ভোরের আলো সবে ফুটেছে। ঢাকার রমনা পার্কের নির্জনতা ভাঙতে হাজির স্বাস্থ্যসচেতন নানা বয়সী মানুষ। তাঁদের হাঁটা, দৌড় আর দলগত শারীরিক কসরত দেখে মনে হলো, রমনা পার্ক যেন উন্মুক্ত ব্যায়ামাগার। পার্কে ঘুরতে ঘুরতে শতায়ু অঙ্গনের কাছে এসে দেখা গেল বৃত্তাকার দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনকে। একজন কী যেন বলছেন বাকিরা তাই শুনছেন। তাঁদের কাছাকাছি আসতেই এমন এক কাণ্ড শুরু হলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। সাতসকালে সমস্বরে ছড়া পাঠ শুরু করলেন, আমরা রমনা ঊষা সংঘে/ ভোরবেলা করি ব্যায়াম মনেরই আনন্দে/ আমাদের নেই কোনো ক্লান্তি/ আমরা চাই শুধু শান্তি।
এটুকু না হয় মানা যায়। ছড়া পাঠের পরে যে দৃশ্যের অবতারণা হলো তা দেখে আমার তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! প্রথম দেখলে হয়তো তুমিও ভাবতে মানুষগুলোর হলোটা কী! ঢাকার সব ‘পাগল’ কি এক জায়গায় জড়ো হলো! কারণ সবাই তখন হা হা, হো হো, হি হি করে হাসছে। সে অট্টহাসি কি সহসাই থামে! একজন বোধ হয় হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়েই পাশের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলেন। এমন হাসির কারণ জিজ্ঞেস করতেই কাজী ফারুক নামের ব্যক্তিটি বলেন, ‘আমরা সবাই ঊষা সংঘের সদস্য। এমন হাসাহাসি করি, কারণ হাসলে আমরা সুস্থ থাকি। অনেক ধরনের ব্যায়ামই করি আমরা, কিন্তু হাসি অনেক ব্যায়ামের চেয়েও বড় ব্যায়াম।’
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার মোক্ষম দাওয়াই হলো হাসি। সে কথা বললেন সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও কোচ সাইফুল ইসলাম, ‘হাসি আপনাকে সুস্থ রাখবে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অবসাদ, মোটকথা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য হাসির চেয়ে মহৌষধ আর হয় না। ভোরে প্রাণ খুলে হাসলে দিনটা আপনার শুরু হবে আনন্দের মধ্য দিয়ে। দুশ্চিন্তা দূর হবে, কাজে মনোযোগী হতে পারবেন, শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। আর এই বিষয়গুলো সামনে রেখেই আমাদের এখানে সবাই আসেন এবং বলতে পারি, এখানকার প্রায় সবাই সুস্থ আছেন।’
শুধু রমনা ঊষা সংঘ নয়, রমনা পার্কে ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি, হাসাহাসি করেন এ ধরনের সংগঠন আরও রয়েছে। কিছু নিয়ম মেনে আগ্রহী ব্যক্তিরা যোগ দিতে পারে রমনা ঊষা সংঘ, শতায়ু অঙ্গন, প্রভাতি, কিছুক্ষণ, উজ্জীবনের মতো রমনা ফেডারেশন অব ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত প্রায় ১৫টি সংগঠনের যেকোনো একটিতে। কী সেই নিয়ম? খলিলুর রহমান নামের একজন সদস্য বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে নিয়মিত আসতে হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ করব ব্যক্তির আচরণসহ নানা বিষয়। এরপর সদস্য হিসেবে এককালীন পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। প্রতি দুই বছর পরপর সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন করা হয়।’
ভর্তির শর্ত হিসেবে তিনি আরও একটি কথা বলেছিলেন, তা শুনে তোমরা অনেকে মুখ ভার করতে পারো! তিনি বলেছিলেন, বয়স যাদের ১৮ ছোঁয়নি, তারা কিন্তু সদস্য হতে পারবে না! তাহলে ১৮ বছরের নিচে যারা, তারা কি হাসবে না? এ কেমন অবিচার! আমার কথা শুনে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল কোচ সাইফুল ইসলামের মুখে। সে হাসি ঠোঁটের কোণে ধরে রেখেই তিনি বললেন, ‘আমাদের এখানে সুযোগ না থাকুক, বাচ্চারা চাইলেই কয়েকজন মিলে একটা দল গঠন করতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, হাসতে চাইলে তো কোনো নিয়মকানুন মানতে হয় না। ছোটরা বন্ধুদের সঙ্গে এমনিতেও হাসে, যা বড়রা চাইলে পারে না।’
এবার নিশ্চয় হাসি ফুটেছে মুখে। বন্ধুদের নিয়ে কিন্তু হা হা, হো হো, হি হি নামে একটি হাসির সংগঠন খোলার পরিকল্পনা আঁটতেই পারো!