ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো - ১২
ড্রাগন মাংসাশী নাকি সর্বভুক
এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে রূপান্তর করছেন কাজী আকাশ।
রান্নাঘরের চারপাশে ঘুরতে শুরু করলাম আমি। কিছুটা মাংস দরকার আমার। ফ্রিজ খুললাম। হ্যাঁ, পেয়েছি। ভুলে গিয়েছিলাম যে বাবা কয়েক দিন আগে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সাসাফ্রাসের জন্য বাবা সব সময় ফ্রিজে কয়েকটা ছোট মাছ রাখেন। সেখান থেকে দুটি মাছ বের করলাম।
‘এই, সাসাফ্রাস! তুমি কি মার্শমেলোর সঙ্গে একটা মাছ ভাগাভাগি করতে চাও?’
সাসাফ্রাস মাছ দুটোর দিকে তাকিয়ে উঁচু স্বরে ডাকল মিউ মিউ। তারপর হাত থেকে নিয়ে নিল একটা মাছ। ওর প্লেটে মাছটা ফেলে জুতসই একটা কামড় বসাল। আমার হাতে রইল আর একটা মাছ। বুঝতে পারছিলাম যে সাসাফ্রাস আমার হাতের মাছটা বাচ্চা ড্রাগনটাকে দিতে চায়। তা না হলে এটাও ও খেয়ে ফেলত। তবে সাসাফ্রাস মন পরিবর্তন করে কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করিনি আমি। ড্রাগনটা মাংসাশী নাকি সর্বভুক, তা পরীক্ষা করতে হবে। সে জন্য গোছাতে হবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো। সাসাফ্রাসকে নিয়ে সোজা চলে গেলাম শস্যাগারে।
মার্শমেলো যদি মাছ বা কেঁচো খায়, কিন্তু উদ্ভিদ বা শাকসবজি উপেক্ষা করে, তাহলে বুঝতে হবে যে ও মাংসাশী প্রাণী। আবার মাংস বাদ দিয়ে যদি শুধু উদ্ভিদ খায়, তাহলে বুঝতে হবে যে ও নিরামিষাশী, মানে তৃণভোজী। আর যদি সামনে যা পায় তা–ই খায়, তাহলে বুঝতে হবে, মার্শমেলো সর্বভুক। এই সবকিছু যে আমার ডায়েরিতে লিখে রাখা উচিত, তা আমি জানি। কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। এগুলো পরে লিখলেও চলবে। আগে বুঝতে হবে, মার্শমেলো কোন ধরণের প্রাণী।
তখনো ছোট্ট ড্রাগনটা সেখানেই শুয়ে ছিল। লুটিয়ে পড়েছিল মাটিতে। আমাকে দেখে একটু জাগার চেষ্টা করল। প্লেটে মাছটা রেখে মার্শমেলোর সামনে রাখলাম। সাসাফ্রাস মিউ মিউ করে আকুল দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে মাছটার দিকে। ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলাম। এতে আমার নার্ভাস হাতটাও একটু ব্যস্ত রইল।
অপেক্ষা করছি। দেখি কিছু ঘটে কি না! ছোট্ট মার্শমেলো খুব দুর্বল! সাসাফ্রাসকে জড়িয়ে ধরে ভাবতে চেষ্টা করলাম, কী করতে পারি আমি? ড্রাগনটার মুখের সামনে আরও খাবার রাখব? ওর সামনে কয়েকটা পোকা ঝুলিয়ে দুলিয়ে দিলাম আমি। তারপর বললাম ‘ এগুলো একটু খেয়ে দেখতে চাও?’
একটা প্লেট থেকে খানিকটা খাবার খেয়ে দেখল মার্শমেলো। তারপর আবার আগের মতো নামিয়ে শুয়ে রইল। ওকে আরও অনেকগুলো খাবার দিলাম। কিন্তু সবই একটু চেটে রেখে দিল ও। কোনো খাবারই খেল না। আমি দুই হাতে মাথা চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়লাম। এখন উপায়! মার্শমেলোর দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।
হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখি মার্শমেলো হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মাছের দিকে। একবারে পুরো মাছটা গিলে ফেলল! তারপর লেজটা মাথার নিচে গুঁজে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ল। দুই হাতের তালুতে মুখ ঠেকিয়ে বসে রইলাম আমিও। ছোট্ট মার্শমেলোকে এত অসুস্থ দেখে আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
বারবার কাছে এসে মাথা ঘষতে লাগল সাসাফ্রাস। ও বুঝতে পারছিল যে মার্শমেলোকে নিয়ে খুব চিন্তিত আমি। সিদ্ধান্ত নিলাম, সরীসৃপ বইয়ের বাকি অংশ পড়ে দেখব, কোনো কিছু বাদ পড়েছে কি না। পড়তে পড়তে ঝিমুনি এসে গেল। সাসাফ্রাস ঘুমিয়ে পড়ল আমার কোলে।
চলবে…
মূল: এশিয়া সিট্রো
রূপান্তর: কাজী আকাশ
ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে
*এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্টু বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’ এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।