জুলভার্নের অন্যতম সেরা লেখা ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র কথা মনে পড়ে? যেখানে নটিলাস নামে অনেক ক্ষমতাধর সাবমেরিনের কথা রয়েছে? গল্পের নায়ক ক্যাপ্টেন নিমোর সেই সাবমেরিনে ছিল মারাত্মক সব অস্ত্রশস্ত্র। সাবমেরিন বিষয়টি জুলভার্নের সাহিত্যে যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি যদি কেউ সমুদ্রসম্পর্কিত যেকোনো গবেষণা করতে চায় বা সাগরপথ দিয়ে সামরিক কোনো প্রয়োজন মেটাতে চায়, তাহলে তাকে সাবমেরিনেরই দ্বারস্থ হতে হবে! বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ নৌবাহিনীতেও সাবমেরিন সংযোজন করা হচ্ছে। নৌবাহিনীর জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা দিয়ে দুটি সাবমেরিন কিনতে চীনের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি করেছে সরকার। ২৪ বছরের পুরোনো এই সাবমেরিন দুটি চীনের নৌবাহিনী ব্যবহার করছিল। ইতিমধ্যে সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুনঃসজ্জিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের মধ্যে এগুলো নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে। তোমরা কি জানো এই সাবমেরিন জিনিসটা কী? কীভাবে এই সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ পানির নিচ থেকে ওপরে ভেসে ওঠে, আবার ইচ্ছেমতো নিচে চলে যেতে পারে?
প্রশ্নটা যেমন সহজ, উত্তরটাও সে রকম সহজ। সহজ কথায় সাবমেরিন হচ্ছে পানির নিচে চলাচলে সক্ষম ও স্বাধীনভাবে বিচরণকারী নৌযানবিশেষ। সচরাচর সাবমেরিনে অনেক ক্রু অবস্থান করে থাকেন। সাবমেরিনকে প্রায়ই তার বিভিন্ন আকার-আকৃতি ও জাহাজের সঙ্গে তুলনা করে একে নৌকা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীতে সাবমেরিনের ব্যবহার প্রায় অবশ্যম্ভাবী।
এবার আসা যাক এটি কীভাবে পানির ওপর ওঠে আবার নিচে নামে সে বিষয়ের দিকে। এর জন্য তোমার জানার প্রয়োজন আর্কিমিডিসের ‘প্লবতার সূত্র’। এ সূত্র অনুযায়ী কোনো অদ্রব্য বস্তুকে পানিতে ডোবালে তা নিজের আয়তনের সমপরিমাণ পানি অপসারিত করবে। সোজা কথায় অপসারিত পানির ভরের থেকে পানিতে ডোবানো জিনিসটি যদি হালকা হয়, তবে তা ভেসে থাকতে পারে।
অর্থাৎ কোনো কিছু পানিতে ভাসবে কি না, তা নির্ভর করে সেটির ঘনত্বের ওপর। কোনো বস্তুর মোট ঘনত্ব যদি পানির চেয়ে কম হয়, তবে ভেসে থাকবে, আর ঘনত্ব বেশি হলে ডুবে যাবে। সাবমেরিনের এই ঘনত্বটাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ঘনত্ব বাড়ালে সেটি ডুবে যাবে আর কমালে ভেসে উঠবে। কিন্তু কীভাবে এই ঘনত্ব পরিবর্তন করা হয় বলো তো? না জানলে জেনে নাও।
সব সাবমেরিনেই একটি ব্যালাস্ট ট্যাংক থাকে। পানিতে ভেসে থাকার সময় এটি বায়ুতে ভর্তি থাকে। পানির নিচে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ট্যাংকের নিচে থাকা বাল্ব খুলে দেওয়া হয়। বাল্বের মধ্য দিয়ে পানি প্রবেশ করে। ওপরের দিকে আরেকটি বাল্ব থাকে, যেটির মাধ্যমে বাতাস বেরিয়ে যায়। এভাবে অতিরিক্ত পানি নিয়ে সাবমেরিনটি ভারী হয়ে ওঠে এবং ডুবে যায়।
আর জাহাজের ভেসে ওঠার প্রয়োজন হলে ট্যাংকটি খালি করতে হয়। এ সময় পাম্পের সাহায্যে পানি বের করে দেওয়া হয়। সাবমেরিনের আরেকটি ট্যাংকে উচ্চ চাপে বাতাস মজুত রাখা হয়। এই বাতাস দিয়ে ট্যাংকের খালি জায়গা পূর্ণ করা হয়। এভাবে সাবমেরিন আবার হালকা হয়ে ওঠে এবং পানির ওপর চলে আসে। ব্যালাস্ট ট্যাংকে পানি এবং বাতাসের ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে সাবমেরিন পানির নিচে যেকোনো উচ্চতায় থাকতে পারে। তবে কতটা গভীরে যেতে পারবে সেটা নির্ভর করছে সাবমেরিনের কাঠামোর ওপর।