তৃতীয় অধ্যায়
রানির মুকুট রহস্য
মার্কিন লেখক ম্যাক বার্নেটের জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ ‘কিড স্পাই’। এই সিরিজের প্রধান চরিত্রের নামও ম্যাক বার্নেট। ছোট্ট ম্যাককে ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ বিভিন্ন মিশন দেন, সেগুলো সম্পন্ন করে ম্যাক। এই সিরিজের প্রথম বই ‘ম্যাক আন্ডারকভার’-এ রানির হারিয়ে যাওয়া রত্ন খুঁজবে ম্যাক। এই অ্যাডভেঞ্চারে তোমাদের স্বাগত!
টাওয়ার অব লন্ডনে একাধিক টাওয়ার আছে। তাই এ নামটা বেশি জুতসই না। এটি আসলে একটি দুর্গ। টাওয়ার অব লন্ডনের সবচেয়ে পুরনো টাওয়ারটি অনেক উঁচু ও সাদা। এ জন্য এর নাম রাখা হয়েছে হোয়াইট টাওয়ার। (এই নামটি ভালো!)
১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড জয় করেই এই দুর্গটি এক রাজা তৈরি করেছিলেন। তাঁর নাম ছিল উইলিয়াম দ্য কনকুইরার। (এটিও ভালো নাম!) মূলত ইংরেজদের ভয় দেখাতেই তাঁর এই দুর্গ ও টাওয়ার নির্মান। এরপর বিভিন্ন সময় ইংল্যান্ডের রাজা-রানিরা এটিকে নানা জিনিসের সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কালে কালে এখানে অস্ত্র, অর্থ, বন্দি, শিল্পকর্ম, মেরু ভালুক, হাতি, সিংহসহ আরও অনেক প্রাণী জায়গা পেয়েছে।
হেনরি অষ্টম তার অনেক স্ত্রী, বন্ধু ও আত্মীয়দের টাওয়ার অব লন্ডনে বন্দি রেখে শিরশ্ছেদ করেছিলেন। তবে কয়েক শতাব্দী ধরে ইংল্যান্ডের রাজা-রানিরা এখানেই ক্রাউন জুয়েলস (রাজকীয় গহনা) সংরক্ষণ করছেন।
যাহোক, লন্ডনে নেমেই সরাসরি টাওয়ার অব লন্ডনে চলে গেলাম রহস্যের সূত্র খুঁজতে। জায়গাটা ভিড়ে ঠাসা। লাল-নীল পোশাক পরা দুর্গের রক্ষীরা পর্যটকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, হিংসা আর প্রেমের গল্প করছিল। এক বৃদ্ধ বিশাল ক্যামেরা হাতে ছবি তুলছে। চারদিকে অনেক শিশু। কেউ মা-বাবার পাশে দাঁড়ানো, কেউ আবার এসেছে স্কুলের গ্রুপের সঙ্গে। অনেকে রাস্তার পাশে গান শুনতে শুনতে বিরক্ত। আমি চেষ্টা করলাম ভিড়ের মধ্যে মিশে যেতে। (ভালো গোয়েন্দারা আড়ালেই থাকে!)
মানচিত্র দেখে জুয়েল হাউসের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু দরজার সামনে দুজন বিশালদেহী রক্ষী কুঠার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা বন্ধ।
গলা শুকিয়ে আসছিল আমার, কিন্তু তবুও গলা খাঁকারি দিলাম।
‘হ্যালো,’ বললাম আমি।
‘হ্যালো,’ বলল ডানপাশের রক্ষী।
‘আজ জুয়েল হাউস বন্ধ, ছোকরা,’ বলল বাঁ পাশের রক্ষী। ‘ক্রাউন জুয়েলস পরিষ্কার করা হচ্ছে।’
আমি জানি রক্ষীরা মিথ্যা কথা বলছে, তাই সরাসরি বললাম,
‘না, এখানে চুরি হয়েছে। আমি জানি, কারণ স্বয়ং রানি আমাকে পাঠিয়েছেন।’
ডানপাশের রক্ষী ভ্রু কুঁচকে তাকাল। ‘চালাক ছেলে, তাই না!’
‘খুব চালাক,’ বলল বাঁ পাশের রক্ষী। ‘তুমি নিশ্চয়ই সেই গোপন এজেন্ট।’
‘হ্যাঁ,’ বললাম আমি।
‘গোয়েন্দাদের আমি দেখতেই পারি না,’ বলল ডানপাশের রক্ষী।
‘আমি বাচ্চাদের পছন্দ করি না,’ বলল বাঁ পাশের রক্ষী।
ডানপাশের রক্ষী বিরক্ত মুখে বলল, ‘আর আমেরিকানদের নিয়ে তো কোনো কথাই বলতে চাই না!’
আমি অনেক মানুষকে দেখেছি যারা বাচ্চাদের পছন্দ করে না। যেমন আমার মায়ের বন্ধু ক্রেইগ, সে প্রায়ই এটা বলে। কিন্তু গোয়েন্দাদের পছন্দ করে না, এমন মানুষ দেখিনি।
‘ওয়েট’, বললাম আমি, ‘সিক্রেট এজেন্টরা তো দূর্দান্ত। আপনি কেন পছন্দ করেন না?’
‘সব সময় লুকোচুরি, মিথ্যা বলা, চালাকি করা…ওসবের চেয়ে সত্যিকারের সৈনিক হওয়াই ভালো।’
‘কিন্তু আপনি তো এখনই আমার সঙ্গে মিথ্যা বললেন, ধুলা পরিষ্কারের কথা বলে,’ বললাম আমি।
‘দেখেছ,’ বাঁ পাশের রক্ষী হেসে বলল, ‘চালাক, খুব চালাক।’
তারা তাদের কুঠার সরিয়ে দরজা খুলে দিল। আমি ভেতরে পা রাখলাম। চারদিক শুধু অন্ধকার…