গুড্ডুবুড়া যেভাবে ঘর ঠান্ডা করেছিল

অলংকরণ: নাইমুর রহমান

মা বললেন, ‘গুড্ডুবুড়া, টেবিলে বসো।’

গুড্ডুবুড়া টেবিলের ওপরে উঠে বসল।

‘কী করছ? বললাম না, পড়তে বসো!’

‘‌মা, তুমি টেবিলে বসতে বলেছ। আমি টেবিলে বসেছি।’

‌‘চেয়ারে বসো। এখন পড়ো।’

‌‘আমি কি চেয়ার থেকে নিচে পড়ব?’

‘না। তুমি বই পড়বে। ক্লাসের পড়া শেষ করো। হাতের লেখা লিখেছ?’

‌‘লিখেছি।’

‌‘দেখি।’

আরও পড়ুন

গুড্ডুবুড়া হাতের তালু মেলে ধরল। সে হাতের তালুতে বলপেন দিয়ে কী সব লিখে রেখেছে।

‘এসব কী?’ মা চেঁচিয়ে উঠলেন।

‘হাতের লেখা!’ গুড্ডুবুড়া শান্ত স্বরে বলল।

‘আরে বুদ্ধু। হাতের লেখা মানে হাত দিয়ে লেখা। খাতায় হাত দিয়ে লেখা।’

গুড্ডুবুড়া মায়ের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। সে একটা বুদ্ধি করল। বিকেলে মা যখন ঘুমাতে গেলেন, সে ঢুকল রান্নাঘরে। ফ্রিজের দরজা খুলে দিল। ফ্রিজে অনেক ঠান্ডা বাতাস থাকে। সেই ঠান্ডা বাতাস বের হলে মায়ের আর গরম লাগবে না।

‘হাত দিয়েই তো লিখি মা। পা দিয়ে তো লেখা যায় না। বললেই হতো, খাতায় লেখো।’

গুড্ডুবুড়ার বন্ধু বলল, ‘শুনেছিস, বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে?’

শুনে গুড্ডুবুড়া ভাবল ২০শ কাপ। সে মহা চিন্তিত। একটা কাপ হতে পারে, দুটো কাপ হতে পারে, তাই বলে বিশ শ কাপ।

গুড্ডুবুড়ার মামা ওদের বাসায় এলেন। সঙ্গে করে আনলেন মিষ্টি। হাঁক ছাড়তে লাগলেন, ‘গুড্ডুবুড়া, চলে এসো। তোমার জন্য ছানা এনেছি।’

সে দৌড়ে এলে।

মামা মিষ্টির প্যাকেট খুলে ছানা বের করলেন। বললেন, ‘নাও। খাঁটি ছানা।’

গুড্ডু বলল, ‘কিসের ছানা।’

‘দুধের ছানা।’

‘দুধের ছানা?’

‘হ্যাঁ। গরুর দুধ।’

‘গরুর ছানা?’

‘হ্যাঁ।’

গরুর ছানা এ রকম হবে কেন? কুকুরের ছানা দেখেছি। বিড়ালের ছানা দেখেছি। মুরগির ছানা দেখেছি। কিন্তু গরুর ছানা কি এই রকম হয়!

মামার তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা! কোথায় ছানার মিষ্টি, আর কোথায় কুকুর-বিড়ালের ছানা।

গুড্ডুবুড়া বাসায় চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। ‘বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড়চোপড় সব ঘরে তোলো। দরজা-জানালা লাগাও। তুফান আসছে।’

‘তুফান আসছে, কে বলল তোমাকে।’ বাবা বললেন।

‘এই যে টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। বলছে, তুফান আসছে...’

আরে ওটা তো একটা সিনেমা। সিনেমার নাম তুফান। এই ছবি শিগগিরই মুক্তি পাবে।

প্রচণ্ড গরম পড়েছে। বাসায় টেকা মুশকিল।

মা রান্নাঘরে কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি বকবক করছেন, রান্নাঘরে এসি লাগানো দরকার। সব গরম রান্নাঘরে। আর রান্নাঘরে একটা ফ্যানও থাকে না।

গুড্ডুবুড়া মায়ের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। সে একটা বুদ্ধি করল। বিকেলে মা যখন ঘুমাতে গেলেন, সে ঢুকল রান্নাঘরে। ফ্রিজের দরজা খুলে দিল। ফ্রিজে অনেক ঠান্ডা বাতাস থাকে। সেই ঠান্ডা বাতাস বের হলে মায়ের আর গরম লাগবে না।

রাতের বেলা মা গেলেন রান্নাঘরে। ফ্রিজের বরফ গলে নিচে পানির স্রোত বইছে। আইসক্রিম গলে গেছে। মাছ-মাংস পচে যাওয়ার জোগাড়। একি কাণ্ড! ফ্রিজের দরজা খুলে রেখেছে কে?

গুড্ডুবুড়া এগিয়ে গেল, ‘আমি।’

‘কেন?’

‘তোমার জন্য রান্নাঘর ঠান্ডা করে রেখেছি।’

গুড্ডুবুড়ার বাবা রাতের বেলা ইসবগুলের ভুসি ভিজিয়ে রাখেন। বলেন, ‘সকালবেলা এক গেলাস ইসবগুলের ভুসি খাব। পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন

গুড্ডুবুড়ার মনের মধ্যে কথাটা গেঁথে গেল। পেট পরিষ্কার। তারও পেটটা মনে হচ্ছে নোংরা হয়ে গেছে। পরিষ্কার করতে হবে। কী খেলে পেট পরিষ্কার হবে। সাবান খেলে। সে সকালবেলা উঠে এক চামচ গুঁড়া সাবান পানিতে গুলিয়ে খেয়ে ফেলল।

এরপর তো তার মরার দশা। তার নাক-কান দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। সে বুঝি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।

গুড্ডুবুড়াকে তার বাবা আর মা হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। সেখানে তার পেট পরিষ্কার করে দেওয়া হলো।

গুড্ডুবুড়ার বাবা ডাক্তার সাহেবকে বললেন, ‘ডাক্তার সাহেব, আমার ছেলেটা এত বোকা কেন?’

মা বললেন, ‘ডাক্তার সাহেব, আমার ছেলেটাকে বাঁচান। সে তো মহাবিপদ সৃষ্টি করছে।’

ডাক্তার খুব ভালো করে পরীক্ষা করলেন গুড্ডুকে। তারপর বললেন, ‘গুড্ডুবুড়া, খবর ভালো। তোমার কোনো অসুখ নেই। তবে একটা ছোট সমস্যা আছে। তুমি খেতে চাও না। না খেয়ে খেয়ে তোমার শরীরটা হয়ে গেছে দেশলাইয়ের কাঠির মতো। কাঠির ওপরে একটুখানি মাথা। এই জন্য তোমার ব্রেন শুকিয়ে গেছে। তোমাকে নিয়মিত খেতে হবে। তুমি ভাত খাবে, রুটি খাবে, মাছ খাবে, মাংস খাবে, ডিম খাবে, শাক আর সবজি খাবে। ফল খাবে। মূল খাবে।’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘পরীক্ষার ফল খাব?’

‘না। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, পেয়ারা, আপেল, আঙুর, কলা—এই সব খাবে।’

‘ফল বুঝলাম। মূল কী?’ গুড্ডুবুড়া বলল।

ডাক্তার বললেন, ‘এই তো বুদ্ধিমানের মতো প্রশ্ন করেছ। ফলমূল আমরা কথার কথা হিসেবেই বলি। তবে অনেক মূলও আমরা খাই। যেমন ধরো, আলু, গাজর, মুলা—এগুলো হলো মূল।’

‘জি বুঝেছি। আর কী খাব?’

‘দুধ খাবে। বাদাম খাবে। আর প্রচুর পরিমাণে পানি খাবে।’

‘পানি খাব, না পান করব?’

‘পান করবে। আর প্রচুর খেলাধুলা করবে। বুঝেছ?’

‘জি। বুঝেছি।’

আরও পড়ুন

ডাক্তারের কথা শুনে গুড্ডুবুড়া খাওয়াদাওয়া শুরু করল। সে ভাত-রুটি খায়, মাছ-মাংস-ডিম-দুধ খায়, শাকসবজি, ফলমূল খায়। পানি খায়। আর প্রচুর খেলে।’

আস্তে আস্তে ওর শরীর-স্বাস্থ্য ভালো হতে লাগল। আর ও হয়ে উঠল বুদ্ধিমান গুড্ডুবুড়া।

বুদ্ধিমান গুড্ডুবুড়া ক্লাসে সবার চেয়ে ভালো করে। স্কুলের সে গৌরব। সব শিক্ষক তাকে আদর করেন।

বন্ধুরা তাকে পছন্দ করে।

স্কুলে একদিন তো এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল। পাঁচতলায় হিসাব বিভাগে দুজন ডাকাত এসে অস্ত্র বের করল। রিভলবার বা পিস্তল। তারপর ক্যাশিয়ারের কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলল, ‘যত টাকা আছে সব দিয়ে দাও।’

গুড্ডুবুড়া তখন হেডস্যারের রুমে ছিল। স্যার তাকে আদর করেন। স্কুল ম্যাগাজিনে কী কী লেখা দেওয়া যায়, তা নিয়ে গুড্ডুবুড়ার সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন। তিনি কম্পিউটারের পর্দায় সিসি ক্যামেরার ছবি দেখলেন।

দুজন মুখোশধারী লোক অস্ত্র ঠেকিয়েছে ক্যাশিয়ারের কপালে।

হেডস্যার বললেন, ‘গুড্ডু, কী সর্বনাশ!’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘স্যার, ৯৯৯-এ কল করুন। পুলিশ আসুক।’

স্যার বললেন, ‘পুলিশ আসতে আসতে ডাকাতেরা পালিয়ে যাবে।’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘তবু সবার আগে পুলিশকে খবর দেওয়াই কি উচিত নয়?’

স্যার ফোন তুলে ৯৯৯-এ কল করলেন। হ্যালো, ‘আমাদের স্কুলে ডাকাত ঢুকেছে...’ ঠিকানা বলে দিলেন...

গুড্ডুবুড়া মনিটরে দেখছে ডাকাতেরা কী করে। তারা ঘর থেকে বের হলো। এবার তারা যাচ্ছে পাঁচতলার লিফটের দিকে।

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘স্যার, ইলেকট্রিসিটির মেইন সুইচ কই। ওরা লিফটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সুইচ অফ করে দেব।’

আর আপনি ফজলু ভাইকে ডেকে বলুন, ‘যেন জেনারেটর অন না করা হয়।’

হেডস্যার ফজলু পিয়নকে ডাকলেন মোবাইল ফোনে। বললেন, ‘এখনই কারেন্ট বন্ধ করব। জেনারেটর অন করবে না। আমার রুমে আসো।’

যে-ই না ডাকাত দুজন লিফটে ঢুকেছে, অমনি গুড্ডুবুড়া গিয়ে ইলেকট্রিসিটির মেইন সুইচ দিল অফ করে। ডাকাত দুজন লিফটে আটকে রইল।

একটু পর সাইরেন বাজিয়ে এল পুলিশ। তারা তলায় তলায় লিফটের সামনে অস্ত্র ধরে দাঁড়িয়ে রইল।

ওদিকে চারতলার কাছে লিফটে আটকে পড়ে ডাকাতেরা কাঁদছে, ‘দয়া কইরা লিফটের দরজা খুইলা দেন।’

পুলিশ বলল, ‘গুলি কর। গুলি করলে লিফট খুলবে।’

ডাকাত বলল, ‘খেলনা পিস্তল। গুলি করুম কেমনে।’

এবার মেইন সুইচ অন করা হলো। লিফটের দরজা খুলল চারতলায়। পুলিশ অ্যারেস্ট করল ডাকাত দুজনকে।

সবাই গুড্ডুবুড়ার নামে ধন্য ধন্য করতে লাগল।

আরও পড়ুন