অনেক বছর পর নাফিয়ারা বাসা পাল্টাল। যদিও নাফিয়া ও তার বড় বোনের নতুন বাসা খুব একটা পছন্দ হয়নি। তবু নতুন বাসায় চলে যেতে হচ্ছে। নতুন বাসায় গিয়ে তারা শুধু দারোয়ানকেই দেখল, আর কাউকে দেখতে পেল না। ওদের বাসা নিচতলায়। আশপাশে আর কোনো বাসা নেই, ওপরে হয়তো আছে। নাফিয়ারা দুই বোন খুবই বিরক্ত হলো। মন খারাপও হলো ওদের। এখানে কেউ নেই তাদের বয়সী! নাফিয়া একদিন দারোয়ানকে বলল, ‘ওপরে কি ছাদ আছে?’ দারোয়ান বলল, ‘উফরে যাইবা না, উফরে যাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।’ নাফিয়া ভাবল, দারোয়ান বোধ হয় পাগল। তাই সে একদিন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাদে চলে গেল। গিয়ে দেখে, ছাদের অর্ধেকজুড়ে একটি বাসা। হঠাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ের কথা শুনে তাকিয়ে দেখে, তার বয়সী একটি মেয়ে। মেয়েটা বলল, ‘তোমরা নিচতলায় এসেছ, তা–ই না?’ হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল নাফিয়া। তারপর মেয়েটা বলল, ‘আমি তন্নী, তুমি নাফিয়া, তা–ই না?’ নাফিয়া হাঁ হয়ে গেল। সে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কী করে জানলে?’
‘নিচে তোমাদের দরজায় তোমার নাম দেখলাম’ বলল তন্নী। তারপর সারা বিকেল কথা বলে কাটিয়ে দিল ওরা। খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল সহজেই। নাফিয়া খুশি হয়ে ওর বোন আফিয়া আর আম্মুকে নিয়ে তাদের বাসায় গেল পরের সপ্তাহে, কিন্তু তন্নীদের বাসায় যাওয়ার আগে বাড়িওয়ালার বাসায় গেল। তাঁরা কথা বলতে লাগলেন নাফিয়ার আম্মুর সঙ্গে। নাফিয়ার আম্মু যখন বললেন, ওপরে তন্নীদের বাসায় যাবেন, তখনই চমকে উঠলেন বাড়িওয়ালা। বললেন, ‘ওপরে তো কেউ এখন থাকে না, পাঁচ বছর আগে থাকত। পাঁচ বছর আগে এই বাসাতেই তারা মারা যায়। সরি, ওদের হত্যা করা হয়। এরপর দুবার বাসাটা ভাড়া দিয়েছি কিন্তু তারা এক সপ্তাহ থেকে চলে গেল। তাই আর বাসাটা ভাড়া দেওয়া হয়নি।’
‘কী বলেন! নাফিয়া তো একটা মেয়ের সঙ্গে খেলে আসল।’ বললেন নাফিয়ার আম্মু। ‘ছোট মানুষ, কার সাথে না কার সাথে খেলেছে ঠিক নেই।’ বললেন বাড়িওয়ালা।
কিছুক্ষণ পর নাফিয়া ভাবতে লাগল, কী হলো তার সঙ্গে। তাহলে কি সে ভূত দেখল তন্নীর? বাসায় যাওয়ার সময় কেউ একজন তাকে ডাকল, তখন ভয় আরও বেড়ে গেল। কারণ, তন্নী পাঁচ বছর আগে মারা গেছে, আর সেই তন্নী তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে দুই দিন আগে। কী হচ্ছে এসব নাফিয়ার সঙ্গে!