মনের অসুখ (প্রথম পর্ব)

অলংকরণ: আরাফাত করিম

‘কী যন্ত্রণা!’ বলল জিমি পারকার। ‘তুমি কি আজ পুরো মার্কেট তুলে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছ, মা?’

নানা রকম ব্যাগে দুই হাত ভর্তি ওর, ব্যাগগুলোয় রয়েছে জামাকাপড়, জুতা-মোজা, সাজগোজের সরঞ্জামসহ আরও অনেক কিছু। একই অবস্থা ওর বন্ধু অয়ন হোসেনেরও। ব্যাগ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে ওরা। দুজনকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ক্যাথারিন পারকার, ঘুরে বেড়াচ্ছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা শপিং মলে।

‘আহ্, এমন করো কেন?’ বললেন তিনি। ‘শপিংয়ের সময়ই তো পাই না। আজ যখন এসেছি, যা যা দরকার সব কিনে নিচ্ছি একসঙ্গে।’

কথাটা মিথ্যে নয়। নামকরা এক হাসপাতালের বড় ডাক্তার তিনি ও তাঁর স্বামী গ্যারি পারকার, দুজনেই সব সময় ব্যস্ত থাকেন। বাইরে বেরোনোর সময় পান না। আজও আসতে পারেননি গ্যারি, হাসপাতালে ডিউটি করছেন, তাই অয়ন-জিমিকে নিয়ে এসেছেন ক্যাথারিন।

‘তাই বলে এত?’ বিরক্ত গলায় বলল জিমি। ‘ব্যাগ টানতে টানতে হাতব্যথা হয়ে গেল।’

‘আর কতক্ষণ লাগবে, আন্টি?’ করুণ গলায় জানতে চাইল অয়ন।

‘হয়ে গেছে প্রায়,’ বললেন ক্যাথারিন। ‘আরেকটা জিনিস কেনা বাকি।’

ছোট একটা দোকানে ঢুকে পছন্দসই শেডের দুটি লিপস্টিক কিনলেন তিনি। সেগুলো আর ছেলেদের দিলেন না, ঢুকিয়ে রাখলেন নিজের পার্সে। দাম মিটিয়ে দোকান থেকে বেরোলেন। বললেন, ‘এই তো, শেষ। চলো, ফেরা যাক।’

‘ফেরা যাক মানে!’ চোখ কপালে তুলল জিমি। ‘এতক্ষণ কুলির মতো খাটালে, আর এখন বলছ ফেরা যাক?’

‘তাহলে কী চাও?’

‘ফুড কোর্টে চলো। যা খেতে চাই, তা-ই খাওয়াবে। ওটাই আমাদের মজুরি।’

‘ওসব খাবার তো শরীরের জন্য ভালো নয়। বাসায় গিয়ে না হয় কিছু বানিয়ে খাওয়াব...’

‘উঁহু। ওতে চলবে না। তা ছাড়া একবেলা বাইরে খেলে কিচ্ছু হবে না।’

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল অয়ন।

কী আর করা, কাঁধ ঝাঁকালেন ক্যাথারিন। ওদেরকে নিয়ে গেলেন ফুড কোর্টে।

আরও পড়ুন

শপিং মলের একদম ওপরতলায় ফুড কোর্ট। বার্গার, চিকেন উইংস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর জুসের অর্ডার দিল অয়ন-জিমি। ক্যাথারিন শুধু একটা কফি নিলেন। খাবার নিয়ে তিনজনে এসে বসল একটা টেবিলে।

বার্গারে সবে কামড় দিয়েছে দুই বন্ধু, এমন সময় শোনা গেল একটা উচ্ছ্বসিত গলা।

‘আরে! ডা. পারকার না?’

মুখ তুলে তাকালেন ক্যাথারিন। যাকে দেখতে পেলেন, সে অতি পরিচিত। সুন্দর চেহারার একটি মেয়ে, মাথাভরা সোনালি চুল, বয়স পঁচিশের আশপাশে।

‘লিজা!’ বিস্মিত গলায় বলে উঠলেন তিনি। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে আলিঙ্গন করলেন মেয়েটিকে। ‘কত দিন পর দেখা, বলো তো!’

‘তিন বছর তো হবেই,’ বলল লিজা। ‘এভাবে আবার দেখা পেয়ে যাব আপনার, ভাবতে পারিনি।’

‘লুসার্ন ভ্যালিতে,’ বলল লিজা। ‘লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে। যেতে এক ঘণ্টার মতো লাগে। খুব সুন্দর জায়গা। লোকবসতি খুব বেশি নেই, চারদিকে নির্মল প্রকৃতি।

‘এসো, পরিচয় করিয়ে দিই।’ ছেলেদের দিকে ঘুরলেন ক্যাথারিন। ‘এ হলো আমার ছেলে, জিমি। ও জিমির বন্ধু অয়ন।’

‘হাই!’ বলল অয়ন।

জিমির মুখভর্তি বার্গার, কথা বলতে পারল না, হাসির একটা ভঙ্গি করে মাথা নাড়ল।

‘অভদ্র কোথাকার!’ নিচু গলায় গাল দিল অয়ন, পা দিয়ে মাড়িয়ে দিল জিমির পা। গুঙিয়ে উঠল সে।

হেসে ফেলল লিজা। ‘নাইস টু মিট ইউ।’

তাকেও ছেলেদের সঙ্গে পরিচয় করালেন ক্যাথারিন। বললেন, ‘এ হলো লিজা ল্যান্সার। আমার সঙ্গে অনেক দিন নার্স হিসেবে ছিল হাসপাতালে।’ তাকালেন মেয়েটার দিকে। ‘এখন কী করছ?’

আরও পড়ুন

‘নার্সের কাজই করছি, তবে প্রাইভেট নার্সের,’ জানাল লিজা। ‘হাসপাতালের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম হাঁপিয়ে উঠেছিলাম বলে। অত সব বিধিনিষেধ আর খবরদারি ভালো লাগত না। এখন বেশ আছি। একজনের বেশি রোগীর সেবাযত্ন করতে হয় না, কাজও করতে পারি অনেকটাই স্বাধীনভাবে।’

‘ভালো। এসো, বসো আমাদের সঙ্গে।’ পাশের খালি চেয়ারটা টেনে দিলেন ক্যাথারিন।

বসল লিজা। ‘থ্যাঙ্কস।’

‘কী নেবে?’

‘কিচ্ছু না। আপনার সঙ্গে দুই মিনিট গল্প করতে পারলেই হবে।’

পুরোনো দিনের কথায় মেতে উঠল দুজনে। খেতে খেতে নিঃশব্দে তাদের কথা শুনতে থাকল অয়ন আর জিমি। বার্গার আর উইংস শেষ করে জুসের গ্লাস টেনে নিল, এমন সময় ক্যাথারিন জানতে চাইলেন, ‘এখন তুমি থাকো কোথায়?’

আরও পড়ুন

‘লুসার্ন ভ্যালিতে,’ বলল লিজা। ‘লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে। যেতে এক ঘণ্টার মতো লাগে। খুব সুন্দর জায়গা। লোকবসতি খুব বেশি নেই, চারদিকে নির্মল প্রকৃতি। ওখানেই নদীর ধারে একটা বাড়িতে থাকি। বয়স্ক এক মহিলার দেখাশোনা করি। তবে...আর কত দিন সেখানে থাকতে পারব, বুঝতে পারছি না।’ চেহারা একটু মলিন হয়ে উঠল তার।

‘কেন? অনেক দিন হয়ে গেছে?’

‘না। মাত্র এক মাস হলো কাজ নিয়েছি।’

‘বলো কী!’ অবাক হলেন ক্যাথারিন। ‘এক মাসের মাথায় ছাঁটাই করে দিচ্ছে? কিছু কি ঘটেছে?’

‘ঠিক তা না,’ অস্বস্তির সুর ফুটল লিজার গলায়। ‘আমার রোগীই সম্ভবত ওখানে আর থাকছেন না।’

‘থাকছেন না মানে কী?’

ইতস্তত করল লিজা। কয়েক সেকেন্ড পর গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ‘ব্যাপারটা নিয়ে কারও সঙ্গে আলাপ করব ভাবছিলাম। আপনাকে পেয়ে যাওয়ায় খুব ভালো হলো। একটু কি সময় হবে আপনার? তাহলে সবকিছু খুলে বলতে পারতাম।’

‘নিশ্চয়ই। আমার কেনাকাটা শেষ। এখন আর কোনো কাজ নেই। বলো, আমি শুনছি।’

একটু থতমত খেয়ে গেল লিজা। অয়ন আর জিমিও যে ওর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে, লক্ষ করেনি। নিজেকে সামলে বলল, ‘দুটি কারণে। পাঁচ বছর আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন মিসেস মার্সডেন, ওটা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পর।

মাথা ঝাঁকাল লিজা। তারপর বলতে শুরু করল, ‘আমার রোগীর নাম মার্গারেট মার্সডেন। ৬০ বছর বয়স। তাঁর স্বামী, মি. ডেভিড মার্সডেন ছিলেন মস্ত ধনী এক মানুষ—মার্সডেন গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক। নাম শুনে থাকবেন হয়তো। প্রায় ছয় বছর আগে হঠাৎ করে বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। ছেলেমেয়ে নেই মিসেস মার্সডেনের, স্বামীই ছিলেন সব, খুবই ভালোবাসতেন স্বামীকে, তাঁকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারেননি। ধীরে ধীরে মাথায় গোলমাল দেখা দেয় তাঁর—আবোলতাবোল বকতেন, কাউকে চিনতে পারতেন না... সোজা কথায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন আরকি। মেন্টাল ব্রেকডাউনের শিকার হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকে একটা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানেই ছিলেন গত পাঁচ বছর। সুস্থ হওয়ার পর মাসখানেক আগে ফিরে এসেছেন। তখনই তাঁর দেখাশোনার জন্য নার্স চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, চাকরিটা নিই আমি।

‘আমার কাজটা খুব কঠিন কিছু না। মিসেস মার্সডেন খুবই শান্ত আর অমায়িক মানুষ। নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারেন। আমাকে শুধু তাঁর দিকে খেয়াল রাখতে হয়। ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়া করছেন কি না, সময়মতো ওষুধ খাচ্ছেন কি না, টুকটাক ফুটফরমাশ...এসব আরকি। বাড়িতে আমরা দুজন ছাড়াও মিসেস মার্সডেনের ভাইপো মাইকেল বেনেট ও তাঁর স্ত্রী মিলি থাকেন। ওনারাও বেশ সাহায্য করেন। এই ভাইপো তাঁর একমাত্র জীবিত আত্মীয়। মিসেস মার্সডেন যখন মানসিক হাসপাতালে ছিলেন, আদালত থেকে তাঁকে পুরো এস্টেটের কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পেশায় আর্কিটেক্ট ছিলেন মাইকেল, তবে তিনি কাজ ছেড়ে পাঁচ বছর ধরে সামলাচ্ছেন ফুফুর পুরো ব্যবসা আর সহায়-সম্পত্তি। ফুপুকে খুব ভালোবাসেন। যে বাড়িটায় এখন আমরা আছি, ওটাও বানিয়েছেন ফুফু হাসপাতাল থেকে এসে উঠবেন বলে...’

‘নতুন বাড়ি বানানো হলো কেন?’ বাধা দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল অয়ন।

একটু থতমত খেয়ে গেল লিজা। অয়ন আর জিমিও যে ওর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে, লক্ষ করেনি। নিজেকে সামলে বলল, ‘দুটি কারণে। পাঁচ বছর আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন মিসেস মার্সডেন, ওটা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পর। তাই নতুন বাসা লাগতই। তা ছাড়া হাসপাতাল থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, উনি যেন শহরের কোলাহল থেকে দূরে, শান্ত কোনো পরিবেশে থাকেন। সে জন্যই লুসার্ন ভ্যালিতে জমি কিনে বানানো হয়েছে বাড়িটা।’

আরও পড়ুন

‘নতুন বাড়ি?’ ভুরু কুঁচকালেন ক্যাথারিন। ‘তাহলে ওখানে তোমার রোগী আর থাকবেন না বলছ কেন? বাড়ি পছন্দ হয়নি?’

‘ব্যাপারটা ঠিক তা নয়,’ মাথা নাড়ল লিজা। ‘ওনাকে সম্ভবত আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। নতুন করে মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

‘আগেরবারের মতো?’

‘না। এবারের উপসর্গগুলো অন্য রকম। প্রায়ই নাকি রাতের বেলা তাঁর মৃত স্বামীর কণ্ঠ শুনতে পান। ঘুম থেকে ওঠার পর দেখেন, তাঁর পুরো কামরা ওলট–পালট করেছে কেউ। ঘরের আসবাব সরে যায় নানান জায়গায়।’

‘তার মানে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে তাঁর? দৃষ্টিবিভ্রম আর শ্রুতিবিভ্রম...দুটিই?’

‘হ্যাঁ। দিন ১৫ আগে থেকে শুরু হয়েছে এই সমস্যা। প্রথম যেদিন হলো, সকালে পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে হাজির হলেন আমার কামরায়। এমনভাবে বললেন, যেন সত্যিই তাঁর কামরা ওলটপালট হয়ে গেছে। আমিও তাই সঙ্গে সঙ্গে গেলাম ওখানে। দেখলাম, আসলে কিছুই হয়নি। সবকিছু আগের মতোই আছে। এক দিন পর আবার একই ঘটনা। আবারও ছুটে গেলাম, আবারও দেখলাম সব ঠিক। ইদানীং তো প্রায় রোজই ভুলভাল দেখছেন মিসেস মার্সডেন। এখন আর আমার কাছে ছুটে আসেন না। মন খারাপ করে বসে থাকেন।’

‘মনে হচ্ছে আবারও নার্ভাস ব্রেকডাউনে আক্রান্ত হচ্ছেন ভদ্রমহিলা,’ চিন্তিত গলায় বললেন ক্যাথারিন। ‘ডাক্তারকে জানিয়েছ?’

‘না,’ বলল লিজা। ‘মি. বেনেটের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম, কিন্তু উনি আপাতত অপেক্ষা করতে চান। দেখতে চান, সমস্যাটা আপনা-আপনি কেটে যায় কি না। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তো আবার মিসেস মার্সডেনকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবেন। মি. বেনেট সেটা চাইছেন না। তবে ব্যাপারটা বেশি দিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। আগামী সপ্তাহেই চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে মিসেস মার্সডেনকে। তখন সব জানাজানি হয়ে যাবে।’

‘হুম। এ জন্যই কি তুমি আপসেট? রোগী হাসপাতালে চলে গেলে তোমার চাকরি থাকবে না বলে?’

‘চাকরি নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। একটা গেলে আরেকটা পাব। কিন্তু মিসেস মার্সডেনকে নিয়ে খুব ভাবনায় পড়ে গেছি। কী যেন ঠিক মিলছে না...’

‘কী মিলছে না?’

‘দেখুন ডা. পারকার, অনেক দিন থেকেই নার্সের কাজ করছি আমি। মেন্টাল পেশেন্ট সামলানোর অভিজ্ঞতাও কম নয়। কিন্তু মিসেস মার্সডেনের মাঝে যা দেখছি, সেটাকে সাধারণ কোনো মনের অসুখ ভাবতে পারছি না। রাতের ওই হ্যালুসিনেশনকে বাদ দিলে তিনি একেবারে স্বাভাবিক একজন মানুষ। কথাবার্তা, চলাফেরা বা আচার-আচরণে অদ্ভুত কিছুই নেই। হ্যালুসিনেশনের কথাও যদি বলি, এসব উপসর্গ আগে কখনো ছিল না তাঁর—আমি ওনার মেডিকেল ফাইল পড়ে দেখেছি। পাঁচ বছর আগে যেটা ঘটেছিল, তা ছিল মস্তিষ্কবিকৃতি। তখন চোখ বা কানের কোনো বিভ্রম লক্ষ করা যায়নি। হঠাৎ করে নতুন ধরনের উপসর্গ দেখা যাওয়াটা কি অস্বাভাবিক নয়?’

‘কিছুটা তো বটেই,’ স্বীকার করলেন ক্যাথারিন। ‘পুরোনো রোগ যদি মাথাচাড়া দেয়, তাহলে পুরোনো উপসর্গই আবার দেখা যাওয়ার কথা। তবে আমি সাইকিয়াট্রিস্ট নই। যা বলছি, সেটা সম্পূর্ণই নিজস্ব ধারণা থেকে। নতুন কোনো রোগও হতে পারে ওই ভদ্রমহিলার।’

‘তাই বলে হাসপাতাল থেকে আসার দুই সপ্তাহ পরই?’ এবার বলল অয়ন। ‘অমন নাজুক রোগীকে তো রিলিজ করারই কথা নয়। ইয়ে...সরি, আন্টি, চুপ করে আর থাকতে পারলাম না।’

‘ইটস ওকে,’ বললেন ক্যাথারিন। ‘তোমার পয়েন্টটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়।’

‘আমারও একই কথা,’ বলল লিজা। ‘পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন মিসেস মার্সডেন...অন্তত প্রথম কিছুদিন আমি কোনোই সমস্যা দেখিনি। হঠাৎ করে হ্যালুসিনেশন শুরু হলো কেন? ব্যাপারটা রহস্যময় নয়?’

‘দিয়েছেন তো সর্বনাশ করে!’ ফোড়ন কাটল জিমি। ‘রহস্যের কথা বলতে গেলেন কেন? এবার অয়নকে আর ঠেকানো যাবে না।’

ওর মাথায় একটা চাঁটি মারল অয়ন। কাতরে উঠল জিমি।

লিজা কিছু বুঝতে পারছে না। বোকা বোকা গলায় জানতে চাইল, ‘ব্যাপারটা কী? কিসের কথা বলছে ওরা?’

‘ওদের শখের কথা,’ হেসে জানালেন ক্যাথারিন। ‘অবসরে শখের গোয়েন্দাগিরি করে ওরা। বেশ কিছু রহস্যের সমাধানও করেছে।’

‘সত্যি?’

‘হ্যাঁ।’

‘খুব ভালো,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিজা। ‘কিন্তু এখন আমার গোয়েন্দা নয়, দরকার ডাক্তার...বিশ্বস্ত একজন ডাক্তার।’

‘কী বলতে চাইছ?’

‘আপনার সাহায্য চাইছি আমি, ডা. পারকার। একবার কি দেখে আসতে পারবেন মিসেস মার্সডেনকে? বোঝা দরকার, ওনার সমস্যাটা কতখানি গুরুতর।’

‘আমি? তাতে লাভ কী? মনোরোগের বিশেষজ্ঞ নই আমি।’

‘তারপরও...আপনি ওনাকে দেখলে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু আন্দাজ করতে পারবেন। যদি খুব অসুবিধে না হয়, আগামীকাল সকালে একবার চলে আসুন না! মি. বেনেট তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে আজ রাতেই বেড়াতে চলে যাচ্ছেন, দুদিন থাকবেন না। এই সুযোগে মিসেস মার্সডেনকে দেখিয়ে নিতে চাই।’

‘গোপনীয়তার দরকার কী?’

‘ওনারা জানলে রেগে যেতে পারেন। আমাকে ডাক্তার ডাকতে মানা করেছেন কি না।’

‘বুঝেছি,’ বলে চুপ হয়ে গেলেন ক্যাথারিন। কয়েক মুহূর্ত পর বললেন, ‘আগামীকাল সকালে অবশ্য আমি ফ্রি। হাসপাতালের ডিউটি বিকেলে। যাওয়া যেতে পারে।’

খুশি হয়ে উঠল লিজা। ‘কী বলে যে ধন্যবাদ জানাব আপনাকে...’

‘আরে ধুর! ধন্যবাদের কী আছে?’

‘মিস ল্যান্সার,’ বলল অয়ন, ‘যদি কিছু মনে না করেন, আমি আর জিমিও কি আসতে পারি আন্টির সঙ্গে?’

‘কেন?’ জিজ্ঞেস করল লিজা। ‘গোয়েন্দাগিরি করতে?’

‘না, মানে...’

হেসে ফেলল লিজা। ‘অসুবিধে নেই। চলে এসো। আর কিছু না হোক, ওখানকার পরিবেশটা ভালো লাগবে।’

বাড়ির ঠিকানা লিখে দিয়ে উঠে পড়ল লিজা। তাকে বিদায় জানানোর জন্য ক্যাথারিনও উঠলেন। দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন একদিকে।

‘হঠাৎ যেতে চাইলি কেন?’ ভুরু নাচাল জিমি। ‘সত্যিই কি ভাবছিস এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে?’

‘কী জানি!’ কাঁধ ঝাঁকাল অয়ন। ‘মনটা কেন যেন খুঁতখুঁত করছে।’

গম্ভীর হয়ে গেল জিমি। সিক্সথ সেন্স-জাতীয় কিছু একটা আছে ওর বন্ধুটির। ওর যদি খটকা লাগে, বুঝতে হবে সত্যিই একটা গোলমাল আছে কোথাও।

চলবে...

আরও পড়ুন