কী করবে বসে বসে রাফিন? রঙের ব্রাশটায় লাল রং লাগিয়ে দেয়ালে বড় বড় করে লিখল, ‘আমি রাফিন, আমাকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে!’ আরেকটা দেয়ালে লিখল, তিনটা ছেলে আমাকে এখানে ধরে এনেছে...এরা আসলে কারা?’ আরেকটা দেয়ালে আরও কিছু লিখতে যাবে, তখনই হঠাৎ করে চিন্তাটা মাথায় এল। অসাধারণ আইডিয়া। নিজের পিঠে নিজে চাপড়ে দিয়ে কাজে নেমে গেল। রং–ব্রাশ রেখে পুটিংয়ের কৌটাটা খুলল, তারপর পুটিং বের করে প্রথমে দরজার নিচের ফাঁকটা বন্ধ করল পুটিং দিয়ে। তারপর দরজার ওপরের দিকে দুই পাশের ফাঁক দুটি বন্ধ করতে লাগল। লকের ফুটোটাও বন্ধ করল। হাই কমোডের ঢাকনার চারদিকে পুডিং লাগিয়ে সেটাও বন্ধ করল। মোটকথা, যেদিক দিয়ে পানি বের হতে পারে, সব এক এক করে বন্ধ করল। পুটিংয়ের কৌটার অর্ধেক পুটিং মোটামুটি শেষ। তারপর পানির কলটা ছেড়ে দিল। ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকল...পড়তেই থাকল। হাতে ঘড়ি নেই, তারপরও রাফিনের মনে হলো, এখন নিশ্চয়ই সন্ধ্যা পার হয়ে রাত। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে টয়লেটের অর্ধেক পানিতে ভরে গেল। তার মানে, রাফিনের কোমর পর্যন্ত পানি। কাজটায় রিস্ক আছে। বাবা বলত, ‘মনে রাখবে, পরিকল্পনায় ভুল না থাকলে কোনো কাজেই রিস্ক নেই।’ আরও ঘণ্টাখানেকের (সম্ভবত) মধ্যে রাফিনের গলাপানি হয়ে গেল। মানুষের শরীরের ৯৫ শতাংশ পানি। আর এখন বাইরেও পানি। মানুষ ১০০ ফুট পর্যন্ত পানির চাপ নিতে পারে, আর এটা তো মাত্র ৮ ফুট উচ্চতার একটা ছোট্ট টয়লেট। সে এখন হাই কমোডের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তার হিসাবে পানির প্রচণ্ড চাপে দরজাটা ভেঙে পড়ার কথা। এটা এমন কোনো শক্তপোক্ত দরজা নয়।
তা–ই হলো, আচমকা মচমচ একটা শব্দ হলো। তারপর হুড়মুড় করে দরজাটা ভেঙে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে রাফিনও ছিটকে বের হলো পানির তোড়ে। সম্ভবত দোতলা বাড়ি। কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছে, এমন একটা বাড়ি। একটা লোক টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে উঠে আসছিল (কে জানে, হয়তো রাফিনের জন্যই খাবার আনছিল)। পানি হুড়মুড় করে ওই লোকটার ওপর আছড়ে পড়ল রাফিনসহ। খুব দ্রুতই রাফিন নিজেকে আবিষ্কার করল একটা ভাঙা খোলা দরজার সামনে। সে আর দেরি করল না, একলাফে বাইরে চলে এল। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার মানে, এখন অনেক রাত। আশপাশে কেউ নেই। ভেজা কাপড় নিয়ে ছুট দিল রাফিন। জায়গাটা মোটেই পরিচিত নয়। সে আসলে ঠিক কোথায়? চিনে বাসায় যেতে পারবে তো?
রাত তিনটার সময় ভেজা কাপড়ে বাসায় এসে হাজির হলো রাফিন। দেখে ছোট চাচা ড্রয়িংরুমে বসে একের পর এক ফোন করে চলেছেন।
‘তুই? কোথায় ছিলি?’
‘দাঁড়াও, আগে শুকনা কাপড় পরে আসি। তারপর কিছু খাব। খুব খিদে পেয়েছে। ওরা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল...’
গোসল করে শুকনা কাপড় পরে এসে দেখে, ছোট চাচা টেবিলে তার জন্য নুডলস, গরম–গরম চিকেন নাগেট নিয়ে বসে আছেন। তখনো তাঁর হাতে ফোন, এখানে–ওখানে ফোন করছেন, রিসিভ করছেন।
খেতে খেতে বলা শুরু করল রাফিন। প্রথম দিন স্কুলের বুলিং থেকে শুরু করে বাসায় দুজন অপরিচিত লোকের বসে থাকা। পরে কাগজের টুকরা দিয়ে তাকে হিপনোটাইজ করে নিয়ে গিয়ে টয়লেটে আটকে রাখা। সব খুলে বলল এক এক করে। ছোট চাচা গম্ভীর হয়ে সব শুনলেন। তাঁর সুন্দর হাসিটা এখন অদৃশ্য।
‘যে বাসাটায় তোকে আটকে রেখেছিল, সেটা চিনবি?’
‘মনে হয় চিনব। আমি অবশ্য একটা কাজ করেছি।’
‘কী কাজ?’
‘ওই টয়লেটের ভেতর রং দিয়ে লিখে রেখে এসেছি।’
‘কী লিখেছিস?’
‘লিখেছি, আমি রাফিন, আমাকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে। আরেকটা দেয়ালে লিখেছি, তিনটা ছেলে আমাকে এখানে ধরে এনেছে...এই সব।’
‘গুড। কিন্তু জায়গাটা কোথায়?’
‘একটা ব্যাপার মনে পড়েছে।’
‘কী?’
‘আমাকে যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন অস্পষ্টভাবে কানে আসছিল, “মানিব্যাগ ১০০ টাকা, মানিব্যাগ ১০০ টাকা।”’
‘বুঝতে পেরেছি, ওটা ব্রিজের গলির মোড়টা। ওখানে একটা লোক সব সময় চেঁচিয়ে ওই কথা বলে। তার মানে, ওই গলিতে গেলে বাসাটা পাওয়া যাবে। তুই চিনতে পারবি তো?’
‘মনে হয় পারব।’
‘গুড। যা, একটা ঘুম দে, কাল স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই।’
লাইব্রেরিতে আগুন দেওয়ার ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক পর একদিন টিফিন হাতে নিয়ে ক্লাসে বসে আছে রাফিন। এই সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন রাশনা এগিয়ে এল।
তবে রাফিন স্কুলে গেল। যথারীতি ওই চারটা ছেলের দলটার তিনজন শেষ বেঞ্চ বসেছে, একজন আসেনি। রাফিনকে দেখেই ওরা তিনজন যেন চোখে চোখে কথা বলল। রাফিন কবীরের পাশে বসতে যাবে। কবীর ফিসফিস করল, ‘আমার পাশে বসিস না।’ রাফিন আস্তে করে সরে এসে আরেকটা জায়গায় বসল। কবীর বসতে নিষেধ করেছে, তার মানে কোনো কারণ আছে। ‘কারণ’...শব্দটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছাড়া কিছু ঘটে না। বাবা বলতেন, ‘তুই যদি কোনো ঘটনার কারণটা ধরতে পারিস, তাহলে তুই যেকোনো বিষয় সমাধান করতে পারবি।’ তাহলে ওই ছেলেগুলো তাকে অপছন্দ কেন করছে? কারণটা কী? সে নতুন ভর্তি হয়েছে, এটাই কারণ? না অন্য কিছু আছে। সেটা ঠিক কী?
আশ্চর্যের ব্যাপার, ফিফথ পিরিয়ডে স্যার চেঁচালেন।
‘রোল ৩৪ রাফিন রিয়াজ?’
‘ইয়েস স্যার।’
‘স্ট্যান্ডআপ অন দ্য বেঞ্চ।’
‘কেন স্যার?’
‘কারণ, তুই ক্লাসে বসে টিফিন খেয়ে আবারও ক্লাস নোংরা করেছিস।’
‘কিন্তু স্যার...’
‘নো আর্গুমেন্ট, স্ট্যান্ডআপ অন দ্য বেঞ্চ।’
রাফিন আশ্চর্য হলো। আজ টিফিন ছিল কলা আর সেদ্ধ ডিম এবং এ দুটিই সে ক্লাসের বাইরে গিয়ে খেয়েছে। যদি প্যাটিস হতো, তাহলে প্যাটিসের গুঁড়া পড়ে ক্লাস নোংরা হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। রাশনা কেন এটা করেছে? মেয়েটা চাচ্ছেটা কী? আজ ধরতে হবে ওকে। বেঞ্চের ওপর দাঁড়ালে একটা সুবিধা আছে। স্কুলের পেছনটা দেখা যায়। বিশেষ করে লাইব্রেরিটা পরিষ্কার দেখা যায়। লাইব্রেরিতে নাকি পাঁচ হাজার নতুন বই ঢুকেছে। ওখানে ঢুঁ মারতে হবে...ওর ভাবনাটা শেষ হয়নি। হঠাৎ দেখল, লাইব্রেরির পাশের দেয়াল টপকে দুজন নামল। একজনের হাতে একটা বড় সাদা রঙের জেরিকেন। ওরা এদিক–ওদিক তাকাল। একজনকে চিনে ফেলল রাফিন, ওদের ক্লাসের রমিজ। চারজনের দলনেতা, সে স্কুলড্রেস পরা নেই দেখে চেনা যাচ্ছিল না, তা ছাড়া মুখে মাস্ক পরা। ওরা এখানে কী করতে যাচ্ছে? সঙ্গের লোকটা উঁচু হয়ে লাইব্রেরির একটা জানালা খুলছে...কী হতে যাচ্ছে? জেরিকেনের মুখ খুলে যখন জানালা দিয়ে কিছু ঢালতে শুরু করল, তখন চট করে বুঝে গেল রাফিন কী হতে যাচ্ছে লাইব্রেরিতে...নিশ্চয়ই কেরোসিন বা পেট্রল ঢালছে। সে আর দেরি করল না, সবাইকে অবাক করে দিয়ে লাফ দিয়ে নামল বেঞ্চ থেকে! চিত্কার করে বলল, ‘কবীর জলদি আয়...’ কবীরও হকচকিয়ে গেল। কিছু না বুঝে পিছু নিল রাফিনের। স্যার অবশ্য হুংকার দিলেন একটা, ‘স্টপ স্টপ...সব কটাকে টিসি দেব...’, ততক্ষণে ওরা দুজন সিঁড়ি দিয়ে হুড়মুড় করে নামছে।
‘কী হয়েছে রে? কোথায় যাচ্ছি?’ ছুটতে ছুটতে কবীর বলল।
‘রমিজের দল লাইব্রেরিতে আগুন দিচ্ছে...’
‘কী বলিস?’
‘হ্যাঁ, জলদি চল...’
ওরা যখন পৌঁছাল জায়গাটায়, তখন জেরিকেনের পুরো পেট্রল লাইব্রেরির জানালা দিয়ে ঢেলে একটা ত্যানায় আগুন ধরিয়ে সেটা লাইব্রেরির ভেতরে ফেলতে যাচ্ছিল রমিজরা। তখন আচমকা ওরা দুজন একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল লোকটার ওপর।
তারপর তো হইহই কাণ্ড রইরই ব্যাপার। সারা স্কুলে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল ঘটনাটা। ক্লাস নাইনের রমিজ এক লোক নিয়ে স্কুলের লাইব্রেরিতে আগুন দিতে এসেছিল। রমিজের বাবা এলাকার প্রভাবশালী নেতা; তিনি খবর পেয়ে ছুটে এলেন, পুলিশ এল...রমিজ মাথা নিচু করে রইল। দারোয়ান আর দপ্তরির যুগপৎ ধোলাই খেয়ে সঙ্গের লোকটা ফড়ফড় করে সব বলে দিল...
...পুরো ঘটনার নেপথ্যে রমিজের বাবা। তিনি সব সময় স্কুলের লাইব্রেরিতে বই সাপ্লাই দেন, তবে আজেবাজে বই সাপ্লাইয়ে ঢুকিয়ে দেন বলে এবার তাঁকে এই বইয়ের টেন্ডারে ডাকা হয়নি। সম্ভবত সে রাগে তিনি এই কাজ করেছেন। তাঁকে ভিড়ের মধ্যে একঝলক দেখা গিয়েছিল, হঠাৎ করে তিনি আবার অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
কথায় বলে, কেঁচো খুঁড়তে সাপ। কিন্তু এই ঘটনায় সাধারণ সাপ নয়, আফ্রিকার একটা আস্ত অ্যানাকোন্ডা বেরোতে শুরু করল যেন। মাঠে নামলেন রাফিনের ছোট চাচা। একে একে সব ঘটনার জট খুলতে শুরু করলেন। যে বাসাটায় রাফিনকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই আন্ডার কনস্ট্রাকশনের বাসাটা রমিজদের, রাফিনকে ধরে আনাও রমিজের বাবার নির্দেশেই হয়েছে। হয়তো ছেলের অপমান সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। এলাকার আরও অনেক ঘটনা আস্তে আস্তে ফাঁস হতে লাগল। যারা আগে মুখ খুলতে ভয় পেত, তারা মুখ খুলতে শুরু করল একে একে।
পুলিশ রমিজ আর তার সঙ্গের লোকটাকে ধরে নিয়ে গেল থানায়। মাঝখান দিয়ে হিরো হয়ে গেল রাফিন আর কবীর। ওরা ওই সময় ক্লাস থেকে ছুটে না গেলে লাইব্রেরিটা পুড়ে ছারখার হয়ে যেত। ভাগ্য ভালো, ওই সময় লাইব্রেরি বন্ধ থাকে। সেটা রমিজও জানে বলেই ওই সময়ই সম্ভবত বেছে নিয়েছিল। তবে গাধা দুটো রাতের বেলা না এসে দিনদুপুরে কেন এল আগুন দিতে, এ নিয়ে গবেষণা চলতে লাগল সবার মধ্যে। অবশ্য সন্ধ্যার দিকে রমিজকে ছেড়ে দেওয়া হলো। জুভেনাইল ল তাকে বাঁচিয়ে দিল।
গল্পটা এখানে শেষ হলেই বোধ হয় ভালো হতো। আমাদের জীবনে ছোট–বড় কত ঘটনা ঘটে, তারপর সেটার একসময় সমাধানও হয়। আবার একটা ঘটনা ঘটে। আবার সমাধান হয়...এভাবেই চলতে থাকে আমাদের জীবন। তবে সব গল্পেই একটা টুইস্ট কিন্তু থাকে। তাহলে এই গল্পের টুইস্টটা কী? নাকি কোনো টুইস্ট নেই? আছে, এই গল্পেও একটা টুইস্ট আছে...
লাইব্রেরিতে আগুন দেওয়ার ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক পর একদিন টিফিন হাতে নিয়ে ক্লাসে বসে আছে রাফিন। এই সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন রাশনা এগিয়ে এল।
‘তুমি চাইলে ক্লাসে বসেই খেতে পারো টিফিন।’
‘কেন? হঠাৎ নিয়ম বদলে গেল নাকি?’
‘না, নিয়ম বদলায়নি।’
‘তাহলে?’
রাশনা কিছু বলল না। সামনের বেঞ্চটায় বসল। রাফিন অপেক্ষা করল। তারপর নিজেই প্রশ্ন করল,
‘আচ্ছা, তুমি আমাকে আগে বেশ কয়েকবার খামাখা খামাখা শাস্তি খাইয়েছ স্যারকে দিয়ে, কেন জানতে পারি?’
‘উমমম...’ রাশনা কিছু বলতে গিয়েও বলল না।
‘কী হলো?’
‘বলতে পারি, হয়তো বলার সময় হয়েছে। কিন্তু এখানে বলা যাবে না।’
‘তাহলে কোথায় বলা যাবে?’
‘লাইব্রেরিতে চলো।’
এই সময় লাইব্রেরি একটু ফাঁকাই থাকে। ওরা দুজন গিয়ে বসল লাইব্রেরির কোনায়। এখানে বসে টিফিন খেতে বাধা নেই। রাফিন লাড্ডুতে কামড় দিয়ে বলল,
‘এবার বলো।’
‘আচ্ছা, তুমি শূন্যে ভাসার ম্যাজিকটা জানো?’
‘মা-মানে? রাফিনের হাত থেকে আধখাওয়া লাড্ডুটা পড়ে গেল।
‘তুমি কী করে জানো এই ম্যাজিকের কথা?’
‘আমার মা বলেছেন।’
‘তোমার মা? তোমার মা কী করে জানেন?’
‘কারণ...কারণ...’ রাশনা ঠোঁট কামড়ায়।
‘কী হলো বলো।’
‘কারণ, আমার মা-ই যে তোমার মা...!’ বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে রাশনা। স্তব্ধ হয়ে যায় রাফিন। মনে পড়ে, তার বাবা যেদিন শূন্যে ভেসে ওঠার ম্যাজিকটা তাকে শেখায়, তখন বলেছিল, ‘এই ম্যাজিকটা তোকে শেখালাম বটে, কিন্তু এটা কখনো কাউকে দেখাতে যাবি না।’
‘কেন বাবা?’
‘এটা ম্যাজিকের ভাষায় ব্ল্যাক ম্যাজিক!’ তারপর বাবা ফিসফিস করে বলেন, ‘কারণ, এই ম্যাজিকটার জন্য তোর মা আমাকে আর তোকে ছেড়ে গেছেন।’
বেশ অনেকক্ষণ লাগল দুজনের স্বাভাবিক হতে। রাশনাই মুখ খুলল,
‘ব্যাপারটা জানার পর তোমাকে সহ্য করতে পরতাম না। মনে হতো, আমার মা আরেকজনের মা হবে কেন?’
রাফিন অবাক হয়ে শুনল রাশনার কথা। কিছু বলল না।
‘চলো, ক্লাসে যাই। ঘণ্টা পড়ে গেছে অনেকক্ষণ।’
‘চলো।’
ফিফথ পিরিয়ডের মকবুল স্যার কড়া চোখে তাকান দরজায় দাঁড়ানো দুজনের দিকে।
‘কোথায় ছিলি তোরা?’
‘স্যার লাইব্রেরিতে, একটা বই খুঁজছিলাম। ঘণ্টা পড়েছে, শুনতে পাইনি।’
‘নো আর্গুমেন্ট! স্ট্যান্ডআপ অন দ্য বেঞ্চ...বোথ!’
দুজনই যার যার বেঞ্চে উঠে দাঁড়াল। রাশনা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। রাফিনের ঘোরটা কাটছে না। রাশনাকে বলা হয়নি যে সে শূন্যে ভেসে উঠতে পারে। রাফিন বাবাকে কথা দিয়েছে, এই ম্যাজিক সে কখনো কাউকে দেখাবে না। কখনো না...
কিন্তু ফিফথ পিরিয়ডের সমাজবিজ্ঞানের মকবুল স্যার আর ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী হতভম্ব হয়ে দেখল, দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে শূন্যে ভেসে উঠেছে ৩৪ রোল নম্বরের রাফিন রিয়াজ। যেন সে একটা পাখির মতো উড়তে উঠেছে শূন্যে...
রাফিন আসলে তার মাকে একটা মেসেজ দিতে চায়। শূন্যে ভেসে ওঠার এই ভয়ংকর ম্যাজিকটা সে জানে। হোক না এটা ব্ল্যাক ম্যাজিক।
শেষ
সংশোধনী: এই উপন্যাসটির নাম কিশোর আলোর মার্চ সংখ্যায় 'উড়তে জানা ছেলেটা' লেখা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।