড় বেশি রকম লাল দেখাতে লাগল।

হঠাৎ তিনি করলেন কী, চাকর মাখনলালের গালে বসিয়ে দিলেন ঠাস করে এক চড়!—‘ব্যাটা হাঁ করে তাকিয়ে দেখছিস কী তখন থেকে? একবার বলতে পারলি না, এখন বিকেলবেলা, এখন তেল মাখবেন না বাবু।’

বিষ্ণুবাবুর হাতে চড় খেলে মাখনের লাগে, কিন্তু দুঃখ হয় না। চাকরকে মারলেই একটু পরে বিষ্ণুবাবুর এমন গভীর অনুতাপ উপস্থিত হয় যে নিজের জরিমানা বাবদ কিছু তার হাতে গুঁজে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি স্বস্তি পান না। বাবু রোজ কেন চড়টা-চাপড়টা মারেন না বলেই বরং মাখনের মনে আফসোস হয়।

কদিন মহাসমারোহে যাত্রার আয়োজন হলো। বিষ্ণুবাবুর স্ত্রীর শরীরটা ভালো ছিল না, মনেও নানা রকম দুর্ভাবনা। তিনি ছাড়া সবারই উৎসাহ দেখা গেল প্রচণ্ড। কোথাও যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলেই বিষ্ণুবাবু মহাবিপদ বাধান। এটা কোথায় গেল, ওটা কোথায় গেল, জিজ্ঞাসা করতে করতে সবাইকে তো অতিষ্ঠ করে তোলেনই, আর নিজেরও প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

যাত্রার দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাঁর চিরন্তন জিজ্ঞাসা আরম্ভ হলো। প্রথমেই হাঙ্গামা বাধল চটিজুতা, টুথব্রাশ আর দাড়ি কামানোর সরঞ্জাম নিয়ে। অনেক খোঁজার পর জিনিস কটা পাওয়া গেল একটি গোছানো স্যুটকেসের ভেতরে। বিষ্ণুবাবু জিনিসপত্র গোছাতে স্ত্রীকে কাল একটু সাহায্য করেছিলেন।

স্ত্রী প্রশ্ন করলেন, ‘গাড়ি তো সেই সন্ধ্যের সময়, কাল এগুলো বাক্সবন্দী করবার কী দরকার ছিল?’

এই প্রশ্নের কেউ জবাব দিতে পারে? বিষ্ণুবাবু চুপ করে রইলেন। কিন্তু কেবল কিছুক্ষণের জন্য। রওনা হওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসতে লাগল, তিনি ততই ব্যস্ত ও বিব্রত হয়ে পড়তে লাগলেন। এই জিনিসটা টানেন, ওই বাক্সটা খোলেন, একে ধমকান, ওকে উপদেশ দেন, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যান আর ও-ঘর থেকে এ-ঘরে আসেন। স্বামীর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী একেবারে হাঁপিয়ে উঠলেন।

পাড়া সচকিত করে একসময় বাড়ির সামনে থেকে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়ল। স্টেশন প্রায় তিন মাইল তফাতে। টাইমটেবলে ট্রেনের সময় দেখে বিষ্ণুবাবু দেড় ঘণ্টা আগে রওনা হয়েছেন।

পাড়া ছাড়িয়ে বড় রাস্তায় পড়েই বিষ্ণুবাবু বললেন, ‘আমার চুরুটের বাক্স কোথায় গেল?’

গাড়ি থামল এবং মাখনলাল নেমে ছুটল বাড়ির দিকে। বিষ্ণুবাবু নিজেই ভরসা দিয়ে বললেন, ‘সাড়ে সাতটায় গাড়ি, ঢের সময় আছে।’

মাখনলাল চুরুটের বাক্স নিয়ে এলে আবার গাড়ি চলতে আরম্ভ করল। পথে বিষ্ণুবাবু আরও কয়েকবার ‘কোথায় গেল’ বলে উঠলেন বটে, কিন্তু জিনিস কয়েকটি অপরিহার্য না হওয়ায় গাড়ি থামানো হলো না, মাখনলালকেও বাড়ি পাঠানো হলো না।

স্টেশনে পৌঁছে দেখা গেল তাঁদের গাড়ি ছেড়ে গেছে আধা ঘণ্টা আগে।

বিষ্ণুবাবু রেগে বললেন, ‘ছেড়ে গেছে বললেই হলো! টাইমটেবলে টাইম দেখলাম সাড়ে সাতটায়—কোথায় গেল টাইমটেবলটা?’

মাখনলাল অনেক খুঁজে টাইমটেবলটা আবিষ্কার করে বাবুর হাতে দিল। এদিকে খোকার মা এতক্ষণ স্টেশনের কুলির সঙ্গে বোধ হয় গাড়ির সময় সম্বন্ধেই আলাপ করেছিলেন, বললেন, ‘ওটা দেখে আর কী হবে, ট্রেনের টাইম বদল হয়ে গেছে এক মাসের ওপর। কোন বছরের টাইমটেবল ওটা দ্যাখো তো?’

রাত এগারোটার সময় আর একটা ট্রেন আছে। ঠিক হলো সেই গাড়িতেই যাওয়া হবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিষ্ণুবাবু তাড়াতাড়ি সপরিবার ওয়েটিং রুমে গিয়ে আশ্রয় নিলেন।

খানিক পরেই নামল মুষলধারে বৃষ্টি। বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী শান্তভাবে বললেন, ‘শুভদিনে শুভক্ষণে যাত্রা করেছি বটে।’

বিষ্ণুবাবু ভরসা নিয়ে বললেন, ‘জোরে বৃষ্টি নামাই তো ভালো, কিছুক্ষণ বর্ষেই আকাশ সাফ হয়ে যাবে।’

অনেকক্ষণ বর্ষণের পর বৃষ্টির জোর কমল বটে, একেবারে কিন্তু থামল না। ছেলেমেয়েদের খিদেও পেয়েছে। কিছু খাইয়ে একটা বিছানা পেতে ওদের শুইয়ে দেওয়ার পরামর্শটা বিষ্ণুবাবুই দিলেন। খাবার সঙ্গে আছে, কিন্তু খাওয়ার জল?

‘জলের কুঁজো কোথায় গেল?’—আনা হয়নি।

বিষ্ণুবাবু রেগে বললেন, ‘কেন আনা হয়নি? একটা দরকারি জিনিস আনতে যদি তোমাদের মনে থাকে! যেখানে-সেখানে জল খেয়ে এবার কলেরা হোক সবার!’

স্ত্রী জানালেন, বিষ্ণুবাবুর হুকুমেই ঘোড়ার গাড়ি থেকে শেষ মুহূর্তে জলের কুঁজোটি নামিয়ে রেখে আসা হয়েছে। এমনিই মালপত্র হয়েছে একগাদা, তার ওপর কুঁজোর বোঝা বাড়াতে তিনি রাজি হননি।

বিষ্ণুবাবু দমে গিয়ে বললেন, ‘খাওয়ার জলের কুঁজোটা নামাতে বলেছিলাম নাকি? যা হাঙ্গামা চলেছে কদিন থেকে, মাথার কি ঠিক থাকে কারও!’

মাখন ছাতি মাথায় দিয়ে গিয়ে খাওয়ার জল সংগ্রহ করে নিয়ে এল। খাওয়ার পর ছেলেমেয়েরা সবাই একে একে ঘুমিয়ে পড়ল। খোকাকে পাশে নিয়ে শুয়ে বিষ্ণুবাবুর স্ত্রীও একসময় পড়লেন ঘুমিয়ে। দরজার কাছে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে মাখন ঝিমোতে লাগল। বিষ্ণুবাবু ঢুলতে ঢুলতে মাঝে মাঝে চমকে সজাগ হয়ে বলতে লাগলেন, ঘুমিও না, ঘুমিও না, সবাই মিলে ঘুমিও না। তুই যে বড় ঘুমোচ্ছিস মাখন?

মাখনও চমকে সাড়া দিতে লাগল, ‘আজ্ঞে না বাবু, ঘুমোইনি।’

মাখনকে অবশ্য বেশিক্ষণ সাড়া দিতে হলো না, খানিক পরে বিষ্ণুবাবু নিজেই ঘুমিয়ে পড়লেন। মাখনও ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু নিজের ভাগের খাবার খেয়ে বেচারির পেট ভরেনি। চুপিচুপি কিছু খাবার সংগ্রহের আশায় সে জেগে রইল। খাবার জোগাড় করে পেটটি ভরিয়ে মাখন আবার যেই ঘুমের আয়োজন করতে যাবে, বছর তিনেকের একটি ছেলে জেগে কাঁদতে আরম্ভ করায় বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী তাকে মাখনের কোলে ফেলে দিয়ে আবার শুয়ে চোখ বুজলেন। মাখনের আর ঘুম এল না এবং জোর বৃষ্টির মধ্যেই সে শুনতে পেল গাড়ি আসার প্রথম ঘণ্টা।

একটু চিন্তা করে, বাবুর হাতঘড়িটা দেখে, মাখন বাবুকে ডেকে তুলল। তারপরই বেধে গেল হইচই কাণ্ড। বিষ্ণুবাবু এক এক হ্যাঁচকা টানে এক একটি ছেলেমেয়ের ঘুম ভাঙিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে লাগলেন। কেবলই বলতে লাগলেন, ‘ডাক ডাক কুলি ব্যাটাদের ডাক। বাঁধ বাঁধ বিছানাপত্র বাঁধ। ফসকাল রে, এ গাড়িটাও ফসকাল!’

গাড়ি অপর দিকের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবে—ওভারব্রিজ পার হয়ে যাওয়া চাই। এই বৃষ্টির মধ্যে এতগুলো ছেলেমেয়ে মোটরবহর নিয়ে এটা সোজা কাজ নয়। গাড়ির প্রথম ঘণ্টা যদিও কেবল পড়েছে—এদিকে ঘড়িতে পার হয়ে গেছে গাড়ির সময়। বিষ্ণুবাবু একেবারে খেপে যাওয়ার উপক্রম করলেন।

বিছানা গুটিয়ে সবাইকে নিয়ে কোনো রকমে ভিজতে ভিজতে ওদিকে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো গেল। এখনো ট্রেনের দেখা নেই। প্রকাণ্ড একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিষ্ণুবাবু বললেন, ‘দাও, খোকাকে আমার কাছে দাও।’

‘খোকা তো তোমার কাছেই?’

‘কী সর্বনাশ! খোকা কোথায় গেল?’

মাখন তুই এখানে দাঁড়া ওদের নিয়ে। বলে ব্যাকুলভাবে বিষ্ণুবাবু সোজা লাইন ডিঙিয়ে ওয়েটিং রুমের দিকে ছুটলেন, তাঁর স্ত্রীও প্ল্যাটফর্ম থেকে লাফ দিলেন লাইনে। ওয়েটিং রুম ফাঁকা। বিষ্ণুবাবু ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লেন, কাতরভাবে বললেন, ‘খোকা কোথায় গেল?’

‘কুলিরা অতটুকু ছেলে চুরি করবে কেন? তা ছাড়া কুলি দুটো বরাবর আমাদের সঙ্গেই ছিল।’

একটু দম নিয়ে দুজনে ফিরলেন। এবার গেলেন ব্রিজের ওপর দিয়ে, দুই দিকে তাকাতে তাকাতে। যদি ফেলে গিয়ে থাকেন! কিন্তু কোথায় খোকা? খোকার চিহ্নও নেই কোথাও। ছেলেমেয়েরা কাঁদছে, মাখন তাদের আগলিয়ে আছে। বিষ্ণুবাবুর স্ত্রীও কাঁদতে আরম্ভ করলেন। ব্যাপারটা যেমন ভয়ানক, তেমনি আশ্চর্য! মাখন যখন সবাইকে ডেকে তুলল, খোকা তখন বিষ্ণুবাবুর স্ত্রীর পাশে শুয়ে আছে। তারপর কুলি ডাকা, ছেলেমেয়েদের ডেকে তোলা, বিছানা বাঁধা, এই সব হট্টগোলের মধ্যে একটা জ্যান্ত শিশু শূন্যে মিলিয়ে গেল!

বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ওগো শুনছ, খোকার কান্না শুনতে পাচ্ছি আমি। কোথায় যেন কাঁদছে খোকা।’

বিষ্ণুবাবুরও মনে হচ্ছিল, দু-একবার খোকার কান্না যেন অতি ক্ষীণভাবে দূর থেকে তাঁর কানে ভেসে এসেছে। কিন্তু ব্যাপারটা মনের ভুল বলে আমল দেননি। এবার স্ত্রীর সমর্থন পেয়ে বললেন, ‘স্টেশনের আগাগোড়া আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজব। মাখন, আমার টর্চটা গেল কোথায়?’

মাখন একটা বিছানা দেখিয়ে বলল, ‘আজ্ঞে, ওর মধ্যে।’

বিছানাটা ওয়েটিং রুমে পাতা হয়েছিল, টর্চ হাতে স্টেশনের প্রতি ইঞ্চি স্থান খুঁজে দেখবেন স্থির করে প্রকাণ্ড অভিযানে যাওয়ার আগে বড় বড় বীরদের যেমন মুখের ভাব হয়, সেই রকম মুখ করে বিষ্ণুবাবু বললেন, ‘টর্চটা বার কর।’

বিছানা খোলা হলো। টর্চটা অবশ্য পাওয়া যেত বিছানার মধ্যেই, কিন্তু খোকাকেও আধমরা অবস্থায় তার মধ্যে পাওয়াতে কেউ আর টর্চের জন্য মাথা ঘামাল না। ভাগ্য বিছানাটা তাড়াতাড়িতে আলগা করে গোটানো হয়েছিল। ভাগ্য খোকার মুখটা পড়েছিল ধারের দিকে! তবু আর কয়েক মিনিট দেরি হলে ‘খোকা কোথায় গেল’—এই প্রশ্নের জবাব বোধ হয় আর পাওয়াই যেত না।

বিষ্ণুবাবু উঠে দাঁড়িয়ে মাখনের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন—‘শয়তান! তোকে আমি ফাঁসিকাষ্ঠে লটকিয়ে ছাড়ব।’

বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী বললেন, ‘বিছানাটা গুটিয়েছিলে কিন্তু তুমি!’