বিড়াল
অবশেষে সেই দিন এসে গেল। এত তাড়াতাড়ি আসবে, আমি বুঝতে পারিনি। এতে আর সন্দেহ নেই, আজকের রাতটাই শেষ রাত। আজ যখন আমরা গ্রিল দেওয়া বারান্দায় সন্ধ্যামালতি আর অপরাজিতার টবের পাশে রাখা প্লাস্টিকের কনটেইনার থেকে ক্যাট ফুড খাব, সেটাই হবে শেষবারের মতো আমাদের একসঙ্গে খাওয়া। শেষ ভোজ। আমাদের আর দেখা হবে না। আমাদের তিনজনের।
ভোরের আলো ফোটার আগেই মেয়ে ইয়ুঙ্গি আর তার বাবা রেমনকে নিয়ে যাওয়া হবে দুটি ভিন্ন বাসায়। আমি এখানেই থাকব। এ বাসায়।
আমি এগুলো জানি। রেমনও জানে। ইয়ুঙ্গি এখনো জানে না। ওর বুদ্ধি এখনো এসব জানার পর্যায়ে আসেনি। মানুষের ভাষা সে এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারে না। ভালোই হয়েছে। এখন এটা না বোঝাই ভালো। কষ্ট কম হবে। আর আমিও কিছু বলিনি ইয়ুঙ্গিকে। কীভাবে বলব যে আমাদের আর দেখা হবে না ইহজীবনে? এতটুকু একটা বাচ্চাকে এটা বলা যায়?
ওরা, মানে লিসার মা–বাবা ঠিক করল, ফেসবুকের গ্রুপগুলোয় বিজ্ঞাপন নোটিশ টাঙিয়ে দেবে। বিড়াল লেনদেনের এ রকম অনেক ফেসবুক গ্রুপ আছে। একটা বিড়ালকে রেখে বাকি বিড়ালগুলোর ছবি দেবে তারা। যারা বিড়াল পুষতে চায়, ছবি দেখে আগ্রহী হয়ে তারা যোগাযোগ করলে তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। যদি আগ্রহী পরিবারকে তাদের পছন্দ হয়, বিশেষ করে লিসার পছন্দ হয় এবং তারা নিশ্চিত হয় যে ওই পরিবার বিড়ালের যত্ন ঠিকমতো করতে পারবে, কেবল তাহলেই তারা বিড়াল দেবে, নতুবা নয়।
এখন আমার নিজেকে বোকা মনে হয়। আমাদের পরিবারে বিচ্ছেদ নেমে আসতে পারে, এ আশঙ্কা আগে কখনো কেন আসেনি আমার মাথায়? হতে পারে, এই বাসায় আমাদের প্রতি খাতির-যত্ন আর স্নেহের কমতি ছিল না বলে এত দিন অন্য কিছু ভাবার অবকাশ পাইনি আমরা। আমাদের শুধু যে ভালো খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে তা-ই নয়, প্রায় সারা দিন কোলে কোলে রাখা হয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন গোসল করানো হয়েছে বিড়ালের জন্য বানানো বিশেষ শ্যাম্পু দিয়ে। আমাদের গলায় পরানো হয়েছে অপূর্ব সুন্দর ব্যান্ড, এমব্রয়ডারি করা, বিভিন্ন রঙের, যার মধ্যে একটা ঘুঙুরের মতো ঘণ্টা, আমরা হাঁটলে টুংটাং করে শব্দ হয়। নিয়মিত আমাদের ডাক্তারখানায় নিয়ে টিকা দিয়ে আনা হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকনা দেওয়া সুন্দর সুন্দর কট কিনে রাখা আছে বাসায়। ডাক্তারখানায় গিয়ে আমি দেখেছি, অন্য বিড়ালদের কারও কট আমাদের মতো এত বাহারি নয়। আর কারও গলার ব্যান্ডও এত নকশাদার নয়। আমি দেখেছি, অন্য বিড়ালগুলো কীভাবে ঈর্ষার চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে থােক।
অবশ্য আমাদের নিয়ে এসব আদিখ্যেতার প্রায় পুরোটাই করে এ বাসার মেয়ে লিসা। মেয়েটা খুব আদুরে। সে-ই তুলে তুলে রাখে আমাদের। গালে গাল ঘষে। কোলে নিয়ে এ-ঘর থেকে ও-ঘর ঘুরে বেড়ায়। তার বিছানায় সবগুলো বিড়াল নিয়ে ঘুমায়। লিসার মা রিজওয়ানাও আমাদের আদর করে। তবে এত নয়। লিসার ভাই শোয়েব আর তাদের বাবা আসাদুজ্জামান মাঝে মাঝে গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। আমি চেষ্টা করি এসব আদরের জবাব দিতে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে। যতটা সম্ভব। কিন্তু বিড়ালের কথা এখনো মানুষ পুরোপুরি বুঝতে পারে না। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার পরেও না। এ কারণে লিসার মা রিজওয়ানাকে আমি প্রায়ই বলতে শুনি, ‘বিড়াল এমন মুডি প্রাণী, কী বলব! ওরা মনে করে, ওরাই বাসার মনিব। আর আমরা ওদের সার্ভিস প্রোভাইডার। আমরা ওদের আদর করতে পেরে নিজেরা ধন্য হচ্ছি। আর সারা দিন খালি ঘুমায়। সোফায় ঘুমানো শেষে উঠে কার্পেটের ওপর ঘুমায়, সেখান থেকে গিয়ে টেবিলের তলায় বা বিছানায় ঘুমায়। আর যখন ঘুমায় না, তখন হাই তোলে।’ রিজওয়ানা এগুলো বলে বিশেষ করে বাসায় আসা মেহমানদের উদ্দেশে, যারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে।
এই সুসময় তত দিন ছিল, যত দিন শুধু আমি আর রেমনই ছিলাম এ বাসায়। আর কোনো বিড়াল ছিল না। তারপর আমার কোলজুড়ে যখন তিনটি ছোট ছোট টেনিস বলের মতো ছানা এল, তখন আনন্দে লিসার চোখে পানি এসে গিয়েছিল বটে, কিন্তু আসাদুজ্জামানের চোখ কুঁচকে গেল। রিজওয়ানাও কিছুটা চিন্তিত গলায় বলল, ‘বিড়াল দিয়ে তো বাসা ভরে যাচ্ছে।’
তখনো ঠিকমতো বুঝতে পারিনি, ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে। তখনো আমার তিন ছানা বিড়ালের চোখ ফোটেনি এবং অন্ধ ছানাগুলো সারাক্ষণ হুটোপুটি করছে, তাদের টলমল পায়ের হাঁটা দেখতে আমার কেমন মায়া লাগে। ওদের দেখতেই আমি এত ব্যস্ত ছিলাম যে অন্য কোনো দিকে আমার মনোযোগই ছিল না।
তারপর একদিন খাবার টেবিলে শোয়েব যখন বলে বসল, ‘এত বিড়াল রাখা যাবে না, মা। এদের অন্য কোথাও পাঠাও। অন্য কারও বাসায়।’ তখন টেবিলের নিচে বসে রেমন শুনেছে কথাটা। আর দুশ্চিন্তাটা প্রথম তারই মাথায় আসে।
রাতে আমরা দুজন বারান্দায় প্লাস্টিকের কনটেইনারে একসঙ্গে খাওয়ার সময় রেমন আমাকে বলেছিল, ‘আমাদের সুখের দিন শেষ হয়ে আসছে, মিয়া।’ তিন বিড়ালছানা আমাদের দুজনের গায়ের পর তখন লাফিয়ে উঠে গড়িয়ে পড়ছিল। আমি তাদের সঙ্গে খুনসুটি করতে করতে বলেছিলাম, ‘কেন, কী হয়েছে?’ রেমন কোনো জবাব দেয়নি। এটা তার স্বভাব। পেটে অর্ধেক কথা রেখে চুপ করে যায়। আমার ভালো লাগে না কথা শেষ না করা।
শুরুতে লিসা রাজি হয়নি। কোনো বিড়ালকেই সে ছাড়তে রাজি নয়। বাড়তি বিড়ালের বাড়তি ঝামেলা সে পোহাবে, এটা সে বলেছে জোর দিয়ে। কিন্তু বাড়ির কোনো সদস্যই যখন রাজি নয়, তখন ছোট্ট মেয়েটা কী করবে? তা ছাড়া ওরা বলল, বাড়িতে বিড়াল তো একটা থাকছেই, তাহলে সমস্যা কী? আর ভালো ভালো বাড়িতেই পাঠানো হবে ওদের। হয়তো সেখানে ওরা এখানকার চেয়ে আরও ভালো থাকবে।
ওরা, মানে লিসার মা–বাবা ঠিক করল, ফেসবুকের গ্রুপগুলোয় বিজ্ঞাপন নোটিশ টাঙিয়ে দেবে। বিড়াল লেনদেনের এ রকম অনেক ফেসবুক গ্রুপ আছে। একটা বিড়ালকে রেখে বাকি বিড়ালগুলোর ছবি দেবে তারা। যারা বিড়াল পুষতে চায়, ছবি দেখে আগ্রহী হয়ে তারা যোগাযোগ করলে তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। যদি আগ্রহী পরিবারকে তাদের পছন্দ হয়, বিশেষ করে লিসার পছন্দ হয় এবং তারা নিশ্চিত হয় যে ওই পরিবার বিড়ালের যত্ন ঠিকমতো করতে পারবে, কেবল তাহলেই তারা বিড়াল দেবে, নতুবা নয়।
লিসার রাজি না হয়ে উপায় ছিল না।
ফেসবুক কী জিনিস, আমার বুঝতে সমস্যা হয়েছে। তবে বাসার লোকজনের কথাবার্তায় এটুকু বুঝেছি, রেমনই ঠিক। আমাদের সময় ফুরিয়ে আসছে।
লিসাকে বলা হলো, কোন বিড়ালটা সে রাখতে চায়, ঠিক করতে। লিসার জন্য এটা যে খুব কঠিন একটা সিদ্ধান্ত, সেটা আমার না বোঝার কথা নয়। মেয়েটা কিছু বলতে পারেনি। বলেছে, চিন্তা করে পরে বলবে।
পরের কয়েকটা দিন মেয়েটা কেমন বিষণ্ন হয়ে গেল। তার খাওয়ার রুচি কমে গেল। মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। পড়ার টেবিলে বসে থাকে একটানা, নিশ্চল। এ সময় আমি তার চারপাশে ঘুরঘুর করি। আমার মুখ ঘষি তার পায়ে। স্পঞ্জের স্যান্ডেলে আঁচড় কাটি। বলি, ‘কষ্ট পেয়ো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
লিসা আমার কথা বোঝে না। আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর আমাকে কোলে টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরে রাখে। তার চোখ ভিজে থাকে। আমি বৃথাই আরও দুবার বলি, ‘কেঁদো না। সব কিছু ভালোর জন্যই ঘটে।’
লিসার মা রিজওয়ানা তার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেও না দেখার ভান করে। সে জানে, এই নিষ্ঠুরতাটুকুর ভেতর দিয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের উপায় নেই।
আমি মন থেকে চেয়েছিলাম, লিসা যেন তিন বিড়ালছানার কোনো একটাকে বেছে নেয়। অভিজ্ঞতা ছাড়াই আমি জানি এবং নিশ্চিত জানি, লিসার মতো এমন আর একটা মেয়ে কোথাও পাওয়া যাবে না, যে বিড়ালকে এত ভালোবাসে। যে বাসায় এ রকম একটা মেয়ে আছে, সেটা বিড়ালের স্বর্গ। আমার তিন ছানার একটা অন্তত যাতে এ রকম স্বর্গে থাকে, আমি প্রার্থনা করেছিলাম।
কিন্তু লিসা আমাকে বেছে নিল। হয়তো আমি এই বাসায় প্রথম এসেছিলাম বলে। বছর পাঁচেক আগে আমি যখন এই বাসায় আসি, তখন আমি ছিলাম পুঁচকে একটা নাদুস বিড়াল। আমার পাগুলো ছিল খাটো আর গোল গোল। প্রথম দিনই আমি একটি কাগজের দলা পাকানো বল লোফালুফি করেছিলাম। লিসা খুব মজা পেয়েছিল আর হেসেছিল।
রেমন আসে আমার এক বছর পরে। ও রাস্তার বিড়াল। দরজার ফাঁক দিয়ে একদিন ঢুকে পড়েিছল। তাড়িয়ে দেওয়া হলে আবার এসেছে। শেষ পর্যন্ত ওর ছেঁচড়াপনারই জয় হয়েছিল। ও থেকে গেছে। তবে পটি করার অভ্যাস তৈরি করতে ও বেশ সময় নিয়েছিল। মনে পড়লে আমার খুব হাসি পায়।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। তবে কেউ যোগাযোগ করার আগে এক মাসের মধ্যে পরপর দুটি অঘটন ঘটল। তিন ছানার মধ্যে দুটি মরে গেল কী এক অসুখে। একটার পর একটা। কী হয়েছিল, কেউ ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি। হাংক মারা গেল প্রথমে। এরপর ডেইজি। ১০ দিনের ব্যবধানে। বিড়ালের ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছিল ওদের। শোয়েব, রিজওয়ানা আর লিসা গিয়েছিল ক্লিনিকে। আমাকে নেওয়া হয়নি। আমি বাড়ির সদর দরজার সামনে বসে ছিলাম ঠায়। অনেক রাত পর্যন্ত। দুবারই ওরা ফিরে এসেছিল খালি হাতে। আমি ওদের চেহারা দেখে বুঝে গিয়েছিলাম কী হয়েছে।
আমি কেঁদেছিলাম। অঝোরে। লিসাও কেঁদেছিল। খুব। বেশ কয়েক দিন ছিল তার শোক।
তারপর লিসা বলেছিল, ‘এখন তো দুটি বিড়াল কমে গেল। এখন বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলি?’
কিন্তু লিসার বাবা ও ভাই রাজি হয়নি। ফলে বিজ্ঞাপন সরেনি।
পরের কয়েক দিনে বেশ কয়েকটা সাড়া পাওয়া গেল। তার মধ্যে দুটি পরিবারকে ডাকা হলো। দুই ভিন্ন দিনে তারা এসেছিল। প্রথমে এসেছিল একটা বছর দশেক বয়সী ছেলে, তার মাকে নিয়ে। ছেলেটা স্বাস্থ্যবান। তারা শহরের একটি অভিজাত এলাকায় থাকে—আমি শুনেছিলাম একটু দূরে কার্পেটের ওপর শুয়ে থেকে। আর ছেলেটাও একটা নামকরা অভিজাত স্কুলে পড়ে। অভিজাত কথাটার মানে আমি বুঝলাম না। ওরা ইয়ুঙ্গিকে নিতে চাইল।
এর দুই দিন পরে এক মহিলা একা এল। মিরপুরে থাকে। সে রেমনকে নিতে চাইল।
তারা চলে গেলে পুরো পরিবার আলোচনায় বসে আগ্রহী দুই পরিবারই ঠিকঠাক বলে রায় দিল। লিসা প্রতিবার কোনো না কোনো আপত্তি তুলে বাতিল করার চেষ্টা করছিল অবশ্য। কিন্তু যুক্তিতে সে পেরে ওঠেনি।
তারপর টেলিফোনে ওই দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে একটা দিন ঠিক করা হলো।
তখন বিকেল। আমি তখন ইয়ুঙ্গিকে আদর করে দিচ্ছিলাম। রেমন একটা মাছির পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছিল।
ওরা ঠিক করল। আগামীকাল। সকালে। সকাল সাতটা।
আমি তাকালাম রেমনের দিকে। দেখলাম, সে থেমে গিয়ে তাকিয়ে আছে লিসার দিকে।
লিসা উঠে গিয়ে তার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।
আমি ইয়ুঙ্গির পিঠ চেটে দিতে লাগলাম ভালো করে। আমার মনে হলো, যা যা আদর সব ঢেলে দিই ওর শরীরে।
আমি ভুল বুঝেছিলাম। ওটা আমাদের শেষ খাবার ছিল না। সকালে দুই পরিবার এল একটু দেরি করে। ফলে আমরা সকালে আরেকবার খেলাম একসঙ্গে। তারপর লিসা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় আমাদের পরিবারের ছবি তুলল বেশ কয়েকটা—আমি, রেমন আর ইয়ুঙ্গি। পাশাপাশি বসা। সোফায়।
আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম, কখন দরজায় কেউ বেল বাজায়।
আমি জানি, আর কোনো দিন আমাদের দেখা হবে না। কিন্তু আমি সেটা ইয়ুঙ্গিকে বললাম না। রেমনকেও বলা হলো না কিছু। যাওয়ার সময় ও একবার তাকিয়েছিল আমার দিকে।
তিন বছর পর।
আমি সোফার তলা থেকে বেরিয়ে এসে বারান্দার দিকে এগিয়ে যাই। সেখানে প্লাস্টিকের কনটেইনারে আমার একার খাবার রাখা থাকে।
আমি একা খাই। একা ঘুমাই সোফার তলায়।
লিসা এখন আর আমাকে নিয়ে পড়ে থাকে না। ও কলেজে উঠেছে। ওর অনেক বন্ধু এখন। আর সারাক্ষণ ও মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি ওর চারপাশে ঘুরঘুর করি। পায়ে মুখ ঘষি। ও মাঝে মাঝে কোলে টেনে নেয়। বেশির ভাগ সময় বলে, ‘উহু, এখন বিরক্ত কোরো না, মিয়া। পরে।’
বারান্দায় যাওয়ার পথে আমি লিসার ঘরের দেয়ালে একটা ছবি দেখে থেমে যাই। ছবিতে তিনটা বিড়াল। এক কোনায় আমি, সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। মাঝখানে একটা ছোট্ট বাচ্চা বিড়াল, মাস চারেক হবে বয়স। আরেক পাশে আমার বয়সী একটা পুরুষ বিড়াল।
কারা এরা? আমরা একসঙ্গে কেন?
ছবিটা দেখে প্রতিবার খুব দূর অতীতের আবছা কিছু একটা আমার মনে পড়তে চায়। কিছু মনে পড়ে না। যেন একটা কুয়াশার চাদর সরিয়ে কেউ উঁকি দিতে চাইছে।
আমি ভালো করে তাকাই ছবিটার দিকে।
বুকের অতল থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আমি বুঝতে পারি না, কিসের এ দীর্ঘশ্বাস।
আমি এটুকু শুধু জানি, আমাকে বলা হয়েছে, বিড়ালের স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।