তানভীর আহমেদ সৃজনের ভৌতিক গল্প 'গন্ধ'

অলংকরণ: এআই আর্ট

‘অনেক বছর পর আমাদের বাড়িতে পা রাখলে, দাদা!’ অরিত্র বলেই যাচ্ছে, ‘শেষবার তো এসেছিলে মনে হয় সেই ত্রেতা যুগে! এরপর দুই-তিনবার কলকাতায় এলে, অথচ একবারও আমাদের আমাদের বাড়িমুখী হওনি। এ নিয়ে বাবা বেজায় চটে ছিল তোমার ওপর!’

অরিত্রের কথা শুনে হাসলাম আমি। আসলেই অনেক বছর পর এসেছি ওদের বাসায়। ১৩-১৪ বছর তো হবেই! শেষবার যখন এসেছিলাম, তখন অরিত্রের বয়স ছিল মাত্র বছর পাঁচেকের মতো। সেই ছোট্ট অরিত্র এত বড় হয়ে গেছে আর এত পাকা পাকা কথা বলছে দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না!

‘কী করব, বল? শেষবার তোদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পর যেই দুই-তিনবার এসেছি, প্রতিবারই এসেছিলাম অনেক অল্প সময় হাতে নিয়ে। আর প্রতিবারই এত ব্যস্ত ছিলাম যে দম ফেলারও ফুরসত পাইনি! তবে এবার আর অন্য কোনো কাজে নয়, তোদের বাড়িতে বেড়াব বলেই এসেছি।’

‘ওসব আমাকে বলে লাভ নেই, দাদা।’ অরিত্র চোখ মটকে বলল, ‘বাবা বাড়িতে ফিরলে বাবাকে বোলো!’

ছেলেটার কথা শুনে আবার হাসলাম। ‘বেশ! কাকু এলে বুঝিয়ে বলব তবে।’

সুশান্ত কাকা, অর্থাৎ অরিত্রের বাবা আগে বাংলাদেশে আমাদের বাড়ির পাশেই থাকতেন। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। ঘনিষ্ঠতা ছিল বললে অবশ্য কমই বলা হবে, বরং বলতে গেলে তাঁরাও আমাদের পরিবারেরই অংশ ছিলেন। বছর ত্রিশেক আগে তাঁরা সপরিবার পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছেন বটে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বা যোগাযোগ কোনোটাই ছিন্ন হয়নি।

অরিত্রের সঙ্গে অনেক কিছু নিয়েই আড্ডা হলো। সুশান্ত কাকা আগে থেকেই গানবাজনা করতেন। অরিত্রের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানলাম, বাবার মতো সে-ও একজন গায়ক হয়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, বন্ধুদের নিয়ে একটা ব্যান্ডও করেছে। সেই ব্যান্ড নাকি আবার পুরো বিরাটি এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়!

‘আচ্ছা, নন্দিনীর কী খবর?’ গল্প করতে করতে হঠাৎ নন্দিনীর কথা মনে পড়তেই জিজ্ঞেস করে বসলাম আমি। নন্দিনী, অরিত্রের পিসতুতো বোন; অর্থাৎ আমাদের ভাষায় ফুপাতো বোন।

অরিত্র চুপ হয়ে গেল। খেয়াল করলাম, মুখটা একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ওর।

‘কী রে?’ অবাক হয়ে বললাম, ‘কী হলো?’

‘ন্-না দাদা...কিছু নয়!’ অরিত্র তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ‘নন্দিনীদি আ-আছে ভালোই!’

আমি ভ্রুকুটি করলাম। ‘উঁহু। কিছু তো একটা হয়েছে! কী হয়েছে বল তো?’

‘কিছু না, দাদা!’

আরও পড়ুন

আমি আবার জিজ্ঞেস করতে যাব, ঠিক তখনই ঘরের বাইরে থেকে ডেকে উঠলেন অরিত্রের মা, ‘কী রে? দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে তো! তোরা কি খাবি না?’

‘আসছি কাকিমা!’ গলার স্বর উঁচিয়ে জবাব দিলাম আমি। তারপর আবার তাকালাম অরিত্রের দিকে। গলা নামিয়ে বললাম, ‘চল, খেয়ে নিই। তারপর আমাকে সব খুলে বলবি, না হলে কিন্তু তোর নিস্তার নেই!’

অরিত্রের মুখ আরও ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

*

দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে আমি অরিত্রকে বেশ ভালোমতোই চেপে ধরেছিলাম। চাপে পড়ে একপর্যায়ে ও বাধ্য হয় সব উগরে দিতে।

ও যা বলল, তা অনেকটা এ রকম—

শর্মিলা, নন্দিনীর কলেজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। মৃত্যুর কারণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। এই ঘটনা ভীষণভাবে নাড়া দেয় নন্দিনীকে। নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনায় পুরোপুরি ভেঙে পড়ে সে।

এরপর দেখতে দেখতে মাস ছয়েকের মতো পেরিয়ে যায়। নন্দিনীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গেলে তার মা জানান, একটু একটু করে সামলে উঠতে শুরু করেছে মেয়েটা। আরও জানান, নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য কোত্থেকে যেন উদ্ভট সব তন্ত্রমন্ত্রবিষয়ক বই জোগাড় করে এনে সেগুলো পড়ছে। অন্য সময় হলে ওসব গাঁজাখুরি বই পড়ে কেন সময় নষ্ট করছে, এ নিয়ে ব্যাপক বকাঝকা করতেন তিনি নিজের মেয়েকে। কিন্তু ওই সময়ে তিনি ভেবেছিলেন, নাহ! কিছু একটা নিয়ে অন্তত ব্যস্ত থাকুক।

তারও মাস দুয়েক পর একদিন নন্দিনী শর্মিলার বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে অনুরোধ করে তার কিছু জামাকাপড় আর ব্যবহারের কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসে। এ নিয়েও কিছু বলেননি নন্দিনীর মা। ভেবেছিলেন, নিজের বন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখতে চাইছে বেচারি!

কিন্তু বিপত্তিটা বাধে এর কিছুদিন পর থেকে। বদলে যেতে থাকে নন্দিনীর আচার-আচরণ! ধীরে ধীরে সবার সঙ্গেই কথাবার্তা কমিয়ে দিতে থাকে সে। যতক্ষণ বাড়িতে থাকে, নিজের ঘরের ভেতর থেকে বেরই হয় না বলতে গেলে। বের হলেও ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে রেখে বের হয়। আর যতক্ষণ সে দরজাটা খোলে, ততক্ষণই তার ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসে অদ্ভুত একটা ঘ্রাণ!

তারও বেশ কিছুদিন পর থেকে নন্দিনীর আচরণে আরও অদ্ভুত রকমের পরিবর্তন আসতে শুরু করে। প্রায়ই ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে কারও সঙ্গে কথা বলতে থাকে সে। কখনো কখনো ভেতর থেকে তার কান্নার আওয়াজও ভেসে আসে। পরে তাকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলেও কিছুই বলে না সে, প্রতিবারই এড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুন

সব শুনে আমি হাসব না কাঁদব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলেছিলাম, ‘তোরা তো দেখি মেয়েটাকে ঘিরে সানডে সাসপেন্সও না, রীতিমতো এভরিডে সাসপেন্স বানিয়ে ফেলেছিস!’

‘আমরা কিছুই বানাইনি, দাদা।’ আমি যে অরিত্রের কথার ছিটেফোঁটাও বিশ্বাস করিনি, সেটা বুঝতে পেরে অরিত্র আহত গলায় বলেছিল, ‘তোমাকে যা কিছু বললাম, সবকিছু সত্যিই ঘটেছে!’

‘তুই এই যুগের মানুষ হয়েও এসব বিশ্বাস করিস?’ চোখ বড় বড় করে বলেছিলাম আমি। অরিত্র আর কিছু না বলে চুপ করে ছিল। ওর কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে আমি আবার প্রশ্ন করলাম, ‘নন্দিনীরা তো এখনো দাসনগরেই থাকে, তা-ই না?’

‘দাদা, তুমি কি ওদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ভাবছ?’ ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল অরিত্র।

‘হ্যাঁ।’

‘না দাদা! ওদের বাড়িতে ভুলেও যেয়ো না!’

‘কেন? কী হবে গেলে?’

‘নন্দিনীদির কলেজের আরেকজন বন্ধু ছিলেন, সৌম্যদা।’ অরিত্র বলেছিল, ‘মাস দুয়েক আগে তিনিও গিয়েছিলেন নন্দিনীদির এ রকম অদ্ভুত আচরণের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে। যেদিন গিয়েছিলেন, সেদিন ওখান থেকে ফেরার পথে কোথা থেকে যেন একটা ট্রাক এসে উনাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়! ওই অ্যাক্সিডেন্টে উনি বেঁচে তো গেছেন, কিন্তু সিরিয়াস হেড ইনজুরির কারণে এখনো কোমায় আছেন।’

‘তো রাস্তায় বাস-ট্রাক চলাফেরা করবে না? যে রাস্তায় বাস-ট্রাক চলাফেরা করে, সে রাস্তায় অসাবধানে চলাফেরা করতে গেলে এ রকম অ্যাক্সিডেন্ট তো যে কারও হতে পারে!’ আমি আরও যোগ করেছিলাম, ‘আর বাই দ্য ওয়ে, তোরা ওদের বাড়িতে যাস না? কই, তোদের সঙ্গে তো এ রকম কিছু হয়নি!’

অরিত্র আবার চুপ মেরে গিয়েছিল।

‘শোন,’ আমি শীতল গলায় বলেছিলাম, ‘আজ সন্ধ্যায় আমি যাচ্ছি নন্দিনীর বাড়িতে। তুইও যাবি আমার সঙ্গে। আর যদি আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিস, তাহলে আমি কালই বাংলাদেশে ফেরত যাচ্ছি। বেড়ানোর গুষ্টি মারি!’

আরও পড়ুন

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছিল অরিত্র। তারপর বলেছিল, ‘ঠিক আছে, দাদা। তবে আমি কিন্তু ভেতরে যাব না, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব।’

অতঃপর যেই ভাবা সেই কাজ। এই মুহূর্তে আমি বসে আছি নন্দিনীদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে। এ বাড়িতে এসে প্রথমেই দেখা হলো অরিত্রের পিসি; অর্থাৎ নন্দিনীর মায়ের সঙ্গে। ভদ্রমহিলার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছিল, কত রাত যেন ঘুমাননি! আমার সঙ্গে যতক্ষণ কুশলবিনিময় করলেন, পুরোটা সময় তাঁর মুখে হাসি ছিল বটে; তবে সেই হাসিটা যে কৃত্রিম এবং জোর করে মুখে এঁটে রাখা, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। কণ্ঠটাও বেশ মলিন শোনাচ্ছিল তাঁর।

এরপর ভদ্রমহিলা চলে গেলেন নন্দিনীর ঘরের দরজার কাছে, নন্দিনীকে ডাকতে। দরজার কড়া নেড়ে তিনি ডাকলেন নিজের মেয়ের নাম ধরে। কয়েক সেকেন্ড পেরিয়ে গেল। এরপর খুট করে দরজা খোলার শব্দ হলো। ধীরে ধীরে খুলে গেল দরজাটা।

খেয়াল করলাম, দরজাটা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মিষ্টি একটা গন্ধ এসে ধাক্কা মারল আমার নাকে। অরিত্র কি এই গন্ধটার কথাই বলেছিল? এ রকম গন্ধ কোন পারফিউমে হয়, সেটা বের করতে হবে!

নন্দিনীকে সঙ্গে করে ফিরে এলেন নন্দিনীর মা। ‘তাহলে বাবা, তোমরা গল্প করো। আমি জলখাবার নিয়ে আসছি।’

‘ঠিক আছে পিসিমণি।’ হাসিমুখে বললাম আমি।

চলে গেলেন নন্দিনীর মা। নন্দিনী বসল আমার সামনের সোফাটাতে। আমি কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।

এ কী অবস্থা হয়েছে মেয়েটার! মুখ শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে, চোখ দুটো পড়ে গেছে গর্তে। আর মুখ রক্তশূন্য! খেয়াল করলাম, তার দুচোখে কেমন একটা অসহায়ত্ব বিরাজ করছে।

‘কেমন আছিস নন্দিনী?’ নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলাম আমি।

নন্দিনী চুপ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আমার দিকে। তারপর আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো যে প্রশ্নটা করে বসল, তা শুনে আমি রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লাম।

‘অরিত্র তোমাকে সব বলে দিয়েছে, তাই না দাদা?’

‘তুই কীভাবে জানলি?’ নিজের কণ্ঠে বিস্ময় চেপে রাখতে পারলাম না আমি। ওকে ফোন করে বা মেসেজে লিখে জানানোর কথা নয় অরিত্রের। আর সেটা সম্ভবও নয়। কারণ, এখানে আসার আগপর্যন্ত অরিত্র আমার সঙ্গেই ছিল। তাহলে নন্দিনী কীভাবে জানল?

‘আমাকে ও বলেছে।’ দুর্বল, মলিন স্বরে বলল নন্দিনী, ‘এটাও বলেছে যে অরিত্র বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, আর তুমি এসেছ ওর রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে।’

‘ও কে? শর্মিলা?’ ভ্রুকুটি করলাম আমি।

‘না!’ দ্রুত ডানে-বাঁয়ে মাথা নাড়ল মেয়েটা। ‘আমি শর্মিলাকেই ডাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যে এসেছে, সে শর্মিলা নয়, অন্য কেউ। সে অনেক ভয়ংকর, দাদা!’

‘কিন্তু কে সে?’

‘প্লিজ দাদা!’ মেয়েটা হাতজোড় করে অনুনয়ের সুরে বলল, ‘ওর সম্পর্কে জানতে চেয়ো না! সৌম্যও জানতে চেয়েছিল ওর সম্পর্কে। দেখো না, সৌম্যর কী অবস্থা করেছে!’ মেয়েটার গলা স্বর এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে এল। ‘ও আমার পরিবারের কারও কোনো ক্ষতি করছে না, শুধু আমি রিকোয়েস্ট করেছি বলে। কিন্তু ও বলেছে, ওকে নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে ও তাদেরকেও ছাড়বে না...’

আরও পড়ুন

মেয়েটা হঠাৎ করেই চুপ করে গেল। দুচোখে রাজ্যের আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে রইল আমার পেছনের দিকে। আর এদিকে আমি টের পেলাম, সেই অদ্ভুত গন্ধ আবার আমার নাকে এসে ঠেকছে।

‘কী রে? কী হলো?’ অবাক হয়ে বললাম আমি।

‘দাদা!’ নন্দিনী আমার পেছনের দিকে তাকিয়ে থেকেই ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘তুমি চলে যাও দাদা! ও চাচ্ছে না তুমি এখানে থাকো!’

গন্ধটা আরও বেড়ে গেল মনে হলো। আমি গলা নামিয়ে বললাম, ‘ও কি এখানেই আছে?’

মুখে কিছু না বলে ওপরে-নিচে মাথা দোলাল মেয়েটা। তার দৃষ্টি এখনো একই দিকেই নিবদ্ধ।

‘কোথায় ও?’

ধীরে ধীরে নিজের ডান হাতটা তুলল নন্দিনী। তারপর ডান হাতের তর্জনী তাক করল আমার পেছনে। আমি ঘাড়টা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম।

*

‘তারপর? কিছু দেখলে?’

‘উঁহু।’ রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে অরিত্রের কৌতূহলী ভঙ্গিতে করা প্রশ্নের জবাবে না-সূচক মাথা নেড়ে বললাম, ‘কিছুই না! শোন, নন্দিনীকে ভালো একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো দরকার। আমি তো আছি বেশ কিছুদিন। পিসিমণিকে এর মধ্যে একদিন তোদের বাড়িতে আসতে বল। আমি আলাদা করে কথা বলব তাঁর সঙ্গে।’

‘তুমি এখনো বিশ্বাস করছ না, দাদা?’ আমার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যারপরনাই হতাশ কণ্ঠে বলল অরিত্র, ‘ঠিক আছে, কিছুই দেখোনি মানছি। আমরাও কেউ কিছুই দেখিনি। কিন্তু গন্ধটা তো তুমিও পেয়েছ!’

‘ওটা কোনো আনকমন পারফিউমের গন্ধ। বাজারে খুঁজলেই পাওয়া যাবে।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ছেলেটা। আর কিছুই বলল না।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘তোদের পাড়ার মোড়ে আগে রাবড়ি পাওয়া যেত। এখনো পাওয়া যায়?’

‘হ্যাঁ, যায় তো। খাবে?’

‘তা তো খাবই।’ আবার সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললাম, ‘চল দেখি, তোদের পাড়ার মোড় পর্যন্ত যেতে যেতে কোনো ট্রাকের নিচে পড়ি কি না! যদি না পড়ি, তাহলে আজ তুই রাবড়ি খাওয়াচ্ছিস।’

‘ধুরর!’ প্রচণ্ড বিরক্তির সঙ্গে বলল অরিত্র।

হাসলাম আমি। হাসতে হাসতেই অরিত্রের সঙ্গে এগিয়ে যেতে লাগলাম ওদের পাড়ার দিকে। তবে আমার সেই হাসি মুহূর্তেই উবে গেল, যখন তীব্র মিষ্টি একটা গন্ধ এসে আঘাত করল আমার নাকে। ঠিক সেই গন্ধটা, যেটা মাত্র ঘণ্টাখানেক আগেই পেয়েছিলাম নন্দিনীদের বাড়িতে। যেটাকে আমি অচেনা কোনো পারফিউমের গন্ধ বলে দাবি করছিলাম।

সত্যি বলতে, কিছুটা ভয় কাজ করতে শুরু করল আমার ভেতরে। আতঙ্কের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল আমার শিরদাঁড়া বেয়ে।

আচ্ছা, সড়ক দুর্ঘটনার আগমুহূর্তে সৌম্যও কি এই গন্ধ পেয়েছিল?

আরও পড়ুন