বীণা আপা শহরে গেলেন। জুতার দোকানে ঢুকলেন তিনি। তিনটা সাইজের জুতা তাঁর হাতের পলিথিনের ব্যাগে। সেই তিনটা বের করে তিনি বললেন, আমি এই মাপের জুতা চাই। এই সাইজ চার জোড়া, এই সাইজ পাঁচ জোড়া আর এই সাইজ ছয় জোড়া।
এত জুতা দিয়ে কী করবেন?
ফুটবল খেলব। বীণা আপা হাসলেন। তাঁর হাসিটা খুব সুন্দর।
জুতার দোকানি বললেন, কী জুতা?
কেডস। রাবারের জুতা।
আপা, ‘আমার দোকানে তো এতগুলান হইব না। আরও দোকান আছে। খাড়ান। আমি আইনা দিতাছি।’
দোকানি পরে আছেন একটা আকাশি-নীল রঙের ফুটবল জার্সি। তাতে লেখা মেসি। এটা বোধ হয় আর্জেন্টিনার ফুটবল দলের জার্সি।
সাদা রঙের রাবারের তৈরি কেডস কতগুলো দেখালেন দোকানি। তাঁর একটা হাত কবজি থেকে কাটা। কিন্তু তবু তাঁর মুখে হাসি।
মোট ১৫ জোড়া জুতা কেনা হলো। দাম পড়ল ৩ হাজার ২০০ টাকা।
বীণা বলল, এটা আবার কী ধরনের দাম? হয় নেবেন তিন হাজার, নইলে নেবেন সাড়ে তিন হাজার।
আপা, আমার কেনা দামে দিতেছি আপা। আপনে এতগুলান জুতা নেবেন। এ রকম কাস্টমার আমি হারাতে চাই না আপা।
জুতা কেনার পর আবার মোজা কিনতে হবে। মোটা সুতির মোজা। সেগুলোও কেনা হলো।
সেই জুতার বহর নিয়ে সকাল সকাল বীণা আপা হাজির হলেন সুন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে।
তখন মইন স্যার তাঁর ১৬টি মেয়েকে নিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস করছেন।
বীণা আপাকে দেখেই খেলা বন্ধ হয়ে গেল। সবাই চলে এল তাঁর কাছে।
মইন স্যার বললেন, বীণা আপা, বীণা আপা, জুতা আনছে মাপা মাপা।
বীণা আপা বললেন, তোমরা কয়জন?
আমরা ১৬ জন আপা।
হায় হায়, আমি তো জুতা আনছি ১৫ জোড়া। এখন?
লুনা আর রুনা বলল, আপা, আমাদের জুতা লাগবে না। আমাদের জুতা আছে। আব্বা বিদেশ থাইকা পাঠাইছেন।
বীণা আপা বললেন, আচ্ছা তোমাদের চার পায়ের জন্য এক জোড়া জুতা।
লুনা বলল, আমরা ভাগ কইরা নিমু। রুনা একটা পরব, আমি একটা পরুম।
সবাই হেসে উঠল।
পায়ের মাপ তো আগেই নেওয়া হয়েছিল। জুতা একটু বড় সাইজের কেনা হয়েছে। মেয়েরা তাড়াতাড়ি বড় হবে। বড় সাইজ না কিনলে দুই দিন পরই জুতা ছোট হয়ে যাবে। কারও কারও পায়ে একটু বেশিই বড় হলো।
সে বলল, আপা, আমারটা ঢলঢল করে।
আপা বললেন, মোজা পরে নিলে ঠিক হবে। আর তারপরও বড় হলে জুতার মধ্যে ত্যানা ঢুকিয়ে নিতে হবে।
এবার জুতা পরে খেলতে নামল তারা। এই মেয়েদের অনেকেই এর আগে কোনো দিনও জুতা পরেনি। আজই জীবনের প্রথম জুতা পরা। কাজেই হাঁটতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। খেলতে তো আরও অসুবিধা। প্রথম দিন জুতা পরায় পা কেটে গেল অনেকেরই।
কিন্তু তিন-চার দিনের মধ্যেই পায়ের কাটা সেরে গেল আর তারা খেলতেও আরম্ভ করল স্বাভাবিক ছন্দে।
বীণা আপা আবারও এলেন ওদের মাঠে।
ধলা মাতুব্বরও এলেন। মেয়েদের খেলা দেখতে লাগলেন।
মইন স্যার বললেন, আসো, স্লোগান ধরো, ধলা মাতুব্বর মানুষটা ভাই জব্বর।
সবাই মিলে সেই স্লোগান ধরল তারা।
খেলা শেষে সবাই বসল গোল হয়ে। বীণা আপা বললেন, এই তোমাদের মধ্যে কেউ গান জানো না?
তহুরা, আপা। তহুরা। সে ভালো গান জানে।
বীণা আপা বললেন, তহুরা একটা গান শোনাও তো!
সে গান গাইতে শুরু করল:
সোনারও পালঙ্ক ঘরে
লিখে রেখেছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
গান শেষ হলো। সবাই হাতে তালি দিল।
রাশেদা বলল, আপা, ওরে বলেন তো, সে যেন ভোলে না মোরে। সেটা কে?
তহুরা কিল মারল রাশেদার পিঠে।
জেলা শহরে টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। আজকে খেলা আছে। বেলা তিনটায় খেলা হবে জেলা স্টেডিয়ামের মাঠে।
আজকের খেলা শোভনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে। ওরা রওনা হলো সকাল নয়টায়। প্রথমে তারা এল স্কুলের মাঠে। সেখান থেকে তিনটা ভ্যানে চড়ে তারা গেল সোনাতলা বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বাসে চড়ে তারা গেল জেলা শহরে। শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে গেল একটা।
মইন স্যার বললেন, এত বড় রাস্তা? কোথায় খাব নাশতা?
সবাই বলল, স্যার। আমরা তো নাশতা খাব না। ভাত খাব।
স্যার বললেন, রাস্তার সঙ্গে নাশতা মেলানো সহজ। ভাতের সঙ্গে কাত ছাড়া কিছু মেলে নাকি?
আচ্ছা শোন। এখন ধোব হাত, হাত ধুয়ে খাব ভাত।
একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে তাঁরা সবাই ভাত খেলেন। ভাত আর মুরগির মাংস।
মেয়েরা কোনো দিন এত মজা করে খায়নি। অনেকের বাড়িতে ঠিকমতো খাওয়া জোটে না যে!
স্যার বললেন, খাইলা কেমন?
সবাই বলল, বেশ বেশ।
খেলবা কেমন?
বেশ বেশ।
তারা মাঠে পৌঁছাল সোয়া দুইটায়।
জেলা স্টেডিয়াম। মাঠের এক পাশে কতগুলো রুমও আছে। গ্যালারিও আছে। সেখানে তারা সবাই জার্সি পরে নিল।
এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষিকা দীপা রানীও এসে গেছেন। তিনিও ড্রেসিংরুমে ঢুকলেন। বললেন, আমিও ড্রেস পরব।
কী ড্রেস আপা?
আমিও একটা জার্সি পরব।
সরকার স্কুল টিমের জন্য জার্সির টাকা দিয়েছে। তা দিয়ে সবার জন্য লাল আর নীল রঙের জার্সি বানানো হয়েছে।
বড় বড় ঢোলা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। আর বড় বড় টি-শার্ট। তাতে লেখাও আছে সুন্দরপুর স্কুল।
দীপা রানী তাঁর শাড়ির ওপর একটা টি-শার্ট পরলেন। তাঁকে দেখা যাচ্ছে সার্কাসের ক্লাউনের মতো। টি-শার্ট তাঁর ছোট হয়েছে। যদিও তিনি ছোটখাটো মানুষ। তবু এই টি-শার্ট তাঁর গায়ে টাইট হয়েছে।
মইন স্যার পরেছেন ট্রাউজার। তার ওপর জার্সি। তাঁকে সুন্দর লাগছে।
তিনি বললেন, পরছি আমি জার্সি, বলে কিক মারছি।
শুনে আবারও হেসে উঠল সবাই।
শোভনপুর স্কুলটা এই শহরেই। তাদের জার্সি হলুদ রঙের। অনেকটা ব্রাজিলের জার্সির মতো। তাদের মেয়েদের চেহারা-ছবি ভালো। শহরের বাচ্চা। বড়লোকের ছেলেমেয়েরা পড়ে এই স্কুলে।
গ্যালারিতেও তাদের সমর্থক ভরা। তারা স্লোগান ধরেছে, শোভনপুর। শোভনপুর।
সুন্দরপুরের মেয়েদের ঘুম পাচ্ছে। বহুদিন পর আজ তারা পেট ভরে ভাত খেয়েছে। মুরগির মাংস সাধারণত তাদের পাতে জোটে না।
খেলা শুরু হলো। সুন্দরপুরের মেয়েরা দৌড়াতেই পারছে না।
মারিয়া ক্যাপ্টেন। সে রাশেদাকে বলল, ওই রাশেদা, ডিমপাড়া মুরগির মতো করতেছিস ক্যান? দৌড়া।
রাশেদা খেপে গেল। বলল, আমি ডিমপাড়া মুরগি? আর তুই কী? তুই ডিমপাড়া হাঁস। তুই দৌড়া।
মইন স্যার লাইন থেকে চিৎকার করছেন। এই ঝগড়া করিস ক্যান? রাশেদা তুই সামনে যা। ওদের ডিফেন্স লাইন বরাবর খাড়ায়া থাক। মারিয়া স্টপার। মাঝখানে থাক। দুই উইংগস, লুনা আর রুনা। তোগো কী কাম? ভুইলা গেছস?
তহুরা বল পেয়েছে। সে দিল মারিয়াকে। মারিয়া তাকিয়ে দেখল, রাশেদা ফাঁকা জায়গায়। দিল লং পাস। রাশেদা বল পেল। বল পেয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। বোকা হয়ে গেছে। বুদ্ধি লোপ পেয়েছে তার।
মারিয়া চিৎকার করছে, গোলে মার। গোলে।
রাশেদা দাঁড়িয়েই আছে।
প্রতিপক্ষের ব্যাক ছুটে আসছে। রাশেদার হুঁশ হলো। তাকে কাটাল।
এবার সামনে শুধু গোলকিপার। এবারও সে মারছে না কিক।
সবাই চিৎকার করছে, রাশেদা, কিক নে। কিক।
গোলকিপার ছুটে আসছে। রাশেদা ডানে কিক নেওয়ার ভান করল। অমনি তার বাঁয়ে গোলকিপার ডাইভ মারল। এবার বাঁ দিক দিয়ে মারল রাশেদা। গো...ল। গো...ল।
এরপর শুরু হলো গোলের উৎসব। ৬-০ গোলে জিতল সুন্দরপুর।
গ্যালারি এখন স্লোগান দিচ্ছে—সুন্দরপুর সুন্দরপুর। একটু আগে তারা বলছিল, সুন্দরপুর ভুয়া, খায় শুধু ঠুয়া।
মারিয়া বলল, দোস্ত, ঢাকা যাবি? ঢাকায় গিয়া কী কী দেখবি?
রাশেদা বলল, আমার ভয় ভয় লাগে। আগে তো কোনো দিন ঢাকা যাই নাই।
মারিয়া বলল, আমিও তো যাই নাই।
রাশেদা বলল, আমার মা একলা একলা থাকতেই পারব না। খালি কানব।
মারিয়া বলল, মায়ের মন নরম হয়। আবার শক্তও হয়। পাখির ছানা বড় হইলে উইড়া যায়। পাখির মা তো কান্দে না।
তারা ঢাকা যাচ্ছে। থানা শিক্ষা অফিসার ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান দিয়েছেন ১০ হাজার।
ধলা মাতুব্বর বললেন, তোমরা যাও। টাকা লাগলে আমি বাকিটা দেব।
মেয়েরা দল বেঁধে গেল বীণা আপার কাছে।
আপা, আপনারেও যাইতে হইব।
কই?
ঢাকা।
ক্যানো?
আমরা একলা একলা ভয় পামু।
দীপা রানী দিদি তো যাবেন।
না। তবু চলেন।
আচ্ছা। আমিও যাব।
বীণা আপা যাওয়ায় ভালো হলো। তিনি ঢাকা শহর ভালো চেনেন। বাস থেকে নেমে স্কুটার ভাড়া করতে হবে। তিনি বললেন, দুটি টেম্পো ভাড়া করলে একবারে যাওয়া যাইত। তিনি সত্যি সত্যি দুটি টেম্পো রিজার্ভ করে ফেললেন।
মহাখালী থেকে তারা এল ধানমন্ডি। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
সেখানে মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা। দীপা রানী আর বীণা আপাও থাকবেন তাদের সঙ্গে। মইন স্যার থাকবেন বাইরে, হোটেলে।
রাতের বেলায় সবাই ডাইনিং রুমে টেবিলে খেতে বসল। সব মেয়ে একটা করে পা চেয়ারে তুলে দিয়ে সেই পায়ে প্লেট রেখে খাচ্ছে। টেবিল-চেয়ারে খাওয়া তাদের অভ্যাস নেই। এর আগে হোটেলে খেয়েছে বটে, কিন্তু কষ্ট হয়েছে। খাবারে আছে ভাত, সবজি, ডাল আর রুই মাছ। সবাই পেট ভরে খেল।
রাতের বেলা দুজন করে থাকতে হবে এক রুমে। মারিয়া আর রাশেদার এক রুম। লুনা আর রুনার এক রুম। তহুরা আর সাবিনার এক রুম।
কিন্তু সবাই বারান্দায় এসে গল্প জুড়ে দিল। ফেব্রুয়ারি মাস। ঢাকায় তেমন ঠান্ডা নেই। আরাম করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবাই গল্পগুজব করছে।
একজন বলল, বীণা আপার দিকে মইন স্যার হাঁ কইরা তাকাইয়া থাকে।
আরেকজন বলল, যাহ্। স্যার তো ট্যারা। কোন দিকে তাকায় কিছু বোঝা যায় না।
রাতের বেলা বীণা আপা সবাইকে বললেন, আমার মোবাইল থেকে সবাই বাসায় কথা বলো।
রুনা বলল, আমার ফোন আছে আপা।
বীণা আপা বললেন, তোমার ফোন জমা দাও। রাতে একা একা ফোন নিতে পারবা না।
সাতজন কথা বলল বাসায়। সাতজন বলতে পারল না। তাদের বাড়িতে মোবাইল নেই।
একটু পরে মারিয়ার মা ফোন করলেন দোকান থেকে।
মারিয়া বলল, রাশেদার বাড়িতেও খবর দাও। ওর মাও দোকানে আইসা কল করুক।
রাশেদার মা কল করলেন না।
রাতের বেলা রাশেদা একা একা ছোট্ট বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগল।
মারিয়া বলল, রাশেদা, কী হইছে?
রাশেদা বলল, মা মা।
মারিয়া বলল, এই রাশেদা, কী হইছে?
মা মা।
মারিয়া উঠল। বীণা আপার রুমে গেল। বলল, আপা, রাশেদা কান্দে।
বীণা আপা এলেন। বললেন, ভারি মুশকিল তো। তিনি ফোন করলেন তহুরার মাকে। বললেন, ফোনটা নিয়ে যান রাশেদার বাড়িতে। জরুরি কথা আছে।
তহুরার মা গেল রাশেদার বাড়িতে। রাত তখন সাড়ে নয়টা।
রাশেদার মা ভয় পেলেন। কী হইছে?
রাশেদা ফোন করে বলল, তুমি নাকি আমার লাইগা কানতাসো?
না তো। আমরা ভালো আছি। ভালো কইরা খেল। জিতা চাই।
রাশেদা হেসে ফেলল।
সকালবেলা প্র্যাকটিসে যেতে হবে। দীপা রানী সবাইকে ভোরবেলায় ডেকে দিলেন। বীণা আপাও গেলেন তাদের সঙ্গে।
প্র্যাকটিসের পর বীণা আপা বললেন, আসো এবার আমরা ছড়া পড়ব।
সবাই বলো, সবে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।
সবাই বলল, সবে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।
মইন স্যার বললেন, আমিও একটা ছড়া বানাতে পারি।
সবাই মিলে খেলব,
আকাশে পাখা মেলব।
বীণা আপা বললেন, এর মানে কী।
মইন স্যার বললেন, ‘এর মানে হলো সবাই মিইলা খেইলা জয়লাভ করব। তখন আকাশে উড়ব।’
বীণা আপা বললেন, হুম।
কিন্তু খেলায় তারা হেরে গেল রংপুর দলের কাছে। মেয়েরা কাঁদতে লাগল। বীণা আপা বললেন, সবে মিলে করি কাজ...
হোস্টেলে ফিরে এসে মেয়েরা শুধুই কাঁদছে। তারা রাতে খাবে না।
দীপা রানী বললেন, ‘খাইবা না ক্যান?’
‘আমরা খামু না।’
‘ক্যান খাইবা না?’
‘আমরা গোল খাইছি। প্যাট ভইরা গেছে।’ রাশেদা বলল।
দীপা রানী বললেন, ‘না, খাও।’
মেয়েরা খাবেই না।
তখন বীণা আপা এলেন। বললেন, খেলা মানে কী? খেলা মানে খেলা। খেলা মানে জীবন না। খেলায় জয়-পরাজয় থাকবে। সবাই কোনো খেলায় জেতে। বিশ্বকাপ খেলে ৩২ দল। চ্যাম্পিয়ন হবে একটা দল। রানার্সআপ হবে আরেকটা দল। ৩২ নম্বর দল হবে একটা। তাই বলে খেলা নিয়ে কাঁদতে হবে? কেউ কাঁদতে পারবে না। আসো, হাসো। সবাই আমার সঙ্গে হাসো। বলো, হা।
হাসো। হা!
কেউ হাসে না।
তখন বীণা আপা নিজেই কেঁদে ফেললেন। তার সঙ্গে সবাই কাঁদছে।
সবাই বলল, আপা কাইন্দেন না।
আপা চোখ মুছে বললেন, এবার হাসো।
হা।
হা।
হি।
হি।
বীণা আপা বললেন, সামনের বার আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। দেখো।
তারা গ্রামে ফিরে আসছে। প্রথমে তারা স্কুটারে চড়ে চলে গেল মহাখালীতে। সেখান থেকে বাসে উঠে তাদের থানা সদর। সেখান থেকে আবার টেম্পোতে চড়ে গ্রামের গঞ্জে। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে তাদের গ্রাম। কেউ বা চড়ল রিকশাভ্যানে।
রাশেদা আর মারিয়া একসঙ্গে হাঁটছে।
গ্রামে ফিরে আসছে তারা।
একটা দোকানের সামনে দিয়ে তারা ফিরছে।
দোকানি একজন বছর তিরিশেক বয়সের মানুষ। জিগ্যেস করলেন, এই তোমরা খেলায় জিতছ, না হারছ?
আমরা হাইরা গেছি। ৩-১ গোলে।
আরে আমগো ইজ্জত নষ্ট করছ। মাইয়া মানুষ ফুটবল খেলেই বা ক্যান? আর খেললে হারেই বা ক্যান?
রাশেদা বলল, আপনেরা পুরুষ মানুষগুলান যে খেলাই পারেন না। একদিন আইসেন, আমগো সাথে খেলতে, দেহি জিতেন না হারেন।
একদল বখাটে পিছু নিল রাশেদা আর মারিয়ার।
হারু পার্টি। হারু পার্টি।
রাশেদা আর মারিয়া তাদের স্যান্ডেল দেখাল।
তখন তারা ঢিল মারতে লাগল মারিয়া আর রাশেদার দিকে।
একটা ঢিল এসে লাগল রাশেদার কপালে। কপাল গেল ফেটে। রক্ত বেরোতে লাগল দরদর করে।
কপালে হাত দিয়ে রাশেদা দেখতে পেল রক্ত। সে কাঁদতে লাগল, ও বাবা রে মা রে।