৯ বছর বয়সী হগার্থ থাকে মায়ের সঙ্গে। হগার্থের অনেক দিনের ইচ্ছা একটি প্রাণী পুষবে। কিন্তু মায়ের ভয়ে তা আর হয়ে ওঠে না। মায়ের একটাই কথা, ঘরের মধ্যে এত জিনিসপত্র আছে যে ১০০ ফুটের কোনো রোবটও তা উঠে পেরোতে পারবে না। রোবট নিয়ে মায়ের এই টিপ্পনী কাটা যে বাস্তবেও রূপ নিতে পারে, সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি হগার্থ।
হগার্থ একদিন খেয়াল করল, টিভির অ্যানটেনা পাওয়া যাচ্ছে না। এদিক–সেদিক খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা পথ চলে গেল সে। হাঁটতে হাঁটতে পাওয়ার প্ল্যান্টের কাছে এসে দেখা পেয়ে গেল বিশাল এক আয়রন জায়ান্টের। হগার্থের উপস্থিতির কারণেই বিদ্যুতায়িত হওয়া থেকে বেঁচে যায় রোবটটি। এরপরেই বন্ধুত্ব। বেচারা জায়ান্ট টিভি অ্যানটেনার মতো ইলেকট্রনিকসের জিনিসপত্র খেয়ে বেঁচে থাকে। এই বিশাল রোবট নিজের মা ও সরকারি বাহিনীর চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হবে হগার্থকে। তার সঙ্গে তো খাওয়াদাওয়ার জিনিসপত্র জোগাড় করতেই হবে। টেড হিউসের ১৯৬৮ সালের উপন্যাস দ্য আয়রন ম্যান অবলম্বনে নির্মিত মুভি দ্য আয়রন জায়ান্ট মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে।
ব্রিটেনের ফিল্ম, টেলিভিশন সংস্থা বিএফআই (ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট)। ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি ২০০৫ সালে শিশুদের জন্য নির্বাচিত কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করেছিল। বাছাই করেছিল শিশুদের উপযোগী বেশ কিছু কিছু মুভি। ৭০ জনের বেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিশেষজ্ঞ ও সমালোচক মিলে সেই তালিকা তৈরি করেন।
সম্প্রতি বিএফআই এডুকেশন আরও ১৫টি মুভি যুক্ত করেছে সেই তালিকায়। নতুন সব আইডিয়া, শিক্ষণীয়, মজার মুভি দিয়ে তালিকাটি পুনরায় তৈরি করা হয়েছে। ১৫ বছর হওয়ার আগেই যেকোনো কিশোর-কিশোরীর এই মুভিগুলো দেখে ফেলা উচিত। যেহেতু কোয়ারেন্টিন, বই পড়ার পাশাপাশি দেখে নিতে পারো মজার এই মুভিগুলো।
হগার্থের বন্ধু মেটালিক রোবটের কী হয়েছিল, তা জানতে মুভিটি দেখে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে দেখে ফেলতে পারো মঙ্গোলিয়ান মুভি দ্য কেভ অব দ্য ইয়েলো ডগ। মেটালিক সেই জায়ান্টের সঙ্গে একটি মিল খুঁজে পেতে পারো এখানেও। ছোট্ট নানসালকে নিয়ে ঘটনার শুরু৷ হাঁটতে হাঁটতে একদিন সে কুড়িয়ে পায় একটা কুকুর। কুকুরটা বাসায় আনার পর চিন্তায় পড়ে যান বাবা। কারণ, কুকুরটির কারণে নেকড়েরা আকৃষ্ট হতে পারে। কুকুরটি ফেলে আসতে বলা হয় নানসালকে। অনেকটা হগার্থের মতোই লুকিয়ে কুকুরটি রেখে দেয় নানসাল। একসময় সে হয়ে দাঁড়ায় জীবনরক্ষাকারী। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা, সততা, নিষ্ঠার এক অমূল্য উদাহরণ এই মুভিটি।
অনেকেই হয়তো জানো, জাপানের কার্টুন সারা পৃথিবীতে অ্যানিমে হিসেবে পরিচিত। এখন পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া অ্যানিমে মুভিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করা দুটি মুভি হলো কিমি নো না ওয়া (ইউর নেম) ও স্পিরিটেড অ্যাওয়ে। যে দুটি মুভিই বিএফআইয়ের নতুন তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ইউর নেম মুভিটির গল্প দুই উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে। যাদের একজনের শহর একদমই ভালো লাগে, আরেকজনের ভালো লাগে না গ্রাম। একদিন ঘুম থেকে উঠে মেয়েটি দেখল সে নিজের শরীরে জেগে ওঠেনি। ছেলেটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটল। এভাবে শরীর অদলবদলের কারণে ঘটতে থাকে মজার সব ঘটনা। দুজনই একে অন্যের জীবন কাটাতে থাকে। কিন্তু এর পেছনের বিশাল রহস্য যখন বেরিয়ে আসতে থাকে, তা খুঁজতে গিয়েই শুরু হয় অ্যাডভেঞ্চার।
আবার অ্যানিমে মুভি স্পিরিটেড অ্যাওয়ের ঘটনাটা ভিন্ন ধাঁচের। দেখা যায় ১০ বছর বয়সী এক বালিকা তার মা–বাবার সঙ্গে একটি জায়গায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে পুরোনো এক পার্কে আটকে পড়ে তারা। সুপারন্যাচারাল সেই পার্কে নিজের বাবা–মা ও নিজেকে মুক্ত করতে হলে নানা বাধা পেরোতে হবে মেয়েটিকে। কেবল সে-ই পারে নিজেদের সেই জাদুকরী স্থান থেকে মুক্ত করতে।
তোমরা যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ কর, তারা দেখে নিতে পারো ৩৫ মিনিটের ফ্রেঞ্চ শর্টফিল্ম দ্য রেড বেলুন, পরিচালক অ্যালবার্ট ল্যামোরিসের নিজ সন্তান মূল চরিত্রে অভিনয় করে। আরও দেখে নিতে পারো ২০১৬ সালের হান্ট ফর দ্য ওয়াইল্ডার পিপল মুভিটি।
মালালা ইউসুফজাইয়ের সাহসিকতার গল্প অনেকে পড়েছ নিশ্চয়। মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে গিয়ে তালেবানদের হামলার শিকার হন মালালা। সেসব দুঃসাহসী গল্প নিয়ে আমেরিকান ডকুমেন্টারি হি নেইমড মি মালালা মুক্তি পায় ২০১৫ সালে।
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত পথের পাঁচালীও স্থান করে নিয়েছে এ তালিকায়। এক সাধারণ গ্রামীণ পরিবারের গল্প। অপু ও দুর্গার দুরন্তপনা, দরিদ্রতার বেড়াজালে আটকানো এই ছোট্ট পরিবারটি জীবনযুদ্ধে সফল হতে গিয়ে হিমশিম খেতে থাকে। অনেকে হয়তো পথের পাঁচালী উপন্যাসটিও পড়েছ। মুভিটি দেখে মিলিয়ে নিতে পারো নিজের কল্পনার অপু আর দুর্গার সঙ্গে।
এ ছাড়া লটে রাইনিগারের বেশ কয়েকটি শর্টফিল্ম দেখে নিতে পারো ইউটিউব থেকে৷ যেমন: হ্যানসেল অ্যান্ড গ্রেটেল, শো হোয়াইট অ্যান্ড রোজ রেড, দ্য স্লিপিং বিউটি, সিন্ডারেলা, থামবেলিনা (১৯৫৩-৫৫)।
২০১৬ সালে মুক্তি পায় মাই লাইফ অ্যাজ আ কোরজেট। ৯ বছর বয়সী কোরজেট মাকে হারিয়ে জায়গা হয় চিলড্রেন্স হোমে। সে আবিষ্কার করে যে সবারই কমবেশি নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। একে অন্যকে সাহায্য করে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বের অনন্যদৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
চার্লি চ্যাপলিনের ১৯২১ সালের মুভি দ্য কিড, প্রথম পুরোপুরি কম্পিউটার অ্যানিমেটেড মুভি টয় স্টোরিও দেখে নিতে পারো, মানুষের আড়ালে জীবিত পুতুলগুলোর জীবন কেমন হতে পারে?
তালিকার মুভিগুলো নিউজিল্যান্ড, সৌদি আরব, বুরকিনা ফ্যাসো, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, ইরান, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশের মুভি স্থান পেয়েছে। এই কোয়ারেন্টিনে দেখে নিতে পারো এমন আরও মুভি হলো বেন্ড ইট লাইক বেকহাম (২০০২), দ্য আউটসাইডারস (১৯৮৩), দ্য সং অব দ্য সি (২০১৪), কিরিকাউ অ্যান্ড দ্য সরসেরেস (১৯৯৮), আ ট্রিপ টু দ্য মুন (১৯০২), ওয়ালে (২০১৭), পার্সেপোলিস (২০০৭), রোমিও+জুলিয়েট (১৯৯৬), কেস (১৯৬৯), দ্য নাইট অব দ্য হান্টার (১৯৫৫), বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (১৯৪৬), ওয়াজা (২০১২), দ্য হোয়াইট ব্যালুন (১৯৯৫), টমবয় (২০১১), শো মি লাভ (১৯৯৮), দ্য ফোর হান্ড্রেড ব্লোস (১৯৫৯), অলিভার টুইস্ট (১৯৪৮), হুইসেল ডাউন দ্য উইন্ড (১৯৬১), আই উইশ (২০১১), শন দ্য শিপ দ্য মুভি (২০০৫), ফাইন্ডিং নিমো (২০০৫), র৵াবিট-প্রুফ ফেঞ্চ (২০০২), টু বি অ্যান্ড টু হ্যাভ (২০০২), হোয়েল রাইডার (২০০২), বিলি এলিওট (২০০০), দ্য সিক্রেট গার্ডেন (১৯৯৩), এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস (১৯৯০), মাই নেইবর টোটোরো (১৯৮৮), গুডবাই চিলড্রেন (১৯৮৭), দ্য প্রিন্সেস ব্রাইড (১৯৮৭), হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হাউস (১৯৮৭), ব্যাক টু দ্য ফিউচার (১৯৮৫), ই টি দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল (১৯৮২), রেইডার্স অব দ্য লস্ট আর্ক (১৯৮১), স্টার ওয়ারস: এপিসোড ফোর—আ নিউ হোপ (১৯৭৭), দ্য স্পিরিট অব দ্য বিহাইভ (১৯৭৩), ওয়াকাবাউট (১৯৭১), দ্য রেলওয়ে চিলড্রেন (১৯৭০), প্লে টাইম (১৯৬৭), জেসন অ্যান্ড দ্য আর্গোনটস (১৯৬৩), টু কিল আ মকিংবার্ড (১৯৬২), হুইসেল ডাউন দ্য উইন্ড (১৯৬১), সাম লাইক ইট হট (১৯৫৯), মি হল্টোস হলিডে (১৯৫৩), সিঙ্গিং ইন দ্য রেইন (১৯৫২), বাইসাইকেল থিভস (১৯৪৮), ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ (১৯৪৬), দ্য উইজার্ড অব অজ (১৯৩৯), দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব রবিনহুড (১৯৩৮), স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডর্ফস (১৯৩৭), আ ডে অ্যাট দ্য রেসেস (১৯৩৭), কিং কং (১৯৩৩)।
এই লিংকে পাবে সব মুভির নাম:
সূত্র : বিএফআই