লস অ্যাঞ্জেলেসের উপকণ্ঠে, উডল্যান্ডস হিলে, আধা একর জমির মধ্যখানে প্রয়াত হার্বার্ট হ্যালোরানের দোতলা কাঠের বাড়ি। চারদিকটা গাছপালায় ছাওয়া। ছবির মতো সুন্দর। ট্যাক্সিতে চেপে পরদিন বিকেলে সময়মতো ওখানে হাজির হলো অয়ন আর জিমি। বেল বাজালে হলি হ্যালোরান নিজেই দরজা খুললেন। ওদের দেখে হাসিতে উদ্ভাসিত হলো তাঁর মুখ।
‘এসে পড়েছ? এসো, ভেতরে এসো।’
পথ দেখিয়ে ওদের লিভিং রুমে নিয়ে গেলেন তিনি। কামরাটা কার্পেটে মোড়া। রয়েছে দুই সেট সোফা। এক পাশে বড়সড় একটা ফায়ারপ্লেস, তার সামনে শোভা পাচ্ছে পুরোনো আমলের ডিজাইনে কাঠ দিয়ে তৈরি করা একটা ভারী রকিং চেয়ার। শোকেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের শোপিস। দেয়ালে ঝুলছে পেইন্টিং আর ছোট-বড় ফটোগ্রাফ।
লিভিং রুমে ঢুকতেই অয়ন-জিমি দেখল, সোফায় বসে আছে এক লোক। বয়স চল্লিশের আশপাশে, মাথায় টাক পড়তে শুরু করেছে, গায়ে দামি স্যুট। ওদের দেখে উঠে দাঁড়াল সে।
‘এসো, পরিচয় করিয়ে দিই,’ বললেন হলি। ‘ইনি মি. উইলিয়াম ডিকন, বাবার উকিল...এখন আমারও। মি. ডিকন, এদের কথাই বলেছিলাম আপনাকে—অয়ন হোসেন আর জিমি পারকার।’
‘হাউ ডু ইউ ডু,’ বলে ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলাল দুই বন্ধু।
‘বয়স তো খুবই কম দেখছি,’ দ্বিধান্বিত গলায় বলল ডিকন। ‘এরা কি পারবে কাজটা করতে?’
‘ধাঁধা সমাধানের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়, স্যার,’ ভারিক্কি গলায় বলল অয়ন। ‘প্রয়োজন শুধু মগজের জোর, সেটা আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে আছে বলে মনে করি। অতীতেও এ ধরনের বহু কেস নিয়ে কাজ করেছি। বিশ্বাস না হলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিতে পারেন।’
‘না, না, তার কোনো দরকার নেই,’ তাড়াতাড়ি বলল ডিকন। ‘বিশ্বাস করছি তোমাদের কথা।’
‘কিছু মনে কোরো না ওনার কথায়,’ বললেন হলি। ‘আমিই আসলে ডেকে এনেছি ওনাকে। উইল করার সময় বাবার সঙ্গে ছিলেন কিনা, ভাবলাম হয়তো সাহায্য করতে পারবেন তোমাদের।’
‘ভালো করেছেন,’ বলল অয়ন। ‘উইলটা দেখতে পারি? অনেক সময় উইলের ভাষাতেও নানা ধরনের সূত্র লুকানো থাকে।’
‘নিশ্চয়ই।’ সেন্টার টেবিল থেকে একটা ফোল্ডার তুলল ডিকন, দিল অয়নকে।
দ্রুত দলিলটায় চোখ বোলাল অয়ন। মাত্র দুই পাতার দলিল, তাতে সোজাসাপ্টা ভাষায় সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে হলিকে। শেষ পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে রত্নগুলো লুকিয়ে রাখার কথা। দেওয়া হয়েছে সূর্যঘড়ির সূত্র অনুসরণ করে খুঁজে বের করার নির্দেশ। আলাদাভাবে কোনো কিছু নজর কাড়ল না।
নিজের পড়া শেষ হলে জিমিকে দলিলটা পড়তে দিল অয়ন। তারপর বলল, ‘এবার সূর্যঘড়িটা দেখান।’
সেন্টার টেবিলের ওপরই এক টুকরা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে জিনিসটা। কাপড়টা সরিয়ে ফেলল ডিকন। দেখা গেল সূর্যঘড়িটা। বর্গাকার বেজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ত্রিভুজ আকৃতির একটা ধাতব পাত। বেজটা সিমেন্ট দিয়ে গড়া, ছয় ইঞ্চি পুরু, ওপরের দিকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ দুটোই এক ফুট করে। রং করে ঘড়ির ডায়াল আঁকা হয়েছে সেখানে, লেখা হয়েছে ঘণ্টার সংখ্যাগুলো। ওপরের ধাতব পাত, যেটাকে নোওমন বলে, সেটার উচ্চতা ৯ ইঞ্চি। সূর্যের আলোতে রাখা হলে নোওমনের ছায়া পড়ে ডায়ালে, সেখান থেকে জানা যায় কটা বাজল। পুরো জিনিসটা একটু তুলে দেখল জিমি, ওজন ১০-১৫ কেজির কম নয়। সূর্যঘড়ির তলায় চারটা খাঁজও রয়েছে, যদিও সেগুলোর উদ্দেশ্য বোঝা গেল না।
‘ইন্টারেস্টিং,’ মন্তব্য করল অয়ন। ‘জিনিসটা অ্যান্টিক বলে মনে হচ্ছে না। মি. হ্যালোরানই সম্ভবত বানিয়েছেন।’
‘আমাদেরও তা-ই ধারণা,’ সায় জানাল ডিকন।
‘ধাঁধাটা কোথায়?’ জানতে চাইল জিমি।
‘এই যে, এপাশে,’ দেখিয়ে দিলেন হলি।
ঝুঁকল অয়ন-জিমি। বেজের এক পাশে খোদাই করে লেখা হয়েছে কয়েকটা বাক্য। সেটা এ রকম:
‘ফ্রিটার অ্যাওয়ে অ্যাডাম’স এইল। সেট দ্য টাইম। রিভিল মাই সিক্রেট।’
‘অ্যাডামের মদ অপচয় করো। সময় নির্ধারণ করো। উন্মোচন করো আমার রহস্য,’ বিড়বিড় করে কথাগুলো অনুবাদ করল অয়ন। কপালে ভাঁজ দেখা দিয়েছে ওর।
‘কোনো অর্থই খুঁজে পাচ্ছি না এসবের।’ বললেন হলি। ‘খোঁজ নিয়েছি, অ্যাডামের মদ বলে কিছু নেই বাজারে। অ্যাডাম নামে কোনো ব্র্যান্ডই নেই মদের। অ্যাডাম নামে বাবার কোনো বন্ধুও নেই যে তার কাছে গিয়ে মদ চাইব। বাড়ির ভেতরেও কোনো মদের বোতল পাইনি। তা ছাড়া কিসের সময় নির্ধারণ করব? কী রহস্য উন্মোচন করব?’
সোজা হলো অয়ন। হঠাৎ কপালের ভাঁজ দূর হয়ে গেল ওর। ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ভুল করেছেন আপনারা, মদের কথা বলা হয়নি লাইনটায়। অ্যাডাম’স এইল একটা ইংরেজি প্রবচন। এর অর্থ, পানি!’
‘কী!’
‘হ্যাঁ,’ মাথা ঝাঁকাল অয়ন। ‘বাইবেল থেকে এসেছে কথাটা—সৃষ্টির প্রথম মানব অ্যাডাম বা আদম থেকে। বলা হয়ে থাকে, যখন তাঁকে তৈরি করে গার্ডেন অব ইডেনে রাখা হয়েছিল, তখন সেখানে একমাত্র পানীয় ছিল পানি।’
‘জানতাম না তো!’ ডিকনের সঙ্গে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন হলি।
‘হুম,’ বলল জিমি। ‘তাহলে অ্যাডাম’স এইল হলো পানি। কথা হলো, পানি কীভাবে অপচয় করে?’
‘কল খুলে রেখে,’ বলল ডিকন। ‘বাড়ির সব পানির কল খুলে দিতে বলা হয়নি তো?’
‘আমার তা মনে হয় না,’ মাথা নাড়ল অয়ন। নিচের ঠোঁট কামড়াচ্ছে ও—গভীর চিন্তার লক্ষণ। ‘আরেকটু গভীরভাবে ভাবা যাক। ধাঁধাটা সূর্যঘড়ির গায়ে লেখা হলো কেন? অন্য যেকোনোভাবেই তো লেখা যেত...এমনকি উইলেই লিখে দেওয়া যেত। তা ছাড়া ধাঁধার ভেতর সময়ের কথা বলা হয়েছে। এর মানে, ধাঁধার সমাধান করতে গেলে সূর্যঘড়িটার প্রয়োজন হবে।’
‘ঠিক কী বলতে চাইছিস?’ জিজ্ঞেস করল জিমি।
‘ঘরের ভেতরে সূর্যঘড়ি ব্যবহার করা যায় না, ব্যবহার করতে হয় বাইরে...খোলা আকাশের নিচে।’ হলির দিকে তাকাল অয়ন। ‘আশপাশে কোনো জলাশয় আছে?’
‘বাড়ির পেছনে একটা পুকুর আছে,’ জানালেন হলি।
‘চলুন, দেখে আসি।’
পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল চারজনে। এক শ গজের মতো যেতেই দেখা গেল পুকুরটা। খুব বড় নয়, ঘোলা পানিতে সাঁতার কাটছে কতগুলো রাজহাঁস। চারদিকে ঘেসো জমি, কোথাও কোথাও ঝোপঝাড় জন্মেছে। ঘেসো জমির সীমানায় মাথা তুলে রেখেছে বড় বড় গাছ।
‘পুকুরের পানি আবার কীভাবে অপচয় করে?’ বিরক্ত গলায় বলল ডিকন। ‘আমার মনে হয় তুমি ভুল করছ, অয়ন।’
‘আগে দেখতে তো দিন!’ বলল অয়ন। ‘চলুন, চারপাশটা ঘুরে দেখি। ধাঁধার সঙ্গে কোনো কিছুর মিল পেয়েও যেতে পারি।’
পুকুরের এক ধার ধরে হাঁটতে শুরু করল চারজনে। মাটিটা খুঁটিয়ে দেখছে অয়ন-জিমি, চোখ বোলাচ্ছে চারদিকে। কিছুদূর যাওয়ার পরই থমকে দাঁড়াল। মাটিতে বসানো একটা চারকোনা কাঠের ঢাকনা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ওদের। শিকল দিয়ে তালা লাগানো আছে কবজায়।
‘কী ওটা?’ জানতে চাইল অয়ন।
এগিয়ে গিয়ে ঢাকনাটা ভালো করে দেখলেন হলি। তারপর বললেন, ‘মনে পড়েছে...একটা ভালভ আছে এর নিচে।’
‘কিসের ভালভ?’
‘পুকুরের। বৃষ্টির মৌসুমে পুকুরটা ভরে যায় পানিতে, উপচে পড়ে চারদিকে। তাই বাড়তি পানি সরানোর জন্য পাইপ বসিয়েছিলেন বাবা, ভালভ লাগানো আছে ওটার গায়ে। ভালভ খুলে দিলে পানি বেরিয়ে যায়, আবার বন্ধ করে দিলে পানি আটকে থাকে।’
‘খুব সাধারণ জিনিস,’ বলল জিমি। ‘এর সঙ্গে ধাঁধার কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। এগোনো যাক, চলুন।’
কিন্তু নড়ল না অয়ন, একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ঢাকনাটার দিকে। ওকে একটা গুঁতো মারল জিমি।
‘কী রে, দাঁড়িয়ে রইলি কেন?’
‘ভাবছি...’ চিন্তিত গলায় বলল অয়ন, ‘ফ্রিটার অ্যাওয়ে বলতে অপচয় ভাবছি কেন আমরা? আরও অর্থ হয় কথাটার।’
‘তা অবশ্য ঠিক,’ সায় জানাল জিমি। ‘খরচ করা বা কমানো অর্থেও ব্যবহার করা যায় কথাটা।’
ঝট করে ওর দিকে তাকাল অয়ন। ‘কমানো! পানি কমানো!’ উত্তেজিত গলায় বলল ও। ‘পুকুরের পানি কমাতে হবে আমাদের। মিস হ্যালোরান, তালাটার চাবি আছে আপনার কাছে?’
‘বাড়ির ভেতরে কয়েকটা চাবির গোছা আছে, কিন্তু সেখানে এটার চাবি আছে কি না জানি না,’ বললেন হলি। ‘অবশ্য, চাবি খোঁজার দরকার কী? তালাটা তো বেশ পুরোনো, ভেঙেই ফেলো না! দরকার হলে আরেকটা লাগিয়ে নেওয়া যাবে।’
বড় দেখে একটা পাথর কুড়িয়ে আনল জিমি, সেটা দিয়ে কয়েক ঘা মারতেই ভেঙে গেল তালাটা। ঢাকনাটা উঁচু করল ও।
ছোট্ট একটা গর্ত দেখা গেল নিচে, কিনারগুলো সিমেন্ট দিয়ে মোড়া। মোটাসোটা একটা পাইপ চলে গেছে গর্তের ভেতর দিয়ে, তার গায়ে লাগানো আছে মরচে পড়া একটা হুইল—ওটাই পুকুরের ভালভ।
‘খোল ভালভটা,’ জিমিকে বলল অয়ন। ‘দেখা যাক কী ঘটে।’
হাঁটু গেড়ে বসল জিমি, দুহাতে শক্ত করে ধরে ঘোরানোর চেষ্টা করল হুইলটা, কিন্তু নড়ল না ওটা।
‘বাপ রে!’ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ও। ‘ভীষণ শক্ত। জং ধরে আটকে গেছে বোধ হয়।’
‘ভালো করে ঘোরা,’ বলল অয়ন।
‘খুব তো অর্ডার দিচ্ছিস! পারলে নিজে এসে ঘোরা।’
‘সেটা ঠিক হবে না। কাজটা তোর। আমাদের টিমে আমি হচ্ছি মগজ আর তুই হলি পেশি।’
‘এক ঘুষিতে তোর মগজ নাড়িয়ে দেব বলছি!’ হুমকি দিল জিমি। ‘এই ভালভ খোলার আইডিয়া আমার, না তোর? আবার বড় বড় ডায়ালগ ঝাড়ছিস? আয় বলছি! হাত লাগা আমার সঙ্গে।’
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিচু হলো অয়ন, ধরল হুইলের আরেক পাশ। দুজনে মিলে টানাটানি শুরু করল। শেষ পর্যন্ত আর স্থির থাকতে পারল না হুইল, ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ তুলে ঘুরতে শুরু করল। প্রথম কয়েক পাক ঘোরার পর ঢিলে হয়ে গেল, বাকিটুকু ঘোরানো গেল সহজেই। পাইপের ভেতর থেকে ভেসে এল পানির প্রবাহের আওয়াজ। পুকুরে আলোড়ন উঠল। রাজহাঁসগুলো প্যাঁক প্যাঁক করে বিরক্তি প্রকাশ করল তাতে। সাঁতার কেটে উঠে পড়ল উল্টো দিকের পাড়ে।
সোজা হলো অয়ন। বলল, ‘সূর্যঘড়িটা নিয়ে আসাই বোধ হয় ভালো। যদি ভুল করে না থাকি, পানি নেমে যাওয়ার পর কাজে লাগবে ওটা।’
‘আপনারা এখানেই থাকুন,’ হলি আর ডিকনকে বলল জিমি। ‘আমরা নিয়ে আসছি।’
‘আবার আমাকে খাটাতে চাইছিস?’ আহত গলায় বলল অয়ন। শারীরিক পরিশ্রম পছন্দ নয় ওর।
‘কী আশ্চর্য! আমি একা টানব ওই ভারী জিনিস?’ বলল জিমি। ‘নাকি চাইছিস আমরা এখানে বিশ্রাম নিই, আর বড়রা খেটে মরুক?’
‘আমার কোনো আপত্তি নেই,’ বলল ডিকন। ‘তোমরা চাইলে বিশ্রাম নিতে পারো।’
‘না, না, আমরাই আনব,’ বাধা দিয়ে বলল জিমি। ‘অয়ন, আয় বলছি!’
গোমড়ামুখে ওর সঙ্গে রওনা হলো অয়ন। ১৫ মিনিট পর দুজনে ধরাধরি করে সূর্যঘড়িটা নিয়ে ফিরে এল পুকুরের ধারে। ঘাসের ওপরে নামিয়ে রাখল।
‘বাপ রে বাপ! কী ওজন!’ কপালে ঘাম মুছল অয়ন।
পুকুরের দিকে তাকাল জিমি। পানি কমেছে, তবে খুব বেশি নয়। ‘অনেক সময় লাগবে পুকুর খালি হতে,’ মন্তব্য করল ও।
‘পুরোটা বোধ হয় খালি করতে হবে না,’ বলল অয়ন। হাত তুলে দেখাল পাড়ের কাছে একটা জায়গা। ‘কী যেন ভেসে উঠছে, দেখেছিস?’
‘আরে, তা–ই তো!’
এখনো পানির তলায় রয়েছে জিনিসটা, বোঝা যাচ্ছে না ওটার পরিচয়। তবে খানিক পর পানি আরেকটু নেমে গেলে দেখা গেল, একটা চৌকো আকৃতি। পানি যত কমল, ততই উঁচু হতে থাকল ওটা। একসময় উন্মুক্ত হয়ে গেল পুরোপুরি। দেখা গেল, পাথরে গড়া একটা প্ল্যাটফর্ম, তার ওপরে উঁচু হয়ে আছে চারকোনা একটা বেদি।
‘অদ্ভুত,’ বলল অয়ন। হলির কাছে জানতে চাইল, ‘কাজ কী ওটার?’
‘জানি না,’ মাথা নাড়লেন হলি। ‘পুকুরের মধ্যে যে ওটা আছে, তা-ই তো জানতাম না। আগে দেখিনি কোনো দিন।’
‘চলুন, দেখে আসা যাক।’
যাওয়ার আগে ভালভটা বন্ধ করে দিল ওরা, তারপর হাঁটতে হাঁটতে উঠল প্ল্যাটফর্মে। বেশি বড় নয় ওটা, চারজনের জায়গা হতে চায় না। ডিকনকে নিয়ে হলি নেমে গেলেন, অয়ন আর জিমি নিচু হয়ে খুঁটিয়ে দেখল প্ল্যাটফর্মটা।
‘বেশি দিন আগে বানানো হয়নি এটা,’ একটু পর বলল অয়ন। ‘পাথরের রং বদলায়নি, খুব বেশি শেওলাও জমেনি।’
এবার বেদিটার ওপরে নজর দিল ও। ৩ ফুট উঁচু; বর্গাকার একটা পিলারের মতো উঠে এসেছে প্ল্যাটফর্মের গোড়া থেকে। ওপরের অংশটা দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ১ ফুট করে।
‘ঠিক সূর্যঘড়িটার বেজের সমান,’ বলল জিমি। ‘ওই দেখ, চারটা গোঁজও আছে। মনে হচ্ছে, সূর্যঘড়ির তলার খাঁজগুলো বসে যাবে ওই গোঁজের ওপর।’
‘ঠিক বলেছিস,’ একমত হলো অয়ন। ‘ঘড়িটা বসাতে হবে এখানে।’
‘এনে দিচ্ছি,’ পাড় থেকে বলল ডিকন। একাই নিয়ে এল সূর্যঘড়িটা। ওটা সাবধানে নামিয়ে রাখল বেদির ওপরে।
খাঁজ আর গোঁজগুলো মেলাল অয়ন-জিমি। ঘড়িটা সুন্দরভাবে বসে গেল বেদিতে।
এক পা পেছাল সবাই। জিমি বলল, ‘কিছুই তো ঘটছে না। এবার?’
বিড়বিড় করল অয়ন, ‘ফ্রিটার অ্যাওয়ে অ্যাডাম’স এইল। সেট দ্য টাইম...’ তাকাল ডিকনের দিকে। ‘কটা বাজে?’
হাতঘড়ি দেখল ডিকন। ‘পাঁচটা বাজতে ১০ মিনিট বাকি।’
সূর্যঘড়ির ডায়ালের দিকে তাকাল অয়ন। নোওমনের ছায়া পড়েছে ৮-এর ওপরে।
‘ভুলই করেছি আমরা,’ বলল ও। ‘ঘড়িটা এমনভাবে বসাতে হবে, যাতে সঠিক সময়টা পাওয়া যায় ডায়াল থেকে। সেট দ্য টাইম বলতে তা-ই বুঝিয়েছে। জিমি, হাত লাগা। ঘোরাতে হবে ঘড়িটা।’
দুজনে মিলে উঁচু করল ঘড়িটা, ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে চেক করল ছায়া। হ্যাঁ, এবার ৫-এর ওপরে পড়েছে। খাঁজ মিলিয়ে আবার বসিয়ে দিল বেদির ওপরে।
সঙ্গে সঙ্গে ঘর্ঘর আওয়াজ শোনা গেল। নিচে নামতে শুরু করল বেদিটা। অয়ন অনুমান করল, কোনো ধরনের মেকানিজম আছে ভেতরে, সূর্যঘড়িটা ঠিকমতো বসালে চালু হয় ওটা।
১ ফুট নেমে থেমে গেল বেদিটা। একই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মের এক পাশে একটা ছোট্ট ফোকরের ঢাকনা সরে গেল। নিচু হয়ে ভেতর থেকে একটা জিনিস বের করে আনল অয়ন।
‘এটাই তাহলে মি. হ্যালোরানের সিক্রেট,’ বলল ও।
‘কী...কী ওটা?’ সাগ্রহে জানতে চাইলেন হলি।
তাঁর দিকে জিনিসটা বাড়িয়ে ধরল অয়ন। ওয়াশিংটন মনুমেন্টের একটা খুদে রেপ্লিকা বলা চলে—রুপা দিয়ে তৈরি একটা চারকোনা দণ্ড, ডগাটা মিশে গেছে পিরামিডের মতো। অবিলিস্ক বলে এ ধরনের আকৃতিকে।
‘এ তো রত্ন নয়!’ হতাশ গলায় বললেন হলি।
‘না, আরেকটা ধাঁধা,’ বলল অয়ন।
অবিলিস্কটা ওর হাত থেকে নিল জিমি। দ্রুত চোখ বোলাল। তারপর হতাশ গলায় বলল, ‘কিসের ধাঁধা? এটায় তো কিছুই লেখা নেই!’
চলবে...