শোলোক দিলেন সত্যজিৎ
সত্যজিতের জীবনের ব্যস্ততম বছরের একটি ১৯৬১। রবীন্দ্রশতবর্ষ উপলক্ষে এই বছরই মুক্তি পায় তাঁর দুটি চলচ্চিত্র: তিনকন্যা আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথমটি আবার তিনটি ছোট ছবির সম্ভার, ছোট হলে কী হবে, প্রতিটাই আলাদা করে বড় সিনেমা হওয়ার যোগ্য। একই বছর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রেডিওর জন্য বানিয়ে দিয়েছেন আধঘণ্টার একটা কথিকা, আবার কবির জীবন নিয়ে তৈরি করেছেন চমৎকার একটা ক্যালেন্ডার। পাশাপাশি প্রচ্ছদ ইত্যাদি কাজ তো ছিলই। সব মিলিয়ে দম ফেলার ফুরসত নেই। এর মধ্যেই বন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রস্তাব করে বসলেন, চলো, সন্দেশটা আবার বের করি।
সন্দেশ সত্যজিতের বাপ-দাদার স্মৃতিবিজড়িত পত্রিকা। রবীন্দ্রনাথ যে বছর নোবেল পান, সেই ১৯১৩ সালে ছোটদের এই পত্রিকা প্রথম বের করেন সত্যজিতের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। কিন্তু মাত্র দুই বছর চালিয়েই মারা যান উপেন্দ্রকিশোর। বাবার জায়গা নেন তাঁরই বড় ছেলে সুকুমার রায়। তিনি চালিয়েছিলেন ১০ বছর। তত দিনে বাংলা ভাষায় ছোটদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা হয়ে ওঠে সন্দেশ। কিন্তু কী কপাল দেখো, ১৯২৩-এ অকালে মারা যান সুকুমার। এবার দায়িত্ব নেন তাঁরই ভাই সুবিনয় রায়। তিনিও প্রতিভাশালী লেখক ছিলেন, কিন্তু ব্যবসাবুদ্ধি অত প্রখর ছিল না। ফলে দুই বছরের মাথায়ই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রেসসহ রায় পরিবারের সব প্রকাশনা সরঞ্জাম কিনে নেন বাইরের এক ব্যবসায়ী। সুবিনয়কেই অন্যতম সম্পাদক রেখে ১৯২৯ সালে আবার পত্রিকটি চালু করেন ভদ্রলোক। এবারও বছর পাঁচেক চলে ১৯৩৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় সন্দেশ।
সিকি শতাব্দীর বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা সেই পত্রিকাই আবার চালু করতে চান সুভাষ মুখোপাধ্যায়। বাপ-দাদার স্মৃতিবিজড়িত এই সাময়িকীর প্রতি সত্যজিতের অনেক টান। তাঁর ছেলেবেলার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে এই পত্রিকা। তাঁরা তো এই সন্দেশ পড়েই বড় হয়েছেন। ফলে স্বভাবতই সত্যজিৎও চান, পত্রিকাটি আবার চালু হোক। কিন্তু তাঁরা কি পারবেন?
চ্যালেঞ্জটা নিলেন সত্যজিৎ। বন্ধু সুভাষকে নিয়ে ১৯৬১ সালেই বের করলেন তৃতীয় পর্যায়ের সন্দেশ-এর প্রথম সংখ্যা। তারপর আমৃত্যু চালিয়েছেন সন্দেশ। সত্যি বলতে কি, এখনো চলছে, চালাচ্ছেন রায় পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম সন্দীপ রায়।
এই লম্বা সময়ে পত্রিকাটির জন্য কী করেননি সত্যজিৎ। টাকা জোগাড় থেকে লেখা জোগাড়—সবই করেছেন। আর আঁকাআঁকি? শুধু সন্দেশ–এর জন্যই হাজারের ওপর অলংকরণ করেছেন। প্রচ্ছদ, লোগো, কমিকস্ট্রিপ, লেটারিং—কত ধরনের কাজ যে করেছেন, সেই সময়ের সন্দেশ যারা দেখেনি, তারা ধারণাও করতে পারবে না। জীবদ্দশায় একটি বাদে সন্দেশ–এর সব প্রচ্ছদই তাঁর করা। সত্যজিতের লেখক হয়ে ওঠার নেপথ্য কারণও তো এই সন্দেশ। তখন পর্যন্ত খুচরা দু–একটা প্রবন্ধ বাদে সত্যজিতের যা কিছু লেখালেখি—সবই ইংরেজিতে। বাংলাতে যে কখনো গল্প-উপন্যাস লিখবেন, তা তো মাথাতে ছিল না। এনেছে সন্দেশ।
সন্দেশ তাঁকে দিয়ে আরেকটা কাজও করিয়ে নিয়েছে, সেটা হচ্ছে ধাঁধা বানানো। আগের দুই পর্যায়ের মতো নতুন পর্যায়ের সন্দেশ–এর প্রতি সংখ্যাতেও থাকত নানা রকম মজার ধাঁধা, যার অনেকগুলোই তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এমনিতেই সত্যজিৎ রায়ের প্রিয় এক অবসর বিনোদন ছিল ধাঁধা নিয়ে খেলা। বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে এই স্বভাব পেয়েছিলেন তিনি। সন্দেশ-এর জন্য বহু ধাঁধা তৈরি করেছেন সুকুমার রায়। সত্যজিৎও শব্দ আর ছবি দিয়ে ধাঁধায় মুড়ে দিয়েছেন সন্দেশ। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, নাম থাকত না বলে ঠিক কোনগুলোর স্রষ্টা সত্যজিৎ, নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। সন্দীপ রায় ও অন্যান্য সূত্রে যেগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তেমন কটি ধাঁধা এখানে দেওয়া গেল।
মজার ফর্দ
এটি একটি বাজারের ফর্দ। বাম দিকে উপকরণ আর ডান দিকে পরিমাণ দেওয়া আছে। দেখো তো সব কটা পারো কি না।
হেঁয়ালি
অমরত্বের মন্ত্র
রাজভবন পেরিয়ে গরিং দক্ষিণমুখো চলল। মর্ত্যের শহর যেন ভীড়ে ফেটে পড়ছে। অলিম্পা গ্রহের প্রতিনিধি হয়ে এসেছে গরিং। বিনা যানবাহনে সে কলকাতায় এসে নেমেছে। নেমেই সে অবাক! তার কল্পনাতীত এই বিপুল জনতা! কিন্তু এতে তার একটুও ভয় নেই। কোনো গ্রহের কোনো প্রাণী তার সূক্ষ্ম অদৃশ্য দেহের কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না। তবে ভাবনা আছে! অমরত্বের একমাত্র মন্ত্র তার কাছে। সেইটে সুপাত্রে দান করা চাই। কিন্তু এত প্রাণীর মধ্যে কাকে? এই ভীড়ে, এই বেনোজলের মধ্যে ভালো পাত্র কোনটি? গরিং মনে মনে ভাবল, তার ভাগ্যই খারাপ—নইলে এত গ্রহ থাকতে এমন নোংরা বিশ্রী গ্রহে তাকে পাঠায়? বহু ঘুরে সন্ধ্যায় গরিং শান্ত মনে গঙ্গার ধারে এসে দাঁড়াল। সে জানে, মন্ত্র কাকে দেবে। মন্ত্রটা আকাশে ছড়িয়ে দিল। যে পেল, তার নাম কলকাতা।
উপরের ছোটগল্পটার মধ্যে সংকেতে একটি বিখ্যাত গানের প্রথম পঙ্ক্তি লুকিয়ে আছে। বলো ত সে পঙ্ক্তিটি কী এবং কী সংকেতে সেটি লেখা হয়েছে!
সংকেত: এক অক্ষর বাদ দিয়ে প্রথম অক্ষর, দুই অক্ষর বাদ দিয়ে দ্বিতীয় অক্ষর, তিন অক্ষর বাদ দিয়ে তৃতীয় অক্ষর ইত্যাদি। যেমন - রাজভবন পেরিয়ে গরিং দক্ষিণ দিকে চলল। মর্তের শহর যেন ভীড়ে ফেটে পড়ছে। অলিম্পা গ্রহের প্রতিনিধি...
ক-র কাণ্ড
‘ক’ দিয়ে শুরু কটা জিনিসের নাম ছবিতে খুঁজে পাও লিখে ফেল ত। কোনো জিনিসের অপ্রচলিত নামও লিখতে পারো। প্রচলিত হিন্দি বা ইংরেজি নামও চলবে। অবশ্য একই জিনিসের দুটো নাম (কুকুর/কুত্তা) চলবে না। বিশেষণ বা ক্রিয়াপদ লেখা চলবে না।
‘ব’-এর বাড়াবাড়ি
ছবিতে ‘ব’ অক্ষর দিয়ে শুরু কী কী জিনিস আছে বার করো তো দেখি।
শব্দছক
সন্দেশ–এর জন্য অনেক শব্দছক বানিয়েছেন সত্যজিৎ। নমুনাস্বরূপ একটা দেওয়া গেল।
ব্যাপারটা কী?
যদিও এটাকে ঠিক ধাঁধা বলা যাবে কি না, বুঝতে পারছি না। তবে এটা সত্যজিৎ রায়ের আঁকা প্রথম কোনো ধাঁধা কিংবা পাজল, যেটাই বলি না কেন।
হারানো সূত্র
এটাও একটা পাজল। সূত্রটা হারিয়ে ফেলেছি। দেখো তো তোমরা বের করতে পারো কি না?
ফেলুদার ধাঁধা
স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের মতো প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদাও ধাঁধা বানাতে ও সমাধান করতে ওস্তাদ। তার অনেক অ্যাডভেঞ্চারেই ধাঁধা এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তার মধ্যে ছিন্নমস্তার অভিশাপ তো যাকে বলে ধাঁধার খনি। ফেলুদাসাহিত্য ঢুঁড়ে এখানে তোমাদের জন্য রইল ৫টি নানা ধরনের ধাঁধা। বইগুলো যাদের পড়া আছে, তাদের তো উত্তর জানাই আছে, যারা এখনো পড়োনি, দেখো কয়টা সমাধান করতে পারো।
১. এই স্বরলিপির মধ্যে লুকিয়ে আছে কয়েকটা নাম।
ক. রে ধা রে মা নি সা মা ধা ধা রে
খ. সা ধা নি সা নি
গ. ধা রে নি ধা রে সা মা ধা ধা রে
গল্প: সমাদ্দারের চাবি
২. এলোমেলো এই ইংরেজি শব্দগুলোরও আছে অর্থ বের করো
AKLO ATBB BBSO ADK SO
RO ADK SO AT KLO PC LO
ROT OT DD OK OJT RO OG
গল্প: ছিন্নমস্তার অভিশাপ
৩. হেঁয়ালিভরা এই কথাটার ডাবল মিনিং আছে—
‘অরুণ গুড হলে আমি খুশি হতুম। বেটার হয়েই আমায় চিন্তায় ফেলেছে। শুনছি নাকি আজকাল মহাজাতি ময়দানে যাতায়াত করছে নিয়মিত।’
৪. এই সব কথা ও শব্দের অন্য অর্থ আছে—
কী পাচ্ছি না, কী খুঁজছি
কৈলাস
জোড়া মৌমাছি
গল্প: ছিন্নমস্তার অভিশাপ
৫. পাঁচ ভাই একসাথ
মারছে ঘুঁষি খাচ্ছে ভাত,
আরো পাঁচ সাথে তার,
কেমন আছেন নমস্কার।
উত্তর
মজার ফর্দ
১. বাঁধাকপি ৩টে
২.করলা ১ সের
৩. আম ২০টা
৪. কলা ২ কাঁদি
৫. জাম ২০টা
৬. চাল সাত শ মণ
৭. কাগজ ২০ তা
ব্যাখ্যা: যারা এখনো বের করতে পারোনি তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছি।
১. বানরের প্রতিশব্দ কপি, আর বানরগুলো বাঁধা আছে, তাই বাঁধাকপি। যেহেতু তিনটে বানর বাঁধাকপি ৩টে।
২. হাতের প্রতিশব্দ কর+লা = করলা। বাঘের প্রতিশব্দ শের। তাই করলা ১ সের।
৩. বয়াম–বই
= (বই+আম)–বই
= বই+আম–বই
= আম
আর শিশিটার গায়ে লেখা আছে poison, পয়জন মানে বিষ, তার থেকে বিশ। তাই আম ২০টা।
৪. কল+া = কলা। ‘আমি কাঁদি’ থেকে ‘কাঁদি’। যেহেতু দুই ‘আমি’ কাঁদছে তাই দুই কাঁদি।
৫. জামা–া = জাম। আবার poison, পয়জন মানে বিষ, তার থেকে বিশ। তাই জামও ২০টা।
৬. ঘরের চাল থেকে ভাতের চাল। সাতশ মণ কেন? কারণ, সাতশ মণকে সাত-শমন—এইভাবেও লেখা যায়। সাত তো বুঝতেই পারছ। আর শমন মানে জানো তো। অভিধানটা একটু ঘাঁটো না!
৭. কাকের ডাক+হাতি = পয়জন+মুরগি ডিমে ওম দিচ্ছে। কা+গজ = ২০ তা।
হেঁয়ালি
জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা।
ব এর বাড়াবাড়ি
বট, বৃক্ষ, বানর, বাঁশ, বাবুইয়ের বাসা, বক, বন, বাঁক, বাছুর, বেড়া, বাগান, বাঁধাকপি, বেজি, বালক, বালিকা, বাচ্চা, বেলুন, বই, বিস্কুট, বাঁশি, বন্দুক, বেতার, বাক্স, বিনুনি, বুদবুদ, বালা, বদন, ব্যাট, বয়াম, বাটি, বাস্কেট, বল, বৃদ্ধ, বেত, বুটজুতো, ব্যাগ, বরফ, বালাপোষ, বাবু, ব্লাউজ, বেড়াল, বেয়ারা, বাংলো, বাউল, বেঞ্চি, বায়স, বিমান, বাতি, বালব, বারান্দা, বারি, বোতাম, বেল্ট, বুড়োআঙুল, বালিশ, ব্যাঙ, বাবরি, বুটি, বাইসাইকেল, বাঘছাল, বাহু, বকলস, বাঁধন, ব্রহ্মতালু।
ফেলুদার ধাঁধা
(১)
ক. রাধারমণ সমাদ্দার
খ. সাধন সেন
গ. ধরণীধর সমাদ্দার
(২)
এ কে এলো? এটি বিবি। বিবি এসো। এদিকে এসো।
আরো এদিকে এসো। এটি কে এলো? পিসি এলো।
আর ওটি? ওটি দিদি। ও কে? ও জেঠি। আর ও? ও ঝি।
(৩)
বেটার = বেট (bet) করে যে
জাতি = রেস (race)
মহাজাতি ময়দান = রেসের মাঠ
(৪)
কী পাচ্ছি না, কী খুঁজছি (কী=key)
কৈলাস = কই লাশ
জোড়া মৌমাছি = Bee Bee = বিবি
(৫)
হাতের দশ আঙুল