গুড্ডুবুড়া আসলে কে? প্রথম কবে গুড্ডুবুড়া লেখা হয়?
এই প্রশ্ন আমাকে অনেকে করে। গুড্ডুবুড়া কে? আর আপনি প্রথম কবে গুড্ডুবুড়ার গল্প লেখেন।
প্রথম আলোয় প্রত্যেক শুক্রবার গোল্লাছুট পাতায় একটা কমিকস বের হয়, নাম ‘গুড্ডুবুড়া’। আমি অনেকগুলো গল্প আর কিশোর উপন্যাস লিখেছি, যার প্রধান চরিত্র গুড্ডুবুড়া।
এ বছরও গুড্ডুবুড়া নিয়ে তিনটা বই বের হয়েছে বইমেলায়। প্রথমা থেকে বের হয়েছে ‘গুড্ডুবুড়ার স্কুলে ডাকাত’ আর ‘গুড্ডুবুড়া, ঘন বনে বড় বিপদ’। গুড্ডুবুড়ার কমিকসের বই নিয়মিত বের করে ‘কথাপ্রকাশ’। এবারও করেছে।
গুড্ডুবুড়ার গল্প খুবই সরল। গুড্ডুবুড়া প্রথমে থাকে খুবই বোকা। কারণ, সে কিছুই খেতে চায় না। না খেতে খেতে তার মগজ যায় শুকিয়ে, বুদ্ধি যায় কমে। তখন সে খালি বোকার মতো কাণ্ড করে। যেমন সে টমেটোর খোসা ফেলে দিয়ে তার বিচি খায়। যখন বলা হয়, টমেটোর খেতে হয় বাইরের অংশটুকু, তখন সে হয়তো চিনাবাদামের খোসা খেয়ে ভেতরে বাদামটুকুই ফেলে দেয়। তখন তাকে বলা হয়, বাদামের বিচিই আসল। এরপর সে বরইয়ের বিচি খেয়ে ফেলে। আর বন্ধুরা বলে, তোমার পেটে গাছ হবে। সে কাঁদতে শুরু করে।
ডাক্তারের পরামর্শে সে খাওয়াদাওয়া শুরু করে। ঠিকমতো খায়, আর ঠিকমতো খেলাধুলা করে। তারপর সে হয়ে ওঠে বুদ্ধিমান গুড্ডুবুড়া।
তখন সে অনেক বড় বড় সমস্যার বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান করে।
যেমন ধানমন্ডি লেকে নৌকায় উঠেছে তারা। একটা ছোট ফুটা দিয়ে নৌকা বেয়ে পানি উঠছে। নৌকা বুঝি ডুবেই যাবে। গুড্ডুবুড়া একটা চুইংগাম চিবিয়ে ফুটোটা বন্ধ করে দেয়।
বা স্কুলে ইন্সপেক্টর আসবে। এই সময় গেটে একটা ট্রাক আটকে গেছে। গেটের ওপরে সাইনবোর্ড ছিল। এক ইঞ্চির জন্য ট্রাকের ছাদ গিয়ে লেগে গেছে সাইনবোর্ডে। এখন হয় সাইনবোর্ড ভাঙতে হয়, না হলে ট্রাকের ছাদ ভাঙতে হয়। গুড্ডুবুড়া বলল, আরও সহজ সমাধান আছে। ট্রাকের চাকার পাম্প কমিয়ে দেন। এক ইঞ্চি নেমে যাবে ট্রাকের ছাদ। তা-ই করা হয়। সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
এই গল্পগুলো ছোটরা পছন্দ করে বলেই আমি জানি।
আমি যখন বইমেলায় যাই, বা কোনো স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে যাই, বা কোনো অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে আমার দেখা হয়, ছোটরা আমাকে প্রশ্ন করে, গুড্ডুবুড়া কে?
এর উত্তর হলো, গুড্ডুবুড়া আমি।
আমার ছোটবেলায় আমার মাথা ছিল বড়। আর শরীর ছিল দিয়াশলাইয়ের কাঠির মতো। আমাকে আমার দাদা-দাদিরা ডাকতেন গুটুল বাবু। আমি যখন গ্রামের বাড়িতে যেতাম, তখন নাকি গুটি গুটি পায়ে ঘুরে বেড়াতাম এই বাড়ি ওই বাড়ি। তাই আমার নাম গুটুল বাবু। আর কী করতাম শুনলে তোমরা হাসতে হাসতে মারা যাবে। প্রতিবেশীদের বাড়ি গিয়ে খাট বা চকি বা খাটিয়ার নিচে রাখা কাঁঠাল ভেঙে চুপি চুপি খেতে শুরু করতাম।
এখন প্রশ্ন হলো: গুড্ডুবুড়ার গল্প আমি কখন প্রথম লিখি? আমার একটা বই আছে, ‘দুঃখপরী সুখপরী’। এই বই বের করেছে মাওলা ব্রাদার্স। এই বইয়ে ছোট ছোট গল্প আছে শিশুদের জন্য। ১৯৯৮ সালে এই বইটি প্রথম বের হয়।
তখন আমার একমাত্র মেয়ে পদ্যর বয়স ছিল আড়াই বছর। আমার মেয়ে রাতের বেলা ঘুমুনোর আগে আমাকে বলত, বাবা, ভিটামিনের গল্প বলো। আমি বলতাম, ভিটামিন এ। এ ভিটামিন থাকে লালশাকে। ভিটামিন এ না খেলে রাতকানা রোগ হয়। এটা ঠিক গল্প হলো না। এগুলো তো তথ্য।
তবুও আমার আড়াই বছরের মেয়ে ওই গল্প খুব পছন্দ করত। আর আমি তাকে বলতাম ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির গল্প। বলতাম, এখন ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি এসেছে। তুমি ঘুমাও। ও ঘুমিয়ে পড়ত।
তারপর আমি শুরু করলাম রোজ রাতে একটা করে গল্প বানিয়ে বলতে। গুড্ডুবুড়ার গল্পও একরাতে বানিয়ে বললাম। গুড্ডুবুড়া বোকা। বাবা তাকে চকলেট কিনে দিয়েছেন। সে চকলেটকে রংপেনসিল ভেবে তা দিয়ে খাতায় রং করেছে। আর পিঁপড়া উঠে খাতা ভরে ফেলেছে। তারপর পিঁপড়ার কামড় খেয়ে সে কাঁদছে। বাবা তখন তাকে রংপেনসিল কিনে দিলেন। সেটাকে চকলেট ভেবে গুড্ডুবুড়া খেয়ে ফেলল। তখন তার হাত–পায়ে, মুখে লাল রং। রক্ত ভেবে সে কাঁদতে লাগল। এরপর ডাক্তারের কাছে গেল সে। ডাক্তার বললেন, তোমার কোনো অসুখ নেই। তবে খাওয়াদাওয়া ঠিকভাবে করতে হবে।
সে খাওয়াদাওয়া করতে লাগল। হয়ে উঠল বুদ্ধিমান গুড্ডুবুড়া।
রাতের বেলা আমার মেয়ে পদ্যকে এই গল্প বললাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমি সেই গল্প লিখে ফেললাম কাগজে। এইভাবে লেখা হলো প্রথম গুড্ডুবুড়ার গল্প।
গুড্ডুবুড়ার অনেক গল্প লেখা হয়েছে। এটা নিয়ে দুরন্ত টিভিতে সিরিয়ালও বানানো হয়েছে। ওই নাটকে গুড্ডুবুড়ার চরিত্রে অভিনয় করেছে কাওসার বিন মামুন।