কল্পনার গরুড় নাকি গাছেও চড়ে। অন্য পিঠে জাদু হচ্ছে কল্পনারই প্রতিচ্ছবি। আর তাই তো জাদুকর যা দেখান, তা কেবল কল্পনাতেই আমরা ভাবতে পারি। আজকের জাদুটিও ঠিক তেমন।
তবে জাদুটার একটা প্রেক্ষাপটও আছে। বলছি, শোনো। রেস্তোরাঁয় বসে একদিন খাওয়াদাওয়া করছিলাম। পাট চুকাতেই রেস্তোরাঁর বেয়ারা ছেলেটা বেয়াড়া আবদারই করে বসল। নাকের ওপর বলে দিল, ‘জাদু দেখতে চাই’।
শুনেছিলাম, ...গোত্রের প্রবাদ অমান্য করি কীভাবে? অগত্যা যা দেখালাম, তা-ই বলছি।
যা দেখালাম
টেবিলের ওপরই ছিল ড্রিংকসের খালি বোতলটা। আমি শুধু যোগ করে দিলাম, ‘খানিকটা মোটা দড়ি পাওয়া যাবে?’ বিদ্যুতের বেগেই ছুটে গিয়ে এক টুকরো দড়ি এনে দিল বেয়ারা (বাস্তবিকই ছেলেটা ছিল নম্র স্বভাবের)।
দড়িটা তাদের দিয়েই ভালোমতো পরীক্ষা করিয়ে নিলাম। ততক্ষণে অন্যরাও জড়ো হয়ে গেছে আমার চারপাশে। ড্রিংকসের খালি বোতলটাও বাদ দিলাম না, পরীক্ষা করে দেখল তারা।
দড়ি এবং বোতল, দুটোই যখন ফেরত এল আমার হাতে, তখন আমি দড়ির একটা প্রান্ত বোতলটার খোলা মুখ দিয়ে বেশ খানিকটা ঢুকিয়ে দিলাম। এরপর বোতলটা হাতে নিলাম। ধীরে ধীরে বাঁ হাতে ধরে সেটিকেই দিলাম উল্টে।
‘দড়িটা পড়ল না।’
এবারে বেরিয়ে থাকা দড়ির অন্য প্রান্তটা ডান হাতের দুই আঙুলের সাহায্যে শক্ত করে ধরে নিলাম। ধীরে ধীরে ডান হাতটাকে দড়িসহ ওপর দিকে তুললাম, বোতলটা চলে এল নিচে।
অবাক ব্যাপার, কোনো রকম অবলম্বন ছাড়াই দড়ির অন্য প্রান্ত ধরে (যেটি বোতলের ভেতর রয়েছে) বোতলটি অবলীলায় শূন্যে ঝুলে আছে।
কী করে সম্ভব
দড়ি এবং বোতল—দুটোই সাধারণ। কেবল মনে রাখতে হবে, বোতলটা যেন রঙিন হয়। ভেতরটা যেন পরিষ্কার দেখা না যায়।
আমি ছেলেটার আবদার শুনেই তাকে এক টুকরো দড়ি আনতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আর এই ফাঁকেই রেস্তোরাঁর বিলের কাগজটাকে আমি পাকিয়ে গোল করে নিয়েছিলাম।
বোতল এবং দড়ি—তাদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু সবার অলক্ষ্যেই আমি কাগজের পাকানো পুঁটলিটাকে বোতলের খোলা মুখ দিয়ে তার ভেতরে চালান করে দিয়েছিলাম। বাকিটা খুব সহজ।
চিত্র—১ দেখো, বোতলের ভেতর কাগজের পাকানো পুঁটলি এবং দড়িটার একটা প্রান্ত। চোখ ঘোরাও চিত্র-২-এর দিকে। আমি যখন বোতলটা উল্টে দিলাম, তখন বোতলের ভেতরে থাকা কাগজের পুঁটলিটা নিচের খোলা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে গিয়ে দড়ির সঙ্গে আটকে গিয়ে ঝুলে ছিল।
উল্টোভাবে আমি যখন একই কাজ করলাম, অর্থাৎ চিত্র-৩-এর মতো করে দড়ির খোলা প্রান্তটি ধরে বোতলটা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিলাম, তখনো দড়ির টানে পুঁটলিটা বোতলের মুখে আটকে গিয়ে বোতলটাকে আপাতদৃষ্টিতে শূন্যে ভাসতে সাহায্য করছে।
ভেতরের হাঁড়ির খবর তো আর দর্শকেরা জানেন না। আর এই সুযোগেই সাধারণ এই কৌশলও দর্শকদের কাছে জাদু বলেই ভ্রম তৈরি করবে।
বাদবাকিটা কেবল অভিনয়।