গোলকধাঁধায় গন্ডগোল

অলংকরণ: সাঈফ মাহ্‌মুদ

এক

‘ম্যাক্সওয়েল ডেন্টের হন্টেড মেইজ উদ্বোধনে সবাইকে স্বাগত!’

ঘোষণাটা শেষ হওয়ামাত্র উল্লাসধ্বনি করে উঠল অধৈর্য জনতা। ভিড়ের একেবারে সামনের দিকে রনি স্টিভেন্সের মুখেও হাসি ফুটল। ঘাড় ফিরিয়ে দুই সঙ্গীর দিকে তাকাল ও। গেটের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অয়ন হোসেন, যেন পাল্লা ভেদ করে ওপাশটা দেখতে চাইছে। তার পাশে দাঁড়ানো জিমি পার্কারের চেহারায় ফুটে উঠেছে বিরক্তি।

‘খুব শিগগির গেট খুলব আমরা,’ সামনে থেকে বলল ঘোষক। ‘অনিচ্ছাকৃত দেরির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত, আরেকটু ধৈর্য ধরুন সবাই। এই ফাঁকে আমি বরং এই মেইজের স্রষ্টা, প্রয়াত মি. ম্যাক্সওয়েল ডেন্ট সম্পর্কে কিছু বলি। তিনি ছিলেন হলিউডের সবচেয়ে নামকরা পরিচালকদের একজন।’

হাততালি পড়ল নামটা শুনে। গদগদ গলায় মি. ডেন্টের জীবনী বলতে থাকল লোকটা, তবে তার ভেতর নতুন কোনো তথ্য নেই, মোটামুটি সবই অয়ন-জিমির জানা। সত্যিই মস্ত বড় এক পরিচালক ছিলেন ভদ্রলোক, হলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু হরর ছবি তৈরি করেছেন। কিছুদিন আগে মারা গেছেন তিনি, তার আগে নিজের সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে গেছেন বড় ছেলে মাইকেলকে। বাবার পুরোনো ম্যানশন আর চারপাশের জমির রেনোভেশন করিয়েছে সে, যার ভেতর রয়েছে চার একরজুড়ে বানানো একটা মেইজ বা গোলকধাঁধা। ট্যুরিস্টদের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছে, পয়সা কামানোর একটা ধান্দা আরকি। তারই অংশ হিসেবে আজ উদ্বোধন হতে চলেছে গোলকধাঁধাটা।

প্রশংসার সুরে প্রয়াত পরিচালক ও তাঁর বড় ছেলের গুণগান করলেও কিছু কিছু ব্যাপার সংগত কারণে চেপে যাচ্ছে ঘোষক, তবে পত্রপত্রিকার কল্যাণে সেসব জানা আছে প্রায় সবার। যে উইলের মাধ্যমে মাইকেলকে সব সম্পত্তি দিয়ে গেছেন মি. ডেন্ট, সেটার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকেছে তাঁরই ছোট ছেলে মেলভিন। তার ভাষ্যমতে, উইলটা জাল। ও নাকি নিজের চোখে আসল উইলটা দেখেছে বাবার কাছে—তাতে দুই ভাইকে সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। মামলা-মোকদ্দমার কারণে রীতিমতো স্ক্যান্ডাল বেধে গেছে। সারা দেশের মানুষ হয়ে উঠেছে কৌতূহলী। আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপচে পড়া ভিড়ের পেছনে ওটাই সবচেয়ে বড় কারণ।

মি. ডেন্টের গুণকীর্তন শেষ হলে মেইজের ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে শুরু করল ঘোষক। বলল, ‘গোলকধাঁধার প্রতিটি মোড়ে নম্বর দেওয়া সাইনবোর্ড পাবেন আপনারা। প্রত্যেকটা সাইনবোর্ডে রয়েছে হরর মুভি–সংক্রান্ত নানা ধরনের ট্রিভিয়া কোশ্চেন। তিনটে করে উত্তর দেওয়া আছে প্রশ্নের সঙ্গে। যদি প্রথম উত্তরটা সঠিক ভাবেন, বাঁয়ে মোড় নেবেন, দ্বিতীয়টা হলে এগোবেন সামনে, আর তৃতীয়টা সঠিক মনে হলে মোড় নেবেন ডানে। যদি সব কটি প্রশ্নের জবাব ঠিকমতো দিতে পারেন, অনায়াসে পৌঁছে যাবেন গোলকধাঁধার শেষ প্রান্তে। যে ব্যক্তি বা দল সবার আগে বেরিয়ে আসবে ওখান থেকে, তাদের জন্য রয়েছে প্রথম পুরস্কার নগদ ৫০০ ডলার।’

বলা বাহুল্য, এ পুরস্কারের লোভেই অয়ন-জিমিকে একরকম ধরে নিয়ে এসেছে রনি। হরর মুভির ভক্ত ওরা, বিশেষ করে সিনেমাজগতের খুঁটিনাটি সব তথ্য অয়নের নখদর্পণে। জিমিও যেকোনো ধরনের গোলকধাঁধার ভেতর থেকে পথ খুঁজে নিতে ওস্তাদ। ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়ার জন্য এমন দুজন বিশেষজ্ঞই চাই। চাপে পড়ে আসতে বাধ্য হলেও খুব একটা বিরক্ত হয়নি দুই বন্ধু। আজ হ্যালোউইনের রাত, মেইজের ভেতরে বুদ্ধির খেলার পাশাপাশি দর্শকদের রোমাঞ্চিত করার জন্য ভুতুড়ে সাজে কিছু অভিনেতাও রাখা হবে। অয়ন-জিমি আশা করছে, সময়টা ভালো কাটবে।

‘কোথাও ঝামেলা হয়েছে,’ হঠাৎ বলে উঠল অয়ন।

‘এখনো হয়নি, তবে হবে,’ বলল জিমি। ‘এত লোক একসঙ্গে ভেতরে ঢুকতে গেলে ঝামেলা একটা বাধবেই।’

‘আমি সে কথা বলছি না,’ মাথা নাড়ল অয়ন। ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা মাইকেল ডেন্টের। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, গোলকধাঁধা খুলে দেওয়ার আগে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করবে সে। কিন্তু কোথায় লোকটা? বকবক তো করছে আরেকজন! সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও গেট খুলছে না। কোনো না কোনো সমস্যা হয়েছে অবশ্যই।’

দর্শকেরা অস্থির হয়ে উঠেছে। শোনা গেল উত্তেজিত হইচই। শেষমেশ উপায়ান্তর না দেখে গোলকধাঁধার প্রবেশপথ খুলে দিল আয়োজকেরা। আস্তে আস্তে এগোতে শুরু করল লোকজন। দুই মিনিট অন্তর মেইজের তিনটি প্রবেশপথ দিয়ে একেকটা দলকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।

ঘোষণা মঞ্চের কাছে পৌঁছাতেই বেঁটে এক লোককে দেখতে পেল ওরা, মাথায় মস্ত টাক। মাইক্রোফোনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, এতক্ষণ এ লোকটাই ভাষণ দিচ্ছিল। কানে একটা সেলফোন ঠেকিয়ে তাকে কথা বলতে শোনা গেল

‘মাইকেল, কোথায় তুমি? মেসেজ পাওয়ামাত্র যোগাযোগ করো আমার সঙ্গে। লোকজনকে আর ঠেকিয়ে রাখা গেল না, গেট খুলে দিতে হয়েছে। কিন্তু পুরস্কার দেওয়ার সময় তোমাকে আমাদের লাগবেই।’

‘ইন্টারেস্টিং,’ প্রবেশপথ পেরিয়ে গোলকধাঁধায় ঢুকতে ঢুকতে বলল অয়ন। ‘আসল লোকটাই গায়েব।’

‘বাদ দাও তো,’ বলল রনি। ‘ওসব নিয়ে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। তাড়াতাড়ি পা চালাও। ফার্স্ট প্রাইজটা জিততেই হবে।’

‘বাপ রে!’ সামনে তাকিয়ে বলল জিমি। ‘এ তো রীতিমতো গা ছমছমে পরিবেশ।’

সত্যিই তা-ই। সন্ধ্যা বলে এমনিতেই গোলকধাঁধার ভেতরটা অন্ধকার। ইচ্ছা করেই দূরে দূরে ঝোলানো হয়েছে বৈদ্যুতিক লন্ঠন। আবছা আলোয় চোখে পড়ছে আইভি লতায় ছাওয়া দুপাশের পাথুরে দেয়াল। মাঝের পথটা সংকীর্ণ, পাশাপাশি দুজন যাওয়ার উপায় নেই। এগোতে হবে এক সারিতে।

‘কিচ্ছু ভেবো না,’ বলে সামনে চলে গেল রনি। ‘ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে এসেছি। অন্ধকারে খাবি খেতে হবে না।’ কোমর থেকে বড়সড় একটা ফ্ল্যাশলাইট হাতে নিল সে। সেটার গায়ে খোদাই করে নিজের নামের আদ্যক্ষর লিখে রেখেছে আর এস।

‘আর এস দিয়ে কী হয়?’ ঠাট্টা করল জিমি। ‘রিয়েল স্লাই?’

‘মানে?’ বোকা বোকা গলায় জিজ্ঞেস করল রনি।

‘না, বলতে চাইছিলাম যে ফার্স্ট প্রাইজ বাগানোর জন্য এই যে আমাদের দুজনকে বগলদাবা করে নিয়ে এসেছেন, কাজটা খুবই স্লাই, মানে সত্যিকার সেয়ানা লোকের কাজ...’

‘আরেকবার যদি বাজে কথা বলো, কান মলে দেব,’ চোখ রাঙাল রনি। ‘আমি কোনো আইন ভাঙছি না। দলবদ্ধভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে বলেই তোমাদের এনেছি।’

‘পাত্তা দেবেন না তো ওর কথায়,’ তাকে বলল অয়ন। ‘খ্যাপাচ্ছে আপনাকে। চলুন, সময় নষ্ট না করে এগোনো যাক। প্রথম সাইনবোর্ডটা খুঁজে বের করতে হবে। ফ্ল্যাশলাইট যেহেতু আপনার হাতে, আপনিই সামনে থাকুন। আমরা পেছনে আছি।’

এক সারিতে হাঁটতে শুরু করল তিনজনে। সামনে রনি, মাঝে অয়ন, সবশেষে জিমি। খানিক পরেই একটা ইন্টারসেকশনে পৌঁছাল। পাশ থেকে বেরিয়ে এসেছে আরেকটা পথ; ওরা যে পথে চলেছে, সেটাকে ছেদ করে চলে গেছে আরেক দিকে। দেয়াল ঘেঁষে লাগানো একটা কাঠের পোস্ট দেখা গেল, তাতে ঝুলছে একটা সাইনবোর্ড। বড় করে ‘১’ লেখা ওটায়। তলায় রয়েছে প্রশ্ন।

‘১ নম্বর প্রশ্ন,’ পড়ল অয়ন। ‘১৯৬২ সালের ক্লাসিক হরর মুভি, ব্লাড অ্যান্ড রোজেস, কোন বিখ্যাত ভ্যাম্পায়ার উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল? অপশন হিসেবে দেওয়া আছে টোয়াইলাইট, ড্রাকুলা আর কারমিলা।’

‘নির্ঘাত ড্রাকুলা,’ বলল রনি। ‘টোয়াইলাইট তো সেদিনের উপন্যাস আর কারমিলার নামই শুনিনি।’

‘আপনি না শুনলে তো হবে না। ভুল জবাব দিয়েছেন। কারমিলাই সঠিক জবাব। শেরিডান ল্য ফানুর লেখা উপন্যাস। পৃথিবীর প্রথম ভ্যাম্পায়ার কাহিনি বলা হয় ওটাকে। ড্রাকুলা লেখা হয়েছিল কারমিলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে।’

‘ওরে বাবা! এত সব খবর কে রাখে?’

‘কে আবার?’ ফোড়ন কাটল জিমি। ‘আমাদের সবজান্তা অয়ন হোসেন।’

‘এটুকু জানার জন্য সবজান্তা হতে হয় না,’ চোখ রাঙিয়ে বলল অয়ন। ‘ভিতুর ডিম কোথাকার, ভয়ের চোটে তো ভূতের সিনেমাই দেখিস না। জানবি কী করে?’

‘কী বললি! আমি ভিতুর ডিম?’

‘ভুল বলেছি। ডিম না, তুই হচ্ছিস ডিম ফুটে বেরোনো ভিতুর ছানা।’

‘তবে রে!’ খেপে গেল জিমি। গোটাতে শুরু করল শার্টের হাতা। ‘আজ তোর একদিন কি আমার একদিন...’

‘দাঁড়াও, দাঁড়াও,’ তাড়াতাড়ি বাধা দিল রনি। ‘মারামারিটা পরে কোরো। আগে ফার্স্ট প্রাইজটা তো জিতে নিই। তোমাদেরকে সঙ্গে এনে যে ভুল করিনি, তা তো দেখতেই পাচ্ছি। চলো, এগোই।’

‘৩ নম্বর জবাবটা সঠিক,’ অয়ন বলল। ‘তার মানে ডানে মোড় নিতে হবে। চলুন।’

আবার হাঁটতে শুরু করল তিনজনে। একে একে পেরিয়ে এল আরও চারটা মোড়। একটা করে প্রশ্নের জবাব দিতে হলো সবখানে। অয়ন থাকায় বেগ পেতে হলো না, এমনকি জিমিও একটার সঠিক জবাব দিয়ে দিল—ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ নামের মুভি সিরিজের মূল ভিলেনের নাম হলো জেসন।

ধীরে ধীরে মজা পেতে শুরু করেছে অয়ন আর জিমি। অনুভব করছে রোমাঞ্চ। বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি করা গোলকধাঁধায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রতিযোগীরা, শিগগির দেখা হচ্ছে না কারও সঙ্গে। মনে হচ্ছে বুঝি রাতের আঁধারে একাকী ওরাই পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে ছায়াঢাকা গলিঘুপচিতে। মাঝেমধ্যে পিলে চমকে যাচ্ছে ভূত-প্রেত দেখে। সত্যিকার ভূত নয়, ভুতুড়ে ছদ্মবেশ নেওয়া অভিনেতা ওরা। হঠাৎ হঠাৎ আড়াল থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসে, বিদঘুটে চিৎকার করে আবার লুকিয়ে পড়ে অন্ধকারে।

নতুন একটা ইন্টারসেকশনে পৌঁছাল তিনজনে। এখানেও রয়েছে প্রশ্ন লেখা সাইনবোর্ড। ওটার দিকে এগোতেই খুব কাছ থেকে ভেসে এল পায়ের শব্দ। টলতে টলতে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল একটা ছায়ামূর্তি। আলো ফেলতেই দেখা গেল সবুজ চামড়া, সারা গায়ে শতচ্ছিন্ন পোশাক, মুখের চারপাশে লাল রং। জোম্বি সেজেছে লোকটা। খামচি দেওয়ার ভঙ্গিতে একটা হাত উঁচু করে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।

আঁতকে ওঠার মতো একটা আওয়াজ করল রনি, কিন্তু অয়ন নির্বিকার। জোম্বিকে বলল, ‘সাজটা ভালো নেননি। সত্যিকার রক্ত আরও কালচে রঙের হয়। আর গায়ে যে সবুজ রংটা মেখেছেন, ওটা পচা মাংসের রং নয়। আপনাকে জোম্বি না, লেপ্রিকনের মতো লাগছে।’

ধবধবে সাদা দাঁত বের করে হেসে ফেলল অভিনেতা। হার মেনে নিয়েছে। ওদেরকে রেহাই দিয়ে চলে গেল নতুন শিকারের আশায়।

‘লেপ্রিকনের কথা বলতে গেলি কেন?’ বিরক্ত গলায় বলল জিমি। ‘এখন মাথার ভেতর লেপ্রিকনের ছবি ঘুরছে।’

‘এ কথা বলিস না যে লেপ্রিকনের মতো একটা রূপকথার প্রাণীকেও ভয় করে তোর,’ টিপ্পনী কাটল অয়ন। সাইনবোর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ‘হুম, নতুন প্রশ্ন। আলফ্রেড হিচককের কোন ছবির কাহিনি কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার এড গেইনের কীর্তিকলাপের ওপর ভিত্তি করে রচিত? এ তো খুবই সহজ...’

কথা শেষ হলো না ওর, তার আগেই অস্ফুট আওয়াজ করে জিমি বলে উঠল, ‘আরে, আরে! করে কী! করে কী!!’

ওদিকে ঘুরতেই আরেকজন মানুষকে আঁধার থেকে বেরিয়ে আসতে দেখল অয়ন। মুখটা মড়ার মতো সাদা, চুলের তলা থেকে কপাল বেয়ে নেমে আসছে রক্তের ধারা, চেহারায় আতঙ্ক। ছেলেদের ওপর যেন হামলে পড়ল লোকটা। খামচে ধরল জিমির হাত।

‘প্লিজ...সাহায্য করো!’ গলাটা খুব দুর্বল।

‘বাহ্, দারুণ!’ বলল রনি। ‘এর মেকআপ আর অভিনয়--দুটোই আগেরজনের চেয়ে অনেক ভালো।’

কী যেন সন্দেহ হলো জিমির, তাড়াতাড়ি ধরে ফেলল লোকটাকে। আস্তে করে শুইয়ে দিল মাটিতে। কপালের রক্তে আঙুল ঠেকাল, তারপর গম্ভীর গলায় বলল, ‘অভিনয় না, সত্যি সত্যি রক্ত পড়ছে কপাল থেকে।’

‘বলো কী!’ ফ্ল্যাশলাইট ঘোরাল রনি। আলো ফেলল লোকটার মুখে।

সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল অয়ন। মানুষটাকে চেনে ও, পত্রিকায় ছবি দেখছে গত কদিন ধরে।

‘জিমি ঠিকই বলেছে, রনি ভাই। অভিনেতা না, ইনি এই হন্টেড মেইজের মালিক--মাইকেল ডেন্ট।’

দুই

নড়ছে না মাইকেল।

‘হলো কী করে এ অবস্থা?’ হতভম্ব গলায় বলল রনি।

‘বুঝতে পারছি না,’ মাথা নাড়ল জিমি। ‘কোনো ধরনের অ্যাকসিডেন্ট...কিংবা মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে কেউ।’

‘মরে-টরে গেছে নাকি?’ রনির কণ্ঠে শঙ্কা।

‘না, বেহুঁশ হয়ে গেছে,’ বলল জিমি। পালস চেক করল। ‘নাড়ি চলছে ঠিকমতোই, তবে মাথার আঘাতটা বিশেষ সুবিধার মনে হচ্ছে না। ডাক্তার দেখানো দরকার।’

‘এ অবস্থায় ওকে বাইরে নিয়ে যাওয়া কঠিন,’ ঠোঁট কামড়াল অয়ন। ফোন করে সাহায্য চাইবে, সে উপায়ও নেই। গোলকধাঁধার বাইরে সবাইকে সেলফোন জমা দিয়ে আসতে হয়েছে, যাতে ইন্টারনেট ঘেঁটে সঠিক জবাব বের করতে না পারে প্রতিযোগীরা।

রনির দিকে তাকাল ও। ‘আপনি গিয়ে কাউকে খবর দিতে পারবেন, রনি ভাই? যে পথে এসেছি, সে পথ ধরে এন্ট্রান্সের কাছে ফিরে যেতে পারবেন না?’

‘পারব,’ আত্মবিশ্বাসের সুরে বলল রনি। ‘কিন্তু তোমরা এখানে অন্ধকারে বসে থাকবে? আমাকে তো ফ্ল্যাশলাইটও নিয়ে যেতে হবে।’

‘আলো যা আছে, তা একেবারে কম না,’ বলল অয়ন। ‘তা ছাড়া আমাদের সঙ্গে পেনলাইট আছে।’

গোয়েন্দাদের প্রয়োজন, এমন সব ছোটখাটো জিনিস পকেটে নিয়ে ঘোরে ও আর জিমি। একটা পেনলাইট বের করে দেখাল।

‘যান আপনি। যত তাড়াতাড়ি পারেন, লোক নিয়ে ফিরে আসুন।’

‘বলবেন, ১২ নম্বর সাইনবোর্ডের কাছে আছি আমরা,’ যোগ করল জিমি।

‘এর আগে পাঁচটা সাইনবোর্ড পেরিয়েছি,’ বিভ্রান্ত গলায় বলল রনি। ‘এটা ১২ নম্বর হয় কী করে?’

‘সিরিয়ালি লাগানো হয়নি সাইনবোর্ডগুলো,’ ব্যাখ্যা করল অয়ন। ‘তাহলে কোনো চ্যালেঞ্জ থাকত না খেলাটায়। নম্বর মিলিয়ে সবাই পৌঁছে যেত শেষ প্রান্তে। বোকা বানানোর জন্য এভাবে লাগিয়েছে।’

‘অ!’ মাথা দোলাল রনি। একটু দোনোমনা ভাব দেখা গেল তার মধ্যে। গোলকধাঁধার অন্ধকার পথে একাকী যেতে সাহস পাচ্ছে না বোধ হয়। অচেতন মাইকেল ডেন্টের দিকে তাকিয়ে মনকে শক্ত করল। বলল, ‘যাচ্ছি আমি। তোমরা সাবধানে থেকো।’

‘আপনিও,’ বলল অয়ন। ‘রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই। যদি মনে হয় পথ চিনতে পারছেন না, সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসবেন এখানে।’

‘আচ্ছা।’

উল্টো ঘুরল রনি। ফ্ল্যাশলাইটের আলো ফেলে লম্বা পদক্ষেপে হাঁটতে শুরু করল। চোখের আড়ালে চলে গেল একটু পরেই।

‘ওনাকে একা পাঠানো কি ঠিক হলো?’ জিজ্ঞেস করল জিমি। ‘যদি পথ হারান? আমাদের কেউ সঙ্গে গেলে ভালো হতো।’

হাঁটু গেড়ে অচেতন মাইকেলের পাশে বসে পড়েছে অয়ন। পেনলাইটের আলোয় দেখছে তার ক্ষতটা। মাথা নেড়ে বলল, ‘না, আমাদের দুজনেরই এখানে থাকা দরকার। যতটুকু বুঝছি...অ্যাকসিডেন্ট না, হামলাই করা হয়েছিল মাইকেল ডেন্টের ওপর। আর সেটা খুব বেশি আগে নয়। তার মানে... হামলাকারী এখনো এই গোলকধাঁধার ভেতরেই আছে।’

ঢোঁক গিলল জিমি। ‘আবার হামলা হতে পারে ভাবছিস?’

‘অসম্ভব কিছু না। শুধু মাথা ফাটিয়ে যদি ক্ষান্ত না দেয়? কে জানে, হয়তো মেরেই ফেলতে চেয়েছিল।’

ঝট করে উঠে দাঁড়াল জিমি। ‘ঈশ্বর! রনি ভাই যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন!’

এগিয়ে চলেছে রনি। গতি মন্থর। দ্বিধায় ভুগছে সারাক্ষণ। যেদিকেই তাকায়, গোলকধাঁধার গলি ঘুপচি সব একই রকম লাগে। সন্দেহ হচ্ছে, ভুল পথে চলে যাচ্ছে কি না। সম্পূর্ণ একা ও, এখনো দেখা পায়নি কারও। ভূত সেজে কেউ ভয় দেখাতে আসুক, তা–ই চাইছে মনেপ্রাণে। অভিনেতাদের কাউকে পেয়ে গেলে বাইরে বেরোনো সহজ হবে, লোক ডাকতেও সুবিধা হবে।

সামনেই ইন্টারসেকশন। সাইনবোর্ড দেখে জায়গাটা চিনতে পারল ও ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ–সংক্রান্ত প্রশ্ন লেখা। একটু আগে এখান দিয়েই গিয়েছিল। তখন গিয়েছিল বাঁয়ে, তার মানে এখন ডানে মোড় নিলে আগের পথটা ধরা যাবে। ওদিকে ঘুরতেই চোখে ধরা পড়ল নড়াচড়া। তড়িঘড়ি ভঙ্গিতে কে যেন হাঁটছে সামনে।

‘দাঁড়ান!’ গলা চড়িয়ে ডেকে উঠল রনি। ‘সাহায্য করুন, প্লিজ!’

থমকে দাঁড়াল লোকটা। আস্তে আস্তে উল্টো ঘুরল। কালো রঙের একটা আলখাল্লা পরে আছে সে, মাথায় বিশাল হুড। মুখ দেখা যাচ্ছে না।

‘কী হয়েছে?’ কাছে এসে নিচু গলায় জানতে চাইল।

‘আহত এক ভদ্রলোককে পেয়েছি আমরা, তাঁর চিকিৎসা দরকার...’

‘আমরা মানে?’

‘আমি আর আমার দুই বন্ধু। ওরা রয়ে গেছে ভদ্রলোকের সঙ্গে, আমি এসেছি সাহায্যের খোঁজে। প্লিজ, আমাকে একটু বাইরে নিয়ে যেতে পারেন? যাঁকে পেয়েছি, তিনি সম্ভবত মাইকেল ডেন্ট।’

‘সত্যি?’ লোকটার কণ্ঠে সন্দেহ।

‘জি।’

‘কোথায় ওরা?’

‘১২ নম্বর সাইনবোর্ডের কাছে। চলুন না আমার সঙ্গে! সঙ্গে কেউ থাকলে পথ চিনতে সুবিধা হয়।’

‘কোথায় যেতে চাইছ?’

‘কোথায় আবার, এন্ট্রান্সের কাছে। অর্গানাইজাররা তো সবাই ওখানেই।’

‘লাভ নেই,’ লোকটা মাথা নাড়ল। ‘শেষ গ্রুপটা ঢোকার পর এন্ট্রান্সের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেরোতে হলে এক্সিটের গেট দিয়ে বের হতে হবে।’

‘আয় হায়! ওই রাস্তা তো চিনি না!’

‘আমি চিনি,’ মুচকি হেসে বলল লোকটা। ‘ইন ফ্যাক্ট, শর্টকাটও জানা আছে। বেশি সময় লাগবে না। এসো আমার সঙ্গে।’

ছুটতে শুরু করল দুজনে। ক্রমাগত ডানে-বাঁয়ে বাঁক ঘুরছে লোকটা, তাল রাখা দায়। কোন দিকে কত দূর চলেছে রনি, কিছুই বুঝতে পারছে না।

প্রায় ১০ মিনিট দৌড়াল ওরা, তারপর থামল লোকটা। কুঁজো হয়ে দুই হাঁটুতে হাত রাখল, হাঁপাচ্ছে। শ্বাস ফেলছে জোরে জোরে।

‘এসে গেছি,’ বলল সে। ‘ওই যে, ওখান দিয়ে গেলেই বেরোতে পারবে।’ আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল সামনে।

‘ধন্যবাদ,’ বলে গলির মতো পথটা ধরে এগোল রনি। শেষ প্রান্তে যেতেই পৌঁছে গেল একটা খোলা জায়গায়। চারদিকে আলো ফেলতেই চমকে উঠল। খোলা নয়, খানিকটা প্রশস্ত বলা যেতে পারে, ছোট্ট একটা কুঠুরি যেন। তিন দিকেই মুখ ব্যাদান করে রেখেছে নিরেট দেয়াল।

বিস্মিত হয়ে উল্টো ঘোরার চেষ্টা করল, আর তক্ষুনি পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হলো ওকে। সোজা গিয়ে দেয়ালের ওপর আছড়ে পড়ল রনি। ঠুকে গেল নাক-মুখ-বুক। কাতরে উঠল ব্যথায়। সে ব্যথা সামলে ওঠার সময় পেল না, ঘাড়ের ওপর প্রচণ্ড এক রদ্দা বসাল লোকটা। হুড়মুড় করে মাটিতে পড়ে গেল ও। চোখে তারা দেখছে।

ওর ওপর ঝুঁকল লোকটা, হাত থেকে কেড়ে নিল ফ্ল্যাশলাইট। এরপর উল্টো ঘুরে চলে গেল নিঃশব্দে। ঘোর অন্ধকার যেন জড়িয়ে ধরল রনিকে।

ঠান্ডা মাটিতে কয়েক মিনিট শুয়ে রইল ও। ব্যথা সয়ে এলে উঠে বসল ধীরে ধীরে। কত বড় বিপদে পড়েছে, তা বুঝতে এক মিনিটও লাগল না। গোলকধাঁধার সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা একটা অংশে আটকা পড়েছে ও। সঙ্গে আলো নেই, পথ দেখে চেনার উপায় নেই।

সবচেয়ে বড় কথা, আলখাল্লাধারী লোকটাকে বলে দিয়েছে অয়ন, জিমি আর মাইকেল ডেন্টের কথা। কোথায় ওদের পাওয়া যাবে, বলে দিয়েছে তা-ও। সঙ্গে ফোন নেই কারও, তাই ওদের সাবধান করে দেওয়ারও নেই কোনো উপায়।

তিন

‘জ্ঞান ফিরছে ওনার,’ বলল জিমি।

দাঁড়িয়ে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিল অয়ন, এবার পেনলাইটের আলো ফেলল মাইকেলের মুখে। নড়ছে লোকটা, চোখ পিটপিট করছে। ঠোঁট নেড়ে কী যেন বলতে চাইল।

‘শান্ত থাকুন, স্যার,’ নরম গলায় তাকে বলল জিমি। ‘সাহায্য আসছে।’

‘আ...আমি কোথায়?’ দুর্বল গলায় জিজ্ঞেস করল মাইকেল। ‘উফ, মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা...কী হয়েছে?’

‘জানা নেই, স্যার। গোলকধাঁধার ওদিক থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে এসেছিলেন আপনি। আমাদের সামনে এসেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন।’

‘গোলকধাঁধা!’ চোখ বড় হলো মাইকেলের। ‘আমরা কি গোলকধাঁধায়? আমাকে তো... কটা বাজে? উঠতে হবে আমাকে!’

‘শুয়ে থাকলেই ভালো করবেন, আপনি আহত,’ নিচু হয়ে মাইকেলকে ঠেকাতে চাইল অয়ন।

ঝাপটা দিয়ে ওর হাত সরিয়ে দিল লোকটা। জোর করছে দেখে তাকে ধরাধরি করে বসিয়ে দিল ওরা।

‘তোমরা কি প্রতিযোগী?’ জানতে চাইল মাইকেল। ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা কি হয়ে গেছে?’

‘জি,’ বলল অয়ন। ‘ব্যথা পেলেন কী করে, মনে করতে পারেন?’

মাথা ঝাঁকাল মাইকেল। ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। একটা জিনিস পেয়েছি—ওকে দেখানো দরকার ছিল। গোলকধাঁধার মাঝখানে একটা ঝরনা আছে, ওখানেই ডেকেছিলাম। জায়গাটা নির্জন, একান্তে কথা বলার জন্য ভালো। কিন্তু ওখানে পৌঁছাতেই...’

কথা বলতে বলতে পকেট হাতড়াচ্ছে সে। ‘আরে, গেল কোথায়?’ তাকাল অয়ন-জিমির দিকে। ‘আমাকে যখন পেলে, আমার হাতে কিছু ছিল?’

‘কিসের কথা বলছেন?’ জানতে চাইল জিমি।

‘খাম। একটা সাদা খাম।’

‘নাহ্। আমাকেই দুহাতে জাপটে ধরেছিলেন আপনি। হাতে কিছু দেখিনি।’

‘তার মানে গেছে ওটা!’ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল মাইকেল। ‘এদিকে এসো, দাঁড়াতে সাহায্য করো আমাকে। এখান থেকে বেরোতে হবে এক্ষুনি।’

‘এ অবস্থায় হাঁটাচলা করা ঠিক হবে না আপনার,’ বলল অয়ন। ‘বিশ্রাম নিন। আমাদের এক বড় ভাইকে পাঠিয়েছি সাহায্য আনতে। চলে আসবেন শিগগিরই।’

‘কোথায় গেছে?’

‘এন্ট্রান্সের দিকে। ওখানে অনেক লোক ছিল।’

‘লাভ নেই,’ মাথা নাড়ল মাইকেল। ‘প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর গেট বন্ধ করে দেওয়ার কথা। বেরোতে পারবে না ওখান দিয়ে। আমাদেরকে এক্সিটের দিকে যেতে হবে।’

‘কিন্তু রনি ভাইকে ফেলে যাই কী করে?’ বলল জিমি। ‘কাউকে না পেলে এখানে ফিরে আসবেন নিশ্চয়ই। আমরাও যদি না থাকি, যাবেন কোথায় উনি?’

‘একটু অপেক্ষা করা যাক,’ বলল অয়ন। ‘আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো, মি. ডেন্ট?’

‘তুমি আমাকে চেনো?’ বিস্ময় ফুটল মাইকেলের কণ্ঠে।

‘পত্রিকায় ছবি দেখেছি।’

‘ও! ঠিক আছে, একটু বসি। তোমাদের বড় ভাই ফিরে আসুক।’

বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, খানিক পরেই শোনা গেল পায়ের আওয়াজ। রনি নয়, অন্য দুজন লোককে হন্তদন্ত ভঙ্গিতে ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে দেখল ওরা। দুজনেরই পরনে গাঢ় রঙের পোশাক। এদের চেনে অয়ন-জিমি। একজন হলো মাইকেলের ভাই মেলভিন, পত্রিকায় তারও ছবি ছাপা হয়েছিল; অন্যজনকে দেখেছে খানিক আগে, ঘোষণামঞ্চের সেই টাকমাথা খাটো লোকটা।

‘মাইকেল! কী হয়েছে তোমার?’ কাছে এসেই উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইল মেলভিন।

কপালের শুকিয়ে আসা রক্ত দেখে টাকমাথা লোকটাও আঁতকে উঠল। ‘রক্ত কিসের?’

‘ও কিছু না,’ হালকা গলায় বলল মাইকেল। ‘সামান্য আঘাত পেয়েছি মাথায়। বাড়িটা আরও জোরে মারা উচিত ছিল তোমার, মেলভিন।’

‘কী বলছ এসব!’ মেলভিনকে বিভ্রান্ত দেখাল। ‘কেউ তোমার মাথায় বাড়ি দিয়েছে?’

‘অভিনয় বন্ধ করো,’ খেঁকিয়ে উঠল মাইকেল। ‘আমি যে ঝরনার কাছে যাব, এ খবর তুমি ছাড়া কেউ জানত না। তুমিই বাড়ি দিয়েছ আমার মাথায়, চুরি করেছ চিঠিটা।’

‘কিসের চিঠি?’ জানতে চাইল দ্বিতীয় লোকটা।

‘তার মানে...তার মানে...’ কথা আটকে যাচ্ছে মেলভিনের, ‘ওটা হারিয়ে গেছে?’

‘এক মিনিট, জেন্টেলম্যান,’ হাত তুলে ওদের আলোচনায় বাধা দিল অয়ন। ‘একদম গোড়া থেকে সব খুলে বললে বোধ হয় ভালো হয়। রহস্যজনক একটা ঘটনা ঘটেছে এখানে, সেটার সমাধান করতে চাইলে সবকিছু জানা দরকার আমাদের।’

‘রহস্য! সমাধান!’ ভুরু কোঁচকাল মেলভিন। ‘মানে কী?’

‘আমরা শখের গোয়েন্দা, স্যার,’ ভারিক্কি গলায় বলল অয়ন। ‘নানা ধরনের রহস্য সমাধান করি। যদি আপত্তি না থাকে, হারানো চিঠিটা খুঁজতে সাহায্য করতে চাই আপনাদের।’

‘ঠাট্টা করছ না তো?’ টাকমাথা লোকটার গলায় সন্দেহ। ‘গোয়েন্দা? এই বয়সে?’

‘বয়স দেখে বিভ্রান্ত হবেন না, প্লিজ। চাইলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিতে পারেন। আমার নাম অয়ন হোসেন, আর এ হলো আমার বন্ধু জিমি পার্কার। আমাদের নাম বললেই চিনতে পারবে ওরা।’

‘থাক, খোঁজখবরের প্রয়োজন নেই,’ বড় করে শ্বাস ফেলে বলল মাইকেল। ‘সাহায্য করতে চাইছ, এটাই বড় কথা। বলো, কী জানতে চাও?’

‘আপনাকে তো চিনি, আপনার ভাইকেও চিনতে পারছি। কিন্তু এঁকে ঠিক...’ টাকমাথা লোকটাকে দেখাল অয়ন।

‘ওর নাম পিটার ল্যাং। আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধু। এখন আমার পার্টনারও বটে। হন্ডেট মেইজের পুরো আয়োজনটা ও-ই করেছে। এই প্রজেক্টের বেশির ভাগ খরচ ওর দেওয়া, আমার তেমন টাকাপয়সা নেই।’

‘আরে, দূর, দূর! টাকাই সব নাকি?’ বিব্রত দেখাল পিটারকে। ‘আইডিয়া তো তোমার।’

মেলভিন মুখ বাঁকা করল ওর কথা শুনে।

‘হুম,’ মাথা ঝাঁকাল অয়ন, ‘পরিচয় তো হলো। এবার বলুন, মি. ডেন্ট...’

‘আমাকে মাইকেল বলেই ডাকতে পারো।’

‘জি, অবশ্যই। তো, মাইকেল, ঝরনার ব্যাপারটা কী? মেলভিনকে কেন ডেকেছিলেন ওখানে? চিঠিটাই–বা কিসের?’

একটু ইতস্তত করল মাইকেল, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘রাখঢাক করে আর লাভ কী? তোমরা নিশ্চয়ই জানো, উইল করে আমাকে সব সম্পত্তি দিয়ে গেছে বাবা? বিশ্বাস করো, ওতে আমার কোনো হাত ছিল না, কখনো চাইনি এমনটা ঘটুক। মেলভিনের জন্য খুব খারাপ লাগছিল, তাই বাবা মারা যাওয়ার পরে পুরো বাড়ি তল্লাশি করেছি...যদি আরেকটা উইল পাওয়া যায়...যদি ওতে মেলভিনের ভাগ্য বদলায়। পিটারও সাহায্য করছিল আমাকে, শেষ কিছুদিন বাবার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ও কাজ করেছিল কি না, বাবার ফাইলপত্র কোথায় আছে না আছে, জানে ও।’

‘তারপর?’

‘আজ সকালে বাবার পুরোনো মুভিগুলোর স্ক্রিপ্ট গোছাচ্ছিলাম, হঠাৎ একটা মুখবন্ধ করা খাম পেলাম। ওপরে আমার আর মেলভিনের নাম। হাতের লেখাটা বাবার।’

‘কী ছিল খামে?’ জিজ্ঞেস করল পিটার।

‘জানি না,’ মাইকেল মাথা নাড়ল। ‘খুলিনি। দুজনের নাম লেখা দেখে ভাবলাম, দুজনে একসঙ্গে খুললেই হয়তো ভালো করব। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে দেখা করতে চেয়েছিলাম মেলভিনের সঙ্গে। ঝরনার কাছে ডেকে পাঠিয়েছিলাম ওকে। মনে কোনো শয়তানি ছিল না আমার, কিন্তু ও...’

‘আমি কিছু করিনি, মাইকেল!’ প্রতিবাদ করল মেলভিন। ‘তুমি আমার বড় ভাই, আমি তোমার গায়ে হাত তুলব, এ কথা ভাবলে কী করে?’

‘মামলা তো ঠিকই ঠুকে দিয়েছ আমার নামে।’

‘সেটা ভিন্ন ব্যাপার। মামলা করা আর মাথায় বাড়ি দেওয়া নিশ্চয়ই এক কথা নয়?’

‘ঘটনার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?’ প্রশ্ন করল জিমি। ‘দেখা করেননি কেন মাইকেলের সঙ্গে?’

‘গিয়েছিলাম, কিন্তু সময় অনেক বেশি লেগে গেছে। পথ হারিয়েছিলাম গোলকধাঁধার ভেতরে। শেষ পর্যন্ত যখন পৌঁছালাম, মাইকেল ছিল না ওখানে। ভাবলাম, নিশ্চয়ই আমার দেরি দেখে চলে গেছে, কিংবা হয়তো যায়ইনি। ফিরে আসার সময় পিটারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ও বলল, মাইকেল নাকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও ছিল না। শেষে দুজনে একসঙ্গে খুঁজতে বেরোলাম ওকে।’

‘গোলকধাঁধার ভেতরেই খুঁজতে এলেন কেন?’

‘ওটা আমার আইডিয়া,’ বলল পিটার। ‘মনে হচ্ছিল, মাইকেল হয়তো শেষ মুহূর্তে গোলকধাঁধার ভেতরের প্রস্তুতি দেখতে এসে কোনো বিপদে পড়েছে। এখন তো দেখছি, ঠিকই আন্দাজ করেছি।’

‘কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনারা তিনজনই গোলকধাঁধার ভেতরটা ভালো করে চেনেন,’ মন্তব্য করল অয়ন।

‘একসঙ্গে বড় হয়েছি আমরা,’ বলল মেলভিন। ‘ছোটবেলায় লুকোচুরি খেলতাম এখানে। এখানকার প্রতিটা ইঞ্চি আমাদের হাতের তালুর মতো চেনা।’

‘তারপরও আজ ঝরনায় যাওয়ার সময় পথ হারিয়ে ফেললেন?’ সন্দেহ ফুটল অয়নের গলায়।

নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসল মেলভিন। ‘অনেক দিন হলো ঢুকিনি এখানে। তাই একটু ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম।’

‘কথাবার্তা বাইরে গিয়ে বললে কেমন হয়?’ বলল মাইকেল। ‘বাবার চিঠিটা নিয়েও পরে মাথা ঘামানো যাবে। চলো, এখান থেকে বেরোনো যাক। প্রতিযোগীরা যখন বেরোতে শুরু করবে, আমি ওখানে হাজির থাকতে চাই। তোমরা আমাকে একটু ধরো। দাঁড়াব।’

‘ধরো এটা,’ বলে অয়নের হাতে নিজের ফ্ল্যাশলাইটটা গুঁজে দিল মেলভিন। এগিয়ে গেল ভাইয়ের দিকে। পিটারও হাত লাগাল। দুজনে ধরাধরি করে দাঁড় করাল মাইকেলকে। খানিক টলল সে, তবে শিগগিরই ব্যালান্স ফিরে পেল।

‘আমরাও কি যাব ওদের সঙ্গে?’ অয়নকে জিজ্ঞেস করল জিমি। ‘নাকি অপেক্ষা করব রনি ভাইয়ের জন্য?’

‘অপেক্ষা করে লাভ নেই, ও নির্ঘাত পথ হারিয়েছে,’ বলল মাইকেল। ‘কিন্তু চিন্তা কোরো না, বাইরে গিয়েই লোক পাঠাব ওকে খুঁজে বের করতে। কয়েকটা রেসকিউ টিম রেডি রেখেছি আমরা, পথহারা প্রতিযোগীদের উদ্ধার করার জন্য।’

‘আর যদি পথ হারিয়ে না থাকেন?’ গম্ভীর গলায় বলল অয়ন। ‘যদি অন্য কিছু ঘটে থাকে?’

‘এ কথা কেন বলছিস?’ বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল জিমি।

নিঃশব্দে মেলভিনের দেওয়া ফ্ল্যাশলাইটটা উঁচু করল অয়ন, পেনলাইটের আলোয় পরিষ্কার দেখা গেল ওটার গায়ে খোদাই করা দুটো হরফ: আর এস।

মানে, রনি স্টিভেনস।

চার

থমথমে চেহারা নিয়ে মেলভিনের দিকে তাকাল অয়ন। ‘ফ্ল্যাশলাইটটা কোথায় পেয়েছেন আপনি?’

কাঁধ ঝাঁকাল মেলভিন। ‘পিটার দিয়েছে। আমারটার ব্যাটারি ফুরিয়ে গিয়েছিল, তাই ওর বাড়তি ফ্ল্যাশলাইটটা ধার নিয়েছি। কেন, তাতে সমস্যা কী?’

‘এই যে, এটাই সমস্যা,’ খোদাই করা হরফ দুটো দেখাল অয়ন। ‘এটা আপনাদের কারও ফ্ল্যাশলাইট না। এটা রনি ভাইয়ের।’

পিটারের দিকে তাকাল এবার জিমি। ‘কোত্থেকে এনেছেন এটা?’

‘আমি কী করে বলব?’ সভয়ে বলল পিটার। ‘ওভাবে তাকিয়ো না। ওটা আমি দিইনি মেলভিনকে। আমি যেটা দিয়েছি, সেটায় কিছু খোদাই করা ছিল না।’

সবার চোখ আবার ঘুরে গেল মেলভিনের দিকে।

‘এতটা নিচে নেমে গেছ তুমি?’ ক্রুদ্ধ গলায় বলল মাইকেল। ‘আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে সাধ মেটেনি? মাথা ফাটানোর জন্য আরও মানুষ চাই? কী করেছ তুমি ছেলেটাকে নিয়ে?’

‘আমি কিছু করিনি!’ প্রতিবাদ করল মেলভিন। ‘কসম!’

‘তাহলে ফ্ল্যাশলাইটটা এল কী করে তোমার কাছে?’

‘আ...আমি সত্যি জানি না। আমি তো ভেবেছিলাম, এটাই পিটার দিয়েছে আমাকে।’

‘মিথ্যে বলে পার পাবে না, মেলভিন। ছেলেটার যদি কিছু হয়...’

‘দাঁড়ান,’ বাধা দিল অয়ন। ‘এখান থেকে এগজিটে পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে?’

‘দশ মিনিটের বেশি না,’ বলল মাইকেল। ‘শর্টকাট আছে।’

‘তাহলে চলুন। আপনার চিকিৎসা দরকার। তা ছাড়া বাইরে বেরোনোর পর আমাদের বন্ধুকে খোঁজার জন্য রেসকিউ টিমও পাঠাতে পারবেন।’

‘খেলা শেষ করার আগেই?’ হাহাকারের মতো শোনাল পিটারের গলা। ‘কাজটা উচিত হবে না, মাইকেল। কী ধরনের বাজে পাবলিসিটি হবে, ভাবতে পারো? এত দিন যত কষ্ট করেছি আমরা, সব মাঠে মারা যাবে।’

কপালের আঘাতটা স্পর্শ করল মাইকেল। ‘না, পিটার, ছেলেটা ঠিকই বলছে। আমি চাই না কারও কোনো ক্ষতি হোক। খেলা পণ্ড হলে হবে। তা ছাড়া কোনো পাবলিসিটিই খারাপ না। লোকে আলোচনা করবে আমাদের নিয়ে। নাম ছড়াবে।’

‘মাথাটা একটু খাটাও!’ অনুরোধ করল পিটার। ‘এসবের কোনো দরকার নেই। মেলভিন তো আছেই আমাদের সঙ্গে। ওকে চেপে ধরা যাক। ছেলেটাকে কোথায় রেখে এসেছে, বলে দিক আমাদের। তাহলে আমরাই গিয়ে ওকে উদ্ধার করতে পারব।’

‘থামবে তুমি?’ ধমকে উঠল মেলভিন। ভাইকে সাহায্য করল হাঁটতে। অগত্যা পিটারকেও এগিয়ে যেতে হলো।

মুখে ১০ মিনিটের কথা বললেও সময় লাগল আরও অনেক বেশি। অসুস্থ মাইকেল দ্রুত হাঁটতে পারছে না। তা ছাড়া দুটো ইন্টারসেকশনে পৌঁছে বিবাদে জড়াল মেলভিন আর পিটার। একজন বলছে ডানে যেতে হবে, আরেকজন বলছে বাঁয়ে যেতে। দুবারই ভাইয়ের পক্ষ নিল মাইকেল।

অস্থিরতা অনুভব করছে জিমি। দুশ্চিন্তায় ভুগছে রনির জন্য। কিন্তু শান্ত রয়েছে অয়ন। গভীর মনোযোগে মাইকেল, মেলভিন আর পিটারের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে ও, একই সঙ্গে কামড়ে চলেছে ঠোঁট। ওর এ চেহারা জিমি চেনে। বুঝতে পারছে, চিন্তার ঝড় বইছে ওর বন্ধুটির মাথায়।

‘কী ভাবছিস?’ নিচু গলায় জানতে চাইল ও।

‘বোঝার চেষ্টা করছি ব্যাপারটা,’ বলল অয়ন। ‘কিছু একটা ঘাপলা আছে এদের ভেতর।’

‘কী ঘাপলা?’

‘সেটা বুঝলে তো রহস্যটাই সমাধান হয়ে যেত। তবে রনি ভাইয়ের উধাও হওয়ার পেছনে এদেরই কারও হাত আছে, তাতে সন্দেহ নেই।’

‘মাইকেলকে বাদ দেওয়া যায়। বেহুঁশ হয়ে আমাদের সামনে পড়ে ছিল সে। তা ছাড়া তার ওপরেই হামলা করে চিঠিটা চুরি করা হয়েছে।’

‘চিঠি...ঠিক বলেছিস!’ একটু যেন উত্তেজিত হয়ে উঠল অয়ন। ‘খামটার রং যেন কী ছিল?’

‘সাদা খাম,’ ভুরু কুঁচকে বলল জিমি। ‘কেন, খামের রঙের কথা তুলছিস কেন?’

‘একটা ব্যাপার মাথায় ঢুকল।’ কী যেন ভাবল অয়ন। ‘একটা কাজ করতে পারবি?’

‘কী কাজ?’

জিমির কানে ফিসফিস করে বলে দিল অয়ন।

চমকে উঠল জিমি। ‘পাগল হয়েছিস? ধরা পড়লে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বসবে।’

‘ধরা যাতে না পড়ি, সে জন্যই তোকে বললাম। এসব কাজে আমার চেয়ে তুই বেশি দক্ষ। নইলে আমিই চেষ্টা করতাম।’

অসহায় দেখাল জিমিকে। ‘করতেই হবে?’

‘হ্যাঁ। রনি ভাইকে উদ্ধার করতে চাইলে এক্ষুনি মুখোশ খুলতে হবে লোকটার।’

‘বেশ। কখন করব?’

‘প্রথম সুযোগেই। খেয়াল রাখ ওদের দিকে।’

একটু পরেই থেমে গেল পিটার। বলল, ‘মাইকেলের একটু বিশ্রাম দরকার।’

‘না না, ঠিক আছি আমি,’ তাড়াতাড়ি বলল মাইকেল, যদিও হাঁপাচ্ছে সে। ‘পৌঁছেই তো গেছি প্রায়। এখন আর থামাথামির দরকার কী?’

‘আর কত দূর?’ জানতে চাইল অয়ন।

‘বেশি না।’ সামনের গলিটা দেখাল মাইকেল। ‘ওটা ধরে শেষ মাথায় গিয়ে পরপর দুটো মোড় নিতে হবে—ডানে আর বাঁয়ে। তাহলেই পৌঁছানো যাবে বাইরে যাওয়ার গেটে।’

‘জিমি, তুই চলে যা,’ বন্ধুকে বলল অয়ন। ‘আমরা এখানেই অপেক্ষা করছি।’ কথা বলার ফাঁকে চোখের ইশারা করল।

মাথা ঝাঁকিয়ে সামনে এগোল জিমি। সংকীর্ণ গলি, তাই মাইকেল, মেলভিন আর পিটারকে পেরোনোর সময় ঘষা খেল তাদের গায়ে। ওপাশে যখন পৌঁছাল, হাসি ফুটল ওর মুখে। উল্টো ঘুরে মাথা ঝাঁকাল অয়নের দিকে তাকিয়ে।

অয়নও নিঃশব্দে হাসল। তারপর শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, ‘জলদি যা। বাইরে গিয়েই পুলিশে খবর দিস।’

চমকে উঠল মাইকেল। ‘পুলিশ কেন?’

‘ওমা! আপনার মাথায় বাড়ি মারা হলো, আমাদের বড় ভাই নিখোঁজ...পুলিশ ডাকতে হবে না?’

‘সেটা আমি বুঝব। মেরেছে তো আমাকে। আর তোমাদের বন্ধুকেও উদ্ধার করার ব্যবস্থা করছি এক্ষুনি। লোক পাঠিয়ে তল্লাশি চালাব পুরো গোলকধাঁধায়। খামোকা পুলিশ ডাকার কোনো মানে হয় না।’

আস্তে আস্তে হাসি ফুটল অয়নের মুখে। ‘পুলিশি হাঙ্গামায় জড়াতে চান না বুঝি? কেন? ওরা আপনার ভাইকে ধরে নিয়ে যাবে বলে?’

‘কী বলতে চাও?’

‘এটাই যে, মামলা-মোকদ্দমা আর পুলিশি কেসের মধ্যে অনেক তফাত আছে। মামলা যেকোনো মুহূর্তে তুলে নেওয়া যায়, মিটমাট করে ফেলা যায়। কিন্তু পুলিশ যদি কাউকে অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার করে, সেটার মীমাংসা করা এত সহজ নয়। তার পাশাপাশি বদনামের ভয় তো আছেই।’

‘তোমার কথার মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, অয়ন।’

‘আরও পরিষ্কার করে বলব? ভাইয়ের প্রতি আপনার আচরণ মোটেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না আমার কাছে। ঝগড়াঝাঁটি যা করছেন, তা একেবারেই লোকদেখানো। কেউ যদি আমার মাথা ফাটাত, তার সামনে এত স্বাভাবিক থাকতে পারতাম না আমি। অথচ তার ঘাড়েই ভর দিয়ে গোলকধাঁধা থেকে বের হচ্ছেন আপনি, পিটারের সঙ্গে মেলভিনের তর্ক বাধলে ভাইয়ের পক্ষ নিচ্ছেন। এসব দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আসলে কোনো ঝগড়া নেই আপনাদের দুজনের মধ্যে। বরং ভেতরে ভেতরে দুজন দুজনকে ভালোবাসেন।’

‘ভালোবাসা?’ দাঁতমুখ খিঁচাল মাইকেল। ‘তা হলে আমার নামে আদালতে মামলা ঠুকেছে কেন ও?’

‘হ্যাঁ, তা দেখে ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা কি জানেন, কোথাও যাওয়ার আগে সেখানকার বিষয়ে ভালোমতো পড়াশোনা করি আমি। আর তাই জানি, আপনাদের বাবা...মানে, মি. ম্যাক্সওয়েল ডেন্ট...প্রচুর বিষয়সম্পত্তি রেখে গেলেও টাকাপয়সা কিছু রেখে যাননি। কাজেই টাকার জন্য এই গোলকধাঁধা খুলে দিতে হয়েছে আপনাকে। কিন্তু খুললেই যে লোক আসবে, প্রচুর আয় হবে, তার গ্যারান্টি কোথায়? দরকার পাবলিসিটি। আপনি নিজে বলেছেন, কোনো পাবলিসিটিই খারাপ পাবলিসিটি নয়। তাই একটা নাটক সাজিয়েছেন দুই ভাই মিলে। সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের নাটক। মামলা করা হয়েছে আদালতে, যাতে স্ক্যান্ডাল হয়। আর তাতেই লোকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে আপনাদের ব্যাপারে। দলে দলে ছুটে এসেছে হন্টেড মেইজের উদ্বোধনে।’

‘তু... তুমি স্রেফ আন্দাজ থেকে বলছ!’ তোতলাতে তোতলাতে বলল মাইকেল।

‘হয়তো,’ কাঁধ ঝাঁকাল অয়ন। ‘কিন্তু ভুল বলছি না। আমার কী ধারণা, জানেন? দুই ছেলের নামেই সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে গেছেন মি. ম্যাক্সওয়েল ডেন্ট। কিন্তু আসল উইলটা লুকিয়ে ফেলেছেন আপনারা, বানিয়েছেন নকল একটা উইল। আর সেটার বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে আদালতে। পত্রপত্রিকায় গরম খবর তৈরি করার জন্য আর কী। আজ সম্ভবত নাটকীয়ভাবে আসল উইলটা উদয় করতে চেয়েছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা শত শত দর্শকের সামনে। নাটকের একটা সুখী সমাপ্তি হতো তা হলে, সবার মুখে মুখে ফিরত দুই ভাইয়ের মিল-মহব্বত হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা। কিন্তু প্ল্যানে একটু গড়বড় হয়ে গেল...’

‘তুমি কি বলতে চাইছ, মাইকেল নিজেই নিজের মাথা ফাটিয়েছে?’ ক্রুদ্ধ গলায় বলল মেলভিন।

‘না। গড়বড়টা ওখানেই। সত্যিই হামলা করা হয়েছে তাঁর ওপর। কারণ, আপনাদের অজান্তে এই নাটকে ঢুকে পড়েছে তৃতীয় এক চরিত্র।’ ধীরে ধীরে পিটারের দিকে তাকাল অয়ন। ‘তাদের প্ল্যানটা আপনার জানা ছিল না, তাই না, পিটার?’

চুপ করে রইল পিটার। কোমরে হাত রেখে অগ্নিদৃষ্টি হানছে অয়নের দিকে।

‘পিটার! তুমি মেরেছ আমাকে?’ চোয়াল ঝুলে পড়ল মাইকেলের। ‘কিন্তু কেন?’

‘সেটা আন্দাজ করতে অসুবিধে হয় না,’ বলল অয়ন। ‘খামে আসল উইলটা ছিল, আর সেটা নিয়ে মেলভিনের সঙ্গে আপনি দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পিটার কোনোভাবে তা জেনে ফেলেছেন। হয়তো আপনাকে কথা বলতে শুনেছেন ফোনে। তাই আগেই গিয়ে ঘাপটি মেরে বসেছিলেন ঝরনার কাছে। আপনি ওখানে যেতেই মাথায় বাড়ি দিয়ে খামটা চুরি করেছেন, তারপর নিপাট ভালো মানুষের মতো বেরিয়ে গেছেন বাইরে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিতে। পরে আবার গোলকধাঁধার ভেতরে ঢুকেছেন পরিকল্পনার বাকি অংশ বাস্তবায়নের জন্য। চেয়েছিলেন আপনার অজ্ঞান দেহসহ মেলভিনকে হাতেনাতে ধরতে, যাতে আপনার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে তাঁকে ফাঁসানো যায়। সমস্যা বাধল অন্যখানে। মেলভিন বা পিটার ওখানে যাওয়ার আগেই জ্ঞান ফিরল আপনার, আহত অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে চলে এলেন আরেক দিকে...আমাদের কাছে। ঝরনার কাছে পাওয়া যায়নি আপনাকে। তাই দুজনেই আপনাকে খুঁজতে বের হলো। পথে রনি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো পিটারের। তার মুখে শুনলেন আপনার খবর। ভয় পেলেন, মেলভিনকে ফাঁসানোর আগেই যদি লোক ডেকে আপনাকে উদ্ধার করা হয়, পুরো প্ল্যান ওলটপালট হয়ে যাবে। তাই রনি ভাইকে বেহুঁশ-টেহুঁশ করে কোথাও আটকালেন। তারপর মেলভিনকে খুঁজে নিয়ে তাঁকেসহ ছুটে এসেছেন আপনার কাছে। কথাবার্তা বলে আপনাকে নিঃসন্দেহ করে দিতে চেয়েছেন, হামলাকারী মেলভিন ছাড়া আর কেউ নয়, যাতে পুলিশকেও আপনি সে কথাই বলেন।’

‘কেন ফাঁসাতে চেয়েছে মেলভিনকে?’

‘সিম্পল—পথের কাঁটা সরানোর জন্য। আপনার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে যদি জেল হয় মেলভিনের, সম্পত্তির মামলাটা দুর্বল হয়ে যাবে। রায় চলে যাবে আপনার পক্ষে।’

‘তোমার ধারণা, আমাকে সাহায্য করার জন্য এসব করেছে ও?’ কপালে ভাঁজ পড়ল মাইকেলের। ‘বিশ্বাস করি না।’

‘উহু। আপনার জন্য না, নিজের জন্য। ভুলে যাচ্ছেন কেন, উনি আপনার পার্টনার। এখানকার সমস্ত আয়ের অর্ধেক পান উনি। কিন্তু মেলভিন যদি সম্পত্তির ভাগ পেয়ে যান, টাকাপয়সা তিন ভাগ হয়ে যাবে, মানে আয় কমে যাবে ওনার। সেটাই চাননি। তা ছাড়া মেলভিন যদি আপনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন, স্ক্যান্ডাল আরও বাড়বে, মানুষ আরও বেশি আগ্রহী হবে আপনাদের হন্টেড মেইজের প্রতি। টিকিটও বেশি বিক্রি হবে। বুঝতে পারছেন তো, সবদিক থেকেই লাভ পিটারের।’

‘ভালোই গল্প শোনাচ্ছ, ছেলে,’ থমথমে গলায় বলল পিটার। ‘তবে গল্প গল্পই। প্রমাণ করতে পারবে কিছু?’

‘পারব, স্যার,’ হাসল অয়ন। ‘অপরাধের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ওই খামটা। সাদা খাম। মেইজের ভেতরে কোথাও ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। দলে দলে লোক ঢুকেছে এখানে। অন্ধকারে সাদা জিনিস দেখতে পাবে সবাই। ছিঁড়ে ফেললেও টুকরোগুলো দেখা যাবে। বাইরে বেরিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তখনো ওটা লুকানোর সময় পাননি, পুরোটা সময় ঘোষণামঞ্চে সবার চোখের সামনে থাকতে হয়েছে আপনাকে। এর অর্থ, খামটা এ মুহূর্তে আপনার সঙ্গেই আছে।’

‘না!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল পিটার। ‘কোনো খামটাম নেই আমার কাছে।’

‘কয়েক মিনিট আগেও ছিল,’ অয়নের মুখের হাসি চওড়া হলো। ‘কিন্তু এখন আর নেই, কারণ ওটা এখন আমার বন্ধু জিমির কাছে। কারও পকেট থেকে কিছু হাতিয়ে নিতে ও ওস্তাদ। একটু আগে যখন আপনার পাশ দিয়ে যখন গেল, পকেট মারার ব্যাপারটা টের পাননি নিশ্চয়ই?’

মুখের ভাষা হারাল পিটার।

‘জিমি, দেখা জিনিসটা।’

পকেট থেকে মোটাসোটা একটা খাম বের করল জিমি। ‘মাইকেল, এটাই কি আপনার হারানো খাম?’

কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলক তাকিয়ে রইল মাইকেল, তারপরই উত্তেজিত গলায় বলল, ‘হ্যাঁ, ওটাই তো!’

অবস্থা বেগতিক, বুঝতে পারছে পিটার। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করল সে। তবে তৈরি ছিল অয়ন, আলতো করে একটা পা বাড়িয়ে দিল ও। হুমড়ি খেয়ে পড়ল পিটার। মুখ ঠুকে গেল গোলকধাঁধার পাথুরে মেঝেতে। তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল দুই বন্ধু। দুই হাত মুচড়ে নিয়ে এল পিঠের ওপর, তাকে ঠেসে ধরল মাটিতে। ব্যথায় ককিয়ে উঠল পিটার।

‘ধরা পড়ে গেছেন আপনি, পিটার,’ কঠিন গলায় বলল জিমি। ‘এবার ভালোয় ভালোয় বলে দিন, রনি ভাইকে কোথায় আটকে রেখেছেন?’

‘ব্... ব্ল্যাক স্পটে,’ কোনোমতে জানাল পিটার।

‘কোথায় সেটা?’

‘গোলকধাঁধার সবচেয়ে জটিল জায়গা ওটা,’ বলল মেলভিন। ‘পথ চেনা না থাকলে একাকী ওখান থেকে বের হওয়া কঠিন।’

‘আপনি চেনেন?’

‘হ্যাঁ। মাইকেল আর পিটারকে তোমরা বাইরে নিয়ে যাও। আমি তোমাদের বন্ধুকে নিয়ে আসছি।’

পাঁচ

২০ মিনিট পর উদ্ধার হলো রনি। পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল, তারা এসে পড়েছে ইতিমধ্যে। সংক্ষিপ্ত জেরার মুখোমুখি হলো অয়ন, জিমি আর রনি; এরপর ওদের ছেড়ে দেওয়া হলো। বলে দেওয়া হলো, পরদিন যেন থানায় গিয়ে লিখিত জবানবন্দি জমা দিয়ে আসে।

‘আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না,’ বাড়ি ফেরার পথে বলল রনি, ‘সামান্য একটা খেলায় অংশ নিতে এসে এত কিছু ঘটে গেল। শেষমেশ পুরস্কারটা পর্যন্ত পেলাম না। প্রতিযোগিতাই বাতিল হয়ে গেল!’

‘আগেও তো ঘটেছে এমন,’ হালকা গলায় বলল জিমি। ‘আপনি কয়েকবার ছিলেনও আমাদের সঙ্গে।’

‘তা ঠিক। তোমরা আসলে কুফা। তোমাদের নিয়ে কোথাও গেলেই একটা না একটা ঝামেলা বাধে।’

‘কুফা বলছেন কেন?’ বলল অয়ন। ‘রহস্যকে আকৃষ্ট করার চুম্বক বলতে পারেন।’

‘তোমরা চুম্বক হও, আর যা-ই হও, আমার তাতে কী? বিপদে তো পড়েছিলাম আমি। বাপ রে বাপ, যা ভয় পেয়েছিলাম! মনে হচ্ছিল, আর কোনো দিন বেরোতে পারব না ওখান থেকে। শিক্ষা হয়ে গেছে, কক্ষনো আর গোলকধাঁধায় ঢুকব না।’

‘ওখানে ঢুকলাম বলেই তো চমৎকার একটা রহস্য পেলাম। ভেস্তে দিতে পারলাম একটা ষড়যন্ত্র।’

‘হুম,’ মাথা দোলাল রনি। ‘তা বটে। কিন্তু কয়েকটা ব্যাপার অস্পষ্ট।’

‘কী রকম?’

‘আমার সঙ্গে যখন দেখা হলো পিটারের, তখন কালো আলখাল্লা ছিল তার গায়ে। পরে সেটা কোথায় গেল?’

‘ওটা কোনো রহস্য না। খুলে ফেলে দিয়েছিল আর কী। অন্ধকারে কালো আলখাল্লা ফেলে রাখলেও কেউ দেখতে পাবে না। সমস্যা ছিল সাদা খামটা নিয়ে।’

‘আলখাল্লা পরলই বা কেন?’

‘গা ঢাকা দিয়ে ঝরনার কাছে পৌঁছানোর জন্য। হঠাৎ হাজির হয়ে হাতেনাতে ধরতে চেয়েছিল মেলভিনকে—ওর ভাইয়ের বেহুঁশ শরীরের পাশে। যতভাবে পারে, ফাঁসাতে চেয়েছে বেচারাকে। আপনার ফ্ল্যাশলাইটটাও সে জন্যই ধরিয়ে দিয়েছিল তার হাতে।’

‘বুঝলাম। কিন্তু আসল খটকা দূর হলো না। মাইকেল, মেলভিন আর পিটার ছোটবেলার বন্ধু। তারপরও উইল নিয়ে কী মতলব এঁটেছে দুই ভাই, সেটা পিটারকে শুরুতেই বলে দেয়নি কেন ওরা? ঝগড়াঝাঁটি যে পাবলিসিটির জন্য করা হচ্ছে, সেটা জানা থাকলে লোকটা নিশ্চয়ই এত কিছু ঘটাত না।’

‘নিশ্চয়ই কোনো ধরনের ঝামেলা আছে ওদের মাঝে,’ অনুমান করল অয়ন। ‘হয়তো কোনো কারণে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি পিটারকে। কিংবা ঠকাতে চেয়েছিল ওকে। মাইকেল আর মেলভিন যে লোক সুবিধার নয়, তা তো বোঝাই যায়। ভীষণ লোভী ওরা। চিন্তা করুন, টাকার লোভে নকল উইল বানাল, একজন আরেকজনের নামে মামলা পর্যন্ত ঠুকে দিল!’

‘এদের কোনো শাস্তি হবে না?’

‘অবশ্যই হবে। নকল উইল বানানোর শাস্তি তো আছেই, আবার আদালতে গিয়ে সম্পত্তির মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে দুজনই, তার জন্যও শাস্তি পেতে হবে। মাইকেলের তো মাথাও ফাটল। কয়েকদিন পড়ে থাকবে হাসপাতালে।’

‘উচিত শিক্ষা হয়েছে। মেলভিন আর পিটারের মাথাতেও যদি দুটো বাড়ি দিতে পারতাম, মনে শান্তি পেতাম।’

‘পাবলিসিটি চেয়েছিল তো,’ হেসে বলল জিমি, ‘এবার ভালোমতো পাবে। খবরের কাগজে বড় বড় করে ছাপা হবে ওদের কুকীর্তি।’

‘তাতে হন্টেড মেইজের টিকিট আরও বেশি বিক্রি হবে,’ ক্ষুব্ধ গলায় বলল রনি। ‘লাভই তো হলো ওদের।’

‘আমার তা মনে হয় না,’ মাথা নাড়ল অয়ন। ‘টাকা যা পাবে, সব খরচ হয়ে যাবে উকিলের পেছনে। অন্তত তিন-চারটা করে কেস হবে ওদের বিরুদ্ধে। আর শেষ পর্যন্ত যদি জেল হয়, টাকাপয়সা কোনো কাজে আসবে না ওদের।’

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট,’ গম্ভীর গলায় বলল রনি। ‘ব্যাটারা এবার বুঝবে ঠ্যালা।’

‘কথাটা কিন্তু আপনার জন্যও প্রযোজ্য,’ বলল জিমি।

‘আমি আবার কী করলাম?’

‘অতি লোভ। পাঁচশো ডলারের ফার্স্ট প্রাইজের লোভ করেননি আপনি? তার কারণে কী ঘটল, দেখলেন তো। মার খেলেন, তারপর আবার অন্ধকার গোলকধাঁধায় আটকে রইলেন অনেকক্ষণ।’

‘অ্যাঁ! এভাবে তো ভাবিনি!’

রনির কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলল অয়ন আর জিমি।