হাত আঁকার একহাত

আঁকাআঁকির মধ্যে সব থেকে ঝামেলার বিষয় সম্ভবত মানুষের হাত আঁকা। কারণ, এই একটা অঙ্গ একেক সময় একেক রকমভাবে থাকতে পারে। এই দেখা গেল সোজা ঝুলে আছে সব আঙুল নিয়ে, আবার এই হয়তো রাগে মুঠি পাকিয়ে হয়ে গেল অর্ধেক দেখতে। এই দেখা গেল ছুড়ে মারছে কোনো ক্রিকেটের বল, আবার দেখা গেল দুই আঙুলে একটা ছোট্ট সুই ধরে তাতে আরেক হাতে সুতা পরানোর চেষ্টা চলছে। তাই হাত আঁকা বেশ কঠিন একটা বিষয়। নাক, কান, গলা ইত্যাদি তো আর কিছু করতে পারে না। সুতরাং এত ধরনের ভঙ্গিতে আঁকতেও হয় না। যা–ই হোক, তাই বলে সব সময় হাত ছাড়া মানুষ আঁকাও বুদ্ধিমানের কাজ নয় (একেবারে সুবিধা করতে না পারলে সব মানুষের দুই হাত দুই পকেটে ঢুকিয়ে আঁকার একটা চেষ্টা অবশ্য করা যেতে পারে)।

হাত আঁকতে গেলে আগে দরকার সেটার কোন অংশের সঙ্গে কোন অংশটা কীভাবে জুড়ে আছে, সেটা বোঝা। আমরা প্রথমে একেবারে সত্যিকারের হাত যেমন হয়, সেটা থেকে এর গঠনটা বোঝার চেষ্টা করি।

হাতের তালুকে আমরা একটা পঞ্চভুজ আকারে ব্যাখ্যা করতে পারি, যে যার নিজের হাতটা দেখলেই দেখতে পাব যে তালুর জায়গাটা মধ্যমা আঙুলের গোড়ার দিকে সবচেয়ে উঁচু, অর্থাৎ সেটা পঞ্চভুজের শীর্ষ তৈরি করেছে। আর সেই সঙ্গে তার একপাশে যেখান থেকে বুড়ো আঙুলটা বেরিয়েছে, সেটা একটা স্রেফ ত্রিভুজ। তার মানে শুধু হাতের তালু আর পাশের বুড়ো আঙুলের গোড়ার ত্রিভুজটা হবে ওপরের ছবির মধ্যের অবয়বটার মতো। ৩ নম্বর ছবিতে সেটা হাতের ওপর বসিয়ে দেখা যাচ্ছে যে সত্যি সত্যি সেটা আসল হাতের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে খাপে খাপে।

এবারের পঞ্চভুজটা নিচের দিকে একটু বাঁকা।
একটা ছোট বিষয় খেয়াল করার আছে, আঙুলের শেষটা কিন্তু একেবারে ওপরে গিয়ে মেলেনি, তার আগেই সেটা আড়াআড়ি নীল দাগটা পর্যন্ত গিয়ে শেষ।

কার্টুনের হাত

অনেক হলো, বুঝলাম অনেক কিছু, ত্রিভুজ, পঞ্চভুজ ইত্যাদি, কিন্তু কার্টুনে এত কিছু মাথায় রেখে আঁকতে গেলে সেটা তো কার্টুন না হয়ে রিয়েলিস্টিক আঁকিবুঁকি হয়ে যাবে। তাহলে? তাহলে উপায় হলো কার্টুনে কার্টুনের মতো করেই সহজ একটা টেকনিক দেখে ফেলা। এবং এই টেকনিকের শুরুর মজাটা চালু করে গেছেন ওয়াল্ট ডিজনি স্বয়ং! মিকি মাউসের অ্যানিমেশন কার্টুন বানাতে গিয়ে তিনি ও তাঁর টিম দেখলেন, বারবার দুই হাতের ১০টা করে আঙুল আঁকতে গেলে মহাবিপদ, অ্যানিমেশনে যেখানে প্রতি সেকেন্ডের জন্য প্রায় ২৪টা ড্রয়িং করতে হয়! তিনি ঠিক করলেন, কেন না একটা আঙুল বাদ দিয়ে দিই? তাতে কার্টুনের গল্পের কোনোই সমস্যা যেহেতু হচ্ছে না, যেই ভাবা সেই কাজ, মিকি মাউসের হাতের আঙুল তাই হয়ে গেল চারটা করে। একদিকে বুড়ো আঙুল আর অন্যদিকে মাত্র তিনটা আঙুল। আসলে মাঝের মধ্যমা আর অনামিকাকে এক করে একসঙ্গে আঁকলে ব্যাপারটা তা-ই হয়, নিচের ছবি দেখি।

পাখি-হাত

এবং এবারে আরেকটা সহজ উপায়, সেটা হলো হাতটাকে যদি আমরা একটা পাখির সঙ্গে মিলিয়ে ভাবি, তাহলে কী ঘটবে? যা ঘটবে তা এ রকম—ডান দিকের ছবিটার মতো। অর্থাৎ, এবারে আমরা সেই পঞ্চভুজ বাদ দিয়ে মধ্যে আঁকলাম একটা ডিম্বাকার অবয়ব, আর সেটাকে ঘিরে ওপরে আছে ডিজনির শেখানো তিনটা আঙুল, নাকি পাখা? আর বুড়ো আঙুলটা একটা ঠোঁট আর একটা চোখ পেয়ে হয়ে গেছে পাখির মাথা। এভাবে বুঝে নিলেও হাত আঁকা অনেক সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। আর এটা অনুসরণ করে আমরা যেকোনো দিকে হাত এঁকে যেতে পারি। খালি মনে মনে পাখিটাকে সে রকম একটা পোজে ভেবে নিলেই চলছে, দেখে নিই নিচের কিছু সে রকম পাখিহাত।

হাতের কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বরং বলা হয়নি আরও অনেক কিছু, সেগুলোও সময় করে একদিন বলে ফেলা যাবে। তার আগে প্রথম অংশটা খটোমটো মনে হলে শেষের দিকে এই পাখি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, আর সেই সঙ্গে ইন্টারনেটের কল্যাণে পাওয়া যাবে অসংখ্য হাত আঁকার রেফারেন্স। যেমন ডান দিকের এই মিকি মাউসের হাতের বিভিন্ন ভঙ্গির থেকেই চাইলে প্রয়োজনীয় হাতটা বেছে নেওয়া যেতে পারে।

মিকি মাউসের হাতের বিভিন্ন পোজ, আদর্শ কার্টুন হাতের উদাহরণ, আঙুল মাত্র চারটা করে।

ভালো কথা, আঁকাআঁকির এই সব উপায় যারা আরও ভালোমতো বুঝতে চাও, তারা চাইলে কিন্তু ঘুরে আসতে পারো ইউটিউবের AKANTIS নামের ড্রয়িং শেখার চ্যানেলে। সেখানে প্রশ্ন করতে পারো নিজেদের আঁকাআঁকি নিয়ে যা যা জানতে চাও, তার সবকিছুই। চাই কি ঢুকেই পেয়ে যেতে পারো, এদ্দিন মনে মনে খুঁজছিলে এমন কিছু একটা আঁকার একটা বাংলা টিউটোরিয়াল। আর সেই সঙ্গে এখানে কার্টুনের রান্নাঘর তো থাকছেই।