ক্লাসে নতুন কোনো ছাত্র ভর্তি হলে শিক্ষক সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সবাই বেশ কৌতূহলী দৃষ্টিতে নতুন বন্ধুর দিকে চেয়ে থাকে। কেমন হতো যদি তোমার ক্লাসে এমনই এক বন্ধুর আগমন ঘটত, যাঁর বয়স প্রায় এক শ বছর!
জুসেপ্পি পাতের্নোর গল্পটা হাল ছেড়ে না দেওয়ার কথা বলে। স্বপ্নপূরণে যে বয়স কোনো বাধা হতে পারে না, সেই উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলেন জুসেপ্পি।
১৯৩০ সালের কথা। সিসিলিতে বেড়ে ওঠা শৈশবের জুসেপ্পি স্বপ্ন দেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করবেন। কিন্তু বিধি বাম। দারিদ্র্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাঁকে আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। ৯৬ বছর বয়সে এসে তিনি শিখরে পৌঁছাতে পেরেছেন। ইতালির সবচেয়ে বয়স্ক স্নাতক হয়ে রেকর্ড গড়েছেন। গত ২৯ জুলাই দর্শন বিভাগে নিজের স্নাতক শেষ করলেন তিনি।
জুসেপ্পির পুরো গল্পটা সিনেমার মতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নেভিতে যোগ দেন। ফিরেছিলেন অক্ষতভাবেই। কিন্তু বাস্তব জীবনে পা ফেলে শুরু হলো নতুন যুদ্ধ। পেটের দায়ে স্টেট রেলওয়ে সার্ভিসে কাজ শুরু করলেন। খানিকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই কাজ করে গেছেন তিনি। পরিবারে ভরণপোষণের দায়িত্ব ছিল কাঁধে। একই সঙ্গে শখও ছিল বই পড়ার, পড়ালেখা করার। কিন্তু সম্ভব হয়নি।
৩১ বছর বয়সে নৈশকালীন স্কুলে যাওয়া শুরু করেন। এভাবেই হাইস্কুলের গণ্ডিও পেরিয়ে ফেলেন। দিনের বেলা কাজ করতেন আর রাতে পড়ালেখা। কিন্তু এভাবে আর কতটুকু করা যায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
তবু জুসেপ্পি আশা ছাড়েননি। ২০১৭ সালে পালেরমো বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়ে যান তিনি। শুরু করেন পড়ালেখা। প্রতিদিন সকাল সাতটায় উঠে পড়তে বসতেন। অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে ক্লাস শেষে বিকেলে একটু বিশ্রাম নিতেন। এরপর মাঝরাত পর্যন্ত আবার পড়া। অনেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাও করেছে, এই বয়সে এসবের কী দরকার? কিন্তু জুসেপ্পির স্বপ্নপূরণের যে ইচ্ছাশক্তি, তা তখনো কেউ বোঝেনি। জুসেপ্পি নিজেকে বুঝতেও দেননি নিজের বয়সের কথা। বয়সের কথা ভেবে থেমেও যাননি।
অবশ্য কোভিড-১৯–এর এই অতিমারির কারণে গ্র্যাজুয়েশনের কয়েকটি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি অনলাইন লার্নিংয়ের বিষয়গুলোও শিখে নিয়েছেন। জুসেপ্পির পরিবার অবশ্য তাঁর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বেশ ভয়ে ছিল। কিন্তু জুসেপ্পি নাছোড়বান্দা। তাঁর ইচ্ছা, মৃত্যুর আগে যেন গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়।
২৯ জুলাই জুসেপ্পি তাঁর স্বপ্নও পূরণ করেছেন। বিভাগের সেরা হয়ে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে অনার্স শেষ করেছেন তিনি। জুসেপ্পির আফসোস, তাঁর স্ত্রী যদি দিনটি দেখে যেতে পারতেন! কারণ, তিনি ১৪ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন।
কোনো বাধাই জুসেপ্পি পাতের্নোকে আটকাতে পারেনি। অনেকের মনে হতে পারে, তিনি তো স্বপ্ন পূরণ করেই ফেলেছেন। তাহলে এখানেই কি শেষ? না। এখন তিনি লেখালেখির দিকে মনোযোগ দিতে চান। সঙ্গে মাস্টার্স ডিগ্রিও নিতে চান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার মা বেঁচে ছিলেন ১০০ বছর। আমারও যদি সেই সুযোগ হয়, আমি তা কাজে লাগাব। আমার তো এখনো চার বছর আছে!’
তথ্যসূত্র: গার্ডিয়ান