এই গুড্ডুবুড়া একবার নিখোঁজ হয়ে গেল।
অপহরণকারীর অবশ্য তেমন কোনো দোষ ছিল না।
গুড্ডুবুড়া নিজেই বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে গিয়েছিল। তখন গুড্ডিবুড়ি খুব ছোট।
মা গোসল করতে ঢুকেছেন বাথরুমে। গুড্ডিবুড়ি আর গুড্ডুবুড়া খেলছে। নিচতলার রাস্তা দিয়ে একটা বাঁদর নিয়ে একটা লোক ডুগডুগি বাজাতে বাজাতে যাচ্ছে। গুড্ডুবুড়া দরজা খুলে বের হয়ে সোজা চলে গেল নিচে।
একদল ছেলেপুলে সেই বাঁদরওয়ালার পিছে পিছে হাঁটছে।
গুড্ডুবুড়া মিশে গেল তাদের দলে। তার গায়ে একটা টিয়া রঙের টি-শার্ট। পরনে একটা হাফপ্যান্ট। পায়ে এক জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেলও নেই, খালি পা।
সে হাঁটছে। বাঁদরওয়ালা ডুগডুগি বাজাচ্ছে।
কিছুদূর যাওয়ার পরে একটা মোড়ে বেশ ভিড় জমে গেল। বাঁদরওয়ালা তার থলেটা কাঁধ থেকে নামিয়ে নিয়ে খেলা দেখাতে শুরু করল। বলল, সবাইকে সালাম দাও। বাঁদর একটা হাত কপালে তুলে ঘুরে ঘুরে সবাইকে সালাম দিতে লাগল। বাঁদরের খেলা জমে উঠেছে। বাঁদর দেখাচ্ছে বাচ্চারা কীভাবে স্কুলে যায়। দেখাচ্ছে, নতুন জামাই কেমন করে রুমাল মুখে তাকায়। ছেলেপুলের দল হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
তারপর বাঁদর সবার সামনে গিয়ে হাত পাতল টাকার জন্য। অনেকেই টাকাপয়সা দিল।
তারপর থলে গুছিয়ে বাঁদরওয়ালা আবারও হাঁটতে লাগল।
গুড্ডুবুড়াও তার পিছে পিছে হাঁটছে। বাঁদরওয়ালা একটা বাসে উঠে পড়ল বাঁদরসমেত।
এখন গুড্ডুবুড়া কই যাবে?
সে নিজেকে আবিষ্কার করল একটা অচেনা রাস্তায় একা।
তখন সে কাঁদতে লাগল।
এদিকে মা বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলেন গুড্ডুবুড়া নাই। হায় আল্লাহ। গুড্ডবুড়া কোথায়?
গুড্ডিবুড়ি বলল, ভাইয়া তো বাইরে চলে গেল। নিচে একটা বাঁদরওয়ালা এসেছিল। ডুগডুগি বাজাচ্ছিল। বারান্দা থেকে তাই না দেখে ভাইয়া বেরিয়ে গেল। আমি কত ডাকলাম, ভাইয়া, ভাইয়া...ভাইয়া শুনলই না।
কী বলিস বুড়ি, তুই ওকে আটকাতে পারলি না?
শুনলই না তো কথা। আটকাব কী?
আমাকে অন্তত ডাকতে পারতি।
তোমাকে ডেকেছি মা। বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করলাম। মা মা...তখন খুব জোরে পানির শব্দ হচ্ছিল। তুমি কিছুতেই শুনতে পেলে না।
নুরুন নাহার বেগম ভেবে পাচ্ছেন না কী করবেন। তিনি এক হাতে গুড্ডিবুড়িকে ধরে ছুটলেন নিচের দিকে। দরজায় তালা দিতে অবশ্য তাঁর ভুল হলো না।
রাস্তায় নেমে এল গুড্ডিবুড়ি আর তার মা।
মা চিৎকার করছেন, গুড্ডুবুড়া, গুড্ডুবুড়া...
তারা ছুটে চলেছে। আপনারা কেউ একজন বাঁদরওয়ালাকে দেখেছেন।
একজন ফেরিওয়ালা বলল, না তো। আমি তো হাঁইটা হাঁইটা ফেরি করতেছি। অহনই আইলাম। আমি তো কোনো বান্দরওয়ালা দেখি নাই।
একজন রিকশাওয়ালাকে শুধালেন নুরুন নাহার, ভাইয়া, একটা বাঁদরওয়ালাকে দেখেছেন।
গুড্ডিবুড়ি বলল, ডুগডুগি বাজাচ্ছিল। বাঁদরের খেলা দেখবেন, বাঁদরের খেলা বলে চিৎকার করছিল।
রিকশাওয়ালা বললেন, না তো, আমি তো কিছু জানি না।
একজন পানওয়ালা ছিল সেখানে, সে বলল, হ্যাঁ, দেখছি তো, ওই পথে গেছে গা!
পানওয়ালা একটা দিক দেখিয়ে দিল।
গুড্ডিবুড়ি আর মা ছুটছেন।
ওই ওদিকে বাঁদরের খেলা হচ্ছে। ভাই, বাঁদরের খেলা কি ওই দিকে হচ্ছে। একে-ওকে জিগ্যেস করছেন আর ছুটছেন মা। তাঁর হাত ধরে ছুটছে গুড্ডিবুড়ি। সে চিৎকার করছে, ভাইয়া ভাইয়া...
রাস্তার ধারে গুড্ডুবুড়া কেঁদে ভাসাচ্ছে।
এই সময় একটা লোক এসে বলল, এই ছেলে, তুমি কাঁদছ কেন?
গুড্ডুবুড়া কিছুই বলতে পারল না।
তখন লোকটার মাথায় একটা আইডিয়া এসে গেল। ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার মা-বাবাকে খবর দিলে কিছু টাকা তো পাওয়া যাবে।
সে গুড্ডুবুড়াকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটতে লাগল। একটা বাস পেয়ে গেল সে। উঠে পড়ল সেই বাসে। বলল, আমরা তোমার বাসায় যাচ্ছি। গুড্ডুবুড়া শান্ত হয়ে বসে রইল লোকটার পাশে।
গুড্ডিবুড়ি আর মা একটু পরে এসে হাজির হলেন বাঁদরের খেলা দেখানোর জায়গাটায়।
না, গুড্ডুবুড়ার লেশমাত্র নেই।
নুরুন নাহার একে-ওকে জিগ্যেস করলেন, একটা বাঁদরওয়ালা এসেছিল এখানে?
হ্যাঁ। বান্দরের খেলা দেখলাম তো আমরা।
একটা বাচ্চা ছেলে এসেছিল?
না তো খেয়াল করি নাই।
মা চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন, ওরে আমার গুড্ডুবুড়া রে, তুই কোথায় গেলি রে। তুই চলে আয় রে।
তাঁরা এ দোকানে যান, ও রেস্টুরেন্টে উঁকি দেন, এ গলিতে ছোটেন, ও গলিতে ছোটেন। না। কোথাও গুড্ডুবুড়া নেই।
লোকটা একটা বাসস্টপে থামল। গুড্ডুবুড়াকে সে বলল, তোমাদের বাসা তো ওই দিকে, না? আসো। তোমাকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাই।
বলে লোকটা গুড্ডুবুড়াসমেত ঢুকে পড়ল একটা গুদামঘরে।
অন্ধকারে প্রথমে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। আস্তে আস্তে চোখ ধাতস্থ হলে দেখা গেল, সেই গুদামঘরে অনেক বইপত্র-কাগজ। আর ঘরের মধ্যে মেলা তেলাপোকা।
গুড্ডুবুড়া কাঁদতে লাগল ভয়ে। লোকটা তাকে জিগ্যেস করল, এই তোমার নাম কী?
গুড্ডুবুড়া নিজের নাম ভুলে গেছে। সে কিছুই বলতে পারছে না।
এই তোমাদের বাসা কোথায়?
গুড্ডুবুড়া তা-ও জানে না। জানলেও ভুলে গেছে। ভুলে না গেলেও তার মুখ থেকে কোনো কথাই বেরোচ্ছে না। তাকে যত ধমক দেওয়া হয়, সে চুপ করে থাকে। মাঝেমধ্যে কাঁদে।
তাকে কলা কিনে দেওয়া হলো। সে খায় না। তাকে চকলেট কিনে দেওয়া হলো। সে হাতেও তোলে না।
লোকটা ভারি মুশকিলে পড়ল। লোকটার বয়স বছর ৩৫, গায়ের রং শ্যামলা, গোলগাল মুখ। তার নাম মজনু মিয়া। তার বাড়িতে বউ আছে, তিনটা ছেলেমেয়ে আছে। সে ছিল একটা পাটের কলের কেরানি। সেই কল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সে পরিপূর্ণ বেকার। কাজের সন্ধানে এখানে-ওখানে ঘোরাঘুরি করে। কম্পিউটারের দোকানে দোকানে ঘোরে। যদি কম্পিউটারে টাইপ করা শেখা যায়, তাহলে হয়তো কোথাও একটা কাজ জুটে যাবে। সে টাইপ মেশিনে টাইপ করতে জানে। কম্পিউটারে জানে না। তবে কম্পিউটার শিখতে তার বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু কম্পিউটারটা সে পাচ্ছে কোথায়?
এই অবস্থায় তার সামনে একটা অন্যায় সুযোগ এসে গেল। একটা বাচ্চাকে সে ধরে আনল। তার পরিচিত এক পুস্তক বাঁধাইয়ের গুদামে সে বাচ্চাটাকে রেখেছে। আর কাউকেই বলেনি। এখন এই বাচ্চার মা-বাবাকে ফোন করে সে বলবে, বাচ্চা পেয়েছি। নিয়ে যান। কিছু টাকাপয়সা বকশিশ দেন। নাহলে ঠিকানা বলেন, নিজেই দিয়ে আসি।
কিন্তু বাচ্চার ঠিকানা সে কিছুতেই বের করতে পারে না। গুড্ডুবুড়া কিছুই বলে না।
বাবু তোমার নাম কী?
গুড্ডুবুড়া কাঁদে। ভ্যা।
এই ছেলে তোমার নাম কী?
ভ্যা ভ্যা।
ভ্যা ভ্যা ভ্যা। তোমার বাড়ি কই?
ভ্যা ভ্যা।
আরে যন্ত্রণা। তোমার বাড়ি কই। তোমার বাবার নাম কী। তোমার টেলিফোন নম্বর কত?
গুড্ডুবুড়া কিছুই বলতে পারল না। তার মাথায় আসলে কিছু ঢুকছেই না।
নুরুন নাহার ফোন করলেন গুড্ডুবুড়ার বাবাকে।
হ্যালো। অসময়ে ফোন করলা যে!
ও গো, সর্বনাশ হয়ে গেছে। গুড্ডুবুড়া হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছে মানে! কী করে হারাল?
জানি না। আমি বাথরুমে ছিলাম। একা একা বেরিয়ে পড়েছে বাঁদরের খেলার দলের পেছনে।
কী বলছ?
ওরে বাবা রে! আমি আর বাঁচব না রে! নুরুন নাহারের চোখের পানি লেগে গেল মোবাইল ফোনে।
আমি এখনি আসছি। তোমরা কোথায়?
গ্রিনরোডের পান্থপথের মোড়ে।
এখন কী করবা?
জানি না।
বাসায় যাও।
গুড্ডিবুড়িকে নিয়ে মা ফিরে এলেন তাঁদের কলাবাগানের বাসায়।
বাবা ছুটে এলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই।
তিনি খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন। এখন কী করা যাবে?
মজনু মিয়া মুশকিলে পড়েছে। এই ছেলে কোনো কথা বলে না। তাকে খাবার এনে দেওয়া হয়েছে। সে কোনো খাবার খায় না। একে নিয়ে সে এখন কী করে?
মজনু মিয়া তার গুদামমালিক বন্ধুর সঙ্গে কি পরামর্শ করবে?
গুদামমালিক লোকটা খুবই শুকনো, ভীষণ লম্বা, তাকে দেখলে মনে হয় একটা রণপায় চড়া মানুষ। তার নাম ফরিদ মিয়া।
গুড্ডুবুড়াকে একলা গুদামঘরে ফেলে রেখে ফরিদ মিয়ার কাছে চলল মজনু মিয়া।
মজনু মিয়ার বাড়ি গুদামঘরের আরেক পাশে। একটা গলির ভেতরে।
মজনু বলল, মিয়া ভাই, বাড়ি আছেন নাকি?
ফরিদ মিয়া বলল, বাড়িত না থাইকা উপায় নাইকা! পায়ের পাতায় বেদনা। পা মাটিতে ফেলবার পারি না! অসময়ে আইলা। ঘটনা কী?
মজনু মিয়া বলল, একটা ঝামেলাত পড়ছি। একটা বাচ্চা কুড়ায়া পাইছি। তারে আইনা রাখছি আপনের গুদামঘরে। অহন তো বাচ্চা খায় না, কথা কয় না। কী করি?
ফরিদ মিয়া বলল, কী আর করবা। থানায় দিয়া আহো, মিয়া।
মজনু বলল, থানাত দিয়া আসুম?
ফরিদ মিয়া বলল, খাড়াও, থানাত দিয়া আহনের কাম নাই। ধরা খাইবা।
মজনু বলল, কেন, ধরা খামু কেন?
ফরিদ মিয়া বলল, পুলিশ তোমারে আটকায়া ফেলাইব। তার বদলে তুমি তারে যেইহানে পাইছ, সেইহানে রাইখা আস।
মজনু বলল, যেইহানে পাইছি সেইখানে রাইখা আসি কেমনে। বাচ্চা খালি কান্দে। রাইখা আইতে গেলে কান্নাকাটি কইরা পিচ্চি আমারে ছেলেধরা প্রমাণ কইরা ছাড়ব। পাবলিকের মাইর খাইয়া চিড়াচ্যাপটা হইয়া যাব।
ফরিদ মিয়া বলল, তাহলে অরে বাড়ির সামনে ছাইড়া দেও।
মজনু বলল, মিয়া ভাই, আরেকটা কাজ করলে কেমন হয়। আজকার মতো পোলাটারে রাইখা দেই। কাইলকা সব পেপার-পত্রিকায় দেখুম কার বাচ্চা হারাইছে। তারপর তারে দিয়া আসুম বাপ-মায়ের কাছে। যদি কিছু বকশিশ পাই। চাকরিবাকরি নাই, টাকাপয়সার তো দরকার।
ফরিদ বলল, একটা দিন রাইখা দিবা। বিপদ-আপদ যদি কিছু হয়।
মজনু বলল, যেদিকে তাকাই, সেই দিকেই বিপদ। বিপদ ছাড়া তো আর কিছু দেখিটেখি না। বারাইলেও বিপদ। ঘরে থাকলেও বিপদ। আপনে অনুমতি দেন। ঘরেই থাকি। এইহানেই পোলাডারে লইয়া সারা রাত থাকি।
ফরিদ মিয়া বলল, না, আমারে তুমি বিপদে ফেইল না। পোলারে তুমি বাড়ি লইয়া যাও।
মজনু মিয়া বলল, বাড়ি লইয়া যামু, বাড়ি গিয়া কী কমু?
ফরিদ মিয়া বলল, বাড়ি গিয়া কইবা পোলা কুড়ায়া পাইছ।
মজনু মিয়া বলল, না, ফরিদ ভাই। এইটা আমি পারুম না। আমার বউরে আমি ডরাই। বাড়িতে চাল-ডাল নাই। এর মধ্যে আরেকটা পোলা লইয়া গেলে বউ আমারে ঝাটা দিয়া পিটাইব।
ফরিদ মিয়া বলল, বউয়ের পিটানি খাও। তোমার হজম হইব। নাইলে আমি পুলিশে খবর দিমু। পুলিশের পিটানি কিন্তু হজম হইব না।
আলতাফ হোসেন সাহেব ছুটে গেলেন ধানমন্ডি থানায়। আমার ছেলে গুড্ডুবুড়া হারিয়ে গেছে। আপনারা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।
পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, কীভাবে হারিয়ে গেল।
আলতাফ হোসেন যা জানেন, বিস্তারিত বললেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলল, আপনি একটা ডায়েরি করে রাখেন। আপনার ছেলে নিজে নিজে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। শাস্তি তো আপনাদেরই আগে হওয়া দরকার। আমরা সব কিডন্যাপের কেস নিয়ে অস্থির। আর আপনার ছেলে বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে বের হয়ে গেল।
আলতাফ হোসেন মাথা নিচু করে রইলেন। ছেলে হারানোর শোকে এমনিতেই তাঁর পাগল পাগল অবস্থা। তার ওপর কী সব বলছেন পুলিশ কর্মকর্তা।
আলতাফ হোসেন সাহেব ডায়েরি লিখলেন। তারপর বললেন, আমি কি এখন মাইকিং করব? পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব।
পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, দিতে পারেন। দেওয়াই তো উচিত। কিন্তু তাতে একটা সমস্যা। আপনার ফোন নম্বরে অহেতুক ফোন কল আসতে থাকবে। তারা বলবে, আপনার ছেলে তাদের কাছে আছে। টাকা নিয়ে চলে আসেন। টাকা দিবেন। কিন্তু ছেলে পাবেন না।
আলতাফ হোসেন বললেন, আপনারা কী করবেন? আপনারা সেই লোককে ধরবেন। টাকা নিয়ে যদি বাচ্চা না দেয়, তাকে গ্রেপ্তার করবেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, আমরা তো তাই করার জন্য প্রস্ত্তত আছি। কিন্তু শিশুদের গার্জেনরা সব সময় পুলিশকে এড়িয়ে গিয়ে নিজেরাই টাকাপয়সা দিয়ে থাকে।
আলতাফ হোসেন বললেন, এখন আমার কী করা উচিত।
আমরা ঢাকার আর দেশের সব থানায় আপনার ছেলের হারিয়ে যাওয়ার খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। দেখা যাক, অবস্থা কী দাঁড়ায়!
মজনু মিয়া গুড্ডুবুড়াকে নিয়ে চলল তার নিজের বাড়িতে। কল্যাণপুর বস্তির ভেতরে তার বাসা। এক রুমের বাসা। পাশেই একটা ছোট্ট রান্নাঘর আর বাথরুম। এই এক রুমের বাসায় তিন ছেলেমেয়ে ও বউ নিয়ে গাদাগাদি করে থাকে মজনু মিয়া। বিকেলবেলা গুড্ডুবুড়াকে কোলে করে নিয়ে সে বাসায় এসে হাজির।
দেখো, কাকে আনছি? মজনু মিয়া বলে।
তার বউ বলে, এইডা আবার কেডা?
মানষের পোলা। কী সুন্দর না?
গুড্ডুবুড়া সারা দিন কিছু খায় নাই। শুধু ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছে। তার মুখ দিয়ে এখন কোনো টুঁ শব্দটিও বেরোচ্ছে না।
এইটারে কোনহান থাইকা ধইরা লইয়া আইলা?
ধইরা আনি নাই। কুড়ায়া পাইছি।
কও কী? কার বাচ্চা?
জানি না।
মানষের বাচ্চা কুড়ায়া পাইছ? হায় হায় কোন মায়ের বুক খালি কইরা আনছ? মায়া-দয়া নাই? যাও যাও, রাইখা আসো?
কই রাইখা আসুম?
যেহানে পাইছ?
রাস্তায় পাইছি।
তাইলে রাস্তায় রাইখা আসো।
হাইজাকাররা যদি ধরে?
হাইজাকার ধরলে হে অর বাপ-মার কাছে রাইখা আইতে পারব। হের তো বুদ্ধি আছে। তোমার তো বুদ্ধি নাই। আহারে, কার না কার পোলা, একেরে নেতায়া পড়ছে!
আরে নেতায়া পড়ব না। সারা দিন কিছু খায় নাই।
সারা দিন খায় নাই। কখন হেরে পাইছ।
দুপুরবেলা।
তাইলে এতক্ষণ কই আছিলা।
পোলারে খাওনের চেষ্টা করছি।
ও বাপ, তুমি কার পোলা গো, তোমার নাম কী? কী খাইবা? মজনুর বউ জিগ্যেস করে গুড্ডুবুড়াকে। গুড্ডুবুড়া কোনো কথা বলে না।