লুৎফুল কায়সারের ভৌতিক গল্প 'অমৌলিক'
তখন আমি একটা কোম্পানির হয়ে খাবার ডেলিভারি করতাম। আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা কোনোকালেই ভালো ছিল না। ছাত্র অবস্থায়ই নানা রকম পার্টটাইম জব করে একটু অতিরিক্ত টাকা কামানোর চেষ্টা করতাম। বুঝলেন ভাই, আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে পার্টটাইম জবের ব্যাপারটা এখনো নরমালাইজড না। ধরেন, কেউ যদি আমার আম্মাকে গিয়ে বলে, ‘আরে ভাবি, আপনার ছেলে তো বাড়িতে বাড়িতে খাবার দিয়ে বেড়ায়!’ আম্মা আমাকে ফোন করে কেঁদে বুক ভাসাবে, বলবে, ‘বাবা, এইসব কাজ করিস না। দরকার হলে আমরা এক বেলা না খেয়ে তোকে আরেকটু বেশি টাকা পাঠাব…কিন্তু এগুলা করিস না।’
অদ্ভুত ব্যাপার না, ভাই? উপমহাদেশের বেশির ভাগ মানুষের উন্নতি না হওয়ার একটা বড় কারণ হলো, আমরা সব পেশাকে সম্মান দিতে জানি না। তাই বাড়িতে আর জানাইনি যে আমি পড়াশোনার ফাঁকে এইসব কাজ করি।
অনেক ফালতু বকে ফেললাম, এবার ঘটনায় আসি।
ওই সময়ে আমার একটা সাইকেল ছিল। ওটায় চড়েই ঢাকার নানা জায়গায় খাবার ডেলিভারি দিতাম। যেদিনের ঘটনা, সেদিন ছিল শুক্রবার, ছুটির দিন। মানুষ ছুটির দিনে বাইরের খাবার খেতে ভালোবাসে...তাই সারা দিন প্রচুর অর্ডার এসেছিল। ব্যস্ত সময় কাটছিল আরকি।
রাত পৌনে দশটার দিকে একটা অর্ডার এল। কাবুলি পোলাওয়ের অর্ডার। ‘খানা–দানা বিরিয়ানি ঘর’-এর কাবুলি পোলাওয়ের বেশ হাইপ ছিল সেই সময়ে।
অর্ডার পিক করতে করতেই সাড়ে দশটা বেজে গেল। দ্রুত সাইকেল চালিয়ে ডেলিভারি দিতে চললাম। যে এলাকা থেকে অর্ডার এসেছিল, তা বেশ দূরে। তাই খুব দ্রুত সাইকেল চালাচ্ছিলাম। রাত বেশ হয়েছিল, রাস্তায় জ্যামও ছিল কম।
আধা ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সেখানে।
তারপর যে নম্বর থেকে অর্ডার দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ফোন দিলাম।
ওপাশে থেকে এক ভদ্রলোক ফোনটা ধরলেন, ‘হ্যালো’। লোকটার গলা কেমন যেন খসখসে।
‘হ্যালো, স্যার, ফুডজেব্রা থেকে বলছিলাম, আপনার কাবুলি পোলাও অর্ডার ছিল। আমি আপনার বিল্ডিংয়ের গলির সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’
‘গলি দিয়ে ভেতরে চলে আসেন। মতিন ভিলা... তিনতলাতে থাকি আমি। লিফট নেই... মাত্র পাঁচতলা বিল্ডিং তো। আপনি সিঁড়ি দিয়ে চলে আসেন।’
আবার সেই একই জায়গাতে! ওই মুহূর্ত থেকেই আমি ভয় পেতে শুরু করলাম...কিন্তু মাথা কাজ করছিল। পকেট থেকে কলম বের করে ‘দ্বিতীয় তলা’ লেখা কাগজটায় বেশ বড় করে একটা দাগ দিলাম।
‘স্যার, একটু যদি কাউকে পাঠাতেন গলির সামনে? রাত হয়েছে তো।’
‘না না, কাউকে পাঠানো যাবে না। আপনি গলির মধ্যে আসেন...’ ফোন রেখে দিল লোকটা।
মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু কী আর করা? গ্রাহকের কথাই শেষ কথা। ঢুকে পড়লাম গলিতে। গলির একদম শেষ মাথায় মতিন ভিলা। বাড়িটা বেশ চকচকে...আলোঝলমলে। কিন্তু একতলায় কোনো গার্ড নেই! দরজাটাও খোলা...আমার কী? তাড়াতাড়ি ডেলিভারি দিয়ে পালাতে পারলে হয়।
সাইকেলটা এক পাশে রেখে তালা মেরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। দোতলায় উঠে দেখি দরজার ডান পাশে একটা কাগজ ঝুলছে, আর তাতে লেখা, ‘দ্বিতীয় তলা’। দরজাটায় তালা ঝুলছে। এই ‘দ্বিতীয় তলা’ লিখে রাখার কী দরকার? মানুষ তো এমনিতেই বোঝে, তাই না?
বিরক্ত হয়ে তিনতলায় উঠলাম।
একি! তিনতলাতেও একটা কাগজ ঝুলছে। আর তাতে লেখা ‘দ্বিতীয় তলা’! এখানকার দরজাতেও তালা! ভদ্রলোক কি অর্ডার দিয়ে আমার সাথে মজা করছে নাকি?
পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম। ফোন দিতে হবে ওনাকে। কিন্তু ‘নো নেটওয়ার্ক’। আশ্চর্য ব্যাপার! একটু আগেও তো নেটওয়ার্ক ছিল!
মোবাইলটা হাতে নিয়েই দোতলায় নেমে এলাম। নাহ্, নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। চারতলায় গিয়ে দেখব? পুরো বিল্ডিংটা কেমন যেন নিস্তব্ধ...কোনো শব্দ নেই!
আচ্ছা, দুইতলা আর তিনতলা একদম হুবহু একই রকম! কোনো পার্থক্য নেই!
উঠলাম তিনতলায়। তারপর চারতলায়।
চারতলাতেও সেই কাগজটা ঝোলানো। ওতে লেখা, দ্বিতীয় তলা! কী ব্যাপার? এমন কেন? মোবাইলে কোনো নেটওয়ার্ক নেই।
তাড়াতাড়ি তিনতলায় নেমে এলাম, তারপর দোতলায়। একতলায় যেতে হবে...হয়তো গার্ড আশপাশে কোথাও হাঁটতে গিয়েছিল। এতক্ষণে চলে এসেছে।
কিন্তু কোথায় একতলা? দোতলা থেকে নেমে আমি দেখি আবার সেই ‘দ্বিতীয় তলা’ লেখা জায়গাটাতেই চলে এসেছি!
এখান থেকেই না নামলাম? নিচে নামতে শুরু করলাম আবার।
আবার সেই একই জায়গাতে! ওই মুহূর্ত থেকেই আমি ভয় পেতে শুরু করলাম...কিন্তু মাথা কাজ করছিল। পকেট থেকে কলম বের করে ‘দ্বিতীয় তলা’ লেখা কাগজটায় বেশ বড় করে একটা দাগ দিলাম।
এরপর দৌড়ে গেলাম ওপরতলায়।
তারপর কী দেখলাম জানেন? সেই আগের জায়গাতেই এসেছি…এবং তার প্রমাণ হলো দ্বিতীয় তলা লেখা কাগজটার পাশে আমার দেওয়া দাগটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে!
ব্যাপারটা যে ভুতুড়ে, তা আর বুঝতে বাকি রইল না। পাগলের মতো ওঠানামা করতে লাগলাম, কখনো ওপরে উঠি, কখনো নিচে নামি…কিন্তু ঘুরেফিরে সেই দোতলাতেই ফিরে আসছিলাম…ফোনে নেটওয়ার্ক নেই, ইন্টারনেটেও ঢোকার উপায় নেই!
কান্না পাচ্ছিল রীতিমতো!
ঠিক তখনই কারেন্ট চলে গেল। গাঢ় অন্ধকার ঘিরে ধরল আমায়...কী করব এখন? মনে যত দোয়া-কালেমা এল, পড়ে ফেললাম একনিশ্বাসে। মোবাইলের টর্চ জ্বালানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু জ্বলল না!
ঠিক তখনই কারেন্ট চলে এল!
খুব দ্রুত নিচে নামলাম আমি। আরে! আমি একতলাতে! গেটটা এখনো আগের মতোই খোলা... তাড়াতাড়ি বাইরে এসে চেপে বসলাম আমার সাইকেলটায়। দ্রুত চালিয়ে উঠে এলাম গলির মাথায়।
ডান দিকের একটা দোকান তখন খোলা। গলাটা শুকিয়ে গেছিল রীতিমতো। একটু পানি খাওয়া দরকার।
‘ভাই, একটা ছোট মিনারেল ওয়াটার দিন তো,’ দোকানে গিয়ে বললাম।
দোকানদার মধ্যবয়স্ক। ফ্রিজ থেকে পানি বের করে দিয়ে আমাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলেন তিনি।
‘ভাই কি খাবার ডেলিভারি করেন? আমাদের এলাকায় আসছিলেন?’ বলে উঠলেন উনি।
‘হ্যাঁ ভাই...মতিন ভিলাতে ঢুকেছিলাম...’
‘কী! মতিন ভিলা? ওই বাড়ি তো আজ পাঁচ বছর ধরে বন্ধ! ওখানে ঢুকলেন কী করে?’
‘কী বলেন!’
‘আমার সাথে ইয়ার্কি করছেন?’
‘আপনার সাথে ইয়ার্কি কেন করব? চলেন ওই বাড়ির সামনে...দরজা খোলা...’
‘হুম! রইস... অ্যাই রইস,’ চেঁচালেন তিনি।
দোকানের পেছন থেকে অল্পবয়স্ক একটা ছেলে এল।
‘দোকানে বস তো, আমি আসতেছি,’ এই বলে বেরিয়ে এলেন তিনি। এই ফাঁকে আমি মোবাইলের কল রেকর্ড চেক করে ফেলেছি...নেটওয়ার্ক ফিরে এসেছে। কোথায় সেই নম্বর, যাতে আমি কল দিয়েছিলাম? হাওয়া হয়ে গেছে রীতিমতো। কোম্পানির অফিশিয়াল অ্যাপে ঢুকে আরেকবার অবাক হলাম...রেকর্ডে সেই অর্ডারের কোনো নামগন্ধ নেই! তাহলে আমি এখানে কেন এসেছিলাম?
থম মেরে বিরাট ভবনটার দিকে চেয়ে আছে আসিফ। একটু আগেই নেমে গেছে আর জে সুমন। এই ভবনেরই সাতলাতে ‘রেডিও ঊর্মি’র অফিস, ওই তো দেখা যাচ্ছে ওদের বিলবোর্ড। আর সবার ওপরে সবুজ আলোয় আলোকিত বিলবোর্ডে লেখা ‘যমুনা টাওয়ার’।
দুজন মিলে আবার ঢুকলাম সেই গলিতে।
কোথায় সেই আলোঝলমলে মতিন ভিলা? অন্ধকার একটা বাড়ি...দরজায় বহুদিনের পুরোনো একটা তালা লাগানো...
‘তো, এবার কী বলবেন ভাই?’
‘আমারই হয়তো মনের ভুল...’ মাথা নিচু করে তাড়াতাড়ি কেটে পড়লাম।
পরের দিনই খাবার ডেলিভারির চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। একটা হোটেলে কিছুদিন ওয়েটার হিসেবে কাজ করেছি...গ্র্যাজুয়েশন শেষের পর কয়েক বছর বিদেশ ছিলাম। এই দুই মাস হলো ফিরেছি, আবার চলে যাব।
অবসর সময়ে এই কাজ করছি, বোঝেনই তো বসে থাকতে আমি পারি না।
*
‘বাহ্ সুন্দর গল্প,’ মৃদু হাসল আর জে সুমন।
‘একদম সুমন ভাই, আমার সাথে বাস্তবে ঘটেছিল কয়েক বছর আগে...আজ আপনাকে যাত্রী হিসেবে পেয়ে এটা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না। আপনার শোর খুব ফ্যান আমি... এখন অবশ্য আর শোনা হয় না।’
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সুমন। জ্যাম আর একটু পরেই ছেড়ে দেবে। এর মধ্যে উবারচালকের কাছ থেকে গল্পটা শোনা হয়ে গেল। লোকটা ওর খুব বড় ভক্ত। গোটা দেশেই ওর অনেক ভক্ত, এফএম রেডিওতে মানুষের ভৌতিক অভিজ্ঞতা শোনার অনুষ্ঠান সেই-ই প্রথম চালু করেছিল।
‘আপনার নামটা কী যেন ভাই?’ প্রশ্ন করল সুমন।
‘আসিফ...’ উত্তর দিল উবারচালক।
‘গত বছর ধরে দেশের তেমন কোনো খোঁজ রাখেননি নাকি আসিফ সাহেব?’
‘কীভাবে বুঝলেন? আসলে বেশ বড় একটা লোন নিয়ে বিদেশ গেছিলাম...তাই ওখানে গিয়ে মন-প্রাণ দিয়ে কাজ শুরু করি। ফেসবুকও ডিলিট করে দিয়েছিলাম। বাসার লোকেদের সাথে কথা হতো হোয়াটসঅ্যাপে। বাংলাদেশি কোনো নিউজ পোর্টালও ফলো করতাম না।’
‘সেটাই। আচ্ছা...আসিফ সাহেব, আপনি কি মার্ক ক্যাজেলের “দ্য অ্যাপার্টমেন্ট” গল্পটা পড়েছেন?’
মাথা নিচু করে ফেলল আসিফ। এভাবে যে ধরা পড়ে যাবে, ধারণাও করতে পারেনি সে।
‘আমি খুব সরি সুমন ভাই...’ ধীরে ধীরে বলল সে।
‘আরে ধুর...’ হাসল সুমন, ‘আমি শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম যে আপনি এই গল্পটার কাহিনিকে নিজের ঘটনা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। কিছু মডারেশন এনেছেন অবশ্য, সেগুলো বেশ মজার ছিল।’
জ্যাম ছেড়ে দিল, গাড়ি চলতে শুরু করল।
‘আমি বইয়ের পোকা সুমন ভাই...ভূতের গল্প পড়তে খুব ভালো। অনেক ইচ্ছা ছিল নিজের ভৌতিক অভিজ্ঞতা আপনার শোতে গিয়ে বলব...কিন্তু সেই কপাল আর হলো কই? আমার সাথে কোনো ভৌতিক ঘটনাই ঘটে না!’
‘কখন যে কার সাথে কী ভৌতিক ঘটে যায়, কে জানে? যাই হোক...এই গল্পটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন হরর লেখক নিজের গল্প বলে প্রকাশ করেছেন, শর্টফিল্মও হয়েছে...কিন্তু কেউই ক্রেডিট দেননি। ব্যাপার না, এটা তো পশ্চিমা লেখকের গল্প। আমার শোতে অনেক বাঙালি লেখকের গল্পকেও নিজেদের আত্মীয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়েছে লোকজন...আমি কিছুই বলিনি। এমনটা হয়েই থাকে।’
*
২০ মিনিট পর।
থম মেরে বিরাট ভবনটার দিকে চেয়ে আছে আসিফ। একটু আগেই নেমে গেছে আর জে সুমন। এই ভবনেরই সাতলাতে ‘রেডিও ঊর্মি’র অফিস, ওই তো দেখা যাচ্ছে ওদের বিলবোর্ড। আর সবার ওপরে সবুজ আলোয় আলোকিত বিলবোর্ডে লেখা ‘যমুনা টাওয়ার’।
এভাবে কেন যেন একটা বিদেশি গল্পকে নিজের গল্প বলে চালিয়ে দিতে গেল সে! ওর আর কী দোষ? ছোট থেকে দেখে এসেছে লেখকেরা বিদেশি হরর গল্পকে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, কোনো ক্রেডিট দেননি...এসব দেখেই ও ভেবেছিল যে আর জে সুমনও ব্যাপারটা ধরতে পারবে না।
গাড়ি থেকে নামল আসিফ। সামনে একটা চায়ের টং, মাথাটা ধরে গেছে। এক কাপ চা খেতে হবে। রাতের বেলা বেশ ফাঁকাই আছে জায়গাটা।
‘এক কাপ চা দেন তো, মামা,’ দোকানে গিয়ে বলল সে।
একমনে চা বানাতে লাগল দোকানের লোকটা, তারপর কাপটা ওর হাতে দিয়ে একনজর তাকাল ওর গাড়ির দিকে।
‘উবার নাকি ভাই?’ প্রশ্ন করল লোকটা।
‘হ্যাঁ, ভাই।’
‘কোন বিল্ডিংয়ে আসছিলেন?’
‘যমুনা টাওয়ার।’
‘যমুনা টাওয়ার? ওইখানে কী কাম?’
‘একজনকে নামায়ে দিলাম…’
‘তাকান তো বিল্ডিংটার দিকে…’
ভবনটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল আসিফ। কোথায় সেই আলোঝলমলে ভবন? পুরোনো অন্ধকার একটা ভবন!
‘যমুনা টাওয়ার এখন খালি…ভাইঙ্গা নতুন কইরা বানাইব…হয়তো আপনার প্যাসেঞ্জার আশপাশের কোনো ভবনে নামসে। আজ থেকে সাত বছর আগে ওই টাওয়ারে আগুন লাগসিল…তারপর থেকে ওইডা ফাঁকাই!’
‘কীহ্! আগুনে পুড়ে কেউ মারা গিয়েছিল?’
‘নাহ্, কেউ মরেনি! তয় বিল্ডিংয়ের এত ক্ষতি হইসিল যে আর ওটা চালু রাখা যায় নাই।’
একটু যেন হতাশ হলো আসিফ। টিপিক্যাল চিন্তাভাবনা ওর। ও ধরে নিয়েছিল সেই আগুনে পুড়ে আর জে সুমন মারা গেছিল আর তার প্রেত ওর সাথে গাড়িতে করে এসেছে!
‘আচ্ছা…আর জে সুমনকে চেনেন?’ কোনোমতে বলল সে।
‘ওই যে ভূতের গল্প শুনাইত? হেরে তো গোটা দেশ চেনে…আহারে! হের ফাংশনডি বন্ধ হইয়া গেছিল! আগুন লাগনের দুই বছর আগে!’
‘এখন উনি কোথায়?’
‘এহুন? হেয় এখন সাংবাদিক। দক্ষিণ আফ্রিকা গেছে…বাংলাদেশের সিরিজ চলতেসে না ওগো লগে? সন্ধ্যায়ও তো রিপোর্ট করল!’
তাড়াতাড়ি চা শেষ করে বিল দিয়ে গাড়িতে উঠে বসল আসিফ। তারপর ইউটিউবে সুমনের নাম লিখে সার্চ দিল।
মাত্র দুই ঘণ্টা আগেই বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে রিপোর্ট করেছে সুমন, ভিডিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওর মুখ! যে মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকায় সে ওর গাড়িতে উঠেছিল কী করে!
আসিফের হুট করে আর জে সুমনের বলা একটা কথা মনে পড়ল, ‘কখন যে কার সাথে কী ভৌতিক কাণ্ড ঘটে যায়, কে জানে?’