হাতে বোনা স্নেহ
হাতে বোনা পুতুলগুলোর কারও চোখে চশমা, কারও চুল সুন্দর করে দুই বেণি করা, আবার কেউবা পরে আছে নিজের সিগনেচার সোয়েটার। ব্যাভিংক স্কুলের একটি ক্লাসের বাচ্চাদের সঙ্গে পুতুলগুলোর চেহারা প্রায় হুবহু মিলে গেছে! নিজ হাতে পুতুল বুনে ঘরবন্দী এ দিনগুলোতে বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন এক শিক্ষিকা।
করোনাকালে সারা পৃথিবীর স্কুলগুলো বন্ধ। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা ছুটির মজা পেলেও অনেকেই এখন স্কুলকে মিস করতে শুরু করেছে। নেদারল্যান্ডসের হারলেম শহরের একটি স্কুল হলো ব্যাভিংক স্কুল। এ স্কুলেরই একজন শিক্ষিকা মিস ইনগেবোর্গ। স্কুল বন্ধের এই দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক দিন তাঁর দেখা হয় না। মিস ইনগেবোর্গ বাচ্চাদের খুব মিস করেন এই দিনগুলোতে।
মিস ইনগেবোর্গ বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। এটা আমায় খুবই দুঃখ দিয়েছে। বাচ্চারা আর স্কুলে নেই। আমি তাদের খুব মিস করছি।’
একদিন মিস ইনগেবোর্গ পিন্টারেস্টে হাতে বোনা কিছু পুতুলের ছবি খুঁজে পান। এ বিষয়ে দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য হাতে বোনা পুতুল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। দিন-রাত পরিশ্রম শেষে মিস ইনগেবোর্গ সত্যি সত্যি অনেকগুলো হাতে বোনা পুতুল বানিয়ে ফেলেন!
প্রতিটি পুতুল বুনতে তিন-চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন তিনি। বাচ্চাদের মধ্যে যে ছেলেটি সোয়েটার পরত, তার পুতুলের গায়ে সোয়েটার। চশমা পরা এক মেয়ের পুতুলের চোখে একই রকম দেখতে চশমা। দুই বেণি ঝুলিয়ে স্কুলে আসা মেয়েটির পুতুলের চুলে সুন্দর করে দুটি বেণি করা। মিস ইনগেবোর্গ বাচ্চাদের সঙ্গে মিলিয়ে খুব নিখুঁতভাবে পুতুলগুলো বুনেছেন।
দারুণ এ পুতুলগুলোর ছবি এবার বাচ্চাদের দেখানোর পালা। প্রথম দেখাতেই বাচ্চারা খুব সহজে যার যার পুতুলগুলো চিনে ফেলে। সবাই নিজের পুতুল দেখে খুব খুশি। বাচ্চারা একসময় খেয়াল করে পুতুলের সারিতে মিস ইনগেবোর্গের কোনো পুতুল নেই। তারা জানতে চায়, ‘মিস ইনগেবোর্গ কোথায়?’ প্রশ্ন শুনেই মিস ইনগেবোর্গ কাজে লেগে পড়েন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই তিনি নিজের পুতুল তৈরি করে ফেলেন। সেই পুতুলও ঢুকে পড়ে বাচ্চাদের পুতুলগুলোর ভিড়ে।
ব্যাভিংক স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদের নজরে আসে মিস ইনগেবোর্গের পুতুলগুলো। তাঁরা মিস ইনগেবোর্গের কাছে অনুরোধ নিয়ে যান, যেন তাঁদের শিক্ষার্থীদের জন্যও তিনি পুতুল বানিয়ে দেন। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, না, এর জন্য তাঁর সময় নেই।
শিগগিরই বাচ্চারা স্কুল থেকে তাদের জিনিসপত্র সংগ্রহ করার সুযোগ পাবে। সে সময় মিস ইনগেবোর্গ বাচ্চাদের দেখার এবং পুতুলগুলো দেওয়ার সুযোগ পাবেন। শিক্ষার্থীরা পুতুলগুলো হাতে নিয়ে দেখার জন্য মুখিয়ে আছে। বাচ্চাদের আনন্দ দেখে মিস ইনগেবোর্গ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রতিবছর তিনি তাঁর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য হাতে বোনা পুতুল তৈরি করবেন। বাচ্চাদের হাসিমুখ তাঁর কাছে বিশাল এক প্রাপ্তি।
শিক্ষার্থীদের প্রতি সব শিক্ষকের অপরিসীম ভালোবাসা সব সময়ই থাকে। জীবনের সিঁড়িতে তাঁরা আমাদের ধাপে ধাপে এগিয়ে দেন। তাঁরা চান, পুরো জীবন যেন আমাদের মুখে হাসি ফুটে থাকে। মিস ইনগেবোর্গেরও একই চাওয়া।