জাদুকরের দাঁতব্যথা
ঘটনাটা সেদিন বিকেলের। ঝকঝকে সেই রোদেলা বিকেলে অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটল ব্ল্যাকবারি শহরে।
পৌর লাইব্রেরিয়ান মিস্টার আর্নল্ড সাটল গিয়েছিলেন চিলেকোঠায়। সেখানে সংরক্ষিত পুরোনো বইপত্তর বাছাই করছিলেন। প্রায় সব রকম বই–ই ছিল। সেগুলোর কিছু সংগ্রহ করা হয়েছে পুরোনো বাড়ি থেকে। কিছু কেনা হয়েছিল বেশ সস্তায়। বেশির ভাগ বই বাছাই করে লাইব্রেরির আলমারির তাকগুলোয় আলাদা করে সাজিয়ে রাখা গেল। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, একটা-দুটি এমন বই থাকে, যেগুলো কোনো না কোনো কারণে চিলেকোঠায় সংরক্ষণ করতে হয়। লাইব্রেরির আলমারিতে সেগুলোর জায়গা হয় না।
‘পকেট মারার কলাকৌশল’ এবং ‘পশুপাখি ও ভেড়া চুরিবিদ্যা’—তেমনই কিছু বই। বই দুটি দেখে মিস্টার সাটল আপনমনেই বলে উঠলেন, ‘এগুলো আবার কী? বইয়ের কী ছিরি। এর আগে তো কখনো এমন বই দেখিনি।’
এরপর বাক্স থেকে পুরু ধুলোজমা একটা বই বের করলেন মিস্টার সাটল। বইটা চামড়ায় বাঁধানো। পিতলের কবজাও আছে তাতে। ন্যাকড়া দিয়ে ওপরের ধুলোর স্তর মুছলেন তিনি। এবার প্রায় ক্ষয়ে যাওয়া সোনার অক্ষরে লেখা শিরোনামটা চোখে পড়ল। তাতে লেখা: ব্ল্যাক উইলিয়াম ডি ব্ল্যাকবারির জাদুর বই।
‘দারুণ ব্যাপার তো,’ আপন মনেই বলে উঠলেন মিস্টার সাটল। আলতো করে বইটা খুললেন। টাইটেল পেজে প্রায় বিবর্ণ একটা লেখা চোখে পড়ল। পুরোনো দিনের ইংরেজিতে লেখা বলে মনে হলো। আরও কয়েকটা পৃষ্ঠা ওল্টালেন তিনি। পৃষ্ঠাগুলো বেশ মোটা আর ভারী। সেগুলোতে অদ্ভুত সব ছবি ও লেখা। সম্ভবত জাদুবিদ্যার কিছু হবে।
তিনি বেশ জোরেই বলে উঠলেন, ‘এসবের মানে কী! বুঝতে পারছি না। জাদুবিদ্যার বলে মনে হচ্ছে।’ একটা পৃষ্ঠা থেকে তিনি পড়ার চেষ্টা করলেন, ‘ইগনি প্যাসেজ ইনফারনি ইহথোসিকেল গিল পার...’
পড়া শেষ হওয়ার আগেই আকাশের সূর্যকে ঢেকে দিয়ে উড়ে গেল একখণ্ড মেঘ। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। ধোঁয়া আর আলোর ঝলকও দেখা গেল চিলেকোঠার ঘরে। হঠাৎ ঘরের ভেতর একটা লম্বা কালো মূর্তিকে শূন্য থেকে উদয় হতে দেখা গেল। স্রেফ ভোজবাজির মতো।
‘হায় ঈশ্বর! আপনি কে?’ চিৎকার করে উঠলেন মিস্টার সাটল।
তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে পুরোপুরি কালো দেখাচ্ছিল। কারণ, লোকটার গায়ে লম্বা কালো কোট। মাথায় কালো হ্যাট। এমনকি তার মুখেও লম্বা, কালো দাড়ির জঙ্গল। লোকটা বিড়বিড় করে কিছু একটা বলল। কিন্তু মিস্টার সাটল বিন্দুবিসর্গও বুঝতে পারলেন না। এরপর মিস্টার সাটলের সামনে রাখা বইটার দিকে চোখ পড়ল লোকটার। হঠাৎই তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বইটা ছিনিয়ে নিয়ে প্রচ্ছদে লেখা নামটির দিকে আঙুল নির্দেশ করল লোকটা।
‘ধুত্তোরি! কথা ঠিকই বলেছেন!’ মেয়র বললেন। ‘মাই লর্ড, চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, মেঘের মতো ঘন কুয়াশা গোটা শহরের চারপাশে ঘিরে আছে। যারাই ওই মেঘের ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করছে, তারা আবারও ব্ল্যাকবারির রাস্তায় নিজেদের আবিষ্কার করেছে।’
‘ব্ল্যাক উইলিয়াম ডি ব্ল্যাকবারি?’ মিস্টার সাটল জিজ্ঞেস করলেন। ‘জাদুর বই? মানে...’ এক পা পিছিয়ে আবার বললেন, ‘আপনি কি জাদুকর বা ওই রকম কিছু নাকি? ওসবে অবশ্য আমার বিশ্বাস নেই।’
লোকটা কোনো জবাব দিল না। তবে একটা হাত একটু দোলাল। তাতেই একটা ডিম, তিন পাওয়ালা একটা টুল আর এক বান্ডিল সিল্কের রুমাল শূন্য থেকে হাজির হলো সেখানে।
‘এটা ম্যাজিক নাকি!’ মিস্টার সাটল বলে উঠলেন। অবশ্য চোখের সামনে এসব ঘটতে দেখে ব্যাপারটা যে কী, তা তিনি নিজেই বেশ বুঝতে পারছিলেন।
ব্ল্যাক উইলিয়াম চিলেকোঠার চারপাশে কড়া চোখে তাকাতে লাগল। তারপর তাকাল মিস্টার সাটলের দিকে। তার চোখমুখের হাবভাব দেখে বোঝা গেল, চারপাশের জিনিসপত্র দেখে তার মন ভরেনি। কারণ, লোকটা তার একটা হাড় জিরজিরে হাত ওপরে তুলে বিড়বিড় করে কী যেন বলছে। তাতে কোথাও যেন দড়াম করে কিছু একটা ভেঙে গেল। আচমকা কোথা থেকে যেন ভেসে এল সবুজ ধোঁয়ার মেঘ। সঙ্গে সঙ্গে ব্ল্যাক উইলিয়ামও অদৃশ্য হয়ে গেল সেখান থেকে।
নিজের দিকে তাকালেন মিস্টার সাটল। এতক্ষণ তিনি একটা সাধারণ ধূসর রঙের স্যুট পরেছিলেন। ব্যাপারটা তাঁর বেশ মনে আছে। কিন্তু এখন তাকিয়ে দেখলেন, তাঁর পায়ে উজ্জ্বল লালরঙা আঁটসাঁট মোজা। বেঢপ আকৃতির ব্যাগি ট্রাউজার। একটা উজ্জ্বল সবুজরঙা জ্যাকেট। তাতে আবার একগাদা সোনার কারুকাজ। কোমরে তলোয়ারসহ একটা বেল্টও বাঁধা। নিজের মাথার দিকে দেখার চেষ্টা করলেন। আশ্চর্য! সেখানে পালকযুক্ত কালো মখমলের একটা ক্যাপ।
‘আমাকে নিশ্চয়ই বেকুবের মতো লাগছে।’ কথাটা বলে ধপ করে বসে পড়লেন মিস্টার সাটল।
কয়েক মিনিট পর চিলেকোঠা থেকে মূল লাইব্রেরিতে নামতে লাগলেন তিনি। এসব উদ্ভট পোশাকে তাঁকে কেউ দেখার আগেই নিজের অফিসরুমে ঢুকে যেতে চান। কিন্তু তাঁর আসলে চিন্তিত হওয়ার কিছু ছিল না। কারণ, মিস ব্লেনকিনসপ সাধারণত কাউন্টারের ওপাশে বসে বইপত্রে সিল মারেন, তিনি তখন খুবই ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর পরনে তখন মধ্যযুগের ব্রিটেনের রানি প্রথম এলিজাবেথ যুগের লম্বা পোশাক। তাতে মুক্তা ও নীলা বসানো। মাথায় হীরা বসানো ছোট্ট একটা ক্যাপ।
‘কালো আলখাল্লা পরা একটা লম্বা লোককে কি এদিক দিয়ে যেতে দেখেছেন?’ মিস্টার সাটল জিজ্ঞেস করেন।
হ্যাঁ, দেখেছি। লোকটা...হায় ঈশ্বর! মিস্টার সাটল, এই পোশাকে আপনাকে উদ্ভট দেখাচ্ছে! একেবারে স্যার ওয়াল্টার র৵ালের মতো! আপনার হাতে ওটা কী বই?’
‘আমার ধারণা, বোকার মতো একটা কাজ করে ফেলেছি আমি,’ লাইব্রেরিয়ান মিস্টার সাটল বললেন। ‘প্রথমত, আমাকে কাপড় বদলাতে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে। তারপর ব্ল্যাকবারির ব্ল্যাক উইলিয়াম সম্পর্কে কিছু খোঁজখবর করা দরকার।’
লাইব্রেরির দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁর প্রায় দমবন্ধ হয়ে এল। রাস্তাজুড়ে অসংখ্য গাড়ি থেমে আছে। কোনো গাড়ির ইঞ্জিন চালু নেই। গাড়িগুলোর ড্রাইভাররা নিজ নিজ গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে। সবার পরনে প্রায় পাঁচ শ বছর আগের এলিজাবেথ যুগের পোশাক। গাড়ি চালানোর সময় গায়ে এ ধরনের পোশাক খুবই বিরক্তিকর।
আশ্চর্য! রাস্তার ওদিকের বাড়িঘরও বদলে গেছে। অভিজাত লাল ইটের বদলে সেখানে টিউডরদের অর্ধেক কাঠনির্মিত বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে। সেই মধ্যযুগের বাড়িঘরের মতো।
‘এই তলোয়ারের কসম!’ শপথ নিলেন তিনি। ‘কী অদ্ভুত! আমি এ কথা বললাম কেন?’
অচিরেই ব্ল্যাকবারি শহরটা উদ্ভট দেখাতে লাগল। প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহর থেকে অনেক কিছুই অদৃশ্য হয়ে গেল। স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মতো। প্রথমেই অদৃশ্য হলো টেলিভিশন। এরপর বৈদ্যুতিক তার এবং ট্রাফিক লাইট।
এর মধ্যে মিস্টার সাটল আর মিস ব্লেনকিনসপ তাড়াহুড়ো করে রওনা দিলেন টাউন হলের দিকে। শহরের মেয়র সেখানেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁর গায়ে সচরাচর গাঢ় ধূসররঙা স্যুট থাকে। কিন্তু এখন পরে আছেন সোনায় মোড়ানো ভারী বেগুনি ফারের পোশাক। চিফ ইন্সপেক্টর জেথাওয়াও আছেন সেখানে। তাঁর গায়ে টাওয়ার লন্ডনের লাল রঙের পোশাক।
‘কোনো রসিকতা করছে কেউ।’ তিনি বলে উঠলেন। ‘আমার ইউনিফর্ম এইমাত্র কীভাবে যেন বদলে এ রকম হয়ে গেছে। এই বর্শা দিয়ে আমি লাইটবাল্ব ভেঙেছি।’ হাতের লোহার বর্শাটা দুলিয়ে বললেন ইন্সপেক্টর। এ ধরনের বর্শা এখনো টাওয়ার লন্ডনের আচার অনুষ্ঠানে সৈন্যদের হাতে দেখা যায়। ‘অবশ্য এখন কোথাও বিদ্যুৎ নেই। তাই বাল্ব ভেঙে ফেললেও কিছু যায় আসে না।’
‘সবকিছু পুরাতন আমলের হয়ে যাচ্ছে।’ মেয়র বললেন। ‘ওদিকে আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা খুবই বিরক্ত। ট্যাংকগুলো হয়ে গেছে সাবেকি আমলের পিতলের কামান। আর সৈন্যদের গায়ে এখন বর্ম আর চামড়ার পায়জামা। এর চেয়ে বাজে ব্যাপার আর কী হতে পারে।’
মিস্টার সাটল ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে বললেন, ‘আমার ধারণা, আপনি ব্ল্যাকবারি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও যেতে পারবেন না! বাজি ধরে বলতে পারি!’
‘ধুত্তোরি! কথা ঠিকই বলেছেন!’ মেয়র বললেন। ‘মাই লর্ড, চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন, মেঘের মতো ঘন কুয়াশা গোটা শহরের চারপাশে ঘিরে আছে। যারাই ওই মেঘের ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করছে, তারা আবারও ব্ল্যাকবারির রাস্তায় নিজেদের আবিষ্কার করেছে।’
‘আপনি তো রানি এলিজাবেথ যুগের ভাষায় কথা বলছেন,’ মিস্টার সাটল বললেন। হুট করে বসে পড়লেন তিনি। ‘অবশ্য আমি নিজেও তাই বলছি।’ টেবিল থেকে বইয়ের স্তূপ সরিয়ে তিনি বললেন, ‘আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। আপনারা কি কেউ ব্ল্যাক উইলিয়াম ডি ব্ল্যাকবারির নাম শুনেছেন?’
সবাই এদিক-ওদিক মাথা দোলাল।
‘এইমাত্র তার সম্পর্কে পড়েছি আমি। রানি প্রথম এলিজাবেথের শাসনামলে এখানে থাকত সে। নামকরা এক জাদুকর ছিল। লাইব্রেরিতে তার জাদুর বই খুঁজে পেয়েছি। বইটা পড়তে গিয়েই হুট করে লোকটা এসে হাজির হলো।
‘এ মুহূর্তে লোকটা ব্ল্যাকবারিতেই আছে। মানে ব্ল্যাকবারিতেই। আমার মনে হয়, লোকটার স্মৃতিতে শহরটা একসময় যে রকম ছিল, সে রকম অবস্থাতেই ফিরিয়ে নিতে চাইছে। তাই এখন শুধু চার শ বছর আগের কিংবা তার কাছাকাছি সময়ের জিনিসপত্রই এই শহরে থাকবে।’
‘তাহলে এটাই হলো আসল কাহিনি!’ মেয়র বললেন।
‘ভয় পাচ্ছি যে কী ঘটেছিল, সেটা যদি আমরা মনে না রাখি, তাহলে সবকিছু এলিজাবেথ যুগের মতো ভাবতে শুরু করব। ব্ল্যাক উইলিয়াম আমাদের ওই রকম বানাতে চাইছে।’ মিস্টার সাটল বললেন।
ঠিক তখন ওপরের দিকে কোথায় হুড়মুড় করে কিছু একটা ভেঙে পড়ার শব্দ শোনা গেল। সিঁড়ির দিকে দৌড়াতে শুরু করল সবাই। টাউন হলের চিলেকোঠায় একগাদা জঞ্জালের ভেতর একটা লোককে বসে থাকতে দেখা গেল।
একটা হেলিকপ্টারের অর্ধেক অংশ ছাদের ওপর ঝুলে আছে।
লোকটা তাদের দিকেই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিল। বিস্ময়ের সঙ্গে সে বলে উঠল, ‘আপনার সবাই এই অদ্ভুত পোশাক পরে আছেন কেন?’
‘পোশাকগুলো কি স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না?’ পাল্টা প্রশ্ন করলেন মিস্টার সাটল। কারণ, লোকটার গায়েও চামড়ার বর্ম। আরেকটু কাছ থেকে হেলিকপ্টারের অবস্থা ভালোভাবে বোঝার জন্য চিলেকোঠার র৵াফ্টার বেয়ে ওপরে উঠলেন মিস্টার সাটল।
‘এইমাত্র আমি জাদু ব্যবহার করলাম!’ চিফ ইন্সপেক্টরকে টেনে তুলতে তুলতে বললেন মিস্টার সাটল। ঘোড়ার পিঠে তাকে উঠতে সাহায্য করলেন তিনি। ‘ব্ল্যাক উইলিয়ামের ধারণা দৈত্য-দানব আছে। তাই এদের দেখা যাচ্ছে। কাজটা আমিও করতে পারি।’
‘পাঁচ মিনিট আগেও আমি রয়্যাল এয়ারফোর্সের ইউনিফর্ম পরেছিলাম!’ পাইলট বলল। ‘আসলে কী হচ্ছে, বলুন তো? আমাকে ফ্লাইওভারের কাছে পাঠানো হয়েছিল, লোকজন ব্ল্যাকবারিতে ঢুকতে পারছে না কেন, তা খতিয়ে দেখতে। শহরের চারপাশে কুয়াশা ঘিরে আছে।’
তাকে ঘটনাটা খুলে বলা হলো। কিন্তু পাইলট সে কথা বিশ্বাস করতে চাইল না।
‘সবটাই সত্যি।’ মিস্টার সাটল বললেন। ‘বাজি ধরে বলতে পারি, তোমার হেলিকপ্টারটা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে, তাই না? কোনো কিছুই এখন কাজ করবে না বলে মনে হচ্ছে।’
‘হায় ঈশ্বর! আপনার কথাই ঠিক। এমনকি রেডিওটাও কাজ করছে না!’
‘মনে হচ্ছে, আমি ব্ল্যাক উইলিয়ামকে বুঝতে শুরু করেছি।’ নিজের হাত দুটি ডলতে ডলতে বললেন মিস্টার সাটল। ‘দেখলেন তো, হেলিকপ্টার আর রেডিও বা এ ধরনের জিনিসপত্রের কথা আজ থেকে সাড়ে চার শ বছর আগে ভাবাই যেত না। কাজেই ব্ল্যাক উইলিয়ামের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী ওগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই। সে কারণেই এসব জিনিস এখন কাজ করছে না।’
‘আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। তবে রানি এলিজাবেথের যুগে বাস করতে হলেও আমি কিছু মনে করব না। সময়টা খুবই দারুণ বলে মনে হচ্ছে।’ ফস করে বলে বসলেন মেয়র। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিজের গায়ের জামাকাপড় দেখছিলেন তিনি। ‘এমনকি এই কাপড়চোপড়গুলোও আমার খুব পছন্দ হয়েছে।’
‘কিন্তু আমরা তো আসলে এলিজাবেথের যুগে ফিরে যাইনি। শুধু একটা জাদুর মন্ত্রের ভেতর আটকা পড়েছি।’ মিস্টার সাটল বললেন।
‘চলুন, ব্ল্যাক উইলিয়ামকে খুঁজে বের করা যাক। তাকে ঘটনাটা দেখানো যাক।’ চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া বললেন। তাঁর সঙ্গে দ্রুত বাইরে ছুটে গেলেন মিস্টার সাটল। আর অন্য দুজন হেলিকপ্টারের পাইলটকে সাহায্য করতে লাগল।
এর মধ্যে ব্ল্যাকবারি শহরটা আরও খানিকটা বদলে গেছে। কিন্তু রাস্তার বেশির ভাগ মানুষই এখনো তা বুঝতে পারেনি। ভোজবাজির মতো রাস্তার ওপাশে একটা মেলা উদয় হয়েছে। সেখানে বাজিকর, নাচুনে ভালুক আর কিছু মানুষ এক তির ছোড়া প্রতিযোগিতায় মগ্ন।
‘ব্যাপারটা বেশ মজার নাকি!’ মুখ ফসকে বলে ফেললেন চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া।
‘আমি জানি না’, বিড়বিড় করলেন মিস্টার সাটল। ‘ভালো ডাক্তার নেই, পরিষ্কার খাওয়ার পানি নেই...খুবই অনিশ্চিত সবকিছু।’
আস্তাবল থেকে তাঁরা একজোড়া ঘোড়া জোগাড় করল। আগে যেখানে ব্ল্যাকবারি উইজো গ্যারাজ ছিল, সেখানেই এখন আস্তাবলটার ঠিকানা।
‘ব্ল্যাকবারির ইতিহাস বই অনুসারে, ব্ল্যাক উইলিয়াম থাকতেন ইভেন মুর নামের একটা দুর্গে।’ মিস্টার সাটল বললেন। ‘তবে আমাদের আরও সাবধান হওয়া দরকার। কারণ, লোকটা সম্ভবত ডাইনি, দৈত্য, রাক্ষস—সবকিছুতেই বিশ্বাস করত। তাই আমাদেরও এগুলোর জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত।’
‘কিন্তু এদের তো কখনো অস্তিত্ব ছিল না।’ চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া প্রতিবাদ করে উঠলেন।
‘আমি জানি। কিন্তু লোকটা যদি ভেবে বসে যে তাদের অস্তিত্ব ছিল, তাহলে ওদের এখন দেখা যেতেও পারে। তাই সতর্ক থাকা ভালো।’ মিস্টার সাটল বললেন।
ব্ল্যাক উইলিয়ামের খোঁজে ঘোড়ার চেপে ইভেন মুরের দিকে যেতে লাগলেন তাঁরা। যাত্রাটা বেশ অদ্ভুত মনে হচ্ছিল। রাস্তার দুপাশের সবকিছু হঠাৎ করে বেশ পুরোনো ধাঁচের দেখা যাচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে এখানে-ওখানে একুশ শতকের ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত মনের ভুলে ব্ল্যাক উইলিয়াম ওই জায়গাগুলো স্পর্শ করেনি। একটা ডাকবাক্স, কয়েশ শ মিটার রেললাইন এবং একখণ্ড রাস্তাও রয়েছে। রাস্তায় সাদা দাগও দেখা যাচ্ছে।
ঘোড়ায় পিঠে চেপে যেতে যেতে ব্ল্যাক উইলিয়ামের বিশালাকৃতির জাদুর বইটা পড়ছিলেন লাইব্রেরিয়ান মিস্টার সাটল। এদিক-সেদিক ভীত চোখে তাকাচ্ছিলেন চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া।
‘যতটুকু বুঝতে পারছি, কেউ এই মন্ত্রটা না পড়া পর্যন্ত ব্ল্যাক উইলিয়াম জাদুবলে নিজেকে শূন্যে অদৃশ্য করে রাখবে।’ লাইব্রেরিয়ান বললেন।
‘আমার ইচ্ছে হচ্ছে, এই জায়গা থেকে প্রস্থান করি...’ চিফ ইন্সপেক্টর বলতে শুরু করলেন।
‘সাবধান! আপনি আবারও এলিজাবেথ যুগের ভাষায় কথা বলছেন!’ মিস্টার সাটল বললেন। ‘মনোযোগী হন! মন্ত্রের মোহে পড়বেন না। তাহলে আমরা কেউই এখান থেকে কখনো বের হতে পারব না!’
ঠিক তখনই পাশের ঝোপে একটা দৈত্য দেখা গেল। নিশ্বাসের সঙ্গে ফোঁস ফোঁস করে আগুন ছাড়ছে সে। ৪ মিটার লম্বা দৈত্যটা ঝোপ থেকে লাফিয়ে তাদের সামনে এসে প্রচণ্ড হুংকার দিল।
আতঙ্কে নিজের ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন ইন্সপেক্টর জেথওয়া। বিলাপ করতে করতে তিনি বললেন, ‘কিন্তু আমি তো এসবে বিশ্বাস করি না! এদের তো অস্তিত্ব নেই!’
‘আপনি করেন না, কিন্তু ব্ল্যাক উইলিয়াম বিশ্বাস করে, এসব আছে। সেটাই আসল কারণ।’ মিস্টার সাটল বললেন। বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে দ্রুত চিন্তা করছেন তিনি। দৈত্যটা তখন এগিয়ে যাচ্ছিল ইন্সপেক্টর জেথওয়ার দিকে। তিনি দৈত্যটার দিকে একটা আঙুল তাক করে বিড়বিড় করে মন্ত্র উচ্চারণ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে হিস হিস শব্দ ভেসে এল। তীব্র নীল শিখা দৈত্যকে একটা খাঁচার মতো ঘিরে ধরল। চিৎকার করতে করতে পালিয়ে গেল অদ্ভুত প্রাণীটা।
‘এইমাত্র আমি জাদু ব্যবহার করলাম!’ চিফ ইন্সপেক্টরকে টেনে তুলতে তুলতে বললেন মিস্টার সাটল। ঘোড়ার পিঠে তাকে উঠতে সাহায্য করলেন তিনি। ‘ব্ল্যাক উইলিয়ামের ধারণা দৈত্য-দানব আছে। তাই এদের দেখা যাচ্ছে। কাজটা আমিও করতে পারি।’
১০ মিনিট পর তাঁরা জাদুকরের বাড়ি খুঁজে পেলেন। জঙ্গলের শেষ প্রান্তে দুর্গের মতো একটা বাড়ি সেটা। বাড়িটা জ্বলজ্বল করছে বলে মনে হল। চারপাশে আরও জাদুমন্ত্র ঘোরাফেরা করছে সম্ভবত। এলিজাবেথ যুগের চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করতে কঠোর মনোযোগ দিতে হলো মিস্টার সাটলকে।
‘আশা করি প্রস্তুত আছেন।’ তিনি বললেন।
‘হ্যাঁ, আছি।’ চিফ ইন্সপেক্টর বললেন।
জাদুকরের বাড়ির বিশাল ওক কাঠের দরজা নক করলেন মিস্টার সাটল।
ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তুলে দরজাটা একা একাই খুলে গেল। ভয়ে ভয়ে ভেতরে পা রাখলেন মিস্টার সাটল আর চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া। বিশাল হলঘরটা বেশ সাধারণ বলে মনে হলো। ওক কাঠের প্যানেলে ঢাকা। একপাশে বেশ কয়েকটি আর্মার স্যুট দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
‘এখন ব্ল্যাক উইলিয়ামকে খুঁজে বের করতে হবে।’ মিস্টার সাটল বললেন। কারুকাজ করা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা। কাজটা একটু কঠিন। কারণ, ইন্সপেক্টর জেথওয়া যতটা সম্ভব মিস্টার সাটলের গা ঘেঁষে থাকার চেষ্টা করছেন। ওদিকে অন্ধকার কোণ থেকে একটা ছায়া নড়ে উঠল।
‘একটু দাঁড়ান।’ জাদুর বইটা খুলে মিস্টার সাটল বলে উঠলেন। ‘আলো নিয়েও এখানে একটা মন্ত্র আছে। এই তো পেয়েছি:
‘মারাদা
ইগনিফেরা! উইজা
টুংস্টুনফিল্মান্টল!’
সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল সবুজ আলো জ্বলে উঠল বাতাসে। সেই আলোতে গোটা সিঁড়ি আলোকিত হয়ে উঠল। ওপরে ওঠার পর আরেকটা দরজা পেলেন তাঁরা। সেটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেললেন দুজন। তীব্র কটু গন্ধ ভক করে তাঁদের নাকে এসে লাগল।
এটা ব্ল্যাক উইলিয়ামের জাদুর ঘর বলে মনে হলো। ঘরটার ছাদ অনেক উঁচুতে। ঘরের এক কোণে পিতলের কড়াইতে আগুন জ্বলছিল। ছাতার স্ট্যান্ডে জাদুর তলোয়ার রাখা। দেয়ালের কাছে অনেকগুলো কাপবোর্ড। কাপবোর্ডগুলোয় অদ্ভুত সব জিনিস ভর্তি জারে ঠাসা। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিকর্নের শিং, শুকনো মৃত বিটল, উটের খুর আর বাঁধাকপি। দেয়ালে জাদুর বৃত্ত আর রাশিচক্রের প্রতীক আঁকা। একটা বুককেসও দেখা গেল। সেখানে পুরোনো চামড়ায় বাঁধা বইয়ে ঠাসা। একটা বইয়ের শিরোনাম দেখে শিস দিয়ে উঠলেন মিস্টার সাটল।
‘এটাই আমাদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দেবে।’ তিনি বলে উঠলেন।
এগুলো ছাড়া ঘরের বাকি অংশ খালি। ঘরের একমাত্র শব্দ আসছিল আগুন থেকে। কয়লা পোড়ার কারণে হচ্ছিল শব্দটা।
‘জাদুকর যদি এখন ফিরে আসে?’ ভয়ার্ত গলায় বললেন চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া।
‘তাকে খারাপ কিছু বলে মনে হচ্ছে না।’ মিস্টার সাটল বললেন। ‘তার সঙ্গে দেখা হলে মন্দ হয় না।’
হঠাৎ ঘরটার ভেতর একটা বিস্ফোরণের মতো শব্দ শোনা গেল। হলুদ ধোঁয়ার মেঘের ভেতর দিয়ে এসে হাজির হলো জাদুকর ব্ল্যাক উইলিয়াম। তাকে দেখতে খুব একটা ভয়ংকর বলে মনে হলো না। বরং বেশ বিরক্ত দেখাচ্ছিল। মুখের একটা পাশ চেপে ধরে গোঙাচ্ছিল সে।
‘কী হয়েছে বুড়ো?’ জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার সাটল।
গোঙাতে গোঙাতে জাদুকর বলল, ‘সাড়ে চার শ বছর ধরে এই দাঁতটা আমাকে ভোগাচ্ছে।’
‘হায় ঈশ্বর! আমার তো মনে হচ্ছে বুড়োর দাঁতব্যথা।’ মিস্টার সাটল বললেন।
‘আমার দাঁত!’ চিৎকার করে বলল ব্ল্যাক উইলিয়াম।
‘আহারে বেচারা। এ জন্য আপনি কি কিছু ব্যবহার করেছেন?’
‘সবকিছু। কোনো কিছু বাদ নেই।’ দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল বুড়ো জাদুকর। ‘গাছের শিকড় থেকে শুরু করে লতাপাতা, সেদ্ধ শিম আর চাঁদের আলোয় জাদুর তুকতাক—সবকিছু।’
চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া এতক্ষণে একটু স্বস্তি পেলেন। কারণ, দাঁতের ব্যথায় কাতর জাদুকরকে খুব একটা ভয়ংকর বলে মনে হচ্ছিল না।
‘সাড়ে চার শ বছর ধরে দাঁতের ব্যথা! এতে রসিকতার কিছু নেই।’ মিস্টার সাটল বললেন।
‘ঠিক বলেছেন। সে কারণেই আমি মন্ত্র পড়ে নিজেকে শূন্যে মিলিয়ে গিয়েছিলাম।’ জাদুকর ব্ল্যাক উইলিয়াম বলল।
‘আচ্ছা বুঝলাম। এখন তাহলে দাঁতের ডাক্তারের কাছে তো যেতে পারেন।’ চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া বললেন।
ডাক্তারের কথা শুনেই আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠল ব্ল্যাক উইলিয়াম।
‘তার সময়ের দাঁতের ডাক্তার মানেই ছিল ভয়ংকর ব্যাপার। খুবই যন্ত্রণাদায়ক।’ কারণটা ব্যাখ্যা করলেন মিস্টার সাটল।
তাঁর কথার সমর্থনে মাথা নাড়ল জাদুকর।
‘শুনুন, আমার দাঁতের ডাক্তার মিস হজকিন্স এখন ব্ল্যাকবারিতেই আছেন। ওখানে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি আর ব্যথানাশক আছে। তাই আপনি কিছুই টেরই পাবেন না। কিন্তু মিস্টার উইলিয়াম তার আগে আপনাকে এখানকার সবকিছু একুশ শতকে ফিরিয়ে দিতে হবে।’ মিস্টার সাটল বললেন।
এলিজাবেথিয়ান যুগের চেয়ে মিস হজকিন্স যে অনেক অনেক গুণ ভালো চিকিৎসা করেন, তা ব্ল্যাক উইলিয়ামকে বুঝিয়ে বললেন মিস্টার সাটল এবং চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া। সব শুনে ব্ল্যাকবারি শহরের ওপর থেকে জাদুমন্ত্র তুলে নিতে রাজি হলো সে।
ব্ল্যাক উইলিয়ামকে ব্ল্যাকবারিতে নিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাও ছিল অদ্ভুত। তাঁরা পথ চলতে চলতেই সবকিছু আবারও আগের অবস্থায় ফিরে আসতে লাগল। পাথরগুলো বদলে আবারও রোড সাইনে পরিণত হলো, গাছপালা পরিণত হলো টেলিগ্রাফের খাম্বায় আর ঘন দুর্ভেদ্য জঙ্গলটা পরিণত হলো ব্ল্যাকবারির শিল্প এলাকা। শহরে আবারও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু হলো।
মিস হজকিন্সের সার্জারির জায়গাটাও নোংরা আবর্জনায় ভরে ছিল। ব্ল্যাক উইলিয়াম তার জাদুমন্ত্র তুলে নেওয়ার পর সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরে এল। তখন চকচকে স্টেইনলেস স্টিলের যন্ত্রপাতিগুলো জ্বলজ্বল করতে দেখা গেল। আসল ঘটনা মিস হজকিন্সের কাছে ব্যাখ্যা করা হলো। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর দাঁতে এক সেট চমৎকার ফিলিং লাগিয়ে চেয়ার থেকে নেমে দাঁড়াল ব্ল্যাক উইলিয়াম।
‘আশ্চর্য ব্যাপার!’ বাতাসে হাত নাড়তে নাড়তে সে বলল। সঙ্গে সঙ্গে সোনার কয়েন, রুবি পাথর আর এমারেল্ডের ফোয়ারা নেমে এল মিস হজকিন্সের চেম্বারে। এগুলো ছিল তার পারিশ্রমিক।
এর পরপরই ভোজবাজির মতো স্রেফ অদৃশ্য হয়ে গেল ব্ল্যাক উইলিয়াম। তখন অবশ্য তার মুখে হাসি ছিল। সাড়ে চার শ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার তার মুখে হাসি দেখা গেল।
‘সাড়ে চার শ বছর আগে ফিরে গেছে নিশ্চয়ই। সেই উজ্জ্বল পোশাক আর সংগীতের যুগে।’ মিস্টার সাটল বললেন।
‘তবে সেখানে গরম পানি আর ওষুধের অভাব।’ চিফ ইন্সপেক্টর বললেন। ‘সে চলে যাওয়ায় কোনো দুঃখ পাচ্ছি না। জীবনটা আগের মতোই বেশ উত্তেজনাময় বলে মনে হচ্ছে। আমাদের কি একটা বেলচা এনে এই কয়েন আর রত্নগুলো সংগ্রহ করা উচিত নয়?’
‘এগুলো বিক্রি করা যাবে। তারপর বিক্রির টাকা দিয়ে শহরের আবর্জনা সাফের কাজে ব্যবহার করা যাবে।’ মিস্টার সাটল বললেন।
‘লোকটা আবারও ফিরে এলেও আমি অবাক হব না।’ ঘরের এক কোণে একটা জাদুর ঝাড়ু দেখতে পেয়ে বললেন চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া।
এরপর আর কোনো দিন ব্ল্যাক উইলিয়ামকে দেখেননি মিস্টার সাটল এবং চিফ ইন্সপেক্টর জেথওয়া। তবে তুমি যদি কখনো রাতের বেলা ব্ল্যাকবারি শহরে ঘুরতে যাও, তাহলে মিস্টার সাটলের বাড়ির পাশে রহস্যময় কিছু একটা আছে বলে মনে হতে পারে তোমার। এমনকি খুব সাবধানে কান পাতলে কড়মড় করে কোনো কিছু চিবানোর ভুতুড়ে শব্দও শুনতে পাবে।