২০২৪ সালের ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি অব দ্য ইয়ার’-এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিযোগিতার ৬০তম আসরে মোট ১০ ক্যাটাগরিতে ৩ লাখ ৯৫ হাজারের মতো ছবি জমা পড়ে। সেখান থেকে সেরা ৭ ছবি কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো।
বিড়ালটি দেখতে আমাদের গৃহপালিত বিড়ালের মতো হলেও এটি আসলে তা নয়। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৬ হাজার ৪০০ ফুট ওপরে বাস করে এরা। বন্য বিড়াল। ২০২৩ সালে চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী জিংচাও ঝু। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে চীনের নববর্ষ উৎসবে গিয়ে এ রকম কয়েকটি বিড়ালকে অনুসরণ করেন তিনি। একদিন ভোর হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ঘুরতে বেরিয়ে বিড়ালটি দেখতে পান। একটি পাখি শিকার করে ফিরছিল বিড়ালটি। তখনই তিনি ছবিটি তোলেন। সেই ছবি জমা দেন ২০২৪ সালের ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায়। আর হঠাৎ তোলা ছবিটাই ২০২৪ সালের সেরা বন্য প্রাণী ছবির পুরস্কার জিতে নেয়।
মন খারাপের চেহারা নিয়ে দুটি প্যাঁচা গাছের ডালে বসে আছে। নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষদের দেখছে। কারণ, ওদের বাসা নেই। নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষই ওদের সুখের সংসার ভেঙে দিয়েছে। মা–বাবার সঙ্গে খুব ভালোই ছিল ওরা। ওদের এই সুখ বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করেন সাশা জুমানকা নামের এক আলোকচিত্রী। জার্মানির মিউনিখ শহরের এক পার্কে প্যাঁচা দুটির পরিবার ছিল। কিন্তু বাসা ভেঙে দেওয়ায় এরা ঘর হারিয়েছে। হারিয়ে ফেলেছে ওদের মা–বাবাকেও। তাই চেহারায় অমন দুঃখী ভাব!
হাঙরের নাম শুনলেই কি বুকটা ধক করে ওঠে? হলিউডের নানা মুভির কারণে এমন ভয় পাওয়াটা অমূলক নয়। তবে মুভিতে যেমন দেখানো হয়, হাঙর কিন্তু সেরকম ভয়ানক না মোটেও। যা হোক, এই ছবিটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর থেকে তুলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আলোকচিত্রী টমি ট্রেনচার্ড। টুনা মাছ ধরার জাহাজে কী পরিমাণ হাঙর শিকার করা হয় বা আটকা পড়ে, তা গবেষণা করতে গিয়েছিলেন টমি ও তাঁর দল। সেখানেই এ ছবিটি তুলেছেন তিনি। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮ কোটি হাঙর ধরা হয়। হাঙর প্রজাতির ৪ ভাগের ৩ ভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এদের না বাঁচালে ভবিষ্যতে আর সমুদ্রে হাঙরের দেখা পাওয়া যাবে না।
ছবিটি দেখেই কেমন মায়া লাগছে না! একটা হরিণ মরে বরফে জমে আছে। আর কোনো দিন এই হরিণ সবুজ মাঠে দৌড়াবে না। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে হরিণটি। তবে ছবিটি কিন্তু কোনো দামি ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়নি। স্মার্টফোনে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক র্যান্ডি রবিনস শীতের সকালে বাড়ি থেকে বের হন ট্রেইল ক্যামেরা চেক করতে। তাঁর বাড়ির আশপাশের গাছে কিছু ক্যামেরা লাগানো ছিল, যা দিয়ে প্রাণীর ছবি তোলা হয়। যে প্রাণী এই পথ ধরে যায়, তার ছবি ক্যামেরায় উঠে আসে। এই ক্যামেরায় কোনো প্রাণীর ছবি উঠেছে কি না, তা দেখতে গিয়ে পাশে এই মৃত হরিণটি দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোন বের করে ছবি তুলে রাখেন। বরফ গলে পানি হয়ে যায় কি না, তাই আর বাসায় ক্যামেরা আনতে যাননি। ছবিটি তোলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সুসানভিল থেকে।
একটি ছোট্ট বিড়াল। বারবার লাফিয়ে ওপরে উঠছে আর নামছে। যেন মনের সুখে নাচ করছে। তা–ও আবার বরফের ওপর। লাফ দেওয়া অবস্থায় বিড়ালের এই প্রাণবন্ত ছবিটি তুলেছেন স্পেনের হোসে ম্যানুয়েল গ্রান্ডিও। শীতকালে তিনি ঘুরতে বেরিয়েছিলেন ফ্রান্সের অ্যাথোস শহরে। ফটোগ্রাফারদের জন্য শীতকাল নাকি আশীর্বাদ। ম্যানুয়েলের জন্য কথাটি একদম ঠিক। ঘুরতে না বের হলে কি এমন বিড়ালের নাচ ক্যামেরাবন্দী করতে পারতেন? তবে শিকারকে বিভ্রান্ত করতে নাকি বিড়াল এমন লাফালাফি করে। কিন্তু এই বিড়ালটা কি শিকারকে বিভ্রান্ত করছে, না ফুর্তিতে লাফাচ্ছে, তা আলোকচিত্রীই ভালো জানেন।
ছবিটি দেখলে মনে হয় কোনো শিল্পী তুলির ছোঁয়া দিয়ে এঁকেছেন। কিন্তু এটা কোনো শিল্পীর আঁকা ছবি নয়, বাস্তব। ভারতের শ্রিয়ভী মেহতা এই সুন্দর ছবিটি তুলেছেন রাজস্থানের কেওলাদেও জাতীয় উদ্যান থেকে। মা–বাবার সঙ্গে জঙ্গলে হাঁটার সময় রাস্তার মাঝখানে দুটি ময়ূর দেখতে পান শ্রিয়ভী। তাঁর বাবার কাছে ক্যামেরা ছিল। দৌড়ে বাবার কাছে যান এবং ক্যামেরা নিয়ে ছবিটি তোলেন। ছবি তোলার জন্য প্রায় মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভারতে প্রচুর ময়ূর দেখা যায়। এই ন্যাশনাল পার্কের গাছেও আছে অনেক ময়ূরের বাসা। সন্ধ্যার দিকে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে গাছ থেকে নেমে আসে এরা। ছবিটি সেরকম সময়েরই।
বাঘে–মহিষে যুদ্ধের কথা তোমরা নিশ্চয়ই শুনে থাকবে। কিন্তু এটা হলো বাঘে-কুমিরে লড়াই। একেবারে কুমিরের ঘাড় কামড়ে ধরেছে বাঘটি। ব্রাজিল থেকে ছবিটি তুলেছেন যুক্তরাজ্যের অধিবাসী ইয়ান ফোর্ড। এই আলোকচিত্রী ব্রাজিলে ঘুরতে গিয়েছিলেন। হোটেল থেকে বের হতেই তাঁকে ফোনে জানানো হয়, আশপাশে একটা জাগুয়ার (একধরনের বাঘ বা বিড়ালজাতীয় বড় প্রাণী) দেখা গেছে। সাবধান! তিনি ফিরেই আসছিলেন, এমন সময় নদীর পারে জাগুয়ারটি দেখতে পান। ফিরে না গিয়ে ওটাকে অনুসরণ করেন নৌকা ও ক্যামেরা নিয়ে। যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান নেন ইয়ান। জাগুয়ারটি যখন কুমিরের ওপরে হামলা করে, ঠিক সেই সময়ের ছবি এটি। এর আগে এই ছবিটিই ২০২৪ সালের ওয়াইল্ডলাইফ ক্যাটাগরিতে সেরা ছবির তালিকায় ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন সেরা ছবির তকমা পাবে এই ছবিটি। কিন্তু ইতিমধ্যে ২০২৪ সালের সেরা ছবি আমরা দেখে নিয়েছি।
ছবি: ডিসকভারি ওয়াইল্ডলাইফ ডট কম