পান্না-রহস্য (তৃতীয় পর্ব)

অলংকরণ: আরাফাত করিম
কাহিনি রচনা: কাজী শাহনূর হোসেন | তিন গোয়েন্দায় রূপান্তর: শামসুদ্দীন নওয়াব

চার

‘তার মানে? নকল হয় কীভাবে?’ হিরু চাচা বিস্মিত।

রত্নটায় একটা আঙুল রাখলেন ড. ক্রুক।

‘এটা আসল পান্নাটা নয়। এটা আদৌ পান্না নয়,’ ব্যাখ্যা দিলেন।

‘কিন্তু তা কী করে সম্ভব?’ চেঁচিয়ে উঠল হিরু চাচা।

‘এই দেখুন,’ বলে পকেট থেকে খুদে এক ফ্ল্যাশলাইট বের করলেন ড. ক্রুক।

‘শেডগুলো দয়া করে টেনে দিয়ে বাতি নেভাবেন?’ প্রশ্ন করলেন।

রবিন কাছে ছিল, কাজেই ও শেডগুলো নামিয়ে দিয়ে ফিশ ট্যাংকের বাতিটা অফ করে দিল। মুসা শশব্যস্ত হয়ে এগিয়ে গেল দেয়ালের সুইচগুলোর দিকে।

ঘর অন্ধকার হয়ে গেলে নিজের ফ্ল্যাশলাইট জ্বাললেন ড. ক্রুক। আলো ফেললেন রত্নটির ওপর।

হঠাৎই নিভে গেল ফ্ল্যাশলাইট। কিশোর শুনতে পেল কিছু একটা ডেস্কটপে আঘাত করে, গড়িয়ে পড়ে মৃদু শব্দ করল কার্পেটে।

‘সরি,’ বললেন ড. ক্রুক। ‘আমার ফ্ল্যাশলাইটটা পড়ে গেছে। কেউ কি প্লিজ...’

‘আমি তুলে দিচ্ছি,’ অন্ধকারে শোনা গেল মুসার গলা। হাঁটু গেড়ে বসে ডেস্কের নিচে, আশপাশে হাতড়াতে লাগল। ‘পেয়েছি,’ একমুহূর্ত পর বলল। উঠে দাঁড়াল, সুইচ অন করে ডেস্কের দিকে তাক করল।

‘ধন্যবাদ, ইয়াংম্যান,’ বললেন ড. ক্রুক। ফ্ল্যাশলাইটটা নিয়ে রত্নটার দিকে নির্দেশ করলেন আবারও।

‘এটা যদি সত্যিকারের পান্না হতো, তাহলে আলোটা ভেদ করে ঢুকে যেত,’ ব্যাখ্যা করলেন। ‘একেবারে পান্নাটার বুকে গিয়ে লাগত।’

রত্নটায় এক আঙুলের টোকা দিলেন।

‘কিন্তু এটা স্রেফ কাচ। আলোটা কীভাবে বাউন্স করে ফিরে আসছে খেয়াল করুন। পাথরের ভেতর আলো ঢুকছে না।’

নিজের মুখে আলো ধরলেন তিনি।

‘তবে এটা আমার নিজের মতামত। আপনি অন্য কারও মতও নিতে পারেন, মি. পাশা।’

‘অবশ্যই নেব!’ বলে উঠল হিরু চাচা।

দেয়ালের কাছে গিয়ে সুইচগুলো অন করে দিল।

কিশোর হঠাৎ আলোয় চোখ পিটপিট করল। মুষড়ে পড়েছে হিরু চাচা।

‘চমৎকার আইডিয়া। পুলিশকে বলা দরকার কথাটা। ওরা অবশ্য আমার হাতের ছাপ পাবে। এ ছাড়া আর কারওটা পাবে বলে মনে হয় না।’

‘কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, আসল পান্নাটা কীভাবে নকলটার সাথে পাল্টাপাল্টি হয়ে গেল!’ বলে চলল হিরু চাচা। ‘আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত?’

মাথা ঝাঁকালেন ড. ক্রুক।

‘হ্যাঁ।’

‘তাহলে ব্যাপারটা ঘটেছে বাক্সটা আসার আগে,’ ঘোষণা করল হিরু চাচা। ‘হয়তো দক্ষিণ আমেরিকায়, যেখানে জাগুয়ারটা র৵াপ করা হয়েছে, ঘটনাটা সেখানেই ঘটেছে।’

ড. ক্রুক মাথা নাড়লেন।

‘আমি দুঃখিত। প্যাকিংয়ের সময় আমি ওখানে ছিলাম। জাগুয়ারটাকে যখন বাক্সে ভরা হয়, তখন আসল পান্নাটাই ছিল।’

জাগুয়ারের দিকে চেয়ে রইল হিরু চাচা।

‘কীভাবে সম্ভব, বুঝতে পারছি না!’

শ্রাগ করলেন ড. ক্রুক।

‘আমাকে ব্যাপারটা পুলিশে জানাতে হবে,’ বললেন। ‘আপনি যদি দ্বিতীয় কারও মত চান...’

হিরু চাচা তড়িঘড়ি রুমটা পেরিয়ে জেমস ব্রাউনের অফিসের দরজা খুলল।

‘জেমস, প্লিজ, ব্রডওয়ের এম্পায়ার জুয়েলারিতে ফোন করো। সেলিনা হায়েককে এক্ষুনি চলে আসতে বলো। বলবে খুব জরুরি!’

আরও পড়ুন

ওরা অপেক্ষা করছে, ড. ক্রুক অফিসের দরজার তালা পরখ করলেন, তারপর ছোট্ট এক প্যাডে কী সব যেন টুকলেন।

হিরু চাচা ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে মূর্তিটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল।

ছেলেরা কার্পেটে বসে রয়েছে। হিরু চাচা এতটাই ভেঙে পড়েছে, কিশোর কোনো কথা বলতে গেল না।

দীর্ঘ কয়েক মিনিট পর দরজায় টোকার শব্দ হলো। তড়াক করে উঠে দাঁড়াল হিরু চাচা। কালো রেইনকোট পরা লম্বা এক মহিলাকে ঘরে ঢুকতে দিল।

‘পাশা, তাড়াহুড়ো করে এসেছি,’ বললেন মহিলা। ‘রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট!’

পরস্পর হাত মেলানো হলে রত্নটার কথা বলল হিরু চাচা।

‘ড. ক্রুক বলছেন জিনিসটা নকল!’

‘আমি একটু দেখতে পারি?’ বলে জুয়েলারের ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করে কয়েক মিনিট রত্নটা পরখ করলেন মিসেস হায়েক।

এবার পকেট থেকে খুদে এক শিশি বের করে রত্নটার ওপরে এক ফেঁাটা তরল টিপে ফেললেন। তরলটুকু শুকিয়ে গেলে পাথরটা মুছে দিলেন কাপড় দিয়ে।

মাথা ঝাঁকালেন।

‘উনি ঠিকই বলেছেন। এটা কাচের রেপ্লিকা।’

চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল হিরু চাচা।

‘আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। অদলবদলটা কোথায় হলো? কীভাবে? কে করল কাজটা...’

‘মাফ করবেন, দরজার তালা দেখে শিওর হলাম, জোর খাটানো হয়নি। এই অফিসের চাবি আপনি ছাড়া আর কার কাছে থাকে?’ প্রশ্ন করলেন ড. ক্রুক।

‘আমার সহকারী জেমস ব্রাউনের কাছে। আর আমার বন্ধু জাঁ পিয়েরে। জাদুঘরের পাশের রেস্টুরেন্টটা তার। কালকে ডেলিভারিম্যানকে আমার অফিসে সে-ই ঢুকিয়েছিল।’

‘এই জাঁ পিয়েরের কাছে তার মানে চাবি আছে?’ ড. ক্রুকের প্রশ্ন।

মাথা ঝাঁকাল হিরু চাচা।

‘থাকে না, আমি রাখতে দিয়েছিলাম। বাক্সটা যখন এল, আমি আর জেমস যেহেতু তখন অন্যখানে ছিলাম।’

‘তো দুজন লোকের পক্ষে জাগুয়ারের কাছে আসা সম্ভব। একজন আপনার সহকারী আর অন্যজন বন্ধু,’ বললেন ড. ক্রুক।

‘হ্যাঁ, কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি, ওরা কেউ মূর্তিটা টাচ করেনি।’

‘উম, হিরু চাচা?’ বলল কিশোর।

সবাই ঘুরে চাইল ওর দিকে।

আরও পড়ুন

‘আসল পান্নাটা যে সরিয়েছে, তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যাবে না?’

এক মিনিট সবাই নিশ্চুপ। এবার ড. ক্রুক হাসলেন কিশোরের উদ্দেশে।

‘চমৎকার আইডিয়া। পুলিশকে বলা দরকার কথাটা। ওরা অবশ্য আমার হাতের ছাপ পাবে। এ ছাড়া আর কারওটা পাবে বলে মনে হয় না।’

‘কেন?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘কারণ, চোরটা খুবই চালাক। আর চালাক চোরেরা গ্লাভস পরে।’

ফোনের দিকে ভ্রু দেখাল হিরু চাচা।

‘প্লিজ, পুলিশ ডাকুন। তারা প্রমাণ করবে জেমস আর জাঁ পিয়েরে নির্দোষ!’

ড. ক্রুক চাইলেন হিরু চাচার দিকে।

‘মাফ করবেন, কিন্তু এখানে আরেকজন সাসপেক্ট আছেন।’

‘কে?’ হিরু চাচা জবাব চাইল।

‘আপনি,’ শান্ত স্বরে বললেন ড. ক্রুক।

আরও পড়ুন