খাতা
আমি না বুঝি না, আমাদের স্কুলটা এমন কেন? অ্যাটেনডেন্স, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা…কিরে ভাই? এত চাপ দেওয়ার মানে কী? মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা সিটি করপোরেশনের রাস্তা, কদিন পরপর আমাদের ওপর দিয়ে চালানো হয় বিকট বিকট রোলার। একেক সময় সেই রোলারের চালকের আসনে বসে একেকজন—কখনো গণিত স্যার, কখনো ইংলিশ স্যার, মানে জীবনটা শেষ আমাদের।
শুধু রোলার চালালেও না হয় একটা কথা ছিল। খেয়াল করে দেখবে, সিটি করপোরেশনের নতুন ঢালাই দেওয়া রাস্তাটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে খুঁড়তে আসে ওয়াসা কিংবা বিদ্যুতের লোক। আমাদের অবস্থা ঠিক ওই রকম। পরীক্ষা নিয়ে একবার ঢালাই তো দিয়েই দিয়েছেন স্যাররা। এখন আবার পরীক্ষার খাতা দিয়ে আমাদের ভেতরটা একেবারে এবড়োখেবড়ো করে দেবে!
‘ধুর, ভালোই লাগে না।’ হতাশ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা একটা ইটের টুকরায় লাথি মেরে বললাম আমি। আরেকটু হলেই বিপরীত দিক থেকে আসতে থাকা একজন লোকের পায়ে লাগত ইটটা। লোকটা হেডস্যার মার্কা একটা কড়া দৃষ্টি দিল শুধু, কিছু বলল না।
‘গুড শট মামা!’ লোকটা আমাকে অতিক্রম করে চলে যেতেই আমার পিঠ চাপড়ে বলল অনি। ‘আরেকটু হলেই গোল হয়ে যেত! ’
‘হ্যাঁ, লোকটার গায়ে লাগলে দৌড়ে পালাতে হতো।’
‘ওই আরকি, সেলিব্রেশন।’
আমি খুব খেয়াল করে দেখেছি, বিপদের সময়ে যত সব অর্থহীন বিষয় নিয়ে ভাবে অনি। আরে ব্যাটা, পরীক্ষায় করেছিস ফেল, ব্যাগে সেই ফেল করা পরীক্ষার খাতা, কোথায় সেসব নিয়ে ভাববি, তা না। সেলিব্রেশন শেখাচ্ছে। লাথিটা ইটে না মেরে ওকে মারা দরকার ছিল।
‘চল মামা, চুন আর কালি কিনে বাসায় যাই।’ খুব উৎসাহ নিয়ে বলল অনি।
‘কী হবে চুন, কালি দিয়ে?’
‘বাসায় গিয়ে যখন খাতা দেখাবি, তখন আন্টি–আঙ্কেল বলবে, ছি ছি, এভাবে আমাদের মুখে চুন-কালি…সঙ্গে সঙ্গে তুই চুন আর কালি নিজের মুখে মেখে সুইট করে বলবি, শুধু তোমাদের না, আমার মুখেও চুনকালি। মোড়ের দোকান থেকে কেনা, বেস্ট কোয়ালিটি।’
‘তুই তোর এসব জোক নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে যা। মুমূর্ষু লেম জোকের চিকিৎসা প্রয়োজন।’ আমার কথা শুনে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে লাগল অনি।
মেয়েটা এমন হাঁসের মতো হাসে কেন? ও কি ক্যাভিটি প্রতিরোধসমৃদ্ধ পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজে না? আজব তো!
২
অনেকক্ষণ হয়ে গেল আমরা ফুচকার দোকানে বসে আছি। এখনো কোনো বুদ্ধি বের করতে পারিনি। এর মধ্যে অনি কয়টা ফুচকা খেয়ে ফেলেছে কে জানে। আমার আজকে ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ অনির প্লেটে তাকিয়ে দেখি পাঁচটা ফুচকা! হায় রে পাঁচ! পাঁচ সাবজেক্টে ফেল করেছি বলে সবখানে পাঁচই দেখতে হবে?
‘মুখটা এমন পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন? টক বেশি হয়েছে?’ আস্ত একটা ফুচকা মুখে দিয়ে বলল অনি।
‘তোর সমস্যা কী?’, ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম আমি। ‘খাতাগুলো সাইন করাতে হবে না?’
‘হবে।’
‘চিন্তা হচ্ছে না তোর?’
‘উহু…মামা, একটু টক দেন তো…আমারটা কীভাবে সাইন করাব তা পেয়েছি।’
‘কীভাবে?’
‘আমার বাবা বড় লেখক তো। সাইন করাই তার কাজ।’
‘বড় লেখক যখন দেখবেন, তাঁর মেয়ে তিন সাবজেক্টে ফেল করেছে, তা-ও একেকটার নম্বর লিটন দাসের লাস্ট থ্রি টি-টোয়েন্টি স্কোরের মতো…কোনো ডবল ফিগার নেই, তখন পাঁচ আঙুলের একটা অটোগ্রাফ বসিয়ে দেবেন তোর গালে।’
‘জানি। এ জন৵ই তাঁর সামনে আমি যাচ্ছি না। যাবি তুই।’
‘ধন্যবাদ।’ আমি উঠে দাঁড়ালাম। অনির সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাশের টুলে রাখা ব্যাগ কাঁধে নিলাম আমি। ‘বিদায়। তোর সঙ্গে আমি আর নাই।’ বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলাম আমি।
‘আরে…অ্যাই শোন’, পেছন পেছন ছুটে এল অনি। হাত ধরে আবার টেনে নিয়ে এল ফুচকার দোকানে। আগেই লাফাচ্ছিস কেন ছাগলের মতো? হুটহাট রেগে যাবি না। রাগলেই ভুল করবি।’
‘ভুলটা কী করলাম?’
‘এই যে, কাঁধে আমার ব্যাগ নিয়েছিস। রাগে মানুষ নাম ভুলে যায়, তুই তো ব্যাগও ভুলে যাস দেখছি।’
নাহ্, ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে ভুল করে ফেলেছি! ধুর! আর আমি আগেই বলেছিলাম, একরকম ব্যাগ কিনলে এমন ভুলভাল হতেই পারে। আমার ব্যাগটা তুলে বললাম,
‘এমন উল্টাপাল্টা বুদ্ধি দিলে রাগ করব না?’
‘কোনো উল্টাপাল্টা বুদ্ধি দিই নাই। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত শতভাগ সফল হওয়ার মতো একটা আইডিয়া।’
‘হেহ, কত দেখলাম!’
‘এবার দেখবি। প্রতিদিন সকালে বাবা পার্কে হাঁটতে যায়। যায় কি না বল।’
‘যায়। এক ঘণ্টা হাঁটে, কিন্তু ভুঁড়ি কমে না।’
‘ওটা কমবেও না। যাহোক, সে সময় বাবাকে দেখে অনেকেই অটোগ্রাফ নিতে আসে। তুই-ও যাবি। তোর হাতে থাকবে আমার খাতা। বাবা হাঁটাহাঁটি করে যখন টায়ার্ড হয়ে যাবে, তখনই তুই আমার খাতা বাবার সামনে দিয়ে বলবি, আঙ্কেল, অটোগ্রাফ প্লিজ। বাবা সেই খাতায় অটোগ্রাফ দেবে, ব্যস, হয়ে গেল খাতায় অভিভাবকের স্বাক্ষর।’
আমি এত জোরে হাসলাম যে পাশে ঘুমাতে থাকা কুকুরটা চমকে উঠে ঘেউ ঘেউ শুরু করল। খানিক বাদে কুকুরটা সামলে নিল নিজেকে, আমিও সামলে নিয়ে বললাম—
‘হাস্যকর আইডিয়া! তুই গাধা, আঙ্কেল তো আর গাধা না। উনি দেখবেন না এটা পরীক্ষার খাতা? দেখবেন না যে এখানে তোর নাম আছে? আর উনি তো আমাকে দেখলেই চিনে ফেলবেন। এমন গাধা মার্কা বুদ্ধি কী করে আসে তোর মাথায়?’
‘ফেসবুক সেলিব্রিটির মতো না বুঝে কমেন্ট করে ফেলিস, এ জন্যই তোর উন্নতি হলো না।’ ফুচকার টক খেতে খেতে বলল অনি। ‘খাতার কিছুই বাবা দেখবে না। কারণ, খাতাগুলোর ওপরে আমরা একটা সাধারণ কাগজ স্ট্যাপল করে দেব। ওই কাগজটা শুধু ঢেকে দেবে আমার নাম, আর যে মহামূল্যবান নম্বর আমি পেয়েছি, সেটা। ডান পাশটা তুই বাড়িয়ে ধরবি। বাবা লেখক মানুষ, এত কিছু দেখবে না। শুধু খেয়াল রাখবি, ভুলেও যেন কারও নামটাম না লেখে।’
‘আমি পারব না।’ বলেই উঠে দাঁড়ালাম। শার্টের কোনা টেনে আমাকে আবার বসিয়ে দিল অনি।
‘পারতে হবে। অবশ্য তুই যদি রাজি না হস, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে করাব। দেশে লোকের তো আর অভাব নেই। কোটি কোটি লোক।’
‘তাহলে কোটি কোটি লোক থেকে কাউকে খুঁজে নে। আমি এর মধ্যে নাই। গেলাম।’
কয়েক পা এগোতেই ভিলেন টাইপ হাসি হেসে অনি বলল, ‘তোর খাতাগুলো সাইন করাবি কীভাবে? আমার বুদ্ধি ছাড়া পারবি?’
ধুর, ভালোই লাগে না। হতাশ হয়ে আবার অনির পাশে এসে বসলাম। খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল অনি।
৩
পরীক্ষার খাতা বাসায় দেখানোর নিয়মটা উঠিয়ে দেওয়া উচিত। এই ফাজলামোর কোনো মানে আছে? আমাদের কাজ পরীক্ষা দেওয়া, স্যাররা দেবেন নম্বর। স্যাররা কী নম্বর দিয়েছেন সেটার পাশে আমার আব্বুর সাইন নিয়ে আসতে হবে কেন? আব্বু ব্যস্ত মানুষ, সে কি বুঝবে নম্বর কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে? এখন যদি গণিতের জসিম স্যারকে আমরা বলি, স্যার, আপনি নাম্বার ঠিকমতো দিয়েছেন কি না, তা যাচাই করা দরকার। তাই নাম্বার দেওয়ার পর আপনার বাবা-মা কিংবা স্ত্রীর সাইন নেবেন—তখন কি বিষয়টা ভালো হবে? আসলে এটা একটা নির্যাতন। এই খাতা দেখে এখন একবার বাসায় বকা খাব। তারপর যখন রেজাল্ট দেবে, তখন আবার বাংলা সিনেমার দুঃখী বাবার মতো চশমা খুলে আব্বু বলবে, ‘আমার ছেলে হয়ে তুই সামাজিক বিজ্ঞানে আট পেতে পারলি? এটা দেখার আগে আমার…
‘কী এত ভাবছিস?’ অনির কনুইয়ের গুঁতায় চমকে উঠলাম আমি। ‘ভালো ছাত্রদের মতো মন খারাপের ভান করছিস কেন বুঝলাম না।’
‘মন খারাপ করব না?’
‘তুই জানতি না যে ফেল করবি?’
‘আরে, আমি তো অন্তত পাসের কাছাকাছি যাব ভেবেছিলাম। ৫, ৭, ৮…এসব কী?’
‘তোর রোল কত?’
‘৫৩।’
‘দশের ভেতরে রোল থাকলে খুশি হতি না?’
‘আব্বু খুশি হতো।’
‘তাহলে আরকি, আব্বুকে বলবি, রোল কম হলে তো খুশি হতে, নাম্বারের বেলায় অন্য নিয়ম কেন?’
‘ধুর। ফালতু কথা বলিস না। তুই আগে আমার খাতা সাইন করানোর ব্যবস্থা কর। গতবার আব্বুর সাইন নকল করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলাম।’
‘কী করে ধরা খেলি?’
‘আরে, নামের বানান ভুল হয়ে গিয়েছিল!’
‘বাপের নামেও বানান ভুল! আচ্ছা, তোর জন্য একটা বুদ্ধি আছে। কালকে তোকে মৌ আপুর কাছে নিয়ে যাব। উনি মারাত্মক কপি করতে পারে। যেকোনো সাইন, হাতের লেখা কপি করা ওনার কাছে কোনো ঘটনাই না। আমি তো ফেল করলে ওনাকে দিয়েই খাতা সাইন করাই। বাবার সাইনটা মৌ আপু এত ভালো করে, বাবাও এত ভালো পারে না।’
‘তাহলে তোরটাও ওনাকে দিয়েই করা, শুধু শুধু আমাকে আঙ্কেলের সামনে যেতে হবে কেন?’
‘তোর সাহস কেমন টেস্ট করে দেখলাম। লাভ হলো না। এখানেও তুই ফেল। আমার ধারণা, ব্লাড টেস্ট দিলেও তোর রিপোর্টে আসবে ফেল।’ হেসে বলল অনি।
৪
বাসায় ফিরেই অনি ফোনে জানাল, মৌ আপু আজ ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন, সাভারে। ফিরবেন পরশু। ফলে সন্ধ্যার সময় খাতা নিয়ে দেখা করতে এলাম আমি আর অনি। আপুকে দেখে মনেই হয় না, তাঁর মতো এমন সাদাসিধে জ্ঞানী জ্ঞানী টাইপ চেহারার একটা মেয়ে মানুষের সিগনেচার নকল করে দেয়! আমাকে দেখেই মৌ আপু বললেন,
‘তুমিই তাহলে রিয়াদ…তা ফেল করেছ কয়টায়?’
‘বেশি না, পাঁচটায়।’ ইতস্তত করে বললাম আমি।
‘শাবাশ!’ মৌ আপু উৎফুল্ল। পার খাতা সাইনে ১০০ টাকা নিই আমি। মোট ৫০০ টাকা।’
‘আমরা স্টুডেন্ট। হাফ নেওয়া যায় না?’
‘স্টুডেন্ট ছাড়া কেউ ফেল করে?’ হেসে বললেন আপু। ‘মজা করলাম। তুমি সিরিয়াস হয়ে গেলে কেন? এই সিরিয়াসনেসটা পড়াশোনায় দিলে তো ফেল করতা না।’
অনিও দেখলাম খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছে। ভাবটা এমন যেন আমি একাই ফেল করেছি! আজব তো! মৌ আপু বললেন, ‘আমি খাতায় সাইন করে দেব। কিন্তু আমাকে একটা প্রমিজ করতে হবে।’
‘জি আপু, বলো।’ নড়েচড়ে বসল অনি।
‘পরের পরীক্ষায় ফেল করা যাবে না। ফেল করলে ডবল জরিমানা। ঠিক আছে?’
আমরা দুজনই মাথা নাড়লাম। খাতাগুলো নিয়ে চলে গেলেন আপু। যাক, একটা বিপদ কাটল।
রাতে খাওয়ার সময় আম্মু জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে, পরীক্ষার খাতাটাতা কিছু দিয়েছে?’ শুনে আরেকটু হলেই কাতলা মাছের কাঁটা আটকে যেত গলায়। কোনোমতে বললাম, ‘নাহ্, এত তাড়াতাড়ি কিসের খাতা?’
কোনো এক রাজা নাকি মাছের কাঁটা গলায় আটকে মারা গিয়েছিলেন। আমার ধারণা, তাঁকে পরীক্ষার খাতার কথা জিজ্ঞেস করেছিল কেউ।
৫
এলাকার মাঠে ব্যাট হাতে রানের খাতা ভরাতে এতই ব্যস্ত ছিলাম, পরীক্ষার খাতার কথা মনেই ছিল না। হঠাৎ কোত্থেকে সাইকেলে চেপে এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেল অনি। ওর এই পাগলামি নতুন কিছু না। নিশ্চয়ই এখন বলবে, চল, ফুচকা খেয়ে আসি। বিরক্তিকর!
অনির সাইকেলের পেছনের সিটে বসে লাল চায়ের দোকানে এসে দেখি মৌ আপু দাঁড়িয়ে আছেন। সালাম দিয়ে বললাম, ‘আপু কেমন আছেন?’
‘এই তো। তোমাদের কী খবর?’ মৌ আপুকে খুব নার্ভাস মনে হলো। একটা প্রবলেম হয়েছে।
‘কী হয়েছে আপু?’ জিজ্ঞেস করল অনি।
‘কীভাবে যে বলি…’, ইতস্তত করতে লাগলেন আপু। ‘ভেবেছিলাম, আজকে এসে সাইনের কাজটা করব। কিন্তু একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।’
‘আমাদের কোনো তাড়া নেই আপু।’ নিশ্চিন্তে বললাম আমি। ‘আগামী সপ্তাহে খাতা জমা দিলেই হবে।’
‘খাতা তো নাই।’
‘নাই মানে?’
‘তোমাদের খাতাগুলো রেখে আমি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। এসে শুনি, পুরোনো পেপারের সঙ্গে আম্মা খাতাগুলো কাগজওয়ালার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। আম্মা ভেবেছেন কার না কার খাতা, পড়ে আছে শুধু শুধু…’
‘কী!’ আমার মাথা ঘুরে উঠল। হায় হায়! এখন কী হবে!
‘আমি খুবই সরি।’ মৌ আপু আমাদের দিকে তাকাতে পারছেন না। ‘আসলে এ রকম যে হতে পারে, আমি ভাবতেই পারিনি।’
‘ঠিক এই কথাটা ফেল করার পর আমারও মনে হয়েছিল।’ ঠান্ডা মাথায় বলল অনি। ‘কোনো চিন্তা কোরো না আপু। এটা কোনো ব্যাপারই না।’
‘ব্যাপার না? খাতা জমা না দিলে গার্জিয়ান ডাকবে, টিসিও খেতে পারি।’ আর অনি বলছে, এটা কোনো ব্যাপার না! ফেল করে আমি যে অন্যায় করেছি, তার চেয়েও বড় অন্যায় করেছি অনির সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। এ রকম বন্ধু থাকলে শত্রুর দরকার হয় না। ইশ্, কী বিপদে পড়লাম!
মৌ আপু অনেকবার সরি বলে বিদায় নিলেন। তারপর অনি হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘চিন্তা কর মামা, আমি ভেবেছিলাম, আমাদের এই খাতাগুলো কোনো কাজের না। কিন্তু দেখ, অন্তত বিক্রি তো হলো। এটাই–বা খারাপ কী? তুই পজিটিভলি দেখ বিষয়টা…’
৬
বেশ কয়েক দিন কেটে গেছে। স্কুলে খাতার কথা জিজ্ঞেস করলেই বলি, দাদি অসুস্থ, বাঁচবে কি না ঠিক নাই। তাই আব্বু-আম্মু গ্রামের বাড়ি গেছে। এভাবে যদি সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষা পর্যন্ত যেতে পারি, তাহলে মনে হয় খাতার প্রসঙ্গ আর উঠবে না। এর মধ্যে একটা ছোটখাটো জ্বর যদি বাঁধিয়ে ফেলা যায়, তাহলে তো কথাই নাই…
‘অ্যাই রিয়াদ!’ মায়ের ডাকে ছেদ পড়ল ভাবনায়। ‘পুরি খাবি নাকি?’
‘আসছি আম্মু।’
পড়ার টেবিল থেকে উঠে চলে এলাম ডাইনিং টেবিলে। চেয়ার টেনে বসতেই মাথা ঝিমঝিম করে উঠল আমার। আম্মুর হাতের পুরির ঠোঙাটা আমার খুব পরিচিত। ওটা যে আমারই পরীক্ষার খাতা। ওই তো, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমার নাম, রোল, আর প্রাপ্ত নাম্বার!
আসলে বাইরের ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো না। কেন যে এগুলো কিনে আনে!