সে নাকি অন্য কেউ

হুড়মুড় করে স্পেলভদের ফ্ল্যাটে গেনা ঢুকল একেবারে বিজয়ীর দর্পে।

'সুইচ, শিগগির সুইচ অন কর!' হাঁপাতে হাঁপাতে বললে সে।

বরকা হতভম্বের মতো আলোর সুইচের দিকে হাত বাড়ালে।

'আরে ওটা নয়রে হাঁদা, টেলিভিজন তিয়াপাকে দেখাচ্ছে।'

"তিয়াপা, সেকী? কেন?” জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হয়েছিল বরকার, কিন্তু তার সময় ছিল না। ছুটে গেল সে 'স্টার্ট' মার্কা টেলিভিজনে, রেগুলেটর ঘোরাতে লাগল।

'আমরা এখন মহাজাগতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি কেবিনে,' কমেন্টেটারের গলা শোনা গেল। ছবি তখনো ফোটেনি। স্ক্রীনে কেবল ছোটাছুটি করছে বিদ্যুৎ লাইনগুলো। হঠাৎ মিলিয়ে গেল লাইন। ফুটে উঠল শাদা ওভারঅল পরা লোকজনের ছবি। কেমন একটা কম্পমান যন্ত্রে বসে আছে প্যারাশুটিস্টের মতো পোষাক পরা একটি কুকুর। মুখটা তার লম্বাটে, তিয়াপার মতো।

'তিয়াপা না?' ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলে গেনা।

সন্দেহভাবে মাথা নাড়ল বরকা। পালিশ করে আঁচড়ানো লম্বা লম্বা লোম কুকুরটার। তিয়াপার তুলনায় অনেক বেশি যেন শান্ত, অনেক আত্মপ্রত্যয়।

'বেপরোয়া ট্রেনিং নিচ্ছে,' ঘোষণা করলে সূত্রধর।

বরকা দৃঢ়ভাবেই বললে:

'নাঃ, তিয়াপা নয়।'

তারপর ফুর্তিবাজ একটা কুকুর দেখে হাসাহাসি করলে ওরা, লাফালাফি মুখভঙ্গি করছিল কুকুরটা, লোমশ মগের মতো কানদুটো নাড়াচ্ছিল হাস্যকরভাবে।

তারপর ফের দেখা দিল সেই আগেরটা, লম্বাটে মুখের কুকুরটা। রকেটের মধ্যে বসে মাথা ঘোরাচ্ছে সে, তাকিয়ে দেখছে গবাক্ষে এসে পড়া রোদ্দুরের ছটা। মুখের ওপর তার এমন সরলবিশ্বাসী অসীম কৌতূহল যা কেবল তিয়াপার মুখেই সম্ভব।

'ওই বটে!' চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠল বরকা, 'এক্ষুনি ইনস্টিটিউটে চল যাই।'

'ইনস্টিটিউটে?' জিজ্ঞেস করলে গেনা, 'গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দেবে!' 'তবে কী করতে বলিস তুই? হাত গুটিয়ে বসে থাকব?'

'কিছু একটা ফন্দি বার করতে হবে। দাঁড়া ল্যবকাকে ডাকি।'

জানলার নিচে গোলগাল যে বাধ্য বাচ্চাটা মাটি নিয়ে খেলছিল তাকে পাঠানো হল ল্যবকার উদ্দেশ্যে। কৌতূহলী ল্যবকার উদয় হতে বিলম্ব হল না।

'যা ভেবেছিলাম আমি, একেবারে যা ভেবেছিলাম!' হড়বড় করে বলতে বলতে ঘরে ঢুকল সে, 'রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কেবলি ভাবতাম কিছু একটা ঘটবে এইবার। দ্যাখ, ঘটল কী না!'

'বস,' চেয়ার দেখিয়ে কড়া গলায় বললে বরকা।

শান্ত হয়ে বসল ল্যবকা।

'শোন, আজ থেকেই আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। তোর ওপর ভার রইল...' এলোমেলো তিনটে মাথা ঝংকে পড়ল পাড়ার মানচিত্রের ওপর...

ঘণ্টা খানেক বাদেই ল্যবকার লাল সারাফান ঝলকে উঠল আঙিনায় আঙিনায়। ছুটে গেল গেটে, মিনিট খানেক পরেই ফের সেখান থেকে ছুটে গিয়ে বালতি হাতে একটা মেয়ের সঙ্গে ফিসফিস করে তারপর ছুটল আরো দূরে।

ওর সঙ্গে দেখা হল ব্যাগ হাতে একটি বুড়ির। তার সঙ্গেও কী আলাপ করলে লুল্যবকা, এমন কি তার ব্যাগটা পর্যন্ত বয়ে দিলে গেট পর্যন্ত। বুড়ি অনেকক্ষণ ধরে বুঝতে পারলে না, কী চাইছে লুল্যবকা, বোঝা যায় কানে একটু খাটো। তাহলেও যেটা জানবার সেটা জিজ্ঞেসাবাদ করে জেনে নিয়ে ল্যবকা ঢুকল বাড়ির মধ্যে।

আরও পড়ুন

একটা আঙিনায় বড়ো মতো কাঁধ চওড়া একটা ছেলে তাকে কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছিল না। কিন্তু লুল্যবকা তাকে এমনি কী সব কথা বললে যে ছেলেটা হাত নাড়া বন্ধ করে উবু হয়ে বসে মাটির ওপর কী একটা প্ল্যান আঁকতে শুরু করে দিলে। তারপর দুজনে মিলে উঠোনে উঠোনে উ'কি মেরে প্রতিটি গেটে ঢুকতে লাগল আর ছেলেটা যে সব দরজার দিকে আঙুল দেখালে সেই সেই ঘরের লেটার বাক্সে একটি করে খাম গলিয়ে দিলে ল্যবকা।

উঠোনে উঠোনে বেশ রাত পর্যন্ত দেখা গেল ল্যবকার লাল সারাফানের ঝিলিক।

পোড়ো মাঠটার চারপাশের বাড়িগুলোর বহু ছেলেমেয়ে সেদিন এই চিঠিটি পেলে:

'চাঁদে প্রথম কে যাবে এই ব্যাপারটা যদি তোর কাছে জরুরী মনে হয়, যদি তুই বিজ্ঞান ও মহাকাশযাত্রীদের বন্ধু হোস, তাহলে কাল বেলা এগারোটার সময় গোলাপ বুলভারে আসিস তোর কুকুর সঙ্গে নিয়ে। তোর জন্যে অপেক্ষা করবে "লু্যুগেব" স্টাফের সভ্যরা।'

গোলাপ বুলভার নাম কারণ প্রতিবছর এ রাস্তায় মাঝখানের পুষ্পসজ্জায় একটা গোলাপ ঝাড় বসানো হত। এগারোটা পর্যন্ত বরাবরের মতো, আগস্ট মাসের রোদ্দুরে ঝলমল করছিল বুলভারটা। প্যারালেটরে শান্তভাবে নাক ডাকাচ্ছিল শিশুরা। ফুলগাছের মধ্যে বল ফেলার জন্যে দুষ্টুদের বকাবকি করছিল ধাইরা, বুড়িরা। খবরের কাগজে মুখ ঢেকে ঢুলছিল পেনশনভোগীরা। বহির্জগতের কথা একেবারে ভুলে গিয়ে ডোমিনো খেলুড়েরা সজোরে চাল দিচ্ছিল গুটির।

হঠাৎ ভূমিকম্পের মতো সবকিছু একেবারে বদলে গেল। জেগে উঠে বেঞ্চি ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সব পেনশনভোগীরা, বাচ্চাদের বকুনি দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল মুখরা ধাইদের, ডোমিনো খেলোয়াড়দের হাতের গুটি হাতেই রইল। বেঞ্চিগুলো যদি নড়তে পারত তাহলে তারাও ঘুরে দাঁড়াত ঐ অসাধারণ শোভাযাত্রাটার দিকে যেখানে হৈচৈ ঘেউ ঘেউ-য়ে ভরে দিয়েছে বুলভারের পথগুলো। রোদেপোড়া জনা বিশেক ছেলে মেয়ে সগর্বে টেনে আনছে চেনে বাঁধা সব দো-আঁশলা, এস্কিমো কুকুর, বকসার, ভেড়া-খেদানো কুকুর, এমন কি সরু সরু পাওয়ালা আদুরে সব পুড়ল কুকুর পর্যন্ত। সামনে চলেছে তিনজন: লাল সারাফান পরা একটি মেয়ে আর দুই বন্ধু। শুধু এই তিনজনেরই কোনো কুকুর নেই।

'সে কি, কোনো কুকুর প্রদর্শনী শুরু হয়েছে নাকি কোথাও?' জিজ্ঞেস করলে একটা বুড়ি।

'তাই তো মনে হচ্ছে।'

'কিন্তু জাজ? বিচার করবে কে?'

'বোঝাই যাচ্ছে, সামনের ঐ তিনজন।'

তাদের অনুমান নিতান্ত ভুল নয়। বোঝাই যায় 'ল্যুগেব'এর স্টাফ সদস্য ল্যবকা, গেনা, বরকার কীর্তি এটা। তারাই পাঠিয়েছিল রহস্যময় সার্কুলার। এক দিনের মধ্যে কুকুর মালিকদের সবার নাম ঠিকানা জোগাড় করে উঠতে পারা কম কথা নয় তার জন্যে নিজের সমস্ত গুণপনা কাজে লাগাতে হয়েছে ল্যবকাকে। আর দ্যাখো, সবাই এসে হাজির।

'ল্যুগেবের' পরিকল্পনাটা খুব সোজা: গোলাপ বুলভার থেকে ওরা সোজাসুজি গিয়ে হানা দেবে মহাজাগতিক ইনস্টিটিউটে। বলবে, "আমরা আপনাদের জন্যে কুকুর নিয়ে এসেছি। মহাকাশ জয়ের জন্যে দরকার হলে এ সব আমরা আপনাদের দিয়ে দেব। কেবল দয়া করে তিয়াপাকে একবার দেখান।"

আরও পড়ুন

দরকার হলে এ সব আমরা আপনাদের দিয়ে দেব। কেবল দয়া করে তিয়াপাকে একবার দেখান।"

'ল্যুগেবের' মহৎ লক্ষ্যটা বরকা সমাবেশের লোকেদের খুব বিশদ করেই বুঝিয়ে বলেছিল, তবে তিয়াপার সম্বন্ধে একটি কথাও ভাঙেনি।

'কুকুর দিয়ে দিতে রাজী আছ সবাই?' জিজ্ঞেস করলে সে।

'রাজী!' সমস্বরে জবাব দিলে কুকুরমালিকেরা, আর সখেদে তাকিয়ে দেখলে নিজেদের দো-আঁশলা আর পুডলগুলোর দিকে। লেজ নাড়ছে কুকুরগুলো।

বরকা বললে, 'বেশ, এবার আমরা সেরা কুকুরগুলোকে বাছব, মহাকাশে যাবে কিনা।'

পরিদর্শনের ব্যবস্থা হল এই রকম: সারি বে'ধে দাঁড় করাবার ভার নিলে গেনা, ল্যবকা লিখতে লাগল কুকুরগুলোর নাম, আর তাদের পাশে পাশে বরকার রায় অনুসারে বসাতে লাগল যোগ কিংবা বিয়োগ চিহ্ন। ভাবী নামজাদাদের বরকা খুব কড়াভাবেই পরীক্ষা করলে। দেখা গেল প্রায় আধাআধি কুকুরেরই মহাজাগতিক নাম: শুক্র, মঙ্গল, প্লুটো, একের পর এক এই নাম। দুটো কুকুরের নাম রকেট, একটা আবার স্পুৎনিক। মোটের ওপর পরিদর্শনে খুশিই হল বরকা। কিন্তু লম্বা লম্বা ঝাঁকড়া লোমওয়ালা স্কটল্যন্ডী টেরিয়ারটাকে দেখে ভুরু কোঁচকালে ও। মনে পড়ে গেল কুকুর প্রদর্শনীতে ছেলেগুলোর সেই গানটা: "কুকুর বেচারী গজিয়েছে দাড়ি।”

'যত সব! এ কুকুর আমাদের চলবে না,' কুকুরের মালিক হলদে ফ্রক পরা মেয়েটিকে বললে বরকা কড়া গলায়।

'বললেই হল!' কাঁদো কাঁদো গলায় বললে মেয়েটি, 'আমার কুকুরটার লোম পালিশ করা নয় ঠিকই, কিন্তু খুব সাহস। দেখবে?' ছোট্ট ব্যাগ থেকে এক টুকরো কাগজ বার করে দিলে সে।

সবাই ঘিরে দাঁড়াল বরকার চারপাশে। বরকা কাগজটা খুলে পড়ল :

"ওলিয়া জাৎসেপভার টেরিয়ার কুকুরটি অপরাধীকে আটকে ছিল বলে জেলা মিলিসিয়া আপিস ওলিয়াকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

দপ্তর কর্তা: সলোভিওভ।"

সার্টিফিকেটটায় যথারীতি সীলমোহর দেওয়াও আছে।

'কী নাম ওর?' উবু হয়ে বসে ঝাঁকড়া চুলো আসামীটার গায়ে হাত বুলিয়ে সোহাগ করে জিজ্ঞেস করলে ল্যবকা।

'ওর নাম ভেরেনিসের চুল। ঐ নামে তারা আছে একটা। ছোটো করে ডাকি ভেরেন।' 'ব্যাপারটা কী হয়েছিল শুনি,' অনুরোধ করলে গেনা।

আরও পড়ুন

'ব্যাপার মানে, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, দেখি একটা লোক ছুটতে ছুটতে কী একটা যেন লুকোচ্ছে তার বুকের মধ্যে। তার পেছু পেছু ছুটে আসছে একটা মেয়ে। ছুটছে আর চে'চাচ্ছে, "ধর ধর, আমার মানিব্যাগ!” তাকিয়ে দেখি, আশেপাশে কোনো মিলিসিয়া নেই। বড়ো লোকও নেই কেউ। ভাবলাম কী করা যায়? চোর ওদিকে ছুটে পালাচ্ছে। ভেরেনকে ছেড়ে দিয়ে বললাম- শি-ই-ই শি-ই-ই!

বলতেই ভেরেন গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল লোকটার পায়ে। চেয়ে দেখি ফুটপাথের ওপর উলটে পড়েছে লোকটা। তার ওপর চেপে হাঁ করে আছে কুকুর- উঠবে কি, আমার টেরিয়ারের দাঁত তো নয়, একেবারে ছুরি।' গল্প বলে মেয়েটা নির্ভয়ে হাঁ করিয়ে দেখাল কুকুরটাকে। ঝকঝক করে উঠল এক সারি ছুঁচলো লম্বা লম্বা দাঁত।

'উরে বাস!' সশ্রদ্ধে কে যেন বললে।

'চলবে। তোর ভেরেনকেও নিলাম আমরা,' রাজী হল বরকা, 'চল যাই!'

মহাসমারোহে রাস্তা ধরে এগোল শোভাযাত্রা, পথচারীদের হতবুদ্ধি দৃষ্টি অনুসরণ করল তাদের। ট্রাম ড্রাইভাররা ট্রাম থামিয়ে পথ ছেড়ে দিলে এই লেজ নাড়ানো চতুষ্পদদের। লেমনেড ও আইসক্রীম স্টলের দোকানী মেয়েরা খদ্দেরদের কথা ভুলে ভেরেনের দাড়িমোচ দেখে বাহবা দিতে লাগল, ভেরেন কিন্তু একটু অপ্রস্তুত না হয়ে তার হলদে স্যান্ডালপরা মালিকটিকে টেনে নিয়ে চলল।

গোলাপ বুলভার থেকে ইনস্টিটিউট যাওয়ার পথে কম পরীক্ষা দিতে হয়নি এই বিজ্ঞান-বান্ধবদের। কৌতূহলী ছেলে ছোকরাদের হামলা আর খেঁকিয়ে আসা রাস্তার কুকুরদের তারা বীরের মতো সামাল দিলে। গরবী আত্মীয়দের সঙ্গে নির্মম লড়াই বাধাবার চেষ্টায় ছিল এরা। হঠাৎ কোণ থেকে ছুটে কোথাকার দুটো কুকুর তেড়ে এসেছিল ভেড়া-খেদানো কুকুরটার দিকে। ক্ষেপে গিয়ে এই প্রকাণ্ড

কুকুরটা জবাব দিতে ছাড়ল না, দাঁতে ছোঁড়া লোম উড়তে লাগল বাতাসে। তার ধারালো গ্রাস থেকে বোকা কুকুরদুটোকে উদ্ধার করতে হল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরাপদেই যাত্রা সমাধা হল। সহচরদের একটিকেও না হারিয়ে শোভাযাত্রা এসে পৌঁছল লক্ষ্যস্থলে। গাছে ঢালা অনতিবৃহৎ দোতালা বাড়িটায় তখন সবই শান্ত নিঝুম। গরমের জ্বালায় কুকুরগুলো সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়ল ঘাসের ওপর।

ঘুমটি থেকে বেরিয়ে এল বুড়ো দরোয়ান। অভ্যাগত দলটির দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলে:

'কাকে চাই?'

'ইনস্টিটিউটের যিনি সবচেয়ে বড়ো কর্তা, তাঁর কাছে এসেছি আমরা,' সকলের হয়ে জবাব দিলে গেনা।

উপহাসের হাসি হাসল দরোয়ান:

'ইস, কী আবদার। বাজে কাজে বৈজ্ঞানিক কমরেডদের সব তোদের কথায় কাজ থেকে টেনে আনি আর কি।'

'বাজে কাজে আসিনি আমরা। আমরা বিজ্ঞানের বন্ধু,' বোঝাবার চেষ্টা করলে বরকা।

'জানি তোদের বিজ্ঞান রেলিং বেড়া টপকে বেড়ানো তো,' একটুও গলল না দরোয়ান।

'আপনি দাদু নিশ্চয় খবরের কাগজ পড়েননি,' বেশ ভারিক্কি গলায় বললে গেনা, 'অথচ মহাজাগতিক ইনস্টিটিউটের দরোয়ান আপনি।'

'উনি আমায় শেখাতে আসছেন!' চটে উঠল দরোয়ান, 'জানিস স্বয়ং প্রফেসর আমায় টুপি তুলে অভিবাদন করে। বলেছি ঢুকতে দেব না বাস, এক কথা।'

'আর আমরাও যাব না, ছেলেগুলো। যাবই না!' বলে উঠল

গোলমাল শুনে উৎকণ্ঠিত চোখে ঘর থেকে বেরিয়ে

Kishor Alo 02

এল একটা লোক। দুপক্ষের কথা শুনে সে ক্রুদ্ধ দরোয়ানকে বললে যে ব্যাপারটা তামাসা নয়। ওদের না তাড়িয়ে ধন্যবাদ দেওয়াই উচিত ছিল।

'আপনি যখন বলছেন,' মুখ হাঁড়ি করে বললে দরোয়ান।

'তাহলে দাও তোমাদের কুকুরগুলো,' খুশি হয়ে ওঠা ছেলেগুলোকে বললে ডাক্তার, ছোটো ছোটো বেজাতে দো-আঁশলাগুলোকে জড়ো করতে লাগল সে।

আঙুল দিয়ে দিয়ে দেখালে, 'এইটে, এইটে, এইটেও। আর টেরিয়ার টেরিয়ার দিয়ে

দিতে কষ্ট হবে না খুকি?'

'না, কষ্ট হবে না,' নিঃশ্বাস ফেললে ভেরেনের মালিক।

দান করা কুকুরগুলোকে নিয়ে যাওয়া হল।

'আর আমাদের কুকুরগুলোর কী হবে?' হতাশ হয়ে উঠল ভেড়া-খেদানো কুকুরটার মালিক।

'তোমাদের কুকুরগুলো অন্য কাজে লাগবে বেশি। যেমন, ওরা সীমান্তে পাহারা দেওয়ার কাজে চমৎকার। আমাদের কাজে, মানে, ওরা যুৎসই নয়। যে সব কুকুরদের নেওয়া হল তাদের মালিকদের নাম এবার আমি টুকে নেব। তোমরা ওদের দেখতে আসতে পারবে, কুশল জেনে যাবে। প্রচুর ধন্যবাদ তোমাদের।'

বরকার ভয় হল ইনস্টিটিউটের কর্মীটি বুঝি এবার চলে যাবে, তিয়াপার কী হয়েছে তা জানা হবে না। এস্তে সে ডাক্তারের হাত চেপে ধরল:

'একটু দাঁড়ান, আমার কুকুরটাকে একবারটি দেখান না।'

'তোর কুকুর? সেকি, সে কুকুর কি এই ইনস্টিটিউটে?'

'আমার একটা কুকুর ছিল তিয়াপা। সেই বেপরোয়া। টেলিভিজনে দেখেই চিনতে পেরেছি।'

'কিন্তু বেপরোয়ার নাম ভাই আগে ছিল খেকুরে, তিয়াপা তো নয়। তাছাড়া, ওটা ছিল রাস্তার কুকুর।'

'তাহলেও ও তিয়াপাই,' জেদ ধরল বরকা, 'যাচাই করে দেখতে পারেন। আমি ওর দিকে

তাকিয়ে একবারটি শুধু বলব: তিয়াপা আয় এদিকে! দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে তিয়াপা চলে আসবে আমার কাছে।'

ডাক্তারটি ভালো মানুষ, বরকার মনঃকষ্ট সে বুঝল।

একটু চুপ করে থেকে বললে, 'কিন্তু উপায় কী, হয়ত তোরই কুকুর, কিন্তু এখন তোকে কোনো সাহায্যই করা যাবে না। বেপরোয়া এখন শহরের বাইরে।'

'বাগান বাড়িতে?'

'ছুটি কাটাচ্ছে। আচ্ছা আসি।' বাড়ির দিকে পা বাড়াল সে।

'একটু দাঁড়ান...' সামনে এগিয়ে গেল ল্যবকা। ডাক্তার দাঁড়িয়ে পড়ল।

'কী রে খুকি?'

'আপনাকে বলছিলাম কী জানেন, সারা বছর ধরে ও তিয়াপাকে খুঁজে বেড়িয়েছে। আপনি ঠিক জানেন যে বেপরোয়ার নাম ছিল খে'কুরে?'

'ঠিক জানি। একথা এখানকার সবাই জানে।'

আর কিছু জিজ্ঞেস করবার ছিল না। বরকা মাথা নিচু করে পায়ের চটি দিয়ে মাটির ওপর অর্ধবৃত্ত আঁকতে শুরু করলে।

'চল যাই,' আস্তে করে তার কাঁধে হাত দিয়ে বললে গেনা, 'ফের আসা যাবে এখানে।'

আরও পড়ুন