মজনুর তিন ছেলেমেয়ে। বড়টা ছেলে এইটে পড়ত, তার পরেরটা পড়ত সিক্সে, ছোটটা মেয়ে, পড়ে ক্লাস ফোরে। বড় ছেলের নাম রকেট, সে বাড়ি নাই। তার ছোট ভাই বুলেট আর মেয়ে আসমানি এই মাত্র ফিরল ফুল বিক্রি করে। তারা চন্দ্রিমা উদ্যানের মোড়ে ফুল বিক্রি করে গাড়িতে গাড়িতে।
বুলেট বলে, এইটা আবার কেডায় আইল।
আসমানি বলল, এইটা তো মনে হয় একটা ইন্দুরের বাচ্চা। শরিলে কিছু নাই।
বুলেট বলল, তাইলে এইটার নাম দিলাম মিকি মাউস।
তবুও গুড্ডুবুড়া কিছুই বলে না।
মজনুর বউ বলল, ও বাপধন, তুমি কার বুক খালি কইরা আইছ। তোমার মায়ে না জানি কত কানতাছে। বাড়ি কই। ঠিকানা কী? কও। তোমারে আমি রাইখা আসি।
গুড্ডুবুড়া কিছুই বলতে পারে না।
রাতের বেলা মজনুর বউ জোর করে তার মুখে ভাত ঠেসে ধরে।
গুড্ডিবুড়ি বলল, মা, আমি আজ রাতে কিছু খাব না। আমার খিদে নেই।
মা বললেন, তুমি আবার যন্ত্রণা কোরো না। ছেলের চিন্তায় আমি মারা যাচ্ছি।
গুড্ডিবুড়ি বলল, তুমি বরং কিছু খেয়ে নাও। পেটে কিছু পড়লে বরং তুমি মারা যাবে না। বেঁচে যাবে।
গুড্ডুবুড়ার বাড়িতে বেশ ভিড়। ওদের ছোট খালা আইনুন নাহার এসেছেন। মেজ চাচা জয়নাল আবেদিন এসেছেন। তার ছোট ছেলে আকাশ (১৬) এসেছে।
ছোট খালা বললেন, আপা, তুমি শুয়ে থাকো। আমি দেখি গুড্ডিবুড়িকে খাওয়াচ্ছি।
মা বললেন, আমার গুড্ডুবুড়াকে এনে দে। তা না হলে আমি আর বাঁচব না।
ছোট খালা বললেন, আইজি সাহেবের সঙ্গে পিন্টুর কথা হয়েছে। উনি কড়া অর্ডার দিয়ে দিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই গুড্ডুবুড়া এসে হাজির হবে।
পিন্টু হলেন ওদের ছোট খালু। পুলিশের আইজি নাকি তাঁর মামা হন। পিন্টু আইজিকে ফোন করে দিয়েছেন। আইজি সাহেব অর্ডার দিয়েছেন, ঢাকা শহরের সব বাঁদরওয়ালাকে ধরে আনো।
একটু পরে আলতাফ হোসেনের কাছে ফোন এল। ফোন করেছেন পিন্টু। তিনি বললেন, আপনাকে এক্ষুনি ধানমন্ডি থানায় যেতে হবে।
গুড্ডুবুড়ার বাবা আলতাফ হোসেন ছুটে গেলেন ধানমণ্ডি থানায়।
গিয়ে দেখেন, সেখানে ছেলেপুলেদের ভীষণ ভিড়।
ঢাকা শহরের নয়জন বাঁদরওয়ালাকে সেখানে ধরে আনা হয়েছে। সেই বাঁদরওয়ালাদের পেছনে পেছনে নানা বয়সের ছেলেমেয়েরাও এসে হাজির হয়েছে।
থানার কর্মকর্তা বললেন, আলতাফ হোসেন সাহেব, নিন যত বাঁদরওয়ালা আছে, সবাইকে আনা হয়েছে। আপনি নিজেই খোঁজ নিন, কে আপনার ছেলেকে কিডন্যাপ করতে পারে।
আলতাফ হোসেন ঘোলা চোখে তাকালেন। বাঁদরওয়ালা তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে কি না, সে বিষয়ে তো তিনি কিছুই জানেন না। কাউকে কিছু বলেনও নাই।
আলতাফ হোসেনের সামনে নয়টা বাঁদরকে প্যারেড করানো হলো। তিনি বিমূঢ় হয়ে রইলেন।
সারা রাত গুড্ডুবুড়ার মা-বাবা কেউ ঘুমুলেন না। ছোট খালা রয়ে গেলেন। বাকি আত্মীয়রা চলে গেল। বলে গেল, আগামীকাল সকালবেলাতেই মাইক নিয়ে বের হতে হবে। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। ‘গুড্ডুবুড়া নামের একটা ছোট ছেলে হারাইয়া গিয়াছে। সে বাংলা ভাষায় কথা বলে। তবে কিছু কিছু ইংরাজিও জানে।’ ছোট খালা বললেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিয়েছি। অবশ্যই গুড্ডুবুড়ার খোঁজ পেয়ে যাব।
তিনি তাঁর ট্যাবলেট নামের ছোট্ট কম্পিউটারে টেপাটিপি করতে লাগলেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটা ছিল, ‘আমার ছোট্ট ভাগনে গুড্ডুবুড়া হারিয়ে গেছে। কেউ যদি তার কোনো খোঁজ পান, আমাকে জানান প্লিজ।’ তিনি গুড্ডুবুড়ার একটা ছবিও আপলোড করে দিলেন।
তখন তাঁর স্ট্যাটাসের নিচে নানা ধরনের কমেন্ট আসতে লাগল।
গুড্ডুবুড়া কত বুড়া?
খোঁজ দ্য সার্চ।
আমার কাছে তিনটা বুড়া আছে, দুইটার নাম গুড্ডুবুড়া। লাগব?
এসব দেখে তো ছোট খালা রেগেমেগে আগুন। মানুষের কোনো আক্কেলজ্ঞান নেই। একটা বাচ্চা হারিয়ে গেছে। আর এরা ফেসবুকে রসিকতা করার চেষ্টা করছে।
গুড্ডিবুড়ি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তার ঘুম আসছে না। তবু সে ঘুমের ভান করে পড়ে আছে। তার শুধু মনে হচ্ছে, ভাইয়ার হারিয়ে যাওয়ার জন্য সে-ই দায়ী। সে কেন ভাইয়াকে বাইরে যেতে দিল। সে কেন বাধা দিল না? ভাইয়া, তুমি ফিরে এসো। আর কোনো দিন আমি তোমাকে একা একা বাইরে যেতে দেব না। গুড্ডুবুড়ি বলল। হে আল্লাহ, তুমি আমার ভাইয়াকে ফিরিয়ে দাও। গুড্ডিবুড়ি আল্লাহর কাছে মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগল।
তার দুচোখ জলে ভরে এল। তার ভাইয়াটা খুবই ভালো। কখনো গুড্ডিবুড়িকে বকে না। মারধর করে না। সে কারও ক্ষতিও করে না। তার একটাই সমস্যা, সে ভীষণ বোকা। আল্লাহ, আমার ভালো মানুষ ভাইয়াটাকে তুমি ফিরিয়ে দাও। তার যেন কোনো ক্ষতি না হয়, হে আল্লাহ, তুমি রহমত করো।
সকালবেলা মজনু মিয়া যায় পত্রিকার দোকানে। বিনা পয়সায় সব কটি পেপার খুঁটে খুঁটে দেখে। নিখোঁজ সংবাদ বেশ কয়েকটা সে পেল বটে, কিন্তু এই বোকাসোকা ছেলেটার ছবি বা খবর কোথাও সে পেল না। এখন একে নিয়ে সে কী করবে?
সকালবেলা বউ তাকে ঝাড়ু দেখিয়েছে। কারণ, ওই ছেলে, যাকে সে বাড়ি ধরে এনেছে, যার নাম সে জানে না, সে বিছানায় হিসু করে দিয়েছে। একে বিদায় করতেই হবে। এই ছেলে কিছু খায় না, কোনো কথা বলে না, তার বাড়ি কই, বাপের নাম কী, কিছুই জানা যায় না, এ তো একটু পরেই মরে যাবে। মড়া মেরে কে খুনের দায় নেবে?
মজনু মিয়া এখন কী করবে? থানায় যাবে?
থানায় গেলেই যদি তাকে পুলিশ আটকে দেয়! তারপর বলে, এত টাকা দাও, তা না হলে আমি তোমাকে ছাড়ব না?
ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে এল মজনু মিয়া। এমনিতেই পকেটে টাকাপয়সা নেই। নিজের ছেলেমেয়েরা কী খাবে, সেই চিন্তায় মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে। পেট চিঁচিঁ করছে। তার ওপর আবার আরেকটা বাচ্চার চিন্তা...
মজনু মিয়ার বড় ছেলে রকেট বাসায় এসে গেছে। সে বলল, আব্বা, তুমি পিচ্চিটারে আমার হাতে তুইলা দেও। আমি অর একটা ব্যবস্থা করতাছি।
তুই কী করবি? মজনু মিয়া জিগ্যেস করল।
করব একটা ব্যবস্থা?
অর কোনো ক্ষতি করবি না তো?
না না, কী যে কও।
মজনু মিয়া রকেটের হাতে গুড্ডুবুড়াকে তুলে দিল। আসমানি তাকে কোলে তুলে নিয়ে একটা চুমু দিয়ে তারপর বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দিল।
রকেট গুড্ডুবুড়াকে নিয়ে সোজা চলে গেল একটা টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে। তারপর তাকে গেটের ভেতরে ঠেলে দিয়ে দারোয়ানকে বলল, একটা পোলারে কুড়ায়া পাইছি। দেহেন তো কার পোলা।
বলেই সে গুড্ডুবুড়াকে ফেলে রেখে উধাও হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে।
টেলিভিশন চ্যানেলে গুড্ডুবুড়ার ছবি দেখিয়ে বলা হতে লাগল, একটা শিশু পাওয়া গেছে। উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রকৃত অভিভাবকদের বলা হচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেল থেকে পুলিশেও খবর দেওয়া হলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গুড্ডুবুড়ার বাসায় খবর পৌঁছে গেল। মা-বাবা, খালা, চাচা সবাই ছুটলেন টেলিভিশন সেন্টারে।
টেলিভিশন কেন্দ্রের লোকেরা মুশকিলে পড়লেন। সাতটা পরিবার এসেছে। সন্তান হারানো পরিবার। মা-বাবা, কারও কারও সঙ্গে ভাইবোন। চাচা-ফুপু। সবাই দাবি করছে, গুড্ডুবুড়া তাদের ছেলে। কী মুশকিল।
গুড্ডুবুড়ার আসল মা-বাবাও হাজির হলেন টেলিভিশন চ্যানেল অফিসের গেটে।
দারোয়ান বলল, কী চান?
গুড্ডুবুড়ার বাবা বলল, ছেলে চাই। আমার ছেলে গুড্ডুবুড়ার ছবি দেখাচ্ছে টেলিভিশনে। ও গতকাল হারিয়ে গিয়েছে। আপনাদের অফিসে নাকি আছে?
দারোয়ান হেসে বলল, আপনাগো নিয়া আটটা ফ্যামিলি হইল। সবাই দাবি করতাছে, ওই পোলা আমাগো। যান। আপনেরা গিয়া লাইনে খাড়ান।
তাঁরা ভেতরে ঢুকলেন।
মা-বাবাকে দেখে গুড্ডুবুড়া নিজেই চলে এল তাঁদের কোলে।
পুলিশ বলল, তারা নিশ্চিত এঁরাই ওর মা-বাবা। কারণ, ওরা গতকালই ছেলের ছবি স্কুলের পরিচয়পত্র ইত্যাদি থানায় জমা দিয়েছেন। গুড্ডুবুড়া ফিরে এল বাড়িতে।
২৪ ঘণ্টা সে কিছুই মুখে দেয়নি। ঘরে ঢুকেই সে অজ্ঞান হয়ে গেল।
তাকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে।
হাসপাতালের ডাক্তার তাকে তাড়াতাড়ি স্যালাইন দিলেন। স্যালাইনের সঙ্গে গ্লুকোজ।
সবাই আল্লাহকে ডাকছে।
মা ডাকছেন।
ছোট খালা ডাকছেন।
বাবা ডাকছেন।
আর ডাকছে গুড্ডিবুড়ি। হে আল্লাহ, আমার ভাইয়ার জ্ঞান ফিরিয়ে দাও।
কিছুক্ষণ পরই গুড্ডুবুড়া চোখ মেলে তাকাল।
গুড্ডিবুড়ি গেল ডাক্তারের কাছে। তাঁকে বলল, আঙ্কেল, জানেন আমার ভাইয়ার সমস্যাটা কী?
ডাক্তার বললেন, কী?
ভাইয়া আসলে কিছু খেতে চায় না। তাই ওর শরীরটাও পাখির মতো পাতলা। আর মাথায়ও কোনো বুদ্ধি নেই।
ডাক্তার বললেন, তুমি ঠিক বলেছে। আর তোমার মাথায় তো দেখা যাচ্ছে বুদ্ধি গিজগিজ করছে। তুমি কি ঠিকমতো খাও?
হ্যাঁ। আমি ঠিকমতো খাই। আমার মা আমাকে রোজ রাতে খাবারের গল্প করেন। খাদ্য হলো ছয় প্রকার। আমিষ, শ্বেতসার, স্নেহ, খনিজ, ভিটামিন আর পানি। মাংস, মাছ, ডিম ও দুধ খেলে শরীর বাড়ে, মাংস হয়। এগুলো হলো প্রোটিন বা আমিষ। ভাত, রুটি ও চিনি—এগুলো হলো শ্বেতসার বা কার্বোহাইড্রেট, শরীরকে শক্তি দেয়, এনার্জি দেয়, আমরা দৌড়ঝাঁপ করতে পারি। কাজকর্ম করতে পারি। স্নেহ আমাদের এনার্জি দেয়। যেমন তেল, ঘি, চর্বি। ভিটামিন থাকে নানা খাবারে। এ ভিটামিন থাকে রঙিন ফলে, শাকে, কলিজায়, বি থাকে লাল চালে, সি থাকে লেবুর রসে, ডি থাকে রোদে, তাই না আঙ্কেল। আমার ভাইয়া কিছুই খায় না। ওর শক্তিও নেই। ব্রেইনও নেই।
ডাক্তার বললেন, তুমি একদম ঠিক কথা বলেছ।
গুড্ডুবুড়া আরেকটু সুস্থ হলে ডাক্তার তাকে পরামর্শ দিতে লাগলেন। তার পাশে তার মা-বাবা, গুড্ডিবুড়িও বসে রইল।
ডাক্তার বললেন, আপনার ছেলে গুড্ডুবুড়া আসলে খুবই ভালো। ওর সবই ভালো। ওর একটাই সমস্যা। আর তা হলো ওর ব্রেইনটা ঠিক খুলছে না। খুলবেই বা কী করে। ব্রেইন খোলার চাবিটাই তো ও ইউজ করছে না।
ব্রেইন খোলার চাবি? গুড্ডুবুড়া বলল।
ডাক্তার বললেন, হ্যাঁ, ব্রেইন খোলার চাবি। তোমার মাথার মধ্যে বুদ্ধিগুলো একটা জায়গায় আটকা পড়ে আছে। চাবি দিয়ে বুদ্ধি খুলতে হবে।
গুড্ডুবুড়া বলল, সর্বনাশ। আপনি কি আমার মাথায় অপারেশন করতে চান? আমি আমার মাথায় চাবি ঘোরাতে দেব না?
ডাক্তার হেসে বললেন, না। ব্রেনের চাবি হলো খাবার। তুমি একদম খেতে চাও না। এই জন্য তোমার মাথার বুদ্ধি খোলে না। হাতে-পায়েও জোর হয় না। তোমাকে খেতে হবে।
কী খেতে হবে আঙ্কেল? গুড্ডুবুড়া জিগ্যেস করলেন।
তোমাকে ভাত খেতে হবে, রুটি খেতে হবে, যাতে তোমার গায়ে জোর হয়।
তোমাকে মাছ খেতে হবে, মাংস খেতে হবে, যাতে তোমার শরীর বড় হয়।
তোমাকে শাকসবজি-ফলমূল খেতে হবে, যাতে তোমার রোগ-শোক না হয়।
তোমাকে দুধ খেতে হবে, ডিম খেতে হবে, আর প্রচুর খেলাধুলা করতে হবে।
আমি তো অনেক খেলি। ভিডিও গেমস খেলি। গেমবয় খেলি।
নানা। এই খেলা না। তোমাকে দৌড়ঝাঁপ খেলতে হবে। ফুটবল, ক্রিকেট, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট—এই জাতীয় খেলা।
গুড্ডুবুড়া এখন থেকে ঠিকমতো খাচ্ছে। সকালবেলার নাশতায় ডিম থাকে। দুধ থাকে। খেতে ও মোটেই আপত্তি করে না। তিনটা রুটি খেয়ে নেয় গপগপ করে। টিফিনে মা যা দেন, তা-ও খায়। তারপর স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে দৌড়াদৌড়ি করে ইচ্ছামতো।
বাসায় এসেও তার দৌড়ঝাঁপ বন্ধ হয় না। ফলে তার খিদে পায়। তখন সে আবার খেতে থাকে।
সে ভাত খায়। রুটি খায়। দুধ খায়, ডিম খায়। মাছ খায়, মাংস খায়। সবজি খায়, ফল খায়। ডাল খায়, ভর্তা-ভাজি সব খায়। এমনকি তেতো করলার ভাজিতেও তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
কলা তার ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছে।
তার শরীর এত দিন ছিল পাটকাঠি। সে ছিল ছোটখাটো। এখন আস্তে আস্তে তার ওজন বাড়ছে, সে লম্বা হচ্ছে। শরীরে মাংস জমছে।
আগে যে জগটা সে তুলতে পারত না, সেটা এখন সে অনায়াসে তুলতে পারে।
আগে লাইটের যে সুইচ সে নাগালে পেত না, এখন সেটা সে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিব্যি অন-অফ করতে পারছে।
গুড্ডুবুড়া এখন সুন্দর স্বাস্থে্যর অধিকারী।
সবচেয়ে বড় কথা, গুড্ডুবুড়ার বুদ্ধি গেছে খুলে। এখন সে সবকিছুতে ভালো করতে শুরু করেছে। স্কুলে লেখাপড়ায় ভালো করছে। ক্লাসে শিক্ষকদের প্রশ্নের জবাব দেয় চটপট করে। সুন্দর সুন্দর প্রশ্নও করে সে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেসব প্রশ্ন শুনে মুগ্ধ হয়ে যান।
স্কুলে খেলাধুলাতেও তার নামডাক হচ্ছে। ছেলেরা তাকে নিজেদের দলে নিতে চায়।
বাসায় গুড্ডিবুড়ি আর গুড্ডুবুড়া এখন সমানে সমানে বুদ্ধির খেলা খেলে।
গুড্ডুবুড়া বলে, বল তো, কোন গ্রাম গ্রাম নয়।
গুড্ডিবুড়ি বলে, কিলোগ্রাম।
গুড্ডুবুড়া বলে, তোর উত্তরটা সঠিক হয়েছে। কিন্তু আমি বলতে চাইছি, কোন জায়গা, যেটা গ্রাম, কিন্তু গ্রাম নয়।
গুড্ডিবুড়ি বলে, কোন গ্রাম গ্রাম না! না, পারলাম না!
গুড্ডুবুড়া বলে, চট্টগ্রাম!
গুড্ডিবুড়ি বলে, ভালোই তো বানিয়েছ। তোমার মাথায় বুদ্ধি বেশ খেলা করছে দেখছি।
গুড্ডুবুড়া বলে, এবার তুই একটা ধাঁধা ধর দেখি।
গুড্ডিবুড়ি বলে, বলো তো, কোন সাগরে পানি নাই?
গুড্ডুবুড়া বলে, সাগরে পানি নাই? সেটা আবার কেমন সাগর? সাগর কলা?
গুড্ডিবুড়ি হেসে বলে, আমার ভাইয়ার মাথায় আসলেই বুদ্ধি গিজগিজ করছে। আর সারা দিন কলা খায় কিনা। তোমার উত্তরটাও ঠিক বলেই আমি ধরে নিচ্ছি। তবে আমার উত্তরটা হলো, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।