সাইকেল রাইডে বের হওয়ার আগে সাইকেল ছাড়া অনেক কিছু সঙ্গে নিয়ে বের হতে হয় সাইক্লিস্টদের। গ্লাভস, সাইক্লিং সানগ্লাস, লকসহ আরও কত কী যে প্রয়োজন! সবই সাইকেল ও নিজের সুরক্ষার জন্য। তবে নিজের সুরক্ষার জন্য এত এত জিনিসপত্রের মধ্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে হেলমেট। আজকের লেখা সাইকেলের হেলমেটকে ঘিরে।
হেলমেট কেন এত প্রয়োজনীয়?
আমাদের দেশে খুব কম সাইক্লিস্টের মাথায়ই হেলমেট দেখা যায়। রাজধানীর বাইরে তো প্রায় দেখাই যায় না। অনেকে তো জানেই না সাইকেল চালানোর সময় হেলমেট পরা কেন জরুরি। কেউ কেউ আবার ধরেই নিয়েছে হেলমেট শুধু মোটরসাইকেলের জন্য, সাইকেল চালানোর জন্য এসবের কোনো দরকার নেই। এ ধরনের ভাবনা একদমই ভুল।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শহরগুলোর রাস্তা সব সময় প্রচুর ব্যস্ত থাকে। শহরের রাস্তায় খুব সচেতনভাবে সাইকেল না চালালে থেকে যায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা। দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা সব সময় ট্রাফিক নিয়ম মেনে ও কম গতিতে সাইকেল চালাব। তবে কখনো কখনো সব নিয়ম মেনে সাইকেল চালালেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ভয়ানক কোনো সাইকেল দুর্ঘটনায় নিজেকে রক্ষা করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হেলমেট।
সাইকেল দুর্ঘটনায় দেহের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগতে পারে। হাত-পাসহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিভিন্ন অঙ্গ। তবে দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লাগলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সরাসরি মাথায় আঘাতের ফলে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। হেলমেট ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় মাথাকে মারাত্মক কোনো ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। বুঝতেই পারছ, হেলমেট রীতিমতো আমাদের জীবন রক্ষা করতে পারে।
হেলমেটের রকমফের
রাস্তাঘাটে মোটরসাইকেলের হেলমেটটাই আমাদের চোখে পড়ে বেশি। তাই হেলমেট বলতেই মোটরসাইকেলের বিশাল হেলমেটের ছবি আসে মাথায়। সাইকেলের হেলমেট অনেকটাই ভিন্ন। নকশা ও ম্যাটেরিয়ালও অনেক ক্ষেত্রে আলাদা। সাইক্লিংয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের হেলমেট তৈরি হয়। একেক রকম সাইকেলের জন্য একেক রকম হেলমেট। তবে এত এত হেলমেটের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মূলত তিন ধরনের হেলমেট বেশ জনপ্রিয়। সেগুলো হলো রোড বাইক হেলমেট, মাউন্টেন বাইক হেলমেট ও কমিউটার হেলমেট।
রোড বাইক হেলমেট
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, রোড বাইক হেলমেট ব্যবহার করা হয় রোড বাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এ ধরনের হেলমেট বেশ হালকা এবং হেলমেটের ভেতর বাতাস চলাচল করে খুব সহজেই। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় রোড বাইক হেলমেটের। কারণ, শহরের রাস্তায় সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে রোড বাইকের। রোড বাইক সাধারণ রাস্তায় অনেকটা পথ পাড়ি দিতে ব্যবহার করা হয়।
মাউন্টেন বাইক হেলমেট
এই হেলমেট তাদের জন্য, যারা মাউন্টেন বাইক চালায়। সবচেয়ে শক্তিশালী হেলমেট বলা যায় এই হেলমেটকে। মাউন্টেন বাইক হেলমেটের মধ্যেও আছে অনেক রকম হেলমেট। সাধারণ মাউন্টেন বাইক হেলমেটের পাশাপাশি পুরো মাথা ও মুখ ঢেকে ফেলে—এমন হেলমেটও রয়েছে এই ক্যাটাগরিতে। মাউন্টেন বাইকের এমন আলাদা আলাদা মডেলের হেলমেটের কারণ—এ ধরনের সাইকেল চালানো হয় বিভিন্ন ধরনের রাস্তায়। পাহাড় কিংবা বনজঙ্গল সব জায়গায় খাপ খাইয়ে নেয় মাউন্টেন বাইক।
কমিউটার হেলমেট
এই ক্যাটাগরিটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর। রোড বাইক ও মাউন্টেন বাইক হেলমেটের মাঝামাঝি এই হেলমেট। ছোট কোনো সাইকেল রাইড বা অল্প দূরত্বে কোথাও যাওয়ার জন্য এ ধরনের হেলমেটের ব্যবহার হয়। যেকোনো ধরনের সাইকেলে এই হেলমেট মানিয়ে যায়।
এই তিন ধরনের হেলমেটের বাইরেও বাচ্চাদের জন্য ও টাইম ট্রায়াল রেসের জন্য আলাদা হেলমেট ব্যবহার করা হয়।
হেলমেটের ব্র্যান্ড, দাম ও অন্যান্য
সাইক্লিস্টদের প্রিয় হেলমেট ব্র্যান্ডের তালিকায় সবার ওপরে থাকে ‘জিরো’, ‘স্মিথ’, ‘বেল’ ও ‘পক’–এর মতো আন্তর্জাতিক হেলমেট ব্র্যান্ডের নাম। বাংলাদেশে ভালো মানের হেলমেট তৈরি করে হাতে গোনা দু–একটি ব্র্যান্ড। দুরন্ত বাইসাইকেল ও মেঘনা গ্রুপের তৈরি হেলমেটগুলোর মান দেশের তৈরি অন্যান্য হেলমেটের তুলনায় বেশ ভালো।
দেশের বাজারে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় মোটামুটি ভালো মানের হেলমেট পাওয়া যায়। তবে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে বেশ ভালো হেলমেট খুঁজে পাবে তুমি। হেলমেট ব্যাপারটা যেহেতু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই খাতে একটু বেশি খরচ করে ভালো হেলমেট কেনাটাই উত্তম।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হেলমেটের ঠিকানা হলো তেজগাঁওয়ের তেজতুরী বাজার এলাকা। এ ছাড়া বিদেশি ব্র্যান্ডের তোমার পছন্দের কোনো হেলমেট চাইলে অর্ডার করতে পারো অনলাইনের বিভিন্ন ই-কমার্স (আমাজন, আলিবাবা) সাইটে। তবে হেলমেট কেনার সময় অবশ্যই সাইকেলের ধরন (রোড বাইক, মাউন্টেন বাইক) অনুযায়ী হেলমেট কিনতে হবে। খেয়াল করে নিজের আকার অনুযায়ী হেলমেট কেনা উচিত, যেন হেলমেট মাথায় চাপিয়ে আরাম করেই সাইক্লিং করতে পারো তুমি।