গুড্ডুবুড়ার বাবা একটা তরমুজ কিনে এনেছেন। তিনি রাঙামাটি বেড়াতে গিয়েছিলেন। নাইট কোচে চড়ে রাঙামাটি থেকে সোজা ঢাকার কলাবাগান। কাছেই তাদের বাসা। সকালবেলা বাস এসে কলাবাগানে থামল। গুড্ডুবুড়ার বাবা আলতাফ হোসেন সাহেব কাঁধে একটা ট্রাভেল ব্যাগ আর ডান হাতে একটা গোল তরমুজ নিয়ে বাড়ির দরজায় দাঁড়ালেন। দোরঘণ্টি বাজালেন।
গুড্ডুবুড়ার মা নুরুন নাহার স্বামীর আগমনের জন্য পথ চেয়েই ছিলেন। তিনি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললেন। বললেন, তোমার হাতে এটা কী?
তরমুজ। রাঙামাটির তরমুজ। আলতাফ হোসেন তরমুজটা খাবার টেবিলের ওপরে রেখে বললেন।
নুরুন নাহার বললেন, একেবারে গোল একটা তরমুজ। তরমুজ তো আগে হতো চালকুমড়ার মতো, পুরোপুরি গোল না।
আলতাফ হোসেন বললেন, রাঙামাটির তরমুজ এই রকমেরই হয়। ফুটবলের মতো। গুড্ডুবুড়া কই? গুড্ডিবুড়ি?
ওরা তো স্কুলে গেছে।
আলতাফ হোসেন সাহেব গোসল সেরে নাশতা করে অফিসে চলে গেলেন। মা নুরুন নাহার হাতের কাজ সেরে ছুটলেন ছেলেমেয়ে দুটোকে স্কুল থেকে আনতে।
গুড্ডুবুড়া পড়ে কেজি টুতে, গুড্ডিবুড়ি পড়ে নার্সারিতে। এদের দুজনেরই দুটো ভালো নাম আছে, গুড্ডুবুড়ার নাম ওয়াসিফ হোসেন, গুড্ডিবুড়ির নাম ওয়ারা হোসেন। কিন্তু বাসায় ওদের আদর করে গুড্ডুবুড়া আর গুড্ডিবুড়ি নামেই ডাকা হয়। গুড্ডুবুড়া দেখতে ছিল গোলগাল, আর সে গুটিগুটি পায়ে সারাটা বাড়ি হেঁটে বেড়াত, খাটের নিচে ঢুকে এটা-ওটা বের করে আনত, রান্নাঘরে ঢুকে নিয়ে আসত তেলের শিশি। সে কারণে তার নাম হয়ে যায় গুড্ডুবুড়া। এখন অবশ্য সে রোগা-শুকনো একটা পাটকাঠি। আর দুই বছরের বড় ভাইয়ের নাম অনুসরণ করে বোনটিকেও সবাই ডাকতে লাগল গুড্ডিবুড়ি বলে।
রিকশায় করে ওরা তিনজন ফিরছে। রিকশার হুড তোলা। মা গুড্ডিবুড়িকে কোলে নিয়েছেন। গুড্ডুবুড়া মায়ের পাশে রিকশার সিটে বসে আছে। মা বাঁ হাত দিয়ে মেয়েকে ধরে রেখেছেন। ডান হাত প্রসারিত করে হুড ধরে আছেন ছেলের বুক বরাবর, যেন ছেলে পড়ে না যায়।
গুড্ডিবুড়ি বলল, মা, বাবা এসেছেন?
মা বললেন, হ্যাঁ।
গুড্ডুবুড়া বলল, বাবা কোথা থেকে এসেছেন?
মা বললেন, কেন, তুমি জানো না? বাবা রাঙামাটি গিয়েছিলেন।
গুড্ডুবুড়া বলল, ও হ্যাঁ। তাই তো। রাঙামাটি থেকে কি তিনি লাল রঙের মাটি এনেছেন?
মা বললেন, না তো। কেন লাল রঙের মাটি কেন আনবেন?
গুড্ডুবুড়া বলল, রাঙা মাটি লাল মাটি। জানো না?
মা বিস্মিত। তাঁর ছেলের এত বুদ্ধি। রাঙামাটি মানে যে লাল মাটি, সে জানে!
গুড্ডিবুড়ি বলল, রাঙামাটি মানে লাল মাটি হলেই কি আর তার মাটি লাল হবে? আমাদের বাসা তো কলাবাগানে। সেখানে কি কোনো কলার গাছ আছে?
গুড্ডুবুড়া বলল, তা অবশ্য নাই।
গুড্ডিবুড়ি বলল, আমাদের খালার বাসা তো লালমাটিয়ায়। সেখানে কি তুমি কখনো লাল রঙের মাটি দেখেছ?
গুড্ডুবুড়া বলল, না তো, তা দেখিনি।
মা নুরুন নাহারের মুগ্ধতার পাল্লা আরও ভারী হলো। ছেলেটার চেয়ে দেখা যাচ্ছে মেয়েটার বুদ্ধিই বেশি। লালমাটিয়া কিংবা কলাবাগান—এসব জায়গার নাম নিয়ে তো তিনি কখনো ভাবেননি।
রিকশা এসে তাদের বাড়ির সামনে থামল। তিনতলা বাসা। তারা থাকে দোতলায়। তিনতলায় থাকেন বাড়িওয়ালা। নিচতলায় আরেকটা ভাড়াটে পরিবার থাকে। ছোট বাসা। তাদের বাবা আলতাফ হোসেন ব্যাংক অফিসার। বেতন যা পান, তার অনেকটাই চলে যায় বাসাভাড়ায়। কলাবাগান এলাকায় বাসাভাড়া বড্ড বেশি।
মা রিকশাভাড়া মিটিয়ে দিলেন। ওরা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠল। মা চাবি দিয়ে তালা খুললেন।
দুপুরবেলা। মা, গুড্ডুবুড়া, গুড্ডিবুড়ি—তিনজনেই দুপুরের খাওয়া সেরে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। এটাই নিয়ম। স্কুলে যেতে হয় সকাল সাতটায়। ঘুম থেকে উঠতে হয় আরও আগে। স্কুল থেকে এসে গোসল সেরে খাওয়া। তারপর ঘুম।
গুড্ডিবুড়ি কথা না বলে থাকতে পারে না। সে বলল, ভাইয়া, কাঁঠালবাগানে কি কাঁঠালের বাগান আছে? আমার বন্ধু রিভুর বাসা কাঁঠালবাগানে।
মা বললেন, এই বুড়ি, পকপক করিস না। ঘুমা। যে আগে ঘুমাবে তার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার।
গুড্ডুবুড়া বলল, আমি আগে ঘুমিয়ে পড়ব। পুরস্কারটা আমার। কী পুরস্কার দেবে?
গুড্ডিবুড়ি বলল, কে আগে ঘুমাল বুঝবে কেমন করে? সবার আগে তো মা তুমিই ঘুমিয়ে পড়বে।
মা বললেন, যে এখন থেকে একটা কথাও বলবে না, সে পাবে পুরস্কার।
গুড্ডিবুড়ি চুপ করে থাকল।
গুড্ডুবুড়া বলল, অবশ্যই আমি ফার্স্ট হব।
গুড্ডিবুড়ির মুখে কথা এসেই যাচ্ছিল। সে বলতে চেয়েছিল, মা, ভাইয়া কিন্তু কথা বলেই ফেলল। কিন্তু কথাটা সে অতিকষ্টে চেপে গেল। কথা বললেই তো প্রতিযোগিতায় হার।
একটু পরই মায়ের নাক ডাকার শব্দ আসতে লাগল। গুড্ডিবুড়ি চুপচাপ পড়ে আছে। একসময় সেও পড়ল ঘুমিয়ে।
গুড্ডুবুড়া ছটফট করছে। তার ঘুম আসছে না। সে খানিকক্ষণ বিছানার মধ্যে এপাশ-ওপাশ করল। তারপর উঠে পড়ল। পাশেই গুড্ডিবুড়ি আর মা। তাদের ডিঙিয়ে নামা যাবে না। এই পাশে দেয়াল। মাথার কাছে খাটের রেলিং। সে রেলিং টপকে বিড়ালের মতো মেঝেতে নেমে পড়ল।
ডাইনিংরুমের দিকে গেল। সেখানে সে দেখল, মেঝেতে একটা খবরের কাগজের ওপরে একটা ফুটবল রাখা। সবুজ রঙের ফুটবল।
ফুটবল দেখলে যেকোনো ছেলেই পা নিশপিশ করে। গুড্ডুবুড়া আর বিন্দুমাত্র না ভেবে ফুটবলটায় মারল প্রচণ্ড এক লাথি। অমনি প্রচণ্ড ব্যথায় সে আর্তনাদ করে উঠল, ওরে বাবা রে, ওরে মা রে।
পা ধরে সে মাটিতে বসে পড়েছে।
চিৎকার শুনে মা এলেন ছুটে। গুড্ডিবুড়িও দৌড়ে এল।
কী হয়েছে?
গুড্ডুবুড়া বলল, আমি ওই ফুটবলটাতে লাথি মারতেই...ও বাবা রে, ও মা রে...
আরে পাগল ছেলে। ওটা তো ফুটবল নয়। ওটা তরমুজ।
উরে বাবা রে।
ছেলের ডান পা ফুলে উঠছে। মা দৌড়ে গেলেন ফ্রিজে। বরফ বের করলেন। একটা কাপড়ে বরফ ধরে এনে চেপে ধরলেন গুড্ডুবুড়ার পায়ে।
ঠান্ডা লাগতেই ছেলে আবার চেঁচিয়ে উঠল, উরে...মরে গেলাম রে...
গুড্ডুবুড়ার এই ধরনের বোকামো নতুন কিছু নয়। গুড্ডুবুড়া ভীষণ বোকা। তার মা-বাবা সেটা জানে। এমনকি তার বোন গুড্ডিবুড়িও জানে।
গুড্ডুবুড়ার বাবা ফিরে এলেন সন্ধ্যায়। এসে দেখলেন, ছেলের পা ফোলা। সে মাটিতে পা ফেলতে পারছে না। কারণ, ছেলে ফুটবল ভেবে তরমুজে লাথি মেরেছে। তিনি ছেলেকে ভীষণ আদর করেন। কখনো বকাঝকা করেন না। তিনি ছেলের পাশে শুয়ে তার মাথায় বিলি কাটতে লাগলেন। তারপর বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি। আমারই ভুল। তোমার জন্য আমার একটা ফুটবলই কিনে আনা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে আমি তোমার জন্য আনতে গেছি তরমুজ। দোষ তোমার না। দোষ আমার।
মা বললেন, আদর দিয়ে দিয়ে তুমি ছেলের মাথা খেয়ে ফেলেছ।
পরের দিনই অফিস থেকে ফেরার পথে ছেলের জন্য বাবা একটা ফুটবল কিনে আনলেন। প্লাস্টিকের ফুটবল। চামড়ার ফুটবল তো আবার ভাঙা পায়ে গুড্ডুবুড়া খেলতে পারবে না। এই ফুটবলটার রংও সবুজ। সেদিন রাস্তায় ছিল ভীষণ যানজট। কী একটা মিছিলের জন্য রাস্তা বন্ধ। অনেক ঘুরে-ফিরে বাবা যখন বাসায় ফিরলেন, তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। মা ছেলেমেয়ে দুটোকেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন।
বাবা এসেই বললেন, নাহ, ঢাকা শহরটা আর চলছে না।
ফুটবলটা তিনি রেখে দিলেন বিছানার পাশে। একটা টেবিলের ওপরে।
পরের দিন গুড্ডুবুড়া ঘুম থেকে উঠল দেরি করে। কারণ, তাকে পায়ে ব্যথার জন্য স্কুলে যেতে হয় না। মা-বাবা দুজনেই বেরিয়ে গেছেন। মা গুড্ডিবুড়িকে স্কুলে নামিয়ে খানিকটা তরিতরকারি কিনে তারপর আসবেন। আর বাবা রওনা হলেন অফিসের উদ্দেশে।
যাওয়ার আগে গুড্ডুবুড়াকে মা বলে গেলেন, ঘুম থেকে উঠবে? নাশতা করবে? আমার সঙ্গে যাবে বোনকে স্কুলে দিতে?
গুড্ডুবুড়া ঘুম-জড়ানো গলায় বলল, না, তোমরা যাও। আমি আরও ঘুমাব।
টেবিলে নাশতা আছে। খিদা লাগলে খেয়ে নিয়ো। আমি যাব আর আসব। বাইরের কেউ এলে দরজা খুলো না। আমি লকটা টিপে দরজা লাগিয়ে যাচ্ছি।
গুড্ডুবুড়া আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
একটু পরই তার ঘুম ভেঙে গেল। সে ঘুম থেকে উঠে দেখে বিছানার পাশে একটা তরমুজ।
সে চোখ রগড়ে বাথরুমে গেল।
টুথপেস্টের বদলে বাবার শেভিং ক্রিম দিয়ে দাঁত মাজল।
তারপর ডাইনিং টেবিলে গেল কী নাশতা আছে, তা দেখতে। গুড্ডুবুড়ার আবার কোনো কিছু খেতে ভালো লাগে না। সে দেখল, টেবিলে তার জন্য পাউরুটিতে চকলেট লাগিয়ে রাখা হয়েছে। সেসব না খেয়ে তার মনে হলো, বিছানার ধারে একটা তরমুজ আছে, সেটাকে একটু কাটা যাক।
আগের দিনই মা রাঙামাটি থেকে আনা তরমুজটা কেটে দিয়েছিলেন সবাইকে। টুকরো টুকরো করে। গুড্ডুবুড়া অবশ্য খায়নি। সে তো আসলে কিছুই খায় না। কিছু খায় না বলে তার শরীরটাকে মনে হয় কাঠি দিয়ে তৈরি। তালপাতার সেপাইয়ের মতো তার শুকনো শরীরে জামাকাপড় ঝুলে থাকে।
কালকে তরমুজ খায়নি সে। তাতে কী! তাই বলে আজকে বাবা তার জন্য যে তরমুজটা এনেছেন, সেটা না কাটলে কি আর চলে?
কাজেই গুড্ডুবুড়া লেগে পড়ল সেই তরমুজটাকে কাটতে।
একটা চাকু সে নিয়ে এল রান্নাঘর থেকে। ডাইনিং টেবিলে বসে প্লাস্টিকের বলটাকে কাটার চেষ্টা করল। বল কিছুতেই কাটে না; বরং তার হাত কেটে গেল খানিকটা।
রক্ত বেরোল। খুব সাংঘাতিক কিছু নয়। সামান্যই কেটে গেছে। কিন্তু রক্ত দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। তবু সে হাল ছাড়ার পাত্র নয়।
শেষে সে চাকুর মাথা দিয়ে বলটাকে ফুটো করতে সক্ষম হলো। বলের পাম্প বেরিয়ে গিয়ে সেটা একটা নরমসরম দলায় পরিণত হলে গুড্ডুবুড়া বিস্মিত হয়ে পড়ল। ব্যাপার কী? এটা কি তাহলে তরমুজ নয়?
এই সময় দোরঘণ্টি বেজে উঠল। সে দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। ফুটো দিয়ে দেখল মা এসেছেন। সে দরজা খুলে দিল।
মা ঢুকলেন। তাঁর হাতে তরিতরকারিভরা থলে।
তিনি সেটা ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখতে গিয়ে দেখলেন, সবুজ বলটা বাতাসবিহীন পড়ে আছে। পাশে একটা চাকু। তিনি আর্তনাদ করে উঠলেন। এই তুমি ছুরিতে হাত দিয়েছ কেন? এ মা, এ কী? রক্ত নাকি? হাত কেটে ফেলেছ?
গুড্ডুবুড়া বলল, আমি তরমুজটা কাটতে গেছি। কাটে না।
মা বললেন, এটা তরমুজ না। এটা একটা ফুটবল। তুমি তরমুজে লাথি মেরেছিলে বলে তোমার বাবা তোমার জন্য ফুটবল এনেছেন।
গুড্ডুবুড়ার গল্পগুলো এই রকমই। বোকামির গল্প।
গুড্ডুবুড়া বাবার মোবাইল ফোনকে সাবান দিয়ে গোসল করিয়েছিল একবার।
কোলবালিশকেও গোসল করিয়েছিল। তার কোলবালিশটা নিয়ে গিয়ে সে বালতিভরা পানিতে ডুবিয়ে রেখেছিল।
তার মা একবার কিনে আনলেন পেনসিল আকারের চকলেট বিস্কুট। বাইরের দিকটা বিস্কুটের, ভেতরে চকলেট ভরা। সেটাকে সে ভাবল রং-পেনসিল। তার ছবি আঁকার খাতায় সে সেই চকলেট দিয়ে খয়েরি রং করে রাখল। তারপর লাল রঙের পিঁপড়া কোত্থেকে এসে ভরে ফেলল খাতাটা। সেই খাতায় হাত দিয়ে পিঁপড়ার কামড় খেয়ে সে জুড়ে দিল ভীষণ কান্না। তখন বাবা তাকে কিনে এনে দিলেন রং-পেনসিল। প্যাস্টেল কালার। সে সেটাকে চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলল ওপরের কাগজটা সরিয়ে। তারপর তার সারা মুখে রং। জিবে রং। এমনকি তার পেশাবে পর্যন্ত রং।
দুপুরবেলা মাকে বেরোতে হবে গুড্ডিবুড়িকে স্কুল থেকে আনার জন্য। মা এবার আর গুড্ডুবুড়াকে একা বাসায় রেখে যেতে সাহস পেলেন না। ওকেও সঙ্গে করে নিয়ে চললেন স্কুলের দিকে।
গুড্ডিবুড়ি স্কুল থেকে বেরিয়ে বলল, ভাইয়া, তোমার হাতে ব্যান্ডেজ কেন?
গুড্ডুবুড়া বলল, তরমুজ কাটতে গিয়েছিলাম।
গুড্ডিবুড়ি বলল, তরমুজ? তুমি কেন তরমুজ কাটতে গেছ? তুমি তো তরমুজ খাও না!
গুড্ডুবুড়া বলল, খেতে না পারি, কিন্তু কাটতে অসুবিধা কী? আমি ভেবেছিলাম তোমার জন্য তরমুজ কেটে ফ্রিজে রেখে দেব। তুমি স্কুল থেকে ফিরে খাবে।
গুড্ডিবুড়ি বলল, মা, বাবা কি আরেকটা তরমুজ কিনে এনেছে?
মা বললেন, না। আনেনি।
গুড্ডিবুড়ি বলল, ভাইয়া, তুমি ফুটবলটাকে তরমুজ ভেবেছ নাকি?
মা বললেন, ঠিক তা-ই।
গুড্ডিবুড়ি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ভাইয়া, তোমার মাথায় আল্লাহ কি একটুও বুদ্ধি দেন নাই? একটা পাতলা ফুটবলকে কেউ তরমুজ ভাবতে পারে?
মা বললেন, আর কেউ পারে না। তোমার ভাইয়া পারে।
তারা রিকশায় চড়ে ফিরছেন। বসন্তকাল। সুন্দর বাতাস বইছে। রিকশা ধীরে তাদের বাসার সামনে এসে থামল।
গুড্ডুবুড়ার বোকামোর আরও কত গল্পই না আছে।
গুড্ডুবুড়া দই ভেবে চুন খেয়েছিল। সেবার তার নানি এসেছিলেন তাদের বাড়িতে। তাঁর আবার অভ্যাস পান খাওয়া। পান খাওয়ার জন্য চুন লাগে। একটা ছোট্ট কৌটায় চুন রাখা হয়েছে। সেটা আবার রাখা হয়েছে রেফ্রিজারেটরের মধ্যে।
গুড্ডুবুড়া এমনিতে কোনো খাবার খায় না। কিন্তু কী মনে করে সে রেফ্রিজারেটরের দরজা খুলে ফেলল। দেখতে পেল একটা ছোট্ট বাটিতে দই। সে চামচ দিয়ে তুলে চুন মুখে দিল। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র জ্বলুনি শুরু হলো তার মুখে। এর পর থেকে সে আর কোনো দিনও দই মুখে দেয়নি। এমনকি কাপের আইসক্রিমও সে খায় না।
গুড্ডুবুড়ার বোকামো নিয়ে স্কুলও খুব চিন্তিত। স্কুল থেকে তাকে বের করে দেওয়ার কথা অনেকবার ভাবা হয়েছিল। কিন্তু কম বুদ্ধির ছেলেমেয়েরও স্কুলে পড়ার অধিকার আছে, একজন শিক্ষিকা এই কথা খুব জোরের সঙ্গে বলায় তাকে আর বের করে দেওয়া হয়নি।
ওই শিক্ষিকা আবার টেলিভিশনে টক শোর উপস্থাপিকা। তিনি যা বলেন, খুব জোর দিয়ে বলেন। তাঁর কথা, একটা স্কুলে সব ধরনের ছেলেমেয়েরা পড়বে। কেউ স্মার্ট, কেউ আনস্মার্ট, কেউ অনেক কথা বলে, কেউ কথাই বলতে চায় না, কেউ-বা কথা বলতেই পারে না, কারও বুদ্ধি খুব বেশি, কারও বুদ্ধি একেবারেই কম—কোনো বাচ্চাকেই বাদ দেওয়া চলবে না।